Ajker Patrika

পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধনে ক্ষুব্ধ আরেক বিচারপতির পদত্যাগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা। ছবি: সংগৃহীত
লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা। ছবি: সংগৃহীত

সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস করেছে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট। এর জেরে গত বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এরপর আজ শনিবার লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিতর্কিত ২৭তম সংশোধনীর পর দেশের কোনো হাইকোর্ট থেকে পদত্যাগ করা প্রথম বিচারপতি তিনি।

বিচারপতি শামস মাহমুদের পরিবারসূত্রে জানা গেছে, তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন, সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনের পর ‘বিবেকের তাড়নায় আর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না’।

বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা ২০১৪ সালের মার্চে লাহোর হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল ২০২৮ সালের ৬ মার্চ।

তিনি প্রয়াত বিচারপতি জিয়া মাহমুদ মির্জার পুত্র। বিচারপতি জিয়া ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফারুক আহমদ খান লাঘারি যখন বেনজির ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন, তখন সাত বিচারপতির মধ্যে একমাত্র বিচারপতি জিয়া ভিন্নমত (ডিসেন্টিং) পোষণ করেছিলেন। তিনি তাঁর রায়ে মত দেন, লাঘারির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ছিল।

প্রসঙ্গত, সে সময় পাকিস্তানের সংবিধানের ৫৮(২)(বি) অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত সরকার বরখাস্ত করার ক্ষমতা দিত। পরে ১৮তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটি বাতিল করা হয়।

লাহোর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এলএইচসিবিএ) এক বিবৃতিতে বিচারপতি মির্জার পদত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনীর কঠোর সমালোচনা করেছে। অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করে, সংশোধনীটি ‘উচ্চ আদালতকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে’ এবং ‘সংবিধানের কবর রচনা করেছে’।

এলএইচসিবিএ অন্য বিচারপতিদেরও একই পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়েছে। তাঁরা বলেছেন, যেসব বিচারপতি সংবিধানের প্রতি আনুগত্য রেখে শপথ নিয়েছেন, তাঁরা যদি পদত্যাগ করেন, পুরো আইনি সম্প্রদায় তাঁদের সম্মান জানাবে।

অ্যাসোসিয়েশন সোমবার পূর্ণ দিবস ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। এদিন জরুরি মামলার শুনানি বাদে আদালতের সব কার্যক্রম বর্জন করবেন আইনজীবীরা।

বিচারপতি মির্জার পদত্যাগটি আসে সংশোধনী পাস হওয়ার দুই দিন পর। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (আইসিজে) এই ২৭তম সংশোধনীকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছে।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র দুই বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ও আতহার মিনাল্লাহ পদত্যাগ করেন। তাঁরা দুজনেই ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র ভাষায় লেখা পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের সম্ভাব্য বদলির গুজবের মধ্যে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মোহসিন আখতার কায়ানি ও বিচারপতি সামান রাফাত ইমতিয়াজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী মাস থেকে তাঁরা ফেডারেল রাজধানীতে মামলা শুনানির জন্য উপস্থিত না-ও থাকতে পারেন।

নতুন ২৭তম সংশোধনী পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থায় দুটি বড় পরিবর্তন এনেছে। প্রথম, সংবিধান-বিষয়ক মামলা। দ্বিতীয়ত, বিচারপতিদের বদলি।

এই সংশোধনী অনুযায়ী, পাকিস্তানের জুডিশিয়াল কমিশন এখন বিচারপতিদের সম্মতি ছাড়াই হাইকোর্টের বিচারপতিদের এক আদালত থেকে অন্য আদালতে বদলি করতে পারবে। বিচার বিভাগের একটি অংশ বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে।

সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হলো ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট (এফসিসি) গঠন করা। দেশটির আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন আদালত সুপ্রিম কোর্টকে কার্যত দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক বিচারিক কর্তৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।

এফসিসি এখন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে এবং এর সিদ্ধান্তগুলো সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।

নতুন ১৮৯ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টকে এখন কেবল নাগরিক (সিভিল) মামলার সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...