Ajker Patrika

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্ত করা নিয়ে আমি কেন মাথা ঘামাব: ট্রাম্প

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ৪১
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো (পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ) শক্তিশালী করতে দেওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের তহবিলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি কেন বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাবেন!

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরদের কর্ম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্প অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার একটি প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘২৯ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে দেওয়া হয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে, যার নাম কেউ শোনেইনি। ২৯ মিলিয়ন ডলার! তারা চেক পেয়েছে। কল্পনা করতে পারেন! আপনার একটা ছোট্ট প্রতিষ্ঠান আছে, এখানে–ওখানে ১০ হাজার ডলার করে পান, আর তারপর হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়ে যান! ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুজন লোক কাজ করে। দুজন! আমি মনে করি, তারা খুব খুশি, খুব ধনী হয়ে গেছে। শিগগিরই তারা একটা নামকরা বিজনেস ম্যাগাজিনের কভারে চলে আসবে, কারণ তারা বেশ ‘সফল’!’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ’২৯ মিলিয়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু “রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করা” বলতে তারা কী বোঝায়? ২০ মিলিয়ন ডলার “রাজস্ব ফেডারেলিজম”-এর জন্য, ১৯ মিলিয়ন ডলার নেপালের “জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ”-এর জন্য, ৪৭ মিলিয়ন ডলার “এশিয়ায় শিক্ষার মান উন্নয়নের” জন্য! এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাব কেন?’

সম্প্রতি মার্কিন ব্যবসায়ী ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) ঘোষণা দিয়েছে, তারা মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ব্যয় পর্যালোচনা করছে। ডিওজিইর দাবি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘কনসোর্টিয়াম ফর ইলেকশনস অ্যান্ড পলিটিক্যাল প্রসেস স্ট্রেনদেনিং’-এর জন্য ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। যার মধ্যে ২১ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য। ডিওজিইর এ তথ্য প্রকাশের পরই ভারতের পুরোনো বিতর্কটি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।

এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এবং ক্ষমতাসীন বিজেপি দুই দলই এটিকে ‘ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। তবে বিজেপি দাবি করছে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ সরকার বিদেশি শক্তিকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রবেশাধিকার সহজ করে দিয়েছিল।

বিজেপি নেতা অমিত মালব্য কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এটি নিশ্চিতভাবেই ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ। কিন্তু এতে লাভবান হয়েছে কে? অন্তত ক্ষমতাসীন দল (বিজেপি) তো নয়! এই উদ্যোগ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি সংগঠনের সিস্টেম্যাটিক অনুপ্রবেশের সঙ্গে যুক্ত।’

অন্যদিকে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা পাল্টা জবাবে বলেন, ২০১২ সালে এই অনুদান দেওয়া হয়েছিল, তখন কংগ্রেস সরকারে ছিল। তাহলে কি সরকার নিজের নির্বাচনী সম্ভাবনা নষ্ট করতে এ তথাকথিত ‘বহিরাগত হস্তক্ষেপ’ চেয়েছিল?

এদিকে, বিজেপির আরেক নেতা নলিন কোহলি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কোনো মার্কিন সংস্থা কেন ভারতের নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজে ২১ মিলিয়ন ডলার দিতে চাইবে? এটি কি ভারতের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নয়?’

২০১০-১২ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এসওয়াই কুরাইশী বিজেপির দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল আন্তর্জাতিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ফাউন্ডেশনের (আইএফইএস) সঙ্গে, যা আগেও ছিল এবং এখনো আছে। এগুলো মূলত নির্বাচন-পূর্ব প্রশিক্ষণের জন্য করা হয়। এর সঙ্গে কোনো অনুদানের সংযোগ নেই। এ অর্থায়নের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিদ্বেষপ্রসূত।’

ইলন মাস্কের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি বা সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ এসব তথ্য প্রকাশ করার পর সরকারি ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘আমরা কেন ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার খরচ করব? তারা কী অন্য কাউকে নির্বাচিত করার চেষ্টা করেছিল?’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ডিওজিই মাত্র এক মাসে ৫৫ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে। আমরা সরকারকে ছোট করে অর্থনীতিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে চাই।’ এদিকে ডিওজিই আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত বছর বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মামদানি সম্মানজনক আচরণ করলে তাঁকে সহায়তা করব: ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মামদানিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে মামদানিকে ‘সম্মানজনক আচরণ’ করতে হবে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মামদানিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে মামদানিকে ‘সম্মানজনক আচরণ’ করতে হবে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে সতর্ক করেছেন, সফল হতে হলে মামদানিকে ওয়াশিংটনের প্রতি ‘সম্মানজনক আচরণ’ করতে হবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাতে জোহরান মামদানি প্রথম কোনো মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ইতিহাস গড়ার পর মামদানি যখন তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দলের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছিলেন, তখনই ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।

মামদানি তাঁর বিজয়ী ভাষণে ট্রাম্পের বিরোধিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘ওটা বিপজ্জনক মন্তব্য।’ ট্রাম্প ফক্স নিউজের ব্রেট বায়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ওয়াশিংটনের প্রতি তাঁকে কিছুটা শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তা না হলে সফল হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।’ ওয়াশিংটন বলতে ট্রাম্প মূলত ফেডারেল সরকার এবং তাঁর প্রশাসনকেই বুঝিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই সে সফল হোক। আমি চাই শহরটা সফল হোক।’ এরপর দ্রুত স্পষ্ট করেন, তিনি আসলে নিউইয়র্ক শহরকে সফল দেখতে চান, মামদানিকে নয়। এর আগে, গতকাল বুধবার ট্রাম্প এক ভাষণে বলেন, তাঁর প্রশাসন নতুন মেয়রকে ‘সাহায্য করবে।’ তবে একই বক্তব্যে তিনি মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলেও আখ্যা দেন।

ফ্লোরিডার মায়ামিতে আমেরিকান বিজনেস ফোরামের ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘কমিউনিস্ট, মার্কসবাদী আর গ্লোবালিস্টরা তাদের সুযোগ পেয়েছিল। তারা শুধু বিপর্যয় এনেছে। এবার দেখা যাক, নিউইয়র্কে এক কমিউনিস্ট কেমন করে। আমরা দেখব কী হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাঁকে সাহায্য করব, একটু হলেও করব। আমরা চাই নিউইয়র্ক সফল হোক।’

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্প মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছিলেন। তিনি মামদানিকে ‘উন্মাদ কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, যদি মামদানি জেতে, তবে শহরের ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেবেন।

মামদানি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, তিনি কমিউনিস্ট নন, বরং একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী। তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল বিনা মূল্যে সর্বজনীন শিশু যত্ন, ফ্রি বাস সার্ভিস এবং সরকারি পরিচালিত মুদি দোকান চালুর প্রতিশ্রুতি। প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের শহর নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মামদানি। তার এই বিজয় সারা দেশে প্রতিধ্বনি তুলেছে। ডেমোক্র্যাট পার্টির মধ্যপন্থী ও প্রগতিশীল অংশের দ্বন্দ্বের মধ্যে এই জয়কে অনেকে জাতীয় রাজনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

বিজয়ী ভাষণে মামদানি তাঁর জয়কে ট্রাম্পকে হারানোর এক উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। টেলিভিশন প্রিয় প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ভলিউমটা বাড়িয়ে দিন।’ বুধবার অগ্রাধিকারের বিষয় তুলে ধরে দেওয়া বক্তৃতায় মামদানি জানান, তিনি ট্রাম্পের বিরোধিতা অব্যাহত রাখবেন, তবে আলোচনার সুযোগও খোলা রাখবেন। মামদানি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কে আমি মুখ বন্ধ রাখব না। তাঁর কর্মকাণ্ড যেমন, আমি তেমনই বলব। তবে সেই সঙ্গে সংলাপের দরজাটাও খোলা রাখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজার প্রশাসন সামলাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, হামাসের সঙ্গে ‘চুক্তি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় টহলরত হামাসের এক সদস্য। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় শিশুরা। ছবি: এএফপি
গাজায় টহলরত হামাসের এক সদস্য। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় শিশুরা। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সঙ্গে একটি ‘অস্থায়ী চুক্তিতে’ পৌঁছেছে। এই চুক্তির আওতায় গাজার প্রশাসন সামলাবে রামাল্লায় অবস্থিতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি অস্থায়ী কমিটি। গত মঙ্গলবার হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরাকে এই কথা বলেন।

মুসা আবু মারজুক বলেন, এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একজন মন্ত্রী। আর এই কমিটি গাজার সীমান্ত পারাপার ও নিরাপত্তা বাহিনী তত্ত্বাবধান করবে। তবে ওয়াশিংটন এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে কি না, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

আবু মারজুক আরও বলেন, তেলআবিব গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের অনুমতি দিতে অস্বীকার করছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া পরিকল্পনার বিপরীত। কারণ, সেখানে গাজায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হয়েছিল।

হামাসের এই নেতা বলেন, ‘এই বিষয়ে এখনো দীর্ঘ আলোচনা প্রয়োজন।’ মারজুক নিশ্চিত করেছেন, আন্তর্জাতিক ওই নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। আর এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

হামাসের নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গে মারজুক বলেন, ‘গাজার মাটিতে হামাসই কার্যত নিয়ন্ত্রণে আছে। যদি তাদের নিরস্ত্র করা হয়, অন্য গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র হাতে উঠবে। যেমন ইরাকে সেনাবাহিনী বিলুপ্ত হওয়ার পর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে, আল-কায়েদা আর আইএস উত্থান ঘটায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতে স্থিতিশীলতা আসবে না, বরং যুদ্ধবিরতি বা অন্য কোনো চুক্তি বাস্তবায়ন আরও কঠিন হবে। গাজায় কোনো শূন্যতা নেই—যে কোনো বিকল্প বাহিনী অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের দ্বারা গঠিত ও তাদের সম্মতিতে হতে হবে, যাতে কোনো অভ্যন্তরীণ সংঘাত না হয়।’

এর আগে, হামাস ও পিএ—এর ফাতাহ দল মিশরে বৈঠক করে কিছু প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছিল। তবে সেসব চুক্তি বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অন্তত দুই বছর মেয়াদি “প্রশাসন” পরিচালনার প্রস্তাব রয়েছে, যা পরে বাড়ানোও যেতে পারে।

ওয়াশিংটনের খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, পিএ কেবল তখনই গাজার প্রশাসন নিতে পারবে, যখন তারা ‘সংস্কার কর্মসূচি সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করবে’ এবং ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ‘বোর্ড অব পিস’ থেকে ‘চূড়ান্ত অনুমোদন’ পাবে।

তবে কিছু আরব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার কয়েকটি অংশ প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজাকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র করা এবং হামাসকে অস্ত্র ত্যাগে বাধ্য করার শর্ত। পশ্চিমা কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে আই ২৪ নিউজ জানিয়েছে, আরব দেশগুলো এই ধারা মেনে নিতে রাজি নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যাটল ফর বিহার শুরু: প্রথম ধাপে ভোট হচ্ছে ১২১ আসনে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৮
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বিহারকে ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার বলে মনে করেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। আর সেই রাজ্যে শুরু হয়েছে ভোটযুদ্ধ—ব্যাটল ফর বিহার। মর্যাদার লড়াইয়ে রাজ্যের ২৪৩টি আসনের অর্ধেক, অর্থাৎ ১২১ আসনের ভোট আজ বুধবার প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ জোট আবারও ক্ষমতায় ফেরার আশা করছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্রের এই উৎসবে উৎসাহ নিয়ে অংশ নিতে। তিনি বলেছেন, ‘যারা প্রথমবার ভোট দিচ্ছে, বিশেষ করে আমার তরুণ বন্ধুরা—মনে রাখবে, আগে ভোট, পরে নাশতা।’

অন্যদিকে বিরোধী ‘গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স বা মহাগাঠবন্ধন’ সরকারবিরোধী মনোভাব ও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবের প্রতিশ্রুত ‘প্রতিটি ঘরে চাকরি’ পরিকল্পনার ওপর ভরসা করে এনডিএকে হারানোর আশা করছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে রাজ্যের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে আসা আরজেডি এবারও তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়েছে। তরুণ ভোটারদের টানাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

বিজেপি এবারও জাঁকজমকপূর্ণ প্রচার চালিয়েছে। মোদি নিজে, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এতে অংশ নিয়েছেন। তবে প্রচারের শেষ দিকে এনডিএ শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে অনিশ্চয়তার গুঞ্জন ছড়ায়। অনেকে ধরে নেন, ছয়বার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ৭৪ বছর বয়সী নিতীশ কুমারকে এবার সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। কারণ, তাঁর দল জেডিইউ এখন বিজেপির ছায়ায় আসলে অবস্থান করছে দ্বিতীয় সারিতে। শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বিষয়টি পরিষ্কার করেন।

অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রচারণা ছিল অনেকটা নিরুত্তাপ। ২০২০ সালে তারা জোটসঙ্গী রাষ্ট্রীয় জনতা দল–আরজেডির তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। এবারের প্রচার শুরুতে রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদবের যৌথ পদযাত্রায় গতি এলেও রাহুল প্রায় দুই মাস প্রচারে অনুপস্থিত ছিলেন। এর প্রভাব পড়ে আসন বণ্টনের আলোচনাতেও। ফলে এখন অন্তত ১২টির বেশি আসনে কংগ্রেস ও আরজেডি মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছে, যা বিরোধী ভোট বিভক্তির আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এদিকে নির্বাচনে ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হিসেবে দেখা হচ্ছে নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরকে। তাঁর দল জন সুরাজ পার্টি রাজনীতির ময়দানে নতুন চমক এনেছে। তিনি ঘোষণা করেছেন, তাঁদের দল হয় ১০ টিরও কম আসন পাবে, নয়তো ১৫০ টিরও বেশি। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে বা পরে কোনো জোটে তাঁরা যোগ দেবে না। রাজ্যের সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে জন সুরাজ এবং দুর্নীতি ও মৌলিক সেবার অবনতিকে প্রধান ইস্যু করেছে।

নির্বাচনের মূল বিষয়গুলো ঘুরছে জীবিকা, বেকারত্ব, অভিবাসন, দুর্নীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাকে ঘিরে। তেজস্বী যাদবের প্রতিশ্রুতি—রাজ্যের প্রতিটি ঘরে একটি করে সরকারি চাকরি—রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। এই প্রতিশ্রুতির মানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ চাকরি।

এনডিএর দাবি, রাজ্যের আর্থিক অবস্থা এত বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো নয়। তাদের প্রতিশ্রুতি—১ কোটি চাকরি সৃষ্টি ও নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা, যার লক্ষ্য ১ কোটি নারী লাখপতি গড়ে তোলা।

আজ যে আসনগুলোতে ভোট হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই মধ্য বিহার অঞ্চলে। ২০২০ সালের নির্বাচনে এই অঞ্চলেই মহাগাঠবন্ধন জোট ভালো ফল করেছিল—১২১টি আসনের মধ্যে ৬৩ টিতে জয় পেয়েছিল তারা। বিজেপি ও নিতীশ কুমারের জেডিইউ মিলে পেয়েছিল ৫৫টি আসন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: জোহরান মামদানির জয় কি অভিজাতদের পরাজয়?

  • শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক মামদানির।
  • ব্যয়বহুল বিলবোর্ডের বদলে গেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে।
  • করপোরেট প্রভাবের বিরুদ্ধে জয়ের প্রতীক।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ১২
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিজয় স্পষ্ট হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁর সমর্থকেরা। ভোটের এই ফলকে ‘ধনীদের রাজনীতির ওপর গরিবের জয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাঁরা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ব্রুকলিন প্যারামাউন্ট থিয়েটারে। ছবি: এএফপি
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিজয় স্পষ্ট হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁর সমর্থকেরা। ভোটের এই ফলকে ‘ধনীদের রাজনীতির ওপর গরিবের জয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাঁরা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ব্রুকলিন প্যারামাউন্ট থিয়েটারে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে কয়েক মাস ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জোহরান মামদানি। বাসচালকদের সংগঠক থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা এই তরুণ যখন ভোটের মাঠে নামলেন, তখন কেউ ভাবেনি, তিনি এত দূর যাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত শক্তিশালী অভিজাতদের পরাস্ত করে হাজির হলেন বিজয়ীর বেশে। রেকর্ড গড়লেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে। হোয়াইট হাউসে যখন ট্রাম্পের মতো একজন তীব্র অভিবাসীবিরোধী প্রেসিডেন্ট, সেই সময়ে নিউইয়র্কে তাঁর মতো একজন অভিবাসী প্রার্থীর জয় নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্কের রাজনীতি ছিল করপোরেট অনুদাননির্ভর ও অভিজাত শ্রেণির নিয়ন্ত্রণে। সেখানে অভিবাসী পরিবারের সন্তান মামদানির উত্থান যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

মামদানির প্রচারের ধরন ছিল একেবারে আলাদা। অন্য প্রার্থীদের মতো তিনি ব্যয়বহুল বিলবোর্ড বা টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে যাননি। বরং চষে বেড়িয়েছেন পাড়ায় পাড়ায়, মানুষের দরজায় দরজায়। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন চোখে চোখ রেখে। জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আপনার বাড়িভাড়া কত বেড়েছে? সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি কীভাবে দিচ্ছেন?’ এই সাধারণ প্রশ্নগুলোর মধ্যেই ছিল তাঁর আসল বার্তা; রাজনীতি মানে মানুষের পাশে থাকা।

মামদানির শিকড় দক্ষিণ এশিয়ায়। বাবা উগান্ডা থেকে আসা অভিবাসী, মা ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার। জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিউইয়র্কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যুক্ত হন বাসচালকদের সংগঠনে। রাজনীতিতে আসার পরও নিজেকে পরিচয় দেন ‘কমিউনিটি অর্গানাইজার’ হিসেবে; নেতা হিসেবে নয়।

নির্বাচনের আগের মাসগুলোয় অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় দেখা গেছে ভিন্ন এক দৃশ্য। একদল তরুণ রাতে কাজ শেষে বেরিয়ে পড়েছেন পোস্টার লাগাতে। কেউ কলেজে পড়েন, কেউ দোকানে কাজ করেন। হাতে লেখা স্লোগান, মুনাফার চেয়ে জীবন গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের কণ্ঠে দৃঢ়তা, ‘আমরা এমন কাউকে চাই, যিনি আমাদের মতো।’

গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটে তাঁদের বিশ্বাস বাস্তবে রূপ নেয়। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে ছিল উপচে পড়া ভিড়। হিজাব পরা নারী, রেস্টুরেন্টকর্মী, তরুণ, অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ সবাই হাজির কেন্দ্রে। কোলের শিশু নিয়েও ভোট দিয়েছেন অনেকে। এই ভোটারদের বড় অংশের বিশ্বাস, মামদানি শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি এক নতুন আশার প্রতীক।

ভোটে মামদানির বিজয় স্পষ্ট হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন জনতা। তাঁর কার্যালয়ে উপস্থিত ভোটারদের কেউ বলছিলেন, এটা ধনীদের রাজনীতির ওপর গরিবের জয়। আবার কেউ বলেছেন, ‘আমরা এমন এক শহর তৈরি করতে চাই, যেখানে রাজনীতি মানে মানবিকতা।’

ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে ধনীদের বদলে মানুষের জন্য রাজনীতি করার প্রত্যয়ের কথা জানান মামদানি। তিনি বলেন, ‘এই বিজয় আমার নয়। এটি তাঁদের বিজয়, যাঁরা ঘর হারিয়েছেন, যাঁদের সন্তান ঋণ শোধ করতে করতে কলেজ ছেড়ে দিয়েছেন; যাঁদের চিকিৎসা বিল দিতে হিমশিম খেতে হয়।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মামদানির জয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির জন্য একটি বড় বার্তা। এটি করপোরেট প্রভাব, ধনীদের দখলদারত্ব আর দলীয় সিন্ডিকেটের রাজনীতির প্রতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত