Ajker Patrika

পরমাণু চুক্তি না মানলে ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি: ইরানকে সৌদি আরবের সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ১২: ৫৮
ইরানের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমান। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমান। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত পরমাণু চুক্তি মেনে নেওয়ার জন্য ইরানকে সতর্ক করেছে সৌদি আরব। তেহরানকে রিয়াদ বলেছে, হয় ট্রাম্প প্রস্তাবিত পরমাণু চুক্তি মেনে নাও, নইলে ইসরায়েলি হামলার জন্য প্রস্তুত হও। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে দুটি দেশের সরকারি সূত্র এবং দুই ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান তেহরানে ইরানি কর্মকর্তাদের এক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরমাণু চুক্তি আলোচনার প্রস্তাবকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করুন, কারণ এটি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকি এড়ানোর একটি উপায়।

আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় ৮৯ বছর বয়সী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ তাঁর পুত্র প্রিন্স খালিদ বিন সালমানকে এই সতর্কবার্তা দিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে পাঠান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত ১৭ এপ্রিল ইরানের প্রেসিডেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উপস্থিত ছিলেন।

প্রিন্স খালিদের তেহরান সফরের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বাদশাহ সালমানের এই গোপন বার্তার বিষয়বস্তু এর আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি। অপর চারটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্রিন্স খালিদ ইরানি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দীর্ঘ আলোচনার প্রতি ধৈর্য খুব কম।

ট্রাম্প এর এক সপ্তাহ আগে অপ্রত্যাশিতভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চলছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প। নেতানিয়াহু তখন ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার জন্য সমর্থন আদায় করতে।

প্রিন্স খালিদ তেহরানে সিনিয়র ইরানি কর্মকর্তাদের জানান, ট্রাম্প দ্রুত একটি চুক্তি করতে চাইছেন এবং আলোচনার সুযোগ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের সূত্র দুটি জানিয়েছে, সৌদি আরবের মন্ত্রী যুক্তি দেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করা ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার মুখে পড়ার চেয়ে ভালো হবে।

উল্লিখিত দুটি উপসাগরীয় সূত্র এবং আলোচনার বিষয়ে অবগত এক জ্যেষ্ঠ বিদেশি কূটনীতিক বলেছেন, গাজা ও লেবাননের সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণে অঞ্চলটি এমনিতেই বিপর্যস্ত। তাই নতুন করে উত্তেজনা বাড়লে তা আর সহ্য করতে পারবে না অঞ্চলটি।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘায়ী রয়টার্সের প্রতিবেদনটিকে ‘সম্পূর্ণ অস্বীকার’ করেছেন। সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষও মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স খালিদের এই সফর ছিল দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সৌদি রাজপরিবারের কোনো জ্যেষ্ঠ সদস্যের প্রথম ইরান সফর। রিয়াদ ও তেহরান দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল এবং প্রায়শই প্রক্সি যুদ্ধে একে অপরের বিরোধী পক্ষকে সমর্থন করত। তবে ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা হয়, যা উত্তেজনা প্রশমনে সাহায্য করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে।

বৈরুতের কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের ইরান বিশেষজ্ঞ মোহনদ হাজ আলী রয়টার্সকে বলেন, তেহরানের দুর্বলতা সৌদি আরবকে তাদের কূটনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে আঞ্চলিক সংঘাত এড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা (সৌদিরা) যুদ্ধ এড়াতে চায়। কারণ, যুদ্ধ এবং ইরানের সঙ্গে সংঘাত তাদের ওপর এবং তাদের অর্থনৈতিক ভিশন ও আকাঙ্ক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

প্রিন্স খালিদের বার্তার প্রভাব ইরানের নেতৃত্বের ওপর কতটা পড়েছে, তা রয়টার্স নির্ধারণ করতে পারেনি। চারটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে পেজেশকিয়ান জবাব দেন যে, ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমাতে একটি চুক্তি চায়। তবে সূত্রগুলো আরও জানায়, ইরানি কর্মকর্তারা ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনার প্রতি ‘অননুমেয়’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, কূটনীতি ব্যর্থ হলে ইরানের ধর্মীয় শাসনব্যবস্থার পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি সামরিক শক্তি ব্যবহার করবেন। ইরানি সূত্রগুলোর একটি জানিয়েছে, পেজেশকিয়ান তেহরানের চুক্তি করার প্রবল আগ্রহের ওপর জোর দিয়েছেন। তবে ইরান কেবল ট্রাম্প একটি চুক্তি চাইছে বলে, পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বিসর্জন দিতে রাজি নয়।

ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চলমান আলোচনা দীর্ঘ দশকের পরমাণু বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ইতিমধ্যেই পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পরমাণু সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ও অন্যান্য মূল বিষয়সহ একাধিক বাধা এখনো রয়ে গেছে। রয়টার্স বুধবার জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জব্দ করা তহবিল অবমুক্ত করে এবং বেসামরিক ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম পরিশোধন করার তাদের অধিকারকে ‘রাজনৈতিক চুক্তির’ এর অধীনে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে পারে।

এদিকে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন—হয় একটি চুক্তি করুন, নয়তো গুরুতর পরিণতি ভোগ করুন এবং পুরো বিশ্ব তাঁকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে। তাদেরও (ইরানের) এমনটা করা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে বললেন সেনা কর্মকর্তা

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা: উত্তপ্ত রংপুর, সেনা জিজ্ঞাসাবাদে নেতারা

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট বাজারে, পাবেন যেসব ব্যাংকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত