Ajker Patrika

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোলেন ট্রাম্প 

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ২৩
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোলেন ট্রাম্প 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আইওয়া ককাসের পর নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতেও জিতেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। দলের প্রতিদ্বন্দ্বী নিক্কি হ্যালিকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপে মূলত প্রধান দুটি দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনীত করা হয়। প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দুটি পদ্ধতিতে। একটি হলো ককাস, অপরটি প্রাইমারি। ককাস হলো নির্বাচনের এমন এক পদ্ধতি, যেখানে রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক পার্টি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে দলীয় সমর্থকদের মধ্যে একটি খোলা ভোটের আয়োজনের মাধ্যমে তাদের দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করে। 

প্রাইমারি নির্বাচন হলো এমন এক পদ্ধতি, যেখানে একটি অঙ্গরাজ্যের সরকারের অর্থায়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই পদ্ধতিতে রাজ্যের ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যান এবং নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গোপন ব্যালটে ভোট দেন। প্রাইমারি নির্বাচনে আবার দুই প্রথম পদ্ধতির কথা আগেই বলা হয়েছে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো ‘ক্লোজড’ প্রাইমারি। এতে প্রধান দুই দলের জন্য আলাদা আলাদা ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য ও যেকোনো ভোটার ভোট দিতে পারেন। রিপাবলিকান প্রাইমারিতে দলটির সদস্য ও সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় ককাস, আবার বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় প্রাইমারি। কোনো অঙ্গরাজ্যে সাধারণ প্রাইমারি, আবার কোনো অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় ক্লোজড প্রাইমারি। যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্য অনুসারে সাধারণত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ককাস অনুষ্ঠিত হয় আইওয়াতে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বছরের জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারি মাসে এই ককাস অনুষ্ঠিত হয়। 

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য অনুসারে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের রিপাবলিকান প্রাইমারিতে দলের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিক্কি হ্যালির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ট্রাম্প পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ ভোট এবং হ্যালি পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ৭২ শতাংশ ভোট। 

আইওয়া ককাসেও ট্রাম্পের কাছে হেরেছেন নিক্কি হ্যালি। এবার নিউ হ্যাম্পশায়ারেও হারলেন। তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত কনকর্ডে নির্বাচন-পরবর্তী এক অনুষ্ঠানে সমর্থকদের বলেছেন, ‘এই দৌড় শেষ হয়নি।’ তিনি ট্রাম্পকে তাঁর সঙ্গে বিতর্কে আসার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘আমি একজন যোদ্ধা।’ 

এর আগে, আইওয়া ককাসে ট্রাম্প ৫১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়ে বিশাল ব্যবধানে তাঁর নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলেন। আইওয়া ককাসে ট্রাম্পের দুই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডি স্যান্টিস পেয়েছেন ২১ দশমিক ২ শতাংশ এবং নিক্কি হ্যালি পেয়েছেন ১৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। অপর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেক রামাস্বামী পেয়েছেন মাত্র ৭ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের কাছে হেরে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন রন ডিস্যান্টিস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসি শতভাগ ভুয়া ও বামপন্থী প্রচারযন্ত্র, দেখলে দিনটাই নষ্ট: ট্রাম্পের প্রেস সচিব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ ও ‘প্রচারযন্ত্র।’ সম্প্রতি সম্প্রচারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্য দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ক্যারোলিন লেভিট বলেন, যুক্তরাজ্যে সফরের সময় যখনই তিনি বিবিসির খবর দেখেন, তাঁর ‘দিনটাই নষ্ট হয়ে যায়।’ তাঁর অভিযোগ, ব্রিটিশ করদাতারা ‘বামপন্থী প্রচারযন্ত্রের’ খরচ বহনে বাধ্য হচ্ছেন।

কিছুদিন আগে, যুক্তরাজ্যের এমপিরা বলছেন, বিবিসিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ভাষণ সম্পাদনার বিষয়ে ‘গুরুতর প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।’ এর পরপরই লেভিট এই মন্তব্য করলেন। আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ফাঁস হওয়া নথির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিবিসির ‘প্যানোরামা’ নামের চলতি ঘটনাবলির এক পর্বে ট্রাম্পের ভাষণ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

নথি অনুসারে, অনুষ্ঠানটি দুইটি ভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে এমনভাবে দেখিয়েছে, যেন ট্রাম্প সমর্থকদের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি দাঙ্গার আগে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং তাঁদের ‘প্রাণপণে লড়তে’ বলছেন। কিন্তু ভাষণের যে অংশে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে ও দেশপ্রেমিকের মতো নিজেদের মত প্রকাশের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল।

বিবিসি এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে পারে বলে জানা গেছে। সংস্থার এক মুখপাত্র জানান, আগামী সোমবার বিবিসির চেয়ারম্যান সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়া কমিটিকে ‘সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা’ দেবেন। টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেভিট বলেন, ‘বিবিসির এই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিকৃত ও নির্বাচিত সম্পাদনা প্রমাণ করে তারা সম্পূর্ণ ভুয়া সংবাদমাধ্যম। যুক্তরাজ্যের জনগণের সময় নষ্ট করার মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা তাদের আর নেই।’

লেভিট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যখনই আমি যুক্তরাজ্যে যাই এবং হোটেলে বিবিসি চালাতে বাধ্য হই, তাদের প্রচারণা আর মিথ্যা শুনে আমার দিনটা বিষিয়ে যায়। তারা বারবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তাঁর আমেরিকাকে উন্নত করা ও বিশ্বকে নিরাপদ করার প্রচেষ্টা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ায়।’

টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, তাদের প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে বিবিসির সম্পাদকীয় নীতি ও মানদণ্ড বিষয়ক কমিটির সাবেক উপদেষ্টা মাইকেল প্রেসকটের লেখা এক স্মারক বা মেমোর ভিত্তিতে। প্রেসকট চলতি বছর শুরুর দিকে পদত্যাগ করেন এবং নথি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, নথিটি এক হুইসেলব্লোয়ার ফাঁস করেছেন।

প্রকাশিত অংশে বলা হয়েছে, ‘প্যানোরামায় ভাষণ সম্পাদনার ধরন সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ছিল। ট্রাম্প সরাসরি সমর্থকদের ক্যাপিটলে গিয়ে লড়ার আহ্বান দেননি—এই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে দাঙ্গা উসকানির অভিযোগে কোনো ফেডারেল মামলা হয়নি।’ নথিতে আরও বলা হয়, প্রেসকট বিবিসি আরবির গাজা যুদ্ধসংক্রান্ত প্রতিবেদনের দিকেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

টেলিগ্রাফের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রেসকট অভিযোগ করেছেন যে বিবিসির ভেতরে ‘ব্যবস্থাগত সমস্যা’ রয়েছে, যা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এখনো সমাধান করেনি। তিনি দাবি করেন, বিবিসি আরবি ও মূল বিবিসি ওয়েবসাইটের গাজা যুদ্ধ কাভারেজে ‘স্পষ্ট পার্থক্য’ রয়েছে। প্রেসকটের অভিযোগ, বিবিসি আরবি নিয়মিত এমন বিশ্লেষকদের ব্যবহার করেছে, যারা ইহুদি-বিরোধী বা হামাসপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আসামের গোয়ালপাড়ায় আরও ৫৮০ পরিবারকে উচ্ছেদ, অধিকাংশই ‘বাংলাভাষী মুসলমান’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আসামের গোয়ালপাড়ায় ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ছবি: সংগৃহীত
আসামের গোয়ালপাড়ায় ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ছবি: সংগৃহীত

আসামে ফের শুরু হয়েছে তথাকথিত উচ্ছেদ অভিযান। স্থানীয় সময় আজ রোববার সকালে পশ্চিম আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় জেলা প্রশাসন ও বন কর্তৃপক্ষ মিলে প্রায় ১ হাজার ১৪০ বিঘা (প্রায় ১৫৩ হেক্টর) জমিতে একটি বড় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের শিকার অধিকাংশই বাংলাভাষী মুসলমান। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

গোয়ালপাড়া জেলা কমিশনার প্রদীপ তিমুং বলেছেন, এই উচ্ছেদ অভিযান অন্তত দুই দিন লাগতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৫৮০টি পরিবারকে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছি। পুরো এলাকা দহিকাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এই লোকজন সেই বনভূমি দখল করে বসতি গঠন করেছিল।’

এ বছরে আসামে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান দেখা গেছে। রাজ্য সরকার বলছে, এটি ‘এক ধর্মের লোকদের জনমিতিক আগ্রাসন’ রোধ করার প্রয়াস। উচ্ছেদের ফলে যাদের ক্ষতি হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

জুলাই ও আগস্ট মাসে এই উচ্ছেদ অভিযান সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে ১৯ সেপ্টেম্বর আসামের সুপরিচিত শিল্পী গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যুর পর তাঁকে ঘিরে রাজ্যের খবর কেবলই সেই ঘটনার দিকে ঘুরে যাওয়ায় অভিযান কিছুটা থমকে পড়ে। রোববারের এই অভিযান হচ্ছে গত দুই মাসে প্রথম বড় উচ্ছেদ অভিযান।

গোয়ালপাড়া জেলায় আগেও একাধিক বড় উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ১২ জুলাই পাইকান সংরক্ষিত বনে প্রায় ১৪০ হেক্টর বনভূমি দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ চালানো হয়েছিল। আর ১৬ জুন জেলার হাসিলা বিল এলাকায় জলাভূমি দখল করে থাকা কিছু ৬০০ পরিবারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দুই দিন আগে ফেসবুক লাইভে এই উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জুবিন গার্গের মৃত্যুর পর রাজ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এবং তদন্ত নিয়ে সরকারের ওপর যে চাপ এসেছে, তা নিয়েই কিছু লোক ‘নেপালের মতো পরিস্থিতি’ তৈরি করার চেষ্টা করছে।

বিশ্বশর্মা বলেন, ‘অনেকে ভাবছিল, উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যাবে। তারা ভেবেছিল, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ওপর এত চাপ পড়েছে, তিনি আর অভিযান চালানোর সাহস দেখাবেন না। আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমি কাউকে খুশি করে দিতে পারব না। ৯ ও ১০ নভেম্বর গোয়ালপাড়ার দহিকাটা বনে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।’

কেন্দ্রীয় আসাম ফরেস্ট সার্কেল, সেন্ট্রাল আসাম সার্কেলের বন সংরক্ষক সানিদেও ইন্দ্রদেও চৌধুরী জানিয়েছেন, রোববারের অভিযানে ১ হাজারেরও বেশি বনকর্মী ও পুলিশ সদস্য নিয়োজিত ছিল। তিনি বলেন, ‘শুধু গোয়ালপাড়া জেলাতেই এ বছর আমরা উচ্ছেদ করে ৯০০ হেক্টরেরও বেশি বনভূমি পুনরুদ্ধার করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলি হামলার কুফল: গাজার মাটি-পানি বিষাক্ত, সর্বব্যাপী সংকটে ফিলিস্তিনিরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ১১
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান শহরের সেই সুপেয় পানির উৎস—শেখ রাদওয়া পুকুর। ছবি: এএফপি
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান শহরের সেই সুপেয় পানির উৎস—শেখ রাদওয়া পুকুর। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন পুরো অঞ্চলের বাড়িঘরই ধ্বংস করেনি, পরিবারগুলোকে বারবার বাস্তুচ্যুত করেছে, হাসপাতাল-ক্লিনিক গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আর এর সঙ্গে বিষাক্ত করে তুলেছে সেই মাটি ও পানি, যার ওপর নির্ভর করে টিকে আছে ফিলিস্তিনিরা।

নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির চার সপ্তাহ পেরিয়েছে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রভাবে পরিবেশের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ইসরায়েল এখনো প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে।

গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকা একসময় ছিল প্রাণচঞ্চল মহল্লা। এখন সেটি পরিণত হয়েছে এক বিরানভূমিতে। ভাঙা ঘরবাড়ির পাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকার যে পুকুরটি ছিল একসময় মানুষের পানির উৎস, সেখানে এখন জমেছে নোংরা পয়োবর্জ্য আর ধ্বংসাবশেষ। অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য এই জায়গাই এখন একদিকে আশ্রয়, অন্যদিকে বিপদ।

গর্ভবতী উম্মে হিশাম নিজের সন্তানদের নিয়ে প্রতিদিন হাঁটছেন এই দুর্গন্ধে ভরা পানির মধ্য দিয়ে। যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই তাঁদের। তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ রাদওয়ান পুকুরের পাশে আশ্রয় নিয়েছি। মশার যন্ত্রণা, বাড়তে থাকা পয়োনিষ্কাশনের পানি, চারপাশে ধ্বংসস্তূপসহ সব রকম কষ্টের মধ্যে আছি। সব মিলিয়ে আমাদের আর সন্তানদের জীবন হুমকিতে।’

বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য তৈরি সেই পুকুর এখন কাঁচা পয়োনিষ্কাশনে ভরা। ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজার পানির পাম্পগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দূষিত পানি ক্রমেই বাড়ছে, যা আশপাশের ঘরবাড়ি ও তাঁবুগুলোর কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।

গাজা সিটির পৌর কর্মকর্তারা বলছেন, পচা পানি আর মশাবাহিত রোগের আশঙ্কা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। পৌর কর্মকর্তা মাহের সালেম বলেন, ‘সব নাগরিকই মারাত্মক প্রভাবের মধ্যে। দুর্গন্ধ, মশা, পোকামাকড়—সবকিছুই ছড়িয়ে পড়েছে। পচা পানির স্তর এখন ছয় মিটারের বেশি উঁচু। নিরাপত্তা বেড়া ভেঙে গেছে। যেকোনো শিশু, নারী, বৃদ্ধ, এমনকি গাড়িও এই পুকুরে পড়ে যেতে পারে।’

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, স্থির হয়ে থাকা এই পানি থেকে রোগব্যাধি ছড়াতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। কিন্তু গাজার মানুষদের সামনে বিকল্প কিছু নেই। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ জানে কুয়া, ট্যাংক বা পানিবাহী ট্রাক থেকে যে পানি পাচ্ছে, তা দূষিত। তবু তাদের বিকল্প নেই। বেঁচে থাকার জন্য সেটাই খেতে হচ্ছে।’

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম আল-জেবেন এই সংকটকে ‘গণহত্যার সঙ্গে জড়িত এক পরিবেশগত বিপর্যয়’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, গাজা আজও ভুগছে ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার কারণে। এই যুদ্ধ প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তৈরি করেছে ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষ, যার বড় অংশই বিষাক্ত পদার্থে দূষিত।’

আল-জেবেন আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ও পয়োনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি ও উপকূলীয় পানিও দূষিত হয়েছে। এখন গাজা ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখে, পরিবেশগত ঝুঁকিও দ্রুত বাড়ছে।’ তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলায় গাজার অধিকাংশ কৃষিজমিও ‘ধ্বংস হয়ে গেছে’। ফলে অঞ্চলটি এখন ‘তীব্র খাদ্য-সংকট ও দুর্ভিক্ষে ভুগছে, যেখানে খাবারকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, গাজার সুপেয় পানির উৎস এখন ‘ভয়াবহভাবে সীমিত এবং বাকি যা আছে, তার বেশির ভাগ দূষিত।’ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার পতন, পাইপলাইন ধ্বংস এবং স্যানিটেশনের জন্য মাটির গর্ত ব্যবহারের কারণে গাজাকে পানি সরবরাহ করা ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে।’

শেখ রাদওয়ানে এখন বাতাস ভারী পচা গন্ধ আর হতাশায়। প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, ‘যখন প্রতিদিনই বাঁচার লড়াই—পানি, খাবার আর এক টুকরা রুটির জন্য, তখন নিরাপত্তা ভাবার সময় থাকে না।’

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড আল–শারা এখন ওয়াশিংটনে, আলোচনায় দামেস্ক মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: আনাদোলু
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: আনাদোলু

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা। জানা গেছে, ওয়াশিংটন এই সফরকে আইএসআইএল বা আইএসআইএসের বিরুদ্ধে দামেস্ককে বৈশ্বিক জোটে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ হিসেবে দেখছে।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে পৌঁছান আল-শারা। একই সময় সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সারা দেশে আইএসআইএল সেলের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়। আল-শারার নেতৃত্বে হায়াত তাহরির আল–শাম ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী গত বছর দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। আজ রোববার হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন আল–শারা।

বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার স্বাধীনতার পর ১৯৪৬ সালের পর এটিই কোনো সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম ঘটনা। আল-শারা গত মে মাসে রিয়াদে প্রথমবার ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত শুক্রবার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী নিষেধাজ্ঞা তালিকা’ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া-বিষয়ক বিশেষ দূত টম বারাক চলতি মাসের শুরুতে বলেন, ‘আশা করা যায়’ আল-শারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটে যোগদানের এক চুক্তিতে সই করবেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে ওয়াশিংটন-নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

অন্যদিকে, আল-শারা তাঁর সফরে সিরিয়ার পুনর্গঠনের জন্য অর্থ সাহায্য চাইবেন। টানা ১৩ বছরের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর দেশটি এখন ব্যাপক পুনর্নির্মাণ সংকটে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, পুনর্গঠনে অন্তত ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার প্রয়োজন, যা তারা ‘সর্বনিম্ন অনুমান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

আল-শারা একসময় আল-কায়েদার সিরিয়ার শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। তবে এক দশক আগে তাঁর বিদ্রোহী সংগঠন ওই নেটওয়ার্ক থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পরে আইএসআইএলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তাঁর সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামকে যুক্তরাষ্ট্র গত জুলাইয়ে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়।

আল-শারার ওয়াশিংটন সফরটি হচ্ছে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাঁর ঐতিহাসিক সফরের পর। সেসময় তিনিই ছিলেন প্রথম সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, যিনি কয়েক দশক পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ভাষণ দেন। এর ঠিক এক দিন আগে, বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক ভোটে আল-শারার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

শনিবার দামেস্কে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশজুড়ে আইএসআইএল সেলের বিরুদ্ধে অন্তত ৬১টি অভিযান চালানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, এসব অভিযানে অন্তত ৭১ জনকে আটক করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, এই অভিযানগুলো আলেপ্পো, ইদলিব, হামা, হোমস ও দামেস্কের উপকণ্ঠে চালানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সংস্থাটি জানায়, এই অভিযান চলমান ‘সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় প্রচেষ্টা এবং জননিরাপত্তা রক্ষার অংশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত