Ajker Patrika

ইসরায়েলি আগ্রাসন: গাজায় শান্তি, না যুদ্ধের ফাঁদ

  • চুক্তি অনুযায়ী আগে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, পরে ধাপে ধাপে জিম্মি বিনিময় শুরু হবে
  • গাজায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০০টি ত্রাণের ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে
  • এর আগে বাইডেন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ স্থগিত করলেও থামেনি ইসরায়েল
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলা বন্ধ হওয়ায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ঘরে ফিরছেন। গতকাল খান ইউনিস এলাকায়। ছবি: এএফপি
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলা বন্ধ হওয়ায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ঘরে ফিরছেন। গতকাল খান ইউনিস এলাকায়। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় দুই বছর ধরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের মধ্যস্থতায় অবশেষে গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়েছে তারা। গতকাল শুক্রবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন দেয় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা। দৃশ্যত এর মধ্য দিয়ে গাজায় আপাতত যুদ্ধবিরতির পথ উন্মুক্ত হলো। তবে সহায়, সম্বল আর স্বজন হারানো গাজাবাসীর কাছে এখন বড় প্রশ্ন, এই যুদ্ধবিরতি কি আসলেই উপত্যকায় শান্তি ফেরাবে? নাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে নিয়ে নতুন আগ্রাসনের ছক কষবে ইসরায়েল?

বিবিসির খবরে বলা হয়, ওয়াশিংটনে ট্রাম্প প্রশাসনের এক বৈঠক চলাকালে যুদ্ধবিরতির খবর আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘চুক্তি হয়ে গেছে, এখনই ঘোষণা দিতে হবে।’ এরপরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিভি ক্যামেরার সামনে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দেন।

তিন দিনের পরোক্ষ আলোচনার পর মিসরের শারম আল-শেখে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাসের সঙ্গে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছায় ইসরায়েল। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের আলাদা কক্ষে বসানো হয়েছিল। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে তাগিদ বাড়াতে নিজের জামাতা জ্যারেড কুশনারকে পাঠান ট্রাম্প। ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূতও। তুরস্ক, কাতার ও মিসরের গোয়েন্দাপ্রধানেরাও আলোচনায় যোগ দেন।

চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং ধাপে ধাপে জিম্মি বিনিময় শুরু হবে। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটক ব্যক্তিদের বিনিময়ে।

আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) কিছুটা পিছু হটেছে। তবে ইসরায়েল সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বর্তমানে পুরো গাজা উপত্যকা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ শতাংশ এলাকা থেকে সেনারা সরে আসবে। এ ছাড়া মানবিক সহায়তার জন্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০০টি ত্রাণের ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা এই ত্রাণ বিতরণ করবে।

রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর এই চুক্তিতে সম্মত হওয়াকে একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এর বাস্তবায়ন হবে যথেষ্ট জটিল। হামাস চায়, গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি সরে যাক। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসের এই চাওয়া কখনো পূরণ হবে না।

হামাস কিছু ভারী অস্ত্র ত্যাগে রাজি হলেও হালকা অস্ত্র রাখার ওপর জোর দিয়েছে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু চান দলটির শতভাগ নিরস্ত্রীকরণ এবং হামাসকে পুনরায় শক্তি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ না দেওয়া। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, কেবল জিম্মিদের ফিরিয়ে আনাই যথেষ্ট নয়, বরং হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে হবে। দৃশ্যত এই সাংঘর্ষিক লক্ষ্যগুলোই ভবিষ্যতে সহিংসতার উপজীব্য হয়ে দাঁড়াবে।

এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এক প্রস্তাবেও কিছু শর্তে রাজি হয় হামাস। তবে এর বিনিময়ে তারা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং পুনরায় আক্রমণ না করার নিশ্চয়তা দাবি করে। কিন্তু তাদের এমন দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানান নেতানিয়াহু। এ দফায় ট্রাম্প হয়তো তাঁর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নেতানিয়াহুকে আলোচনায় বসাতে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু স্থায়ী শান্তি ফেরাতে তা কার্যকর হবে, সেটি এখনই বলা কঠিন।

এ ক্ষেত্রে বিশ্লেষকেরা অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছেন। এর আগে বাইডেন ইসরায়েলে কিছু সামরিক সামগ্রী সরবরাহ স্থগিত করলেও তাতে ইসরায়েলের নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ওই স্থগিতাদেশের পরও গাজায় একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে গেছে দখলদার বাহিনী।

এবার অবশ্য কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলি হামলাকে কেন্দ্র করে আরব বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। চুক্তির জন্য এটিও এক নাটকীয় মোড় ছিল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

দোহায় ওই হামলার পর ট্রাম্প ইসরায়েলের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং নেতানিয়াহুকে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোন করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। পরে ট্রাম্প কাতারের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। কেননা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি কাতারে এবং ট্রাম্প প্রশাসন দেশটিকে আরব বিশ্বে নিজের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং জনমত এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। গত দুই বছরে গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। পূর্বপুরুষের বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এমন বর্বরতায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়ে ইসরায়েল। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বেরিয়ে যান বিশ্বের অধিকাংশ দেশের নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিসিএসে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে প্রশ্ন, নেই মুক্তিযুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ও নিখোঁজ বহু

‘কারা লুঙ্গি তুলে চেক করে মানুষ মেরেছে, তা সবারই জানা’

স্বামীকে হত্যার পর ইয়াবা সেবন করে লাশ টুকরো করেন স্ত্রী ও প্রেমিক

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মারা গেছেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত