Ajker Patrika

সকালে পতাকা পোড়ানো বন্ধে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ, সন্ধ্যায় পুড়িয়ে প্রতিবাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২০ সালের ৪ নভেম্বর ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন পতাকা পোড়ান। ছবি: এএফপি
২০২০ সালের ৪ নভেম্বর ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন পতাকা পোড়ান। ছবি: এএফপি

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন পতাকা পোড়ানো বন্ধে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। এ নির্বাহী আদেশে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে এবং অভিবাসীদের মধ্যে কেউ এ কাজ করলে তাঁর ভিসা বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্টের এ নির্বাহী আদেশ জারির পরেই গত সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের বিপরীত দিকে এক ব্যক্তি মার্কিন পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেন।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতাকা অবমাননাবিরোধী নির্বাহী আদেশের প্রতিবাদেই ওই ব্যক্তি পতাকা পোড়ান। এ ঘটনার পর ওই ব্যক্তিকে লাফায়েত স্কয়ার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে, তাঁকে পতাকা পোড়ানোর অপরাধ বা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং, ফেডারেল পার্কে আগুন জ্বালানোর বিরুদ্ধে বিদ্যমান একটি আইন লঙ্ঘনের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

১৯৮৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় অনুযায়ী, মার্কিন পতাকা পোড়ানো সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধীনে বাক্‌স্বাধীনতার অংশ। অর্থাৎ এটি মানুষের সুরক্ষিত অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৯৮৪ সালে গ্রেগরি লি জনসন নামে এক ব্যক্তি পারমাণবিক যুদ্ধ ও রিপাবলিকান নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনের বাইরে একটি মার্কিন পতাকাতে আগুন ধরিয়ে দেন। সে সময় টেক্সাসের একটি আইন লঙ্ঘন করার দায়ে তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ২ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।

তবে তাঁর মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছালে আদালত রায় দেন যে, পতাকা পোড়ানো প্রথম সংশোধনীর অধীনে কোনো ব্যক্তির সুরক্ষিত অধিকার বা ‘প্রতীকী অভিব্যক্তি’। ৫-৪ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে বিচারপতি উইলিয়াম জে ব্রেনান জুনিয়র লেখেন, ‘পতাকার অবমাননার জন্য শাস্তি দিয়ে আমরা পতাকাকে পবিত্র করি না, কারণ, তা করার মাধ্যমে আমরা সেই স্বাধীনতার মূল্যকে ক্ষুণ্ন করি, যা এ প্রতীকী অভিব্যক্তিকে ধারণ করে।’ এ রায়ের পরপরই তখন ৪৮টি রাজ্যে পতাকা অবমাননার আইন বাতিল হয়ে যায়।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ও এর আইনি দিক

ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশটি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সরাসরি উপেক্ষা না করে বিদ্যমান আইনগুলো ব্যবহারের ওপর জোর দেয়। এটি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে এমন সব মামলা খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে, যা এ রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এ নির্বাহী আদেশ পতাকা পোড়ানো অন্যান্য অপরাধ, যেমন সহিংসতায় উসকানি বা সম্পত্তি ধ্বংসের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করে। এটি অভিবাসীদের জন্য ভিসা বাতিল ও বিতাড়নের পথ খুলে দিতে পারে।

যা-ই হোক, আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু পতাকা পোড়ানোর অপরাধে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না, কারণ এটি সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। তবে, পতাকা পোড়ানোর সঙ্গে যদি অন্য কোনো অপরাধ যেমন দাঙ্গা, সম্পত্তি ধ্বংস বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটে, তবে সে অপরাধগুলোর জন্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সিভিল লিবার্টিজ গ্রুপ ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মামলা করতে পারে।

ট্রাম্প কেন এ পদক্ষেপ নিলেন?

মার্কিন পতাকা পোড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভিত্তির মধ্যে জনপ্রিয়। তাঁর প্রথম মেয়াদেও তিনি পতাকা অবমাননাকে অবৈধ করার জন্য একটি সাংবিধানিক সংশোধনের প্রস্তাব করেছিলেন, যা সফল হয়নি। সম্প্রতি তিনি মন্তব্য করেছেন, পতাকা পোড়ানো ‘দাঙ্গা উসকে দেয়’ এবং যাঁরা এ কাজ করবেন, তাঁদের এক বছরের কারাদণ্ড হওয়া উচিত। মূলত এ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকেই শক্তিশালী করতে চেয়েছেন।

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টে এখন রক্ষণশীল বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, যার মধ্যে ট্রাম্পের নিয়োগ করা তিনজন বিচারপতিও রয়েছেন। ফলে যদি এ বিষয়ে কোনো নতুন মামলা আদালতে পৌঁছায়, তবে রায় পরিবর্তন হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

জম্মু-কাশ্মীরে ধ্বংস করা হলো ৪৪ হাজার কেজি রসগোল্লা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত