Ajker Patrika

তুর্কি ব্যবসায়ীর ইয়টে প্রমোদভ্রমণে ট্রাম্পের কন্যা–জামাতা, নেপথ্যে বেয়াইয়ের লিবিয়া তেলচুক্তির সমীকরণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
টিফানি ট্রাম্প ও মাইকেল বুলোস। ছবি: এএফপি
টিফানি ট্রাম্প ও মাইকেল বুলোস। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা টিফানি ট্রাম্প ও তাঁর স্বামী মাইকেল বুলোসের বিলাসবহুল ইয়টে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোকে ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁরা সম্প্রতি গ্রীষ্মকাল কাটিয়েছেন ভূমধ্যসাগরে বিলাসবহুল এক ইয়টে ভ্রমণ করে। ইয়টের মালিক তুরস্কের ব্যবসায়ী এরকুমেন্ত বায়েগান, যিনি লিবিয়ার তেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

এই ভ্রমণের সময় মাইকেলের বাবা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত মাসাদ বুলোসও লিবিয়ার জ্বালানি খাত নিয়ে সক্রিয় ছিলেন। কূটনীতিকদের মতে, ট্রাম্প ও তাঁর আত্মীয়দের পরিবারের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য স্বার্থ সংঘাতের শঙ্কা তৈরি করছে।

টিফানি ও মাইকেল ফরাসি রিভিয়েরায় ভ্রমণ করেছেন ফিনিক্স–২ নামের ইয়টে। এটি এরকুমেন্ত বায়েগান ও তাঁর স্ত্রী রুয়া বায়েগানের মালিকানাধীন। ইয়ট ব্যবহারের জন্য বুলোস পরিবার ভাড়া দিয়েছে কি না, তা নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে সর্বশেষ যখন ইয়টটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল, তার সাপ্তাহিক খরচ ছিল ১৪ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি।

টিফানি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চতুর্থ সন্তান। বুধবার ব্রিটিশ রাজপরিবার আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে বাবার পাশে স্বামী মাইকেলসহ তাঁকে দেখা গেছে। মাসাদ বুলোস লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি মিশিগান অঙ্গরাজ্যে আরব-আমেরিকান সম্প্রদায়কে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরে তাঁকে ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং আফ্রিকার বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়।

তবে প্রশাসনের ভেতরে ভিন্ন মত রয়েছে তাঁর ভূমিকা নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি নিয়মিত কূটনৈতিক প্রক্রিয়া এড়িয়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করেছেন এবং ব্যক্তিগত ব্যবসার স্বার্থকে কূটনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছেন।

মিডল ইস্ট আই প্রথমে জানায়, মাসাদ কাতারের দোহায় গোপনে লিবিয়ার এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। আলোচনায় ছিল ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ থাকা লিবিয়ার কয়েক শ কোটি ডলার তহবিল মুক্ত করার পরিকল্পনা। বিনিময়ে সেই অর্থের একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর কাছে পৌঁছাবে, যারা লিবিয়ায় জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে কাজ করছে। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমস এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে এমন উদ্যোগ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের লিবিয়া-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করতে পারে।

২০১১ সালে ন্যাটো সমর্থিত বিদ্রোহে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন ও হত্যার পর দেশটি অস্থিরতায় নিমজ্জিত হয়। দেশটি এখনো কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। রাজধানী ত্রিপোলিভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার ও পূর্বাঞ্চলে সাবেক জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন সরকার পরস্পরের অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত। ২০১৯ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে হাফতার ত্রিপোলি দখলের চেষ্টা করেন। এতে তুরস্ক জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন করে এবং রাশিয়া, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত হাফতারকে সমর্থন জানায়। মূলত লিবিয়ার বিপুল তেলসম্পদ ঘিরেই এই সংঘাতের আবর্তন।

এ সময় মাসাদ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেন ইব্রাহিম দেবাইবার সঙ্গে, যিনি লিবিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ত্রিপোলিভিত্তিক প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দেবাইবার আত্মীয়। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, জুলাই মাসে লিবিয়ায় জ্বালানি চুক্তি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করার পর মাসাদ ও ইব্রাহিম সমুদ্রপাড়ের এক ভিলায় ব্যক্তিগত নৈশভোজ সারেন।

গত আগস্টে মিডল ইস্ট আই আরও জানায়, গাজা থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় নেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ইব্রাহিম যুক্ত ছিলেন। তবে মাসাদ সেই আলোচনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।

ফিনিক্স ২–এ টিফানি ও মাইকেলের ভ্রমণ বুলোস পরিবারের প্রথম বিলাসবহুল ইয়ট-ভ্রমণ নয়। নিউইয়র্ক টাইমস গত আগস্টে জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরেক জামাতা ও সাবেক উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারও একটি ইয়ট কিনতে গিয়ে প্রতারিত হন। তিনি বাজারমূল্যের চেয়ে আড়াই মিলিয়ন ডলার বেশি পরিশোধ করেছিলেন। ইয়টটি বিক্রি করেছিল বুলোস পরিবারের এক আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠান, যেখানে মাইকেল কাজ করতেন।

কূটনৈতিক অঙ্গনে মাসাদ আরব নেতাদের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছেন। মিসর তাঁর লিবিয়া কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্ট। গত জুলাইয়ে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইয়েদ তিউনিসে বৈঠকের সময় তাঁকে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘মানবতার জেগে ওঠার সময় এসেছে।’ গাজার যুদ্ধ নিয়ে এ বক্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, কারণ ওয়াশিংটন ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে আসছে।

নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে, গত গ্রীষ্মে মাসাদ মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মরক্কোর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়, তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে।

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটি ফেরত চান ট্রাম্প, লক্ষ্য চীনের পারমাণবিক স্থাপনা

শেষ ওভারে নবির ছক্কাবৃষ্টি, বাংলাদেশের সমীকরণ কী দাঁড়াল

সেনা আশ্রয় ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী

দিয়াবাড়ির কাশবনে নারীর অর্ধগলিত লাশ, মৃত্যু ১০-১২ দিন আগে: পুলিশ

স্ত্রী পুরুষ নন—আদালতে প্রমাণ করতে হবে মাখোঁকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত