Ajker Patrika

বিবিসির প্রতিবেদন /সিরিয়া মিশনে এমন পরিণতি রাশিয়ার বৈশ্বিক মর্যাদায় বড় ক্ষত

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৩০
২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদকে সহায়তা করতে হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছিল রাশিয়া। ছবি: এএফপি
২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদকে সহায়তা করতে হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছিল রাশিয়া। ছবি: এএফপি

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দীর্ঘ ২৪ বছরের শাসনের লজ্জাজনক পতন ঘটেছে। সপরিবারে দেশ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বন্ধুদেশ রাশিয়ায়। ক্রেমলিনের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ‘মানবিক কারণে’ আসাদ ও তাঁর পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে মস্কো।

প্রায় এক দশক ধরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে বাশার আল-আসাদের ক্ষমতায় থাকার পেছনের শক্তি ছিল রুশ সামরিক শক্তি, যা পাল্টে গেল গত ২৪ ঘণ্টায়। সিরিয়ায় রাশিয়ার কোনো ভূমিকাই কাজে লাগল না। তবে, মস্কো সিরিয়ার ঘটনাগুলো গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদকে সহায়তা করতে হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছিল রাশিয়া। যার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল নিজের বৈশ্বিক অবস্থানকে সুসংহত করা। পশ্চিমের শক্তি ও প্রভাবের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে সিরিয়াই ছিল ভ্লাদিমির পুতিনের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন রাশিয়ার জন্য একটি বড় আঘাত। এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রভাব এবং ভূমধ্যসাগর ও আফ্রিকাজুড়ে শক্তি প্রদর্শনের সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেবে।

সামরিক সহায়তার বিনিময়ে রাশিয়াকে হামিমিম বিমান ঘাঁটি ও তারতুস নৌঘাঁটি ৪৯ বছরের ইজারা দেয় আসাদ সরকার। প্রেসিডেন্ট পুতিন ২০১৭ সালে সিরিয়ার হামিমিম বিমান ঘাঁটিতে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর সিরিয়া মিশন সফল হয়েছে।

যদিও ২০১১ সালের পর রুশ বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিক হতাহত হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছিল, তবুও সিরিয়ায় নিজের প্রভাব নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, তারা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেশটিতে নিজেদের সামরিক কার্যক্রম দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল।

রাশিয়া পূর্ব ভূমধ্যসাগরে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি পেয়ে আফ্রিকায় সামরিক ঠিকাদারদের অর্থাৎ বিশেষ করে ভাগনার গ্রুপের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত করেছিল।

সিরিয়া সরকারের পতনের পর এখন মস্কোর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রুশ ঘাঁটিগুলো। আসাদের মস্কোয় পৌঁছানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়, রুশ কর্মকর্তারা সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সিরিয়ায় রুশ ঘাঁটিগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। বর্তমানে এগুলোর জন্য কোনো গুরুতর হুমকি নেই বলে দাবি করেছেন তাঁরা। সিরিয়ার ভূখণ্ডে রুশ সামরিক ঘাঁটি এবং কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিদ্রোহী নেতারা।

মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধু ছিলেন বাশার আল–আসাদ। ক্রেমলিন তাঁর ওপর প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল। তাঁর ক্ষমতাচ্যুত হওয়া রাশিয়ার জন্য বেশ বড় ধাক্কাই বলা চলে। তবুও তাঁরা বিষয়টিকে অন্যভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন, বলা যায় দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।

গতকাল রোববার রাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রধান সাপ্তাহিক সংবাদ অনুষ্ঠানে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই না করার জন্য সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা হয়। উপস্থাপক ইয়েভগেনি কিসেলভ বলেন, সিরিয়া সরকারের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে, তা সবাই দেখতে পাচ্ছিল। কিন্তু আলেপ্পোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো লড়াই না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা যেত, সেসব এলাকায় একে একে আত্মসমর্পণ করা হয়েছে এবং পরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও বিদ্রোহীদের তুলনায় তাদের (সিরিয়ার সেনাবাহিনী) সামরিক সরঞ্জাম বেশি ছিল এবং তারা সংখ্যায়ও ছিল অনেক বেশি। এটা রহস্যজনক!

উপস্থাপক দাবি করেন, রাশিয়া সব সময় সিরিয়ায় পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের আশা করেছিল। অবশ্যই আমরা সিরিয়ায় যা ঘটছে তা নিয়ে উদাসীন নই। কিন্তু আমাদের অগ্রাধিকার হলো রাশিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তা। বিশেষ সামরিক অভিযান অঞ্চলে (ইউক্রেনের যুদ্ধ) যা ঘটছে সেদিকেই ইঙ্গিত করেন তিনি।

আসাদের পতনে যে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার বেশ বড় শক্তি খর্ব হলো, সেই বার্তা রাশিয়ার পক্ষ থেকেই স্পষ্টভাবে দেওয়া হচ্ছে। গত ৯ বছর ধরে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখার জন্য যে প্রচুর সম্পদ ব্যয় করেছে রাশিয়া, তা যে পুরোটাই জলে গেছে এবং এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে নজর দেওয়া উচিত, সেটা এখন রাশিয়ার জনগণকে ভাবতে বলা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত