Ajker Patrika

মাস্কের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ: ডোনাল্ড ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কয়েকদিন ধরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এর মধ্যেই আবার সম্পর্ক জোড়া লাগার গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছিল। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, মাস্কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘শেষ’। আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের আর্থিক সহায়তা দিলে মাস্ককে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মার্কিন টেলিভিশন এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বরাতে আল–জাজিরা এই খবর দিয়েছে।

মাস্ক নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের অর্থ দেবে— হঠাৎ একথা কেন উঠল, কারণ জানা যায়নি। কঠোর পরিণতি বলতে ট্রাম্প কী বুঝিয়েছেন, তাও স্পষ্ট নয়। তবে মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লাভজনক ফেডারেল চুক্তিগুলো বাতিল করার একটা হুমকি ট্রাম্প দিয়েছেন।

ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন রিপাবলিকানরা। ট্রাম্পের দলের অনেক নেতাই দুপক্ষকে আপসের আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, ক্ষমতাধর এই দুই ব্যক্তির সম্পর্কের ভাঙন মার্কিন রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক। ট্রাম্পকে এনবিসি প্রশ্ন করেছিল, মাস্কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কি শেষ হয়ে গেল। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার তাই মনে হয়।’

মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতি ও করনীতি নিয়ে মাস্কের প্রকাশ্য সমালোচনার পরই তিক্ত হতে শুরু করে দুজনের সম্পর্ক। ট্রাম্পের কর ও ব্যয়ের প্রস্তাবকে ‘জঘন্য’ বলে সমালোচনা করেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক। তাঁর ওই মন্তব্যের পর গত বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখুন, ইলনের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। জানি না, সেটা আর থাকবে কি না।’

ট্রাম্পের বক্তব্য টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার চলার সময়ই ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রতিক্রিয়া জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘অকৃতজ্ঞ’ আখ্যা দেন তিনি। মাস্ক দাবি করেন, তাঁর সহায়তা ছাড়া ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জিততে পারতেন না।

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সঙ্গে বৈঠকের সময় এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘টেসলার সিইওকে নিয়ে আমি খুব হতাশ। এখানে উপস্থিত অন্য যে কারও চেয়ে বিলটির খুঁটিনাটি সম্পর্কে ও ভালো জানে। তারপরও হঠাৎ বিলটি নিয়ে তাঁর সমস্যা!’

ট্রাম্পের এই ক্ষোভ প্রকাশকে ‘নজিরবিহীন’ বলছে অনেক পশ্চিমা গণমাধ্যম। এরপর ইলন মাস্ক ট্রাম্পের সঙ্গে প্রয়াত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টেইনের পুরনো সম্পর্কের বিষয় তুলে এক বিস্ফোরক অভিযোগ সামনে আনেন। মাস্ক দাবি করেন, সরকারের কাছে থাকা ‘অপ্রকাশিত নথিতে’ ট্রাম্পের নাম আছে বলেই সেগুলো এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের পুরনো ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আগেও বিতর্ক ছিল, যদিও ট্রাম্প সবসময় তা অস্বীকার করেছেন। মাস্ক পরে নিজের এই বিতর্কিত পোস্ট মুছে ফেলেন, তবে ততক্ষণে সেটি নিয়ে উত্তেজনার পারদ তর তর করে বেড়েছে।

উল্লেখ্য, জেফরি এপস্টেইন ছিলেন প্রভাবশালী মার্কিন উদ্যোক্তা। ২০০০-এর দশকে তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তবে প্রথম দফায় মাত্র ১৩ মাস জেল খেটে মুক্তি পান। ২০১৯ সালে ফের যৌন পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে নিউইয়র্কের কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি আত্মহত্যা করেন বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। তাঁর বিদায় উপলক্ষে ওভাল অফিসে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মাথায় কর ও ব্যয়-সংক্রান্ত বাজেট বিলকে কেন্দ্র করে দুজনের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিল। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বড় ভুল করছে মাস্ক। আমি চাই, সে আবার ফিরে আসুক। তবে, সে এতটাই ‘পারমাণবিক’ আচরণ করেছে যে হয়তো সেটা আর সম্ভব নয়।’

ট্রাম্প প্রশাসনের কর ও ব্যয়-সংক্রান্ত বাজেট বিলটি গত ২২ মে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়। মাস্ক বলেছেন, ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত বিলটি বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং সরকারি খরচ কমানোর প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত