Ajker Patrika

সৌদি আরবে মাদকবিরোধী যুদ্ধ, শাস্তি ও পুনর্বাসন চলছে সমানতালে

সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আটক করা মাদক। ছবি: এএফপি
সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আটক করা মাদক। ছবি: এএফপি

জেদ্দার বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি নির্মাণ সামগ্রীর মধ্য থেকে কয়েক মিলিয়ন অ্যামফিটামিন (শক্তিবর্ধক মাদক) পিল উদ্ধার করে। তার কয়েক দিন পরেই জর্ডান সীমান্তে সৌদি আরবে সীমান্তরক্ষীরা ট্রাকের ফুয়েল ট্যাংক ও স্পেয়ার টায়ারে লুকানো ৩ লাখেরও বেশি ক্যাপটাগন ট্যাবলেট উদ্ধার করেন। দক্ষিণ-পশ্চিম নাজরানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হাশিশ ও অ্যামফিটামিন চোরাচালানের অপরাধে ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে গত নভেম্বর মাসে।

সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই মাদক চোরাচালানকারীদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। চোরাকারবারিরা জর্ডান ও ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সৌদি আরবের দীর্ঘ মরু সীমান্ত পেরিয়ে সৌদি আরবের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে।

সৌদি চিকিৎসক ও গবেষকেরা বলছেন, মাদক ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, এটি আংশিকভাবে সেই সামাজিক অস্থিরতার ফল—যা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে ব্যাপক সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তনে কারণে ঘটছে। তাদের মতে, এ কারণে সৌদি সমাজের কিছু অংশ আগের থেকে অনেক বেশি নাজুক হয়ে পড়েছে।

মাদকের ব্যবহার নিয়ে সরকারি উদ্বেগ মাদকবিরোধী কৌশলে বেশ পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরবে। দেশটি প্রথমবার যারা মাদকাসক্ত হয়, তাদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করা এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল অন্যতম। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সৌদি আরব প্রায় ১০০ জনকে মাদক সম্পর্কিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। অথচ, ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২ জন।

সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ সৌদি আরবে ২ লাখের বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মাদক গ্রহণ করে থাকে। গবেষকেরা বলছেন, মাদকাসক্তদের পরিমাণ বাড়ার মূল কারণ হতে পারে যুবরাজ মোহাম্মদ সৌদি আরবকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে যে ভিশন—২০৩০ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন তারা ফলাফল।

মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কারের আওতায় কনসার্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। যার ফলে দ্রুতহারে বিনোদনের বিকল্প সৃষ্টি হয়েছে এবং নারীরা জনজীবনে দ্রুত একীভূত হতে পেরেছেন। এ ছাড়া, নারীরা একা এখন গাড়িও চালাতে পারেন। তবে মদ এখনো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ দেশটিতে।

সৌদি আরবের আবদুল-আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আলা নাবিল মাহসুন গত বছর সৌদি আরবে মাদক ব্যবহার নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বড় ধরনের সামাজিক পরিবর্তন তরুণদের নতুন স্বাধীনতার সঙ্গে পরিচিত করলেও একই সঙ্গে পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে তাদের টেনে করার জন্য একটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে—যা পরিবারগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বৃদ্ধি করেছে এবং তরুণেরা মাদকদ্রব্যের প্রতি আকর্ষিত করেছে।

মাহসুন বলেন, তার গবেষণায় পাওয়া সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো, নারীরা পুরুষদের তুলনায় দীর্ঘ সময় ধরে মাদক ব্যবহার করে থাকে। তিনি বলেন, ‘নারীদের ওপর সামাজিক চাপ অনেক বেশি। নারীদের সুযোগ ও স্বাধীনতার প্রসার ঘটেছে, তবে পারিবারিক স্তরে চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। কিছু পরিবার এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ধীর গতিতে কাজ করছে, যা বিশেষ করে তরুণীদের জন্য উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।’ মাহসুন আরও বলেন, ‘কিছু নারীরা নিজ বাড়িতেও নিরাপত্তা বা পরিপূর্ণতার অনুভূতি অনুভব করেন না। তাই যখন তারা মাদক পায়, তারা সেগুলো আঁকড়ে ধরে।’

সৌদি আরবজুড়ে বিভিন্ন ধরনের মাদক পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ দেশটির পূর্বাঞ্চলের এক চিকিৎসক বলেন, তিনি হাশিশ ও ক্রিস্টাল মেথ ব্যবহারের ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন। কারণ, সেগুলো খাওয়া সহজ এবং লুকিয়ে রাখা সহজ। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, এটি একটি বাড়তে থাকা সমস্যা।’

তবে বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো ক্যাপটাগন। এটি এমন এক ধরনের সিনথেটিক মাদক যা সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সৌদি আরবে এর বিস্তার ব্যাপক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে দেশটির কর্তৃপক্ষ মাদকবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক নিউ লাইনস ইনস্টিটিউটে ক্যাপটাগন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেই গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক ক্যারোলাইন রোজ বলেন, যদিও গত বছর ক্যাপটাগন জব্দের পরিমাণ কমে গেছে। এমনটা হয়েছে, সম্ভবত মাদকবিরোধী অভিযান সফল হওয়ার কারণে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, পাচারের পেছনে থাকা আন্তসীমান্ত অপরাধীচক্রগুলোও আরও উন্নত কৌশল ব্যবহার শুরু করেছে।

ক্যারোলাইন রোজ বলেন, ‘সৌদি আরব হলো শীর্ষ চাহিদা ও গন্তব্য। তাই এ কারণে পাচারকারীরা যতটা সম্ভব নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করবে। এখনো দেশটির ভেতরে একটি সক্রিয় নেটওয়ার্ক কাজ করছে। তারা বাইরের অপরাধীচক্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে এবং মূলত সৌদি আরবের সামুদ্রিক এবং স্থল সীমান্ত এড়িয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে।’

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল দেশটি মানবাধিকার উন্নত করার প্রচেষ্টায় পানি ঢেলে দিয়েছে। এ বিষয়ে অ্যামনেস্টির গবেষক ডানা আহমেদ বলেন, ‘এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার প্রতিরোধক শক্তি হিসেবে কাজ করে।’

এদিকে, সৌদি কর্তৃপক্ষ কঠোর শাস্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মাদকসেবীদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করেছে। সৌদি আইন সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাহায্য নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে না। ২০২০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোকে লাইসেন্স দিতে শুরু করে।

সৌদি আরবের প্রথম বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্র কাওয়েমের প্রধান নির্বাহী খালিদ আল-মাশারি বলেন, ‘এটি একটি নতুন ঘটনা, তবে চিকিত্সার চাহিদা বিদ্যমান সুযোগের চেয়ে অনেক বেশি।’ সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘এর সহজ কোনো সমাধান নেই। এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। আপনি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তবে চিকিৎসা করা কঠিন।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভাবুন তো, আপনার স্কুটারের দাম এক লাখ টাকা। কিন্তু হেলমেট ও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আপনাকে জরিমানা করা হলো ২৮ লাখ টাকা! কেমন হবে ব্যাপারটা? আশ্চর্যজনক মনে হলেও, এমনি এক ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরে। হেলমেট ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ায় এক স্কুটিচালককে জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ২১ লাখ রুপি! বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা!

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পরে জরিমানার চালানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, ওই চালককে জরিমানা করা হয়েছে ২০ লাখ ৭৪ হাজার রুপি। তবে পরে পুলিশ জানায়, তাদের ভুল হয়েছে। ওই ব্যক্তির প্রকৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল চার হাজার রুপি।

গত মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার নিউ মান্ডি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আনমোল সিংহল নামের ওই ব্যক্তি হেলমেট ছাড়াই স্কুটার চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও ছিল না।

পথে পুলিশ তাঁর স্কুটারটি জব্দ করে এবং তাঁকে ২০ লাখ ৭৪ হাজার রুপির চালান দেয়। অস্বাভাবিক এই পরিমাণ দেখে বিস্মিত আনমোল সিংহল জরিমানার চালানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। ছবিটি ছড়িয়ে পড়তেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরপর পুলিশ দ্রুত চালানের পরিমাণ সংশোধন করে চার হাজার রুপিতে নামিয়ে আনে।

মুজাফফরনগরের ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ অতুল চৌবে জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টরের অসাবধানতার কারণে চালানে ভুল হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘মোটরযান আইনের ২০৭ ধারায় ৪ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু সাব-ইন্সপেক্টর ২০৭-এর পর মোটরযান আইন শব্দটি লেখেননি।’

এর ফলে ২০৭ ও ৪০০০ (যা ওই ধারার অধীনে ন্যূনতম জরিমানার পরিমাণ) মিলে হয়ে যায় ২০ লাখ ৭৪ হাজার রুপি। অতুল চৌবে আরও জানান, ওই ব্যক্তির প্রকৃত আসল জরিমানা মাত্র চার হাজার রুপি।

উল্লেখ্য, ভারতে মোটরযান আইনের ২০৭ ধারা অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে পুলিশ জরিমানার পাশাপাশি কোনো যানবাহন জব্দ করার ক্ষমতা রাখে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছবি: সংগৃহীত
দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ শহরে ডাকাতির উদ্দেশ্যে জুয়েলারির দোকানে ঢুকেছিলেন এক নারী। তবে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ তো হয়ইনি; উল্টো দোকানদারের কাছ থেকে ২৫ সেকেন্ডে কমপক্ষে ২০টি চড় খেয়েছেন তিনি।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া দৃশ্যে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুখে ওড়না পেঁচিয়ে আহমেদাবাদের রানিপ এলাকায় সবজি বাজারের কাছে এক গয়নার দোকানে ক্রেতা সেজে প্রবেশ করেন ওই নারী। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তিনি দোকানদারের চোখে মরিচের গুঁড়া ছুড়ে মারার চেষ্টা করেন। কিন্তু মরিচের গুঁড়া দোকানদারের চোখে লাগেনি।

পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দোকানদার উঠে দাঁড়িয়ে ওই নারীকে একের পর এক চড় মারতে শুরু করেন—২৫ সেকেন্ডে অন্তত ২০ বার। এরপর তিনি কাউন্টার টপকে ওই নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁকে টেনে বাইরে নিয়ে যান এবং আরও চড় মারতে থাকেন।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দোকানদার। তবুও সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে ওই নারীর খোঁজে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

রানিপ থানার পুলিশ পরিদর্শক কেতন ভাস বলেন, ‘দোকানদার অভিযোগ করছেন না। তবে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আমরা ওই নারীকে শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তি আলোচনা ব্যর্থ, পাকিস্তানকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলল তালেবান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ। ছবি: সংগৃহীত
তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ। ছবি: সংগৃহীত

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে তালেবান সরকার। তবে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ সত্ত্বেও তালেবান জানিয়েছে, আগে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বহাল থাকবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার কোনো সমাধান ছাড়াই তৃতীয় দফা আলোচনা শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ আগে তালেবান দাবি করে, সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছেন।

দুই দিনব্যাপী আলোচনা ‘সদিচ্ছার সঙ্গে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, দুই দিনের আলোচনা সৎ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল। তালেবান আশা করেছিল, ইসলামাবাদ ‘একটি মৌলিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বাস্তবসম্মত এবং বাস্তবায়নযোগ্য দাবি’ পেশ করবে।

কিন্তু তিনি অভিযোগ করেন, আলোচনায় পাকিস্তান তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার দায় সম্পূর্ণভাবে আফগান সরকারের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে অথচ আফগানিস্তানের নিরাপত্তা কিংবা নিজেদের দায়িত্ব পালনে কোনো সদিচ্ছা দেখায়নি।

মুজাহিদ বলেন, পাকিস্তান আলোচনায় ‘দায়িত্বহীন ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব’ দেখিয়েছে, ফলে আলোচনার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তালেবান যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেনি এবং সেটি বহাল থাকবে।

অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকার তালেবানের বিবৃতির তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে শুক্রবার ইসলামাবাদও স্বীকার করে, যে আলোচনা অচলাবস্থায় রয়েছে। তবে কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, ইসলামাবাদ ‘আফগান জনগণ বা প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে তালেবান সরকারের কোনো পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না।’

পাকিস্তানের অভিযোগ, কাবুল সরকার ২০২১ সালের দোহা শান্তি চুক্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে—বিশেষত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। ইসলামাবাদের দাবি, আফগানিস্তান পাকিস্তানি তালেবানের (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি) মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানে একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।

এসব হামলার জবাবে পাকিস্তান আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বেশ কিছু বিমান হামলা চালায়। তবে তালেবান পাকিস্তানের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা কোনো দেশকে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে অন্য দেশের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড চালাতে দেব না, তেমনি অন্য কোনো দেশকেও আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা বা নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করতে দেব না।’

জবিউল্লাহ আরও বলেন, পাকিস্তানের জনগণ আমাদের বন্ধু ও ভাই, কিন্তু ‘যেকোনো আগ্রাসনের জবাবে আফগানিস্তান দৃঢ়ভাবে প্রতিরক্ষা করবে।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের প্রথম দিকে শুরু হওয়া লড়াইয়ে আফগান সীমান্ত এলাকায় ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। কাবুলে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তালেবানের হামলায় তাদের ২৩ জন সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন। তবে বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনী সহিংসতার পর তানজানিয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ছড়াছড়ি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৭
তানজানিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামে ২৪০ জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
তানজানিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামে ২৪০ জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী সহিংসতার পর কমপক্ষে ২৪০ জন বিক্ষোভকারীকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে তানজানিয়ার একটি আদালত।

পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে গত ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সামিয়া সুলুহু হাসান ৯৮ শতাংশ ভোটে জয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে বিরোধী দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ায় তারা এ নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করে।

ভোটের ফলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বলা হচ্ছে, শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সহিংসতার ব্যাপ্তি কমিয়ে দেখিয়েছে এবং দাবি করেছে, নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ ছিল।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর বহু মানুষকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে অন্তত ২৪০ জনের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার তানজানিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়। আদালতে তাদের এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন জানাতে বলা হয়নি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিযুক্তরা নির্বাচনে বাধা দেওয়ার উদ্দেশে বিক্ষোভ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে তানজানিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বদলে সাধারণত তা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত করা হয়।

দেশটিতে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে।

গতকাল যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আফ্রিকার দেশটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জেনিফার জোভিন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শ্যাল থেকে রক্ষা পেতে বিক্ষোভকারীদের গ্যাস মাস্ক কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

অভিযুক্তদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ নভেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত