Ajker Patrika

সীমান্তে পাকিস্তানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা, ৭ পুলিশ ও ৫ জঙ্গি নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে টিটিপির হামলা বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে টিটিপির হামলা বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া ডেরা ইসমাইল খানে একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ৭ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে এই হামলা হয়। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী তীব্র সংঘর্ষের পর পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে পাঁচ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।

আজ শনিবার কাউন্টার-টেররিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি) এই হামলার সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর আগে শুক্রবার রাতে পুলিশ জানিয়েছিল, প্রাথমিক সংঘর্ষে এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীসহ তিনজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

সিটিডি-এর প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শোরকোট থানা এলাকার পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে এই হামলা হয়।

পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলাটি সুপরিকল্পিত ছিল। প্রথমে ‘ফিতনা আল খাওয়ারেজ’ সন্ত্রাসীরা (নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি-এর জন্য পাকিস্তান সরকার এই শব্দ ব্যবহার করে) বিস্ফোরক বোঝাই একটি ট্রাক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গেটে ধাক্কা মারে। এতে প্রাচীর ধসে পড়ে। এই প্রাথমিক হামলায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।

এরপর ভারী অস্ত্র ও হ্যান্ডগ্রেনেড নিয়ে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। পুলিশ বাহিনী পাল্টা জবাব দিলে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক গোলাগুলি চলতে থাকে।

সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ হামিদ সিদ্দিকী জানান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাছেই অবস্থিত জাতীয় ডেটাবেইস ও রেজিস্ট্রেশন অথোরিটির একটি অফিসও সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দিয়েছে।

হামলার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেই জেলা পুলিশ কর্মকর্তা (ডিপিও) বড় কন্টিনজেন্ট নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরে নিরাপত্তা বাহিনীও অভিযানে যোগ দেয়।

পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী, পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এই যৌথ অভিযানে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী ৫ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে এবং তাদের কাছ থেকে আত্মঘাতী জ্যাকেট, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।

সন্ত্রাসীরা বিতাড়িত হওয়ার পর সেখানে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চলছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাইবার পাখতুনখাওয়া বেশ কয়েকটি অঞ্চলে, যেমন—বান্নু, পেশোয়ার, কারাক, লাক্কি মারওয়াত এবং বাজাউর—সন্ত্রাসী হামলার তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে এই হামলাগুলো চালানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এই হামলার ঠিক একদিন আগেই ডেরা ইসমাইল খান অঞ্চলে একটি অভিযানে একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন এবং গত বুধবার রাতেও পুলিশের একটি চেকপোস্টে চতুর্দিক থেকে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়।

পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে খায়বার পাখতুনখাওয়া প্রদেশই ছিল সন্ত্রাসবাদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। সেখানে ৪৫টি হামলায় ৫৪ জন নিহত এবং ৪৯ জন আহত হয়েছেন। ২০২২ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করার পর থেকেই পাকিস্তানজুড়ে, বিশেষ করে খায়বার পাখতুনখাওয়া এবং বেলুচিস্তানে, পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে লক্ষ্য করে হামলার তীব্রতা বেড়েছে।

এই টিটিপির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে পাকিস্তান। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে তালেবান সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত