Ajker Patrika

গাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে হামাস, ট্রাম্পের ‘অনুমতির’ পর শত শত সেনা-পুলিশ মোতায়েন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৩
গাজায় টহলরত হামাসের এক সদস্য। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় শিশুরা। ছবি: এএফপি
গাজায় টহলরত হামাসের এক সদস্য। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় শিশুরা। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গাজা উপত্যকার আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে নেমেছে হামাস। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সকাল থেকে অঞ্চলটির বিভিন্ন অংশে সশস্ত্র যোদ্ধা ও পুলিশ মোতায়েন করেছে সংগঠনটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, দক্ষিণ গাজার এক হাসপাতালে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির সময় হামাস যোদ্ধারা পাহারায় দাঁড়িয়ে আছে। একই সঙ্গে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে গুলিবর্ষণ ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবরও পাওয়া গেছে। হামাস-সম্পৃক্ত টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো বলেছে, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের ‘সহযোগী ও বিশ্বাসঘাতক’ স্থানীয় মিলিশিয়ারা।

তবে হামাসের এই অবস্থান বর্তমান যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে হুমকির মুখে ফেলবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এতে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজায় মোতায়েন হতে যাওয়া আঞ্চলিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর কাজ নিয়ে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হামাস আসলে ‘যুদ্ধবিরতির সীমার মধ্যেই’ কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘তারা সমস্যাগুলো বন্ধ করতে চায়, এ বিষয়ে তারা খোলামেলা। আমরা তাদের কিছু সময়ের অনুমতি দিয়েছি... প্রায় ২০ লাখ মানুষ ভেঙে যাওয়া ভবনে ফিরে যাচ্ছে। এতে নানা ঝুঁকি আছে। আমরা চাই পরিস্থিতি নিরাপদ থাকুক। আমার মনে হয়, ঠিকই থাকবে; তবে নিশ্চিতভাবে কে বলতে পারে।’

সোমবার হামাস ২০ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়ে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে। একই সময়ে ইসরায়েলও প্রায় ২ হাজার বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে, যাঁদের মধ্যে ২৫০ জনের ছিল দীর্ঘ মেয়াদের সাজা।

রোববার থেকে শত শত ট্রাক খাদ্য, ওষুধ ও বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে গাজায় প্রবেশ করছে। এতে বাজারে পণ্যের দাম কমে গেছে। চলতি বছরের আগস্টে গাজার কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল। সহায়তাকারী সংস্থাগুলো বলছে, বিপুল পরিমাণ ত্রাণ এখনো জরুরি প্রয়োজন।

তবে সংঘর্ষ আর ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর পক্ষে এসব সহায়তা বিতরণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। লুটপাটেও ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনারা ইতিমধ্যে নতুন অবস্থানে সরে গেছে এবং এখন গাজার অর্ধেকের বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।

উপত্যকার বড় অংশই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার বেশির ভাগ মানুষ এখন উপকূলীয় আল মাওয়াসি এলাকা, মধ্যাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলো এবং গাজা সিটিতে আশ্রয় নিয়েছে। গত মাসে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা ও ত্রাণকর্মীরা বলেছিলেন, হামাস এসব এলাকায় এখনো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে, যদিও তারা প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না।

তবে দুই বছরের সংঘর্ষে হামাস ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে। সংগঠনের অধিকাংশ শীর্ষ ও মধ্য পর্যায়ের কমান্ডার নিহত হয়েছেন, সঙ্গে হাজারো যোদ্ধা। পুলিশকেও ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। বহু কারাগার ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। সশস্ত্র পরিবার, গোষ্ঠী, দস্যু ও স্থানীয় মিলিশিয়ারা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

গত সপ্তাহান্তে ইসরায়েল-সমর্থিত নতুন এক মিলিশিয়া গোষ্ঠীর নেতা হোসাম আল-আস্তাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘হামাসের ইঁদুরদের বলছি—তোমাদের সুড়ঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে, তোমাদের অধিকার শেষ। দেরি হওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করো। আজ থেকে হামাসের অস্তিত্ব নেই।’

সোমবার আল জাজিরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থানরত ইসরায়েল-সমর্থিত ‘পপুলার ফোর্সেস’ গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাবও এখন বিপদে। তার সংগঠনের সদস্যদের ওপর শাস্তিমূলক হামলার খবর পাওয়া গেছে।

এক হামাস নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আবু শাবাবকে ধরতে অভিযান চলছে এবং তার এক সহযোগীকে সম্প্রতি ’হত্যা করা হয়েছে’।

ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা অভিযান চলছে এবং তা আরও জোরদার হবে, যতক্ষণ না এই অধ্যায় পুরোপুরি শেষ হচ্ছে। কোনো পক্ষকে আইনের বাইরে কিছু করার অনুমতি দেওয়া হবে না।

গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এলাকায় ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের’ চেষ্টা করছে। তবে যারা কোনো হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়, তাদের জন্য ‘আত্মসমর্পণ ও সাধারণ ক্ষমার দরজা খোলা আছে’।

বিবৃতিতে বলা হয়, সব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে, যাতে তাদের আইনগত ও নিরাপত্তাজনিত অবস্থা নিষ্পত্তি করা যায় এবং তাদের মামলা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়।

সোমবার ইসরায়েলি বন্দীদের রেডক্রসের গাড়িতে পৌঁছে দিতে যেসব যোদ্ধাকে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে কেবল একজনের পোশাকে হামাসের চিহ্ন ছিল। তার কাঁধে ছিল হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জুদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রতীক।

হামাসের পতাকা ও হেডব্যান্ড অনুপস্থিত ছিল, যা বছরের শুরুর দিকের বন্দী বিনিময় অনুষ্ঠানের তুলনায় স্পষ্ট পার্থক্য। সেই সময় হামাসের প্রকাশ্য প্রদর্শনকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভাঙার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে

এরদোয়ানের বাধায় নেতানিয়াহুকে মিসরের সম্মেলনে নিতে পারলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেলেও ফিলিস্তিনে ফিরছেন না ১৫৪ জন, যেতে হবে ‘অমানবিক’ নির্বাসনে

রাজধানীতে ডিপ ফ্রিজ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

ইসরায়েলি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ইরানের দিকে ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়ালেন ট্রাম্প

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত