Ajker Patrika

ট্রাম্পের বরাদ্দ কাটছাঁটের পরেও আয় ও অনুদানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৫ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বেড়ে ৫৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা তহবিল কমানোর চাপের মধ্যেও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রিটার্ন এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা হার্ভার্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (এইচএমসি) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২৫ সালের ৩০ জুনের পর থেকে) এখন পর্যন্ত তারা ১১ দশমিক ৯ শতাংশ আয় করেছে। এটি হার্ভার্ডের স্বাভাবিক লক্ষ্য ৮ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। এর আগের বছর (২০২৪ অর্থবছর) বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে মোট ৫৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, চলতি বছর তারা প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে রেকর্ড ৬০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়েছে। কোনো শর্ত ছাড়াই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে যুক্ত হয়েছে।

এদিকে, তহবিল বৃদ্ধির এই খবর এল এমন সময়ে, যখন হার্ভার্ড ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি-বিরোধিতা উসকে দিয়েছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এটি আসলে ট্রাম্পের একটি বৃহত্তর প্রচারণার অংশ, যার লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বামঘেঁষা মনোভাব দমন করা।

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চলা এ বিতর্কটি এখন আদালতে গড়িয়েছে। এতে ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা তহবিল কমানো এবং বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি সীমিত করার পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়ছে।

এইচএমসির প্রধান নির্বাহী এন পি নারভেকার এক চিঠিতে জানিয়েছেন, হার্ভার্ডের তহবিলের ৪১ শতাংশ প্রাইভেট ইকুইটি শেয়ারভিত্তিক বিনিয়োগে, ৩১ শতাংশ হেজ ফান্ডে, এবং ১৪ শতাংশ পাবলিক ইকুইটিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

নারভেকার বলেন, ‘যদিও পাবলিক ইকুইটির তুলনায় প্রাইভেট বিনিয়োগ কম থাকায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে, তবুও দক্ষ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ভালো ফল পাওয়া গেছে।’

আইভি লিগভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিনিয়োগ ও রিটার্ন সব সময়ই আলোচনায় থাকে। কারণ, তারা প্রথম থেকেই হেজ ফান্ড ও প্রাইভেট ইকুইটি ব্যবহারের পথিকৃৎ। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনে তাদের কর্মকাণ্ড এখন আরও বেশি নজরদারিতে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, ‘আমরা অনিশ্চয়তা এবং আয়ের উৎসে হুমকির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছি।’ তবে তিনি সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, সড়কে লাখো মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ। আজ শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে শুরু হয়েছে ‘নো কিংস’ (No Kings) শীর্ষক এই বিক্ষোভ। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, দিনভর দেশজুড়ে এই বিক্ষোভ চলবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি আয়োজক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ২ হাজার ৫০০-এর বেশি স্থানে তাদের বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে লাখো মানুষ অংশ নেবে। তাদের দাবি, ট্রাম্পের ‘স্বৈরাচারী মনোভাব ও কর্তৃত্ববাদী শাসন’ রুখতেই এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে লেখা, ‘প্রেসিডেন্ট মনে করেন, তিনিই সর্বেসর্বা। কিন্তু আমেরিকায় কোনো রাজা নেই এবং আমরা বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সব সময় কথা বলে যাব।’

বিক্ষোভের ঢেউ ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপেও। সংহতি জানাতে জার্মানির বার্লিন, স্পেনের মাদ্রিদ এবং ইতালির রোমেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, এই বিক্ষোভে বামপন্থী সংগঠন অ্যান্টিফার সদস্যরা জড়িত। তবে এর নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কয়েকটি রিপাবলিকান অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। টেক্সাস ও ভার্জিনিয়ার গভর্নররা ইতিমধ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন, যদিও সামরিক উপস্থিতি কতটা দৃশ্যমান হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট বিবিসিকে বলেছেন, ‘অ্যান্টিফা-সম্পৃক্ত বিক্ষোভের পরিকল্পনার কারণে’ অস্টিনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁর এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে রাজ্যের ডেমোক্রেটিক নেতা জিন উ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করতে সশস্ত্র বাহিনী পাঠানো রাজা ও স্বৈরশাসকদের কাজ; আর গ্রেগ অ্যাবট এখন প্রমাণ করলেন, তিনিও তাদের একজন।’

নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: এএফপি
নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: এএফপি

একইভাবে ভার্জিনিয়ার গভর্নর গ্লেন ইয়ংকিনও রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ড সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিক্ষোভের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওয়াশিংটন ডিসিতে, যেখানে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স প্রধান বক্তা। পাশাপাশি লস অ্যাঞ্জেলসেও বড় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে, বিক্ষোভের আগে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাকে রাজা বলে ডাকছে, কিন্তু আমি কোনো রাজা নই।’

নর্থ ক্যারোলাইনার ওয়াক্সহোতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
নর্থ ক্যারোলাইনার ওয়াক্সহোতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

তবে তাঁর সমর্থক রিপাবলিকানদের কেউ কেউ এসব বিক্ষোভকে ‘হেইট আমেরিকা র‍্যালি’ বলে উল্লেখ করেছেন। কানসাসের সিনেটর রজার মার্শাল বলেন, ‘আমাদের হয়তো ন্যাশনাল গার্ড নামাতে হবে। আশা করি, বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকবে। তবে আমার সন্দেহ আছে।’

‘নো কিংস’ আন্দোলনের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন খ্যাতনামা কয়েক তারকাও। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী জেন ফন্ডা, কেরি ওয়াশিংটন, সংগীতশিল্পী জন লেজেন্ড, অভিনেতা অ্যালান কামিং ও জন লেগুইজামো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত আগস্টে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি
গত আগস্টে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

সর্বশেষ সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকটি কেমন ছিল, তা একটি শব্দ দিয়েই বর্ণনা করা যায়। আর তা হলো ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বা জেলেনস্কির ভাষায় ‘তীক্ষ্ণ’ (pointed)। তিনি নিজেই এক্সে এভাবে লিখেছেন। এই শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ না করলেও বোঝা যায়, জেলেনস্কি আসলে এর মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি সেই বৈঠক ছিল না, যেমনটা ইউক্রেনীয়রা আশা করেছিল।

গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল যখন ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হয়, তখন তাদের মধ্যে ছিল উচ্চ মনোবল। রুসলান স্টেফানচুক ইউক্রেনের পার্লামেন্টের স্পিকার। তিনি কার্যত দেশটির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। জেলেনস্কির প্রতি আনুগত্যের জন্যও তিনি বেশ পরিচিত। বিমানে ওঠার ঠিক আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টেফানচুক এই সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

স্টেফানচুক বলেছিলেন, এই বৈঠকই বিশ্বকে নিশ্চিত করবে ট্রাম্প ‘অবশেষে বুঝেছেন, পুতিন মিথ্যাবাদী, তাঁকে বিশ্বাস করা যায় না। যুদ্ধ থামাতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’ তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বৈঠকেই ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে রাজি হবেন। কিন্তু জেলেনস্কির বিমান আকাশে থাকতেই ট্রাম্প-পুতিনের আড়াই ঘণ্টার ফোনালাপের খবর আসতে শুরু করে। এরপর বিমানটি ওয়াশিংটনের মাটি ছোঁয়ার আগেই ঘোষণা আসে, তাঁদের (ট্রাম্প-পুতিন) মধ্যে আরেকটি বৈঠক হতে চলেছে। ইউক্রেনীয়রা বিমান থেকে নামেন, কিন্তু তাঁরা ছিলেন নীরব। যাত্রা শুরুর সময় তাঁদের মধ্যে যে মনোবল ছিল, সেটি যেন ফুটো হওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেছে।

কয়েক সপ্তাহ আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর বিরক্ত ছিলেন। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন, পুতিন তাঁকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন। ইউক্রেনে হামলা তাঁর পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। তিনি ধীরে ধীরে পুতিনের ওপর ‘ক্ষিপ্ত’ হচ্ছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের ফোনালাপের পর যেন তাঁর সব বিরক্তি চলে গেছে।

শুক্রবারের বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি (পুতিন) একটি চুক্তি করতে চান।’ এরপর তিনি তাঁর পুরোনো কথাগুলোই আবার বলতে থাকেন। তিনি পুরো সংঘাতটিকে দুই নেতার মধ্যে একটি ব্যক্তিগত বিরোধ হিসেবে তুলে ধরেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এখানে দুই পক্ষের মধ্যে প্রচুর বিদ্বেষ রয়েছে। তাই যুদ্ধ থামছে না।’

জেলেনস্কি জানেন, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করার ঝুঁকি কেমন। এর আগে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই এবারের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী যখন কঠোর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন, তখন সেখানে ছিল পিনপতন নীরবতা। চুপসে গিয়েছিলেন জেলেনস্কি।

প্রত্যাশিতভাবেই, জেলেনস্কি ট্রাম্পের প্রশংসা করেন এবং বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ আজকাল ওয়াশিংটনে তোষামোদই কূটনীতির মুদ্রা। তবে জেলেনস্কি এটাও স্পষ্ট করে দেন, রাশিয়ার সদিচ্ছা নিয়ে তিনি ট্রাম্পের মতো আশ্বস্ত নন। তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝি, পুতিন আলোচনার প্রস্তুত হলেও শান্তির জন্য নন।’

ইউক্রেন ও তার মিত্রদের কাছে এই সংঘাত কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নয়, বরং এটি ইউরোপীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের চালানো আক্রমণাত্মক যুদ্ধ। ইউক্রেন আসলে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র চেয়েছিল পুতিনকে আলোচনায় বসাতে চাপ দেওয়ার জন্য। আর চেয়েছিল মার্কিন নিরাপত্তার গ্যারান্টি, যাতে ভবিষ্যতে পুতিন যেকোনো শান্তিচুক্তি মেনে চলতে বাধ্য হন। কিন্তু জেলেনস্কি এই দুটির কোনোটিই পাননি। তাঁকে খালি হাতেই ছাড়তে হয়েছে হোয়াইট হাউস।

কিয়েভের সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন?

জেলেনস্কির সর্বশেষ বৈঠক নিয়ে কিয়েভের সাধারণ মানুষের মনোভাব মিশ্র। সম্প্রতি কিয়েভের একটি ছোট শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেরামত করতে থাকা কিছু বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসির একজন সাংবাদিক।

ভলোদিমির সেপোভাতেঙ্কো নামের এক ব্যক্তি তাঁর ছোট দোকানের ভেঙে যাওয়া জানালা ঠিক করছিলেন। হোয়াইট হাউসের সর্বশেষ বৈঠকের পর ইউক্রেনের অবস্থান সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এখন একটি শান্তিচুক্তি করি, তবে রাশিয়া ইউক্রেন ছেড়ে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবে।’

সেপোভাতেঙ্কো বলেন, ‘আমি আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি পথই দেখতে পাচ্ছি, তা হলো রাশিয়াকে ইউরোপের যেকোনো দেশের সঙ্গে লড়াই করা বা দখল করার ক্ষমতা শেষ করে দেওয়া।’ তাঁর মতে, ইউক্রেনকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

ওলেক্সান্ডার ভিলকোর নামের আরেক বাসিন্দার গাড়ি রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি টমাহক নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এরপর কী হবে, তা নির্ধারণ করার একমাত্র ক্ষমতা আমাদের সেনাবাহিনীর হাতে।’ তিনি মনে করেন, ইউক্রেন এখন পর্যন্ত সব সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ হলেও, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেবে কি না, সেটা ওয়াশিংটনের সার্বভৌম অধিকার।

তবে ওলেক্সান্ডার ভিলকোর বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র থাকুক বা না থাকুক, ইউক্রেনীয়রা লড়াই চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশের সঙ্গে প্রায় চার বছর ধরে আমাদের যুদ্ধ চলছে। আমরা এখনো টিকে আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা, নিহত অন্তত ১০

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পূর্ব পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় নিহতদের জন্য কবর খুঁড়ছে স্থানীয়রা। ছবি: এপির সৌজন্য
পূর্ব পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় নিহতদের জন্য কবর খুঁড়ছে স্থানীয়রা। ছবি: এপির সৌজন্য

আফগানিস্তান অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান আবারও তাদের সীমান্তে বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দিনের যুদ্ধবিরতিও ভঙ্গ হয়েছে বলে অভিযোগ তালেবান সরকারের।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা আফগান কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে পাকতিকা প্রদেশের তিনটি স্থানে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। তালেবানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে এবং পাকতিকা প্রদেশে তিনটি স্থানে বোমা হামলা চালিয়েছে। আফগানিস্তান এর জবাব দেবে।’

আফগানিস্তানের প্রাদেশিক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, হামলায় অন্তত ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে।

আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আফগান ও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা শনিবার দোহায় বৈঠকে বসবেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ দোহায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’

তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের আফগান প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে দোহায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ও গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল আসিম মালিকও আলোচনায় অংশ নিতে শনিবার দোহা যাচ্ছেন।

এর আগে আজ আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) এক বিবৃতিতে জানায়, পাকতিকা প্রদেশের উরগুন জেলায় বিমান হামলায় তাদের তিন ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন। হামলায় মোট আটজন মারা গেছেন এবং সাতজন আহত হয়েছেন। এসিবি একে ‘পাকিস্তানি শাসনের নৃশংস হামলা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

সংস্থাটি জানায়, খেলোয়াড়েরা পাকতিকার রাজধানী শারানা থেকে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে ফিরে আসার পর উরগুন জেলায় এক সমাবেশে হামলার শিকার হন। এসিবি এই ঘটনাকে ‘আফগানিস্তানের ক্রীড়াঙ্গন ও ক্রিকেট বিশ্বের জন্য এক বড় ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করেছে। এই ঘটনার পর আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে আফগানিস্তান।

পাকিস্তানের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, তাঁদের বাহিনী আফগান সীমান্ত এলাকায় হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, এই গোষ্ঠীই সম্প্রতি সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় একটি সামরিক ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমা হামলা ও বন্দুক হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। ওই হামলায় সাত পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

নিরাপত্তা ইস্যুই দুই দেশের সম্পর্কের মূল টানাপোড়েনের কারণ। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, আফগানিস্তান তাদের মাটিতে পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে। কিন্তু কাবুল বারবার এই বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে।

শনিবার থেকে সীমান্তে সহিংসতা বেড়ে যায়। প্রসঙ্গত, ওই সময় তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে ছিলেন। এরপর তালেবানরা দক্ষিণ সীমান্তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালায় এবং ইসলামাবাদ পাল্টা হামলার হুমকি দেয়।

প্রায় চার দিনের সংঘর্ষের পর গত বুধবার ৪৮ ঘণ্টার সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। পাকিস্তান জানায়, এই যুদ্ধবিরতি ৪৮ ঘণ্টা চলবে। তবে কাবুল জানিয়েছিল, পাকিস্তান ভঙ্গ না করা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বলবৎ থাকবে।

জাতিসংঘের আফগান সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আফগান সীমান্তে অন্তত ৩৭ জন নিহত ও ৪২৫ জন আহত হয়েছেন। সংস্থাটি উভয় পক্ষকে শান্তি ও স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অপারেশন সিঁদুর ছিল ট্রেলার, পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি মাটি এখন ব্রহ্মসের আওতায়: রাজনাথ সিং

কলকাতা প্রতিনিধি  
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এখন শুধু সীমান্ত রক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং বিশ্বদরবারে শক্তির প্রতীক হয়ে উঠছে, তার প্রমাণ আবারও দেখা গেল লক্ষ্ণৌয়ে। আজ শনিবার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌর সারোজিনি নগরে ব্রহ্মস মিসাইল উৎপাদন কারখানার প্রথম ব্যাচের উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। অনুষ্ঠানে রাজনাথ সিং বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুরের সময় যা ঘটেছিল, তা ছিল ট্রেলার। পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি মাটি এখন ভারতের ব্রহ্মসের আওতায়।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্যে ছিল একটি কঠোর বার্তা—ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া কেবল সীমান্তে প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক এবং সুনির্দিষ্টও হতে পারে।

সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুর নামটি আলোচনায় আসে। গত এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় মে মাসে ভারতের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে একটি অভিযান চালায়। ওই অভিযানের নামই ছিল অপারেশন সিঁদুর। ভারত এই অভিযানে পাকিস্তানে থাকা একাধিক জঙ্গিঘাঁটি এবং প্রতিরক্ষা স্থাপনায় লক্ষ্যভেদী আঘাত হানে। সেই অভিযানে ব্যবহৃত হয় দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ব্রহ্মস সুপারসনিক মিসাইল, যার গতি শব্দের তিন গুণ এবং নির্ভুলতা প্রায় শতভাগ।

প্রতিরক্ষা সূত্রে জানা যায়, এই মিসাইল এমনভাবে তৈরি, শত্রুপক্ষের রাডার একে শনাক্ত করতে পারবে না। ফলে এটি কার্যত ‘দৃশ্যের আড়ালে’ গিয়েই আঘাত হানতে পারবে। অপারেশন সিঁদুরের পরে থেকে এই মিসাইল আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

রাজনাথ সিং বলেন, ‘ব্রহ্মস শুধুই একটি মিসাইল নয়, এটি ভারতের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, যা আমাদের সামরিক বাহিনীর তিনটি শাখারই অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠেছে।’ তাঁর বক্তব্যে ছিল জাতীয় গর্বের সুর, কিন্তু একই সঙ্গে ছিল একটি রাজনৈতিক ইঙ্গিতও—দেশীয় প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের উত্থানকে সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখানো।

যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘লক্ষ্ণৌ আজ কেবল সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যের শহর নয়, এটি এখন প্রযুক্তি ও শিল্পেরও শহর। এখানে ব্রহ্মস মিসাইল তৈরি হচ্ছে—এটাই প্রমাণ করছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন বাস্তব হয়ে উঠছে।’ তিনি জানান, উত্তর প্রদেশ ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরের মাধ্যমে এ রাজ্য এখন দেশীয় প্রতিরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনের এক বড় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে, যা শুধু নিরাপত্তা নয়, কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতারও নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

রাজনাথ সিং বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুরের সময় যা ঘটেছিল, তা শুধু এক দিনের ঘটনা নয়, এটি ভারতের জয়ের অভ্যাসের প্রতিফলন। এখন সেই আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্রহ্মস এখন শুধু ভারতের নয়, বরং বিশ্ববাসীর কাছেও ভারতের শক্তির প্রতীক হয়ে উঠছে।’

ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের ভেতর দিয়ে একদিকে যেমন পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ভারতের কৌশলগত অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক ভারসাম্যের প্রশ্নে এটি একটি নতুন অধ্যায়; কারণ, এই প্রথম ভারতের মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি মাটি এখন ভারতের মিসাইলের আওতায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত