Ajker Patrika

এইচ-১বি ভিসা ফি ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে কোটি টাকা করলেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ১০
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শুক্রবার জারি করা নতুন আদেশে উচ্চ-দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য বার্ষিক ১ লাখ ডলার ভিসা ফি নির্ধারণ করেছেন। সেই সঙ্গে ধনীদের জন্য ১০ লাখ ডলারে ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা চালুরও ঘোষণা দিয়েছেন। এই পদক্ষেপগুলো কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে শিগগিরই এগুলো আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

এই নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ভিসা ফি-তে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। উচ্চ-দক্ষ কর্মীদের জন্য এইচ-১বি ভিসার বার্ষিক ফি ২১৫ ডলার (সাড়ে ৩০ হাজার টাকার কিছু বেশি) থেকে বেড়ে হবে ১ লাখ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ২১ হাজার টাকার বেশি। আর বিনিয়োগ ভিসার ফি বাৎসরিক ১০ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে ছিল। এ ধরনের ভিসা ইউরোপের অনেক দেশে খুবই সাধারণ। সেটি বাড়িয়ে মিলিয়নে নিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

অন্যদিকে, ধনীদের জন্য ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা বাবদ ১০ লাখ ডলার খরচ হবে, যার মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকত্বের পথ সুগম হবে। কোম্পানিগুলো যদি কোনো কর্মীকে স্পনসর করতে চায়, তাহলে তাদের ২০ লাখ ডলার খরচ করতে হবে। এ ছাড়া, ৫০ লাখ ডলারে ‘ট্রাম্প প্ল্যাটিনাম কার্ড’ নামে একটি নতুন ভিসা চালু হয়েছে, যা বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে ২৭০ দিন পর্যন্ত বসবাসের সুযোগ দেবে এবং এই সময়ে তাদের বিদেশি আয়ের ওপর কোনো মার্কিন কর দিতে হবে না। প্ল্যাটিনাম কার্ড চালু করতে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন।

বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে প্রতি বছর অনুমোদিত ৮৫ হাজার এইচ-১বি ভিসার কোটা পূরণ হবে না। তিনি বলেন, ‘নতুন এই ফি দেওয়ার পর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের আর এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে আনা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। আপনি যদি কাউকে প্রশিক্ষণ দিতে চান, তবে আমেরিকানদের প্রশিক্ষণ দেবেন। যদি আপনার একজন খুব উন্নত প্রকৌশলীকে আনার প্রয়োজন হয়, তবে আপনি তার এইচ-১বি ভিসার জন্য ১ লাখ ডলার খরচ করতে পারবেন।’

মন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এই পরিবর্তনের সঙ্গে একমত। তবে আমাজন, অ্যাপল, গুগল ও মেটার মতো শীর্ষ প্রযুক্তি সংস্থাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মাইক্রোসফটও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।

এইচ-১বি ভিসা সাধারণত উচ্চ-দক্ষ কাজের জন্য দেওয়া হয়, যা পূরণে মার্কিন টেক কোম্পানিগুলো প্রায়ই সমস্যায় পড়ে। সমালোচকদের দাবি, এই প্রোগ্রাম বিদেশি কর্মীদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে, যারা প্রায় ৬০ হাজার ডলার বার্ষিক বেতনে কাজ করতে ইচ্ছুক। সাধারণত মার্কিন প্রযুক্তি কর্মীদের ১ লাখ ডলারের বেশি বেতনের চেয়ে এই পরিমাণ অনেক কম।

ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ডগ র‍্যান্ড এই নীতিকে ‘হাস্যকরভাবে বেআইনি’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, এটি কেবল অভিবাসনবিরোধী মনোভাবসম্পন্নদের খুশি করার জন্য করা হয়েছে। তবে, ইউএস টেক ওয়ার্কার্সের মতো কিছু গোষ্ঠী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে এইচ-১বি ভিসা লটারির মাধ্যমে দেওয়া হয়। চলতি বছর আমাজন ১০ হাজারের বেশি ভিসা নিয়ে শীর্ষে ছিল, এরপর ছিল টাটা কনসালটেন্সি, মাইক্রোসফট, অ্যাপল ও গুগল। এ ছাড়া উইপ্রো, ইনফোসিস, এইচসিএল টেকনোলজিস ও টিসিএসের মতো ভারতীয় সংস্থাগুলো মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য বিদেশি কর্মী সরবরাহ করে।

২০২৪ সালে ভিসা লটারির আবেদন প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে, যা কর্তৃপক্ষ জালিয়াতি কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য হিসেবে দেখছে। আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) এই পরিবর্তনের প্রশংসা করেছে। তবে তারা বলেছে, আরও অনেক সংস্কার প্রয়োজন।

উল্লখ্য, ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও ১৯৯৬ সালে এইচ-১বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত