Ajker Patrika

গাজায় মানবিক বিপর্যয়, তবু কাউকে গুনছে না ইসরায়েল

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৪, ১১: ৪৫
গাজায় মানবিক বিপর্যয়, তবু কাউকে গুনছে না ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে গুলির ঘটনায় যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড় বইছে, তখনো খান ইউনিসসহ বেশ কিছু এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে গোলাবর্ষণ ও গুলি। ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে পুরো গাজা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে থাকলেও কাউকেই পাত্তা দিচ্ছে না দেশটি। 

গাজা শহরে ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর বৃহস্পতিবার গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ১১২ জন নিহত হয়। এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে আরও ৮১ জন নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৯৩ জন নিহত হয়েছে। একই দিনে আহত হয়েছে ৯২০ জন। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে ৩০ হাজার ২২৮ জন নিহত এবং ৭১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হলো। 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার খান ইউনিসে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। দেশটির প্রতিরক্ষাবাহিনী দাবি করেছে, ‘সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো ভেঙে দিতে’ এই অভিযান চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেখানে ট্যাংক থেকে যেমন গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে, তেমনি বিমান হামলাও চালানো হচ্ছে। 

একই দিনে গাজার সীমান্তবর্তী রাফাহেও বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় কমপক্ষে দুজন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রাফাহ এলাকায় বিমান হামলা চালানোর আগে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। 

দুই ইসরায়েলি নিহত
গাজা ছাড়া ফিলিস্তিনের আরেক অঞ্চল পশ্চিম তীরেও অভিযান চালায় ইসরায়েল। তবে শুক্রবার পশ্চিম তীরের একটি গ্যাস স্টেশনে বন্দুকধারীর গুলিতে দুই ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বন্দুকধারী ব্যক্তি এলির গ্যাস স্টেশনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে দুই ইসরায়েলি নিহত হয়। পরে বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করে সেনারা। 

দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে
এদিকে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, যুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন না হয়, তবে সেখানে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থার (ওসিএইচএ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একবার যদি সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়, তবে অনেক মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে যাবে। 

ওসিএইচএর মুখপাত্র জেনস লায়েরকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি চাই না। এমন কোনো পরিস্থিতি হওয়ার আগেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

বাধা যুক্তরাষ্ট্রের
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে একাধিকবার ভেটো দেওয়ার পর এবার নিন্দা প্রস্তাবও আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় অন্তত ১১২ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব উঠেছিল। তবে এই প্রস্তাব আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সদস্য দেশগুলো গাজায় মানবিক সহায়তার গাড়িবহরে হামলার প্রতিক্রিয়ায় একটি বিবৃতি জারি করার বিষয়ে আলোচনা করেছিল। তবে রুদ্ধদ্বার অধিবেশনের পরেও কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। 

আনাদোলুর প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মন্তব্য সংবলিত একটি খসড়া প্রস্তাব জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী মিশন থেকে অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। খাদ্যসহায়তার অপেক্ষায় থাকা ভিড়ের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল খসড়া প্রস্তাবে। এতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা এবং মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল। 

নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা ইসরায়েলকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুবিধার্থে সীমান্ত খোলা রাখার জন্য এবং বৃহত্তর পরিসরে মানবিক প্রয়োজন মেটাতে অতিরিক্ত ক্রসিংগুলো খোলার জন্য অনুরোধ করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত