Ajker Patrika

ক্লিওপেট্রার সময়ের নৌবন্দর মিলল মিসরের সাগরতলে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৭
প্রায় দুই দশক ধরে অনুসন্ধানের পর মিসরের সমুদ্রতলে প্রাচীন এই বন্দরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ছবি: ন্যাট জিওর সৌজন্যে
প্রায় দুই দশক ধরে অনুসন্ধানের পর মিসরের সমুদ্রতলে প্রাচীন এই বন্দরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ছবি: ন্যাট জিওর সৌজন্যে

প্রায় দুই দশক ধরে অনুসন্ধানের পর মিসরের সমুদ্রতলে প্রাচীন এক বন্দরের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা রানি ক্লিওপেট্রার সময়কার বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই আবিষ্কারকে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লিওপেট্রার হারানো সমাধির সন্ধানে নতুন দিক হিসেবে দেখছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মিসরের পর্যটন ও প্রত্নকর্ম মন্ত্রণালয় এই আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। তাদের মতে, টাপোসিরিস ম্যাগনা শুধু একটি ধর্মীয় কেন্দ্রই ছিল না, বরং ছিল একটি সমৃদ্ধ সমুদ্র বাণিজ্যিক কেন্দ্রও।

ডোমিনিকান রিপাবলিকের আইনজীবী থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক হওয়া ক্যাথলিন মার্টিনেজ দীর্ঘকাল ধরে ক্লিওপেট্রার সমাধি খুঁজছিলেন। অধিকাংশ প্রত্নতাত্ত্বিক মনে করেন, ক্লিওপেট্রা তাঁর জন্ম ও শাসনকাল কাটানো আলেকজান্দ্রিয়ার রাজপ্রাসাদের কাছেই সমাহিত রয়েছেন। কিন্তু মার্টিনেজের ধারণা, তাঁর সমাধি অন্য কোথাও লুকানো। মার্টিনেজের এ ধারণা তাঁকে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে প্রায় ৩০ মাইল পশ্চিমে বোর্গ এল আরব শহরে অবস্থিত টাপোসিরিস ম্যাগনা মন্দিরে নিয়ে যায়।

মার্টিনেজ বলেন, এটি প্রমাণ করে, মন্দিরটির গুরুত্ব অনেক। এখানেই হয়তো ক্লিওপেট্রা তাঁর প্রিয় রোমান নেতা মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন।

২০২২ সালে মার্টিনেজ ও তাঁর দল মন্দিরে ক্লিওপেট্রার শাসনামলের নিদর্শনসহ প্রায় ৪ হাজার ৩০০ ফুট দীর্ঘ এক সুড়ঙ্গ খুঁজে পান, যা সাগরের দিকে এগিয়েছে। সুড়ঙ্গটি আংশিকভাবে পানিতে তলিয়ে ছিল এবং এর ভেতর থেকে টলেমীয় যুগের মাটির পাত্র ও মৃৎশিল্প পাওয়া যায়।

সম্প্রতি পানির নিচের আবিষ্কারের সঙ্গে এসব মিলিয়ে মার্টিনেজ বলেন, বন্দরটি ক্লিওপেট্রার সময়েও সক্রিয় ছিল। এই অনুসন্ধানে সহায়তা দেন টাইটানিকের আবিষ্কারক সামুদ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক বব ব্যালার্ড। তাঁর নেতৃত্বে পানির নিচে বৃহদাকার মানবসৃষ্ট স্থাপনা, মসৃণ পাথরের মেঝে, নোঙর এবং গ্রিক-রোমান যুগের অ্যামফোরা পাত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।

মার্টিনেজ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘ডুবুরিরা বন্দরের সন্ধান পেয়েছে। ২ হাজার বছর পর আমরা প্রথম মানুষ হিসেবে এখানে পা রাখলাম।’

ক্লিওপেট্রার জীবন ও মৃত্যু

খ্রিষ্টপূর্ব ৬৯ অব্দে জন্ম নেওয়া ক্লিওপেট্রা মাত্র ১৮ বছর বয়সে মিসরের সিংহাসনে বসেন এবং টলেমীয় সাম্রাজ্যের সর্বশেষ সক্রিয় শাসক (ফারাও বা ফেরাউন) হিসেবে পরিচিতি পান। ইতিহাসবিদদের মতে, তিনি ছিলেন দারুণ প্রভাবশালী এবং রোমানদের চোখে ‘প্রলোভনসুন্দরী’ (একই সঙ্গে বিপজ্জনক, সুন্দরী ও প্রলুব্ধকারী)। জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর ক্লিওপেট্রা ১১ বছর মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে প্রেম ও রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১ অব্দে গ্রিস উপকূলে অক্টাভিয়ানের সঙ্গে নৌযুদ্ধে পরাজিত হয়ে অ্যান্টনি আত্মহত্যা করেন। এরপর বন্দী হওয়ার ভয়ে ক্লিওপেট্রাও আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হয়, তবে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, তা আজও রহস্য।

ইতিহাসে উল্লেখ আছে, অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রাকে আলেকজান্দ্রিয়ায় নিজ সমাধিতে একসঙ্গে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আজও কোনো সমাধি পাওয়া যায়নি। পরে বিভিন্ন সময়ে বড় ভূমিকম্প ও সুনামিতে শহরের অনেকাংশ পানির নিচে চলে যায়।

মার্টিনেজ মনে করেন, ক্লিওপেট্রা রোমানদের চোখ এড়িয়ে অন্যত্র নিজের দেহ গোপন করেছিলেন। এই বিশ্বাসে তিনি ২০০৫ সাল থেকে টাপোসিরিস ম্যাগনায় খনন শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তাঁরা সোনায় মোড়ানো মমি, মৃৎপাত্র এবং ক্লিওপেট্রার প্রতিকৃতিখচিত ৩ শতাধিক মুদ্রা পেয়েছেন।

গবেষকদের মতে, নতুন আবিষ্কৃত বিশাল পাথরের গঠন, স্তম্ভ ও ভাস্কর্যের ভগ্নাংশগুলো সরাসরি টাপোসিরিস ম্যাগনার সঙ্গে সম্পর্কিত। ব্যালার্ড ও তাঁর দল এরই মধ্যে প্রায় ছয় মাইলজুড়ে সমুদ্রতলের মানচিত্র তৈরি করেছেন। মার্টিনেজ বিশ্বাস করেন, ক্লিওপেট্রার সমাধি খুঁজে পাওয়া এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। তিনি বলেন, ‘আমরা ভূমি ও সমুদ্র—দুই দিকে অনুসন্ধান চালিয়ে যাব। এটাই আমাদের বিশাল কাজের শুরু।’

তথ্যসূত্র: ন্যাট জিও

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাঝ আকাশে হাত ভাঙল বিমানের কেবিন ক্রুর, অঙ্গহানির আশঙ্কা

বাংলাদেশ ভ্রমণে উচ্চমাত্রার সতর্কতা জারি করল কানাডা

এরদোয়ানকে খলিফা উমর (রা.)-এর সঙ্গে খ্রিষ্টানদের চুক্তিপত্রের প্রতিলিপি উপহার দিলেন জেরুজালেমের পাদরি

আ.লীগের মিছিল না ঠেকিয়ে খাওয়াদাওয়া, তিন পুলিশ কর্মকর্তা ক্লোজড

রাজশাহীতে পিস্তল হাতে ভাইরাল ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশের দাবি—নজরে আসেনি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত