Ajker Patrika

কুখ্যাত মাচ কারাগারের ভয়ংকর ‘মরিচ’ ওয়ার্ডই ইমরান খানের সম্ভাব্য ঠিকানা

আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ২৩: ০৩
কুখ্যাত মাচ কারাগারের ভয়ংকর ‘মরিচ’ ওয়ার্ডই ইমরান খানের সম্ভাব্য ঠিকানা

ইসলামাবাদের একটি আদালতে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পরই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তাঁর লাহোরের বাড়ি জামান পার্ক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

শনিবার গ্রেপ্তারের পরই কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ইমরানকে লাহোরের কোট লখপাত জেলে নিয়ে যায় পুলিশ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী তাঁকে রাজধানী ইসলামাবাদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ইসলামাবাদের আদিয়ালা কারাগারে প্রাথমিকভাবে রাখা হবে। ইতিমধ্যেই ওই কারাগারের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইমরানের সমর্থকেরা যেন সেখানে ভিড় না করেন—সে জন্য কারাগারটির আশপাশের রাস্তাগুলোতে ব্যারিকেডও দেওয়া হয়েছে। 

তবে কিছু সূত্র দাবি করেছে, ইমরান খানকে বেলুচিস্তানের মাচ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখারই পরিকল্পনা করেছে সরকার। রাজনৈতিক বন্দীদের রাখার জন্য কারাগারটি ব্রিটিশ আমল থেকেই কুখ্যাত। 

সম্প্রতি ইমরান খানও এক বক্তব্যে আশঙ্কা করেছিলেন যে, সরকার তাঁকে কুখ্যাত মাচ কারাগারে রাখার পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়া গত বছরের নভেম্বরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সাইফুল্লাহ বলেছিলেন, যদি ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয় তবে তাঁকে মাচ কারাগারেই রাখা হবে। শুধু তাই নয়—ওই জেলের কোন ওয়ার্ডে ইমরানকে রাখা হবে তা-ও উল্লেখ করেছিলেন সাইফুল্লাহ। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ইমরান খানের সম্ভাব্য গন্তব্য হতে যাচ্ছে মাচ কারাগারের ৯ নম্বর ওয়ার্ডটি। 

পাকিস্তানি গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বেলুচিস্তানের কোয়েটা শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বোলান জেলায় মাচ কারাগারটির অবস্থান। ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ আমলে এটি তৈরি হয়েছিল। শুধু কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নয়, দেশের সবচেয়ে কুখ্যাত কারাগার হিসেবেও এর পরিচিতি রয়েছে। আর এই কারাগারের সবচেয়ে কুখ্যাত ওয়ার্ড বিবেচনা করা হয় সেই ৯ নম্বর ওয়ার্ডকেই। কুখ্যাতির জন্য উর্দু ভাষায় ওই ওয়ার্ডটিকে বলা হয় ‘মির্চি’ বা মরিচ ওয়ার্ড। 

তবে ওই ওয়ার্ডটি কেন ‘মির্চি’ ওয়ার্ডের খ্যাতি পেল, সে সম্পর্কে জানতে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখতে হবে। ইতিহাস বলছে, ইমরান খানের আগেও ওই ওয়ার্ডে হাই-প্রোফাইল অনেক রাজনৈতিক বন্দীদের রাখা হয়েছিল। তাঁদের বেশির ভাগই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ কিংবা আন্দোলন করে কারাবরণ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন—নবাব আকবর বুগতি, নবাব খায়ের বখশ মারি, সরদার আত্তাউল্লাহ মেঙ্গল, সাদিক ইমরানি এবং সাংবাদিক সিদ্দিক বালুচের মতো ব্যক্তিরা।

কারাগারটির অবস্থান অনেক দূরবর্তী এলাকায় হওয়ায় এবং পাকিস্তানের অন্যতম উষ্ণতম অংশে হওয়ায় প্রায় সময়ই এটিকে কুখ্যাত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের সেলুলার জেলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। 

জানা যায়, ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ কিংবা আন্দোলন করে যাঁরা ধরা পড়তেন তাঁদের বেশির ভাগেরই ঠিকানা হতো ওই মাচ কারাগার। 

আরেকটি বিষয় হলো—স্বাধীনতাকামী বন্দীদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন জেল-জুলুম এবং নির্মম নির্যাতনের পরও যাদের টলানো যেত না কিংবা যাঁরা ভেঙে পড়তেন না। একগুঁয়ে ওই সব বন্দীর জন্যই কারাগারের এক কোণে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তৈরি হয়েছিল ৯ নম্বর বা মির্চি ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে বন্দীদের খাবারে সাধারণত বেশি করে মরিচ বা ঝাল দেওয়া হতো, যেন খেতে গিয়েও তাঁরা খুব কষ্ট পান। এ থেকেই ওয়ার্ডের নামও মির্চি ওয়ার্ড হিসেবে পরিচিতি পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত