Ajker Patrika

গুয়ানতানামো বে

বন্দিদশায় দুঃসহ যন্ত্রণার বর্ণনা ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গুয়ানতানামো বে জেলখানা। ছবি: সংগৃহীত
গুয়ানতানামো বে জেলখানা। ছবি: সংগৃহীত

কিউবার গুয়ানতানামো বে জেলখানায় মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন ভেনেজুয়েলার অভিবাসীরা। একাকিত্ব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও খাবারের অভাবে তাঁরা মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুধু তা-ই না, সংকটাপন্ন অবস্থায় টিকে থাকতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেক বন্দী। এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পর এই জেলখানায় অভিবাসীদের পাঠানো থেকে বিরত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তাঁদের সবাইকে এই নারকীয় জেলখানায় পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সংস্থাটি বলেছে, গুয়ানতানামো বে জেলখানা থেকে ফিরে আসা ২০ জন ভেনেজুয়েলার অভিবাসীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ১১ থেকে ১৬ দিনের জন্য এই জেলখানায় ছিলেন তাঁরা। ১৭৭ জন ভেনেজুয়েলার অভিবাসী দলের মধ্যে ছিলেন তাঁরা। হিউম্যান রাইটসের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অভিবাসীরা বলেছেন, গুয়ানতানামো কারাগারে পাঠানোর আগে তাঁরা ভয়াবহভাবে মানবাধিকারের শিকার হয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, শুধু জাতীয়তা ও ট্যাটুর ভিত্তিতে দক্ষিণ মার্কিন সীমান্ত অতিক্রম করার পর তাঁদের আটক করা হয়। অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাঁদের অপরাধী দল ট্রেন ডি আরাগুয়ার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করে।

ট্রেন ডি আরাগুয়াকে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এই অভিবাসীরা সেই সংগঠনের সদস্য বলে দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ভেনেজুয়েলার সরকার। তারা বলছে, তাদের অনেকেরই কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নজির নেই। যাদের আছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, অন্য অভিবাসীরা জানিয়েছেন, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টে (আইসিই) যাওয়ার পরপরই তাঁদের আটক করা হয়। তারপর কোনো কিছু না জানিয়েই মার্কিন আটককেন্দ্র থেকে গুয়ানতানামো বেতে স্থানান্তর করে তারা। এদিকে মানবাধিকার সংগঠনের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ।

মার্কিন এই বিভাগ সিএনএনকে একটি মেইল পাঠিয়ে জানিয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি ঠিক নয়। আইসিই আটককেন্দ্রের অবস্থা খুবই খারাপ, এই দাবি ভুল। এখানে সব বন্দীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া এখানে বন্দীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগও রয়েছে। তাঁরা চাইলে তাঁদের আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। আইসিইতে বন্দীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেই তাঁর একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। সেই সময় তিনি বলেন, অনিবন্ধিত ৩০ হাজার অভিবাসীকে গুয়ানতানামো কারাগারে পাঠানো হবে। সেই মোতাবেক, কয়েক শ অভিবাসীকে সেখানে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে ১৭৭ জনের ভেনেজুয়েলার গোষ্ঠীটিও ছিল।

অভিবাসীরা জানিয়েছেন, ‘আমাদের তিন দিন পরপর গোসল করার সুযোগ দিত। এ ছাড়া তিনবেলা খাবার দিলেও তা পর্যাপ্ত পরিমাণ ছিল না। শুধু তা-ই না, তার মানও ভালো ছিল না।’ আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি সব সময় ক্ষুধার্ত থাকতাম। ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেটে ব্যথা পেতাম। গুয়ানতানামো কারাগারে যাওয়ার সময় আমার ওজন ছিল ৭৮ কেজি। কিন্তু ভেনেজুয়েলায় এসে দেখি, আমার ওজন কমে ৫২ কেজি হয়েছে।’

৯-১১-র পর গুয়ানতানামো বে জেল তৈরি করা হয়েছিল। মূলত সন্ত্রাসীদের জন্য তৈরি সেই জেলে বহু মানুষকে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তখন থেকেই এই জেল নিয়ে নানা বিতর্ক। জেলের ভেতর নিপীড়নের বহু কাহিনি আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত