Ajker Patrika

সাহায্যের আশায় এক অমানবিক পরিস্থিতি এখন গাজায়

আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯: ৩২
গাজায় অনেক পরিবার একদিন খেতে পারলে, পরের দিন খেতে পারেনা। ছবি: সংগৃহীত
গাজায় অনেক পরিবার একদিন খেতে পারলে, পরের দিন খেতে পারেনা। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর হার উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিল, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে না দিলে তারা ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। কিন্তু এরপরেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে আজ রোববার এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, গাজার পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত গাজায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ ট্রাক প্রবেশ করেছে। যা আগের মাসের তুলনায় সামান্য বেশি। তবে এটি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এই সহায়তার পরিমাণ সর্বনিম্ন।

গাজায় কর্মরত জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) সিনিয়র অফিসার লুইস ওয়াটারিজ বলেন, ‘সহায়তা পৌঁছানোর অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখানে এক ট্রাক সহায়তা আসাও সৌভাগ্যের বিষয়। আজ খেতে পারলেও অনেকেই জানে না, তাঁদের পরিবার পরের দিন খেতে পারবে কি না।’

গাজার কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ অঞ্চলের অধিকাংশ বাসিন্দা জোরপূর্বক স্থানান্তরের শিকার, সেখানকার পরিস্থিতি আরও করুণ। স্থানীয় বেকারিগুলো খাদ্যের অভাবে, জনতার চাপে ভেঙে পড়ছে। গত ২৯ নভেম্বর খাদ্য বিতরণের সময় শ্বাসরোধে তিনজনের মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে গাজায় ময়দার সংকট মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক বস্তা ময়দার দাম ১৬২ ডলার।

গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ‘গাজার মানবিক পরিস্থিতি’ উন্নত করতে ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। তবে শর্ত সত্ত্বেও ইসরায়েলের ওপর সামরিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধ করেনি। বরং, মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগগুলো বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। নভেম্বর ১৩ থেকে ডিসেম্বর ১০ এর মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘের সহায়তা পৌঁছানোর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

১ ডিসেম্বর, ইউএনআরডব্লিউএ নিরাপত্তাজনিত কারণে গাজার প্রধান প্রবেশপথ কারেম আবু সালেম দিয়ে ত্রাণ পরিবহন বন্ধ করে। পরবর্তী সময় যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরায়েল গাজার বিকল্প রুট খুলে দিতে সম্মত হয়। তবে এই এখানেও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ত্রাণ পরিবহন সুরক্ষায় নিয়োজিত ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলের বাহিনী। আর ৭০টি ট্রাকের কনভয়ের মাত্র একটি ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। বাকি ট্রাকগুলো পথেই লুট হয়ে যায়।

অক্সফামের পলিসি প্রধান বুশরা খালিদি বলেন, ‘গত এক মাসে ৬৭টি ট্রাক গাজায় পৌঁছাতে পেরেছে। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। আর ইসরায়েল যে সীমান্তে ত্রাণ ফেলে রেখে চলে যাবে, তা-ও যথেষ্ট নয়। সমস্ত ভূমি পথ খুলে দিতে হবে এবং গাজায় নিরাপদ সহায়তা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’

গাজায় বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেক সাহায্য সংস্থার কর্মীরাও মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। খালিদি আরও বলেন, ‘আমি আমার বাচ্চাদের দৌড়াতে বা খেলতে নিষেধ করেছি। কারণ, তারা দিনে মাত্র একবার খাবার পাচ্ছে।’

মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, গাজার এই ভয়াবহ সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দ্রুত এবং কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত