Ajker Patrika

গাজায় টাকার জন্য হাহাকার, ২৮০০ শেকেল হয়ে গেছে ১৩৫০

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২২: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজায় চলমান যুদ্ধ, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং খাদ্যসহ জরুরি পণ্যের তীব্র সংকটের মধ্যে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ, স্থানীয় বাজারে ডিজিটাল লেনদেনও প্রায় অগ্রহণযোগ্য। গাজার বাসিন্দাদের তাই নিজেদের নগদ অর্থ হাতে পেতে নির্ভর করতে হচ্ছে একধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক ও ক্রমশ শোষণমূলক অর্থ বেচাকেনার ওপর। এই বেচাকেনায় কমিশনের হার ৫৫ শতাংশ পর্যন্তও পৌঁছে গেছে!

যুদ্ধের মধ্যে জাবালিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে এখন গাজা শহরের আল নাসর এলাকায় আছেন ৪২ বছরের কামেল আবু হাজা। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রতি মাসে ২ হাজার ৮০০ শেকেল দেয়। কিন্তু নগদ তুলতে গিয়ে হাতে আসে মাত্র ১ হাজার ৩৫০ শেকেল। বাকিটা চলে যায় নগদ কারবারিদের পকেটে।’

হাজা জানান, তিনি পুরো টাকাটাও যদি পেতেন, তারপরও তাঁর চলত না। কারণ, ময়দার কেজি এখন ৩০ শেকেল, আর চিনি ২০০।

এ বিষয়ে আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর আগে মোটা অঙ্কের নগদ হাতে থাকা ব্যবসায়ীরা এখন অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন। ব্যাংক বন্ধ থাকায় বিপুল অঙ্কের টাকা মজুত রাখার ঝুঁকি এড়াতে তাঁরা একাধিক মধ্যস্বত্বভোগী কারবারির মাধ্যমে নগদ বিক্রি করছেন। এই টাকা কয়েক ধাপ পাড়ি দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে অস্বাভাবিক দামে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ ক্রেতারা প্রথমে কারবারির অ্যাকাউন্টে ইলেকট্রনিকভাবে টাকা পাঠান, পরে নগদ হাতে পান—তাও অনেক কাটছাঁটের পর।

গাজায় নগদ অর্থের এক ক্ষুদ্র কারবারি জানান, বড় সরবরাহকারীদের কারণেই এভাবে অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা হয়তো ৬-১০ শতাংশ নেই বাঁচার জন্য। কিন্তু যারা ওপরে আছে, তারা নেয় ৪৫ শতাংশ, কখনো তারও বেশি। আজ আমি ৪৩ শতাংশ কমিশনে নগদ কিনে ৫২ শতাংশে বিক্রি করেছি, তা না হলে চলেই না।’

ক্রেতাদের মধ্যে ৩৫ বছরের মোয়ামেন আল ঘারবাওয়ি জানান, তাঁর বিদেশে থাকা ভাইরা প্রতি মাসে ৭০০ ডলার পাঠান। কিন্তু কমিশনের কারণে সেটি নগদে তুলতে পারছেন না। গত মাসে কমিশন ছিল ৩৮ শতাংশ, এ সপ্তাহে তা বেড়ে ৫৫ শতাংশ। অর্ধেকের বেশি টাকা কমিশনেই চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আটজনের পরিবার। খাবার নেই, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য বিশেষ খাবার কিনতে পারি না।’

গাজার আইনি গবেষক ও সমাজকর্মী আবদুল্লাহ শরশারা এই প্রক্রিয়াকে অবৈধ ও অনৈতিক বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চুক্তিভঙ্গ এবং ফিলিস্তিনি আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি অবিলম্বে ফিলিস্তিনি মুদ্রা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন—যেমন সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্ট জব্দ, ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু ও সংগঠিত করা।

বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞেরাও একমত—এই পরিস্থিতি শুধু ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভাঙন থেকে নয়, বরং সুযোগসন্ধানীদের হাতে তা এখন শোষণের হাতিয়ার। আবু হাজা বলেন, মানুষ মরিয়া হয়ে যেকোনো হার মেনে নিচ্ছে শুধু খাবার জোগাড়ের জন্য। কিন্তু প্রতিদিন হার বাড়ছে। জবাবদিহি নেই কারও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত