Ajker Patrika

ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে রাষ্ট্রপ্রধানদের শোক

আপডেট : ২০ মে ২০২৪, ১৭: ১০
ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে রাষ্ট্রপ্রধানদের শোক

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায় বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণের সময় আছড়ে পড়ে তাঁকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি। রাইসির সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা।

আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং এর জনগণের দুঃখে অংশীদার হচ্ছি। নিহতদের পরিবার এবং ইরানের সরকারের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাই। এই কঠিন সময়ে আমরা ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং এই ঘটনার সব ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি।’

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুতে ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানি জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাই। সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করছি, নিহত ইরানি প্রেসিডেন্ট এবং অন্যদের প্রতি তিনি তাঁর করুণা দান করুন। হতাহতের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাই। এই দুঃখের সময়ে ইরানের নেতৃত্ব ও জনগণের সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং এর জনগণের সংহতি রয়েছে।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি বার্তায় বলেন, ‘সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসি একজন অসামান্য রাজনীতিবিদ ছিলেন, যার সমগ্র জীবন মাতৃভূমির সেবায় নিবেদিত ছিল। রাশিয়ার সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে তিনি দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে অমূল্য ব্যক্তিগত অবদান রেখেছিলেন।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সামাজিক প্ল্যাটফর্মে এক্সে পোস্টে বলেন, ‘একজন সহকর্মী হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ইরানের জনগণ এবং আমাদের অঞ্চলের শান্তির জন্য তাঁর (রাইসি) ক্ষমতায় থাকাকালীন সব প্রচেষ্টাই প্রত্যক্ষ করেছি। আমি জনাব রাইসিকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি।’

আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল গাইত এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন নিহতদের প্রতি তাঁর করুণা ও ক্ষমা বর্ষণ করেন এবং তাঁদের পরিবারকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দেন।’

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গত নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে সম্মানিত হয়েছিলাম। তিনি জনগণের কল্যাণ এবং তাঁর জাতির মর্যাদার প্রতি গভীর অঙ্গীকারের নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। ন্যায়বিচার, শান্তি এবং মুসলিম উম্মাহর উত্থানের প্রতি তাঁর নিবেদন সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল। আমরা মালয়েশিয়া-ইরান সম্পর্ক জোরদার করতে, আমাদের জনগণ এবং মুসলিম বিশ্বের উন্নতির জন্য একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি।’

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ফাইভকে বলেন, ‘আমি ইরানের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। আমরা আমাদের ইউরোপীয় এবং জি-৭ মিত্রদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করছি। কারণ, আমরা এমন একটি ঘটনার কথা বলছি; যা একটি বিশেষ জটিল আঞ্চলিক কাঠামোর অংশ। আমি আশা করি, ইরানের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং শান্তির জন্য নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করবে।’

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল এক্সে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করে। সে সঙ্গে, তাদের প্রতিনিধিদল এবং ক্রুদের অন্য সদস্যদের প্রতিও রয়েছে আমাদের সমবেদনা।’

জাপান সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, প্রেসিডেন্ট রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুতে জাপান ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এক্সে পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিকে বিদায় জানাতে গভীরভাবে দুঃখিত আমরা। আমাদের ভাই ইব্রাহিম বিশ্বের একজন অসাধারণ নেতা ছিলেন এবং সব সময় থাকবেন। একজন চমৎকার মানুষ এবং তাঁর দেশের তাঁর জনগণের সার্বভৌমত্বের রক্ষক ও আমাদের নিঃশর্ত বন্ধু হিসেবে তাঁকে স্মরণ করা হবে। বলিভিয়া থেকে আমরা সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নিহত ইরানি প্রেসিডেন্ট এবং বিদেহীরা আল্লাহর কাছে বিশ্রাম নেবেন এবং তাঁদের পরিবার ধৈর্য ধারণ করতে পারবে বলে প্রার্থনা করছে মিসর।’

লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গ্রুপ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘হিজবুল্লাহ ইরানের প্রতি শহীদদের সেবা ও সংগ্রামের প্রশংসা জানায়। তাঁদের প্রতি রহমত, খামেনিকে রক্ষা এবং ইরানকে ধৈর্য ও দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্নিপরীক্ষা অতিক্রম করার ক্ষমতা দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছে হিজবুল্লাহ।’

জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাই প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং তাঁদের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাই। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নেতৃত্ব, সরকার এবং জনগণের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা ইরানে আমাদের ভাইদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল-মাকতুম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের হৃদয় এই কঠিন সময়ে আপনাদের সঙ্গে আছে। আমরা প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাঁর বিশাল রহমত দিয়ে নিহতদের আবৃত করে নেবেন এবং তাদের জান্নাত দান করবেন।’

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান এবং নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সিরিয়ার সংহতি রয়েছে।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শিয়া আল-সুদানি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি এবং ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাই। এই বেদনাদায়ক ট্র্যাজেডিতে আমরা ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানি জনগণ এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের সংহতি প্রকাশ করছি।’

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ও হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধকে সমর্থন করার জন্য মৃত ইরানি নেতার প্রশংসা করেছে হামাস। সে সঙ্গে আস্থা প্রকাশ করে বলেছে, ইরানের মূল প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিশাল ক্ষতির প্রতিক্রিয়া কাটিয়ে উঠতে দেশকে সক্ষম করবে।

ইয়েমেনের হুতি সুপ্রিম রেভল্যুশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলী আল-হুতি এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘আমরা নিহতদের পরিবারকে ধৈর্য ও সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।’

কাতারের আমির শেখ তামিন বিন হামাদ আল-থানি এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা। নিহতদের পরিবারকে ধৈর্য ও সান্ত্বনার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘মহান ইরানি জাতি প্রথাগত সাহসের সঙ্গে এই বেদনা কাটিয়ে উঠবে। পাকিস্তান এ ঘটনায় শোক দিবস পালন করবে এবং প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তাঁর সঙ্গীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানের সঙ্গে সংহতি স্বরূপ পতাকা অর্ধনমিত করবে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. সাইয়েদ ইব্রাহিম রাইসির মর্মান্তিক মৃত্যুতে ভারত গভীরভাবে শোকাহত এবং মর্মাহত। ভারত-ইরান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য তাঁর অবদান সর্বদা স্মরণ করা হবে। তাঁর পরিবার এবং ইরানের জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। এই দুঃখের সময়ে ভারত ইরানের পাশে আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রতিবেশীদের সঙ্গে উত্তেজনা নয়, সুসম্পর্ক চায় ভারত: প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ছবি: পিটিআই
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ছবি: পিটিআই

ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। দিল্লি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের উত্তেজনা চায় না।

ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি নেটওয়ার্ক ১৮-এর গ্রুপ এডিটর-ইন-চিফ রাহুল যোশীর সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে বিহার বিধানসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং দেশের প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।

ভারত প্রধানত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করত, ভারতের সমস্যা ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু গালওয়ানের ঘটনার পর চীনের সঙ্গেও ভারতের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হলো। এখন বাংলাদেশ। তাহলে কি এমন বলা যায় যে, তিন দিকেই এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে? ভারতের জন্য কি তিনটি ফ্রন্ট খুলে গেছে? ভারত কীভাবে এর মোকাবিলা করবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সামনে যত সমস্যা বা চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন...সেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা ভারতের আছে। আমরা প্রতিটি কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি এবং সমাধান খুঁজে বের করতে পারি। তবে আমরা এমন মানুষ যারা শান্তিতে বিশ্বাসী, আমরা অস্থিরতা চাই না। যদিও এর মানে এই নয় যে ভারত ভিতু। যদি ভারতের সার্বভৌমত্বের ক্ষতি হয়, তবে ভারত তার কঠিন জবাব দেবে। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও পরিস্থিতি শান্ত এবং স্বাভাবিক থাকা উচিত, এটাই আমাদের ভাবনা। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর কথা বলতে গেলে, আমরা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের নেতা অটল-জি (সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি) বারবার বলতেন, আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে জীবনে আপনি বন্ধু পরিবর্তন করতে পারেন, কিন্তু আপনি কখনো আপনার প্রতিবেশীদের পরিবর্তন করতে পারেন না।’

প্রতিবেশী দেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কিত প্রশ্নে রাজনাথ সিং বলেন, চীনের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কয়েকটি স্থানে উত্তেজনা হয়েছে। তিনি চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘চীন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আগ্রহী এবং সামরিক স্তরের বৈঠক চালিয়ে যেতে চায়।’

আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মধ্যে ডুরান্ড লাইন নিয়ে চলমান বিরোধকে ভারত তাদের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মনে করে উল্লেখ করে রাজনাথ সিং বলেন, ভারত তাদের মধ্যকার আলোচনায় হস্তক্ষেপ করতে চায় না। ভারত এই সংঘাতে উসকানি দিচ্ছে—পাকিস্তানের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেও উড়িয়ে দেন তিনি।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা সফরের সময় এক পাকিস্তানি জেনারেলকে একটি মানচিত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখিয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। যদিও বাংলাদেশ সরকার এটি ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে রাজনাথ সিং বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

তিন দিকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমেই বৈরী ভাবাপন্ন হয়ে ওঠা নিয়ে রাজনাথ সিং বলেন, ‘ভারত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে। ভারত শান্তি চায়, তবে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হলে ভারত কড়া জবাব দেবে।’

বিহার নির্বাচন

বিহারের নির্বাচনী পরিবেশ প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং জানান, জনসভাগুলোতে ভোটারদের সাড়া দেখে তিনি নিশ্চিত যে রাজ্যে এনডিএ সরকার গঠিত হবে। তাঁর অনুমান, এনডিএ জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (১৬০ টির বেশি আসন) পেতে পারে।

তিনি স্পষ্ট করে দেন, যেহেতু এই নির্বাচন নিতীশ কুমারের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই তিনিই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন—এটা স্বাভাবিক। তবে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে ভবিষ্যতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাজনাথ সিং দাবি করেন, নিতীশ কুমারের শাসনে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকায় নারীরা খুশি। তিনি মনে করেন, ‘জীবিকা দিদি’ প্রকল্পের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং মদ নিষিদ্ধকরণ নারীদের ভোটকে এনডিএ-র দিকে টানতে প্রধান ভূমিকা রাখবে। মদ নিষিদ্ধে রাজস্ব ক্ষতির প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, সামাজিক কুসংস্কার দূর করার জন্য সামান্য রাজস্ব ক্ষতি গ্রহণযোগ্য।

বিহার নির্বাচনে ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) নতুন দলকে ‘নগণ্য ফ্যাক্টর’ হিসেবে অভিহিত করে রাজনাথ সিং দাবি করেন, এই দল কোনো আসন জিততে পারবে না, এরা শুধু ভোট কাটার জন্য মাঠে নেমেছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং বলেন, ভারত কখনো যুদ্ধ চায় না। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ আসার পরই এই অভিযান স্থগিত করা হয়, কোনো আন্তর্জাতিক চাপের কারণে নয়।

বিজেপির পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং বলেন, বিহার নির্বাচনের পরই দলের পরবর্তী সভাপতি ঘোষণা করা হবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না বলেও দাবি করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৬
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সিএনএন
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সিএনএন

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক।

শুক্রবার ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটর অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই তালিকায় ৩৭ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির। সম্পূর্ণ তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

তুরস্কের অভিযোগ, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের এসব কর্মকর্তা ‘গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত’ করেছেন। গাজাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে এবং মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে হামলায় ৫০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি সৈন্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট করেছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত মার্চে গাজা উপত্যকায় তুরস্ক নির্মিত তুর্কি-ফিলিস্তিনি মৈত্রী হাসপাতালটি ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়।

অন্যদিকে ইসরায়েল এই পরোয়ানাকে ‘জনসংযোগের কৌশল’ বলে নিন্দা করেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘স্বৈরাচারী এরদোয়ানের (তুরস্কের প্রেসিডেন্ট) সাম্প্রতিক জনসংযোগের কৌশল ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে এবং ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছে।’

এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। তারা এটিকে একটি ‘প্রশংসনীয় পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। হামাসের মতে, এটি ‘ন্যায়বিচার, মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধের প্রতি তুরস্কের জনগণ ও তাদের নেতাদের আন্তরিক অবস্থানকে নিশ্চিত করে, যা তাঁদের নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে যুক্ত করেছে।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু এবং তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রায় এক বছর পর তুরস্ক এই ঘোষণা দিল। গত বছর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলাতেও যোগ দিয়েছিল তুরস্ক।

গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলের অভিযানে কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ৭০ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজায় গত ১০ অক্টোবর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আঞ্চলিক শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারে অচলাবস্থা: রাজনৈতিক ‘দাবার ঘুঁটি’ বিমানকর্মীরা, একদিনে ৫০০০ ফ্লাইট বাতিল, বিলম্ব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার ফ্লাইট বন্ধে বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার ফ্লাইট বন্ধে বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার (শাটডাউন) সরাসরি প্রভাব পড়ল দেশের আকাশপথে। জরুরি নির্দেশে ৪০টি বৃহত্তম বিমানবন্দরে বিমান চলাচল কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রথম দিনেই ৫ হাজারের বেশি মার্কিন ফ্লাইট বাতিল অথবা বিলম্বিত হয়েছে। বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য হওয়া এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় কর্মীদের ওপর চাপ কমাতে এই নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক এই অচলাবস্থার মধ্যে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (এটিসি) ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কর্মীরা বেতন ছাড়াই কাজ করে চলেছেন। তবে বেতন না পাওয়ায় কর্মীদের মধ্যে অসুস্থতা এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য কাজ খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ায় কর্মীদের উপস্থিতি মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি নির্দেশ জারি করে প্রাথমিকভাবে ৪ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর নির্দেশ দিয়েছে, যা আগামী সপ্তাহের মধ্যে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো এবং ওয়াশিংটন ডিসির মতো প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এফএএ জানিয়েছে, কর্মীদের চরম ক্লান্তির মধ্যেও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিবহন মন্ত্রী শন ডাফি বিবিসিকে জানান, আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর কারণে আপাতত আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এই কাটছাঁটের প্রভাব পড়েনি। তবে তিনি ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সতর্ক করেছেন, অচলাবস্থা চলতে থাকলে ফ্লাইট কমানোর হার ২০ শতাংশেও পৌঁছতে পারে।

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা, যারা দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম এই অচলাবস্থার মধ্যে বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের পরিস্থিতি ভয়াবহ। ন্যাশনাল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিক ড্যানিয়েলস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কন্ট্রোলারদের রাজনৈতিক অচলাবস্থার ‘দাবার ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ চালিয়ে যাব, কিন্তু নিজেদের পকেটে টাকা ঢোকাতে পারব না। সরকারকে চালু করার জন্য কংগ্রেসকে উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিমানযাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আটলান্টা যাওয়ার পথে জো সুলিভান নামে এক যাত্রী জানতে পারেন তাঁর ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, ফলে তাঁকে ১২ ঘণ্টা পর অন্য ফ্লাইটে রি-বুক করতে হয়। এর কারণে তিনি কাজিনের বিয়ের আগের দিনের সব পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হন।

আরিয়ানা জাকোভলজেভিচ, কেন্দ্র সরকারের এখন বেতনহীন কর্মী। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘আমি এই মাত্র কলেজ থেকে পাস করেছি। এটাই ছিল আমার প্রথম চাকরি। ভাবিনি এমন হবে।’ যাত্রী বেন সসেদা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বেতনহীন কর্মীদের হাতে জীবন সঁপে দেওয়া মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের থেকে সেরা পরিষেবা আশা করছি, কিন্তু তারা তাদের পরিবারের মুখে খাবার জোগানোর চিন্তা করছেন। সরকারের উচিত দ্রুত এর সমাধান করা।’

এদিকে সরকারের অচলাবস্থার ৩৯ তম দিনেও সংকট কাটেনি। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সমঝোতা হলেও তা বাস্তবে রূপায়িত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি সম্প্রসারণের দাবিতে অনড়, রিপাবলিকানরা এটি মেনে নিতে রাজি নন।

অপর দিকে, সিনেট মেজরিটি লিডার জন থুন জানিয়েছেন, একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য কাজ সপ্তাহান্তে চলবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিনেটের ‘ফিলিবাস্টার’ নিয়ম বাতিল করে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন ছাড়াই বিল পাস করার জন্য রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও এই প্রস্তাবে উভয় দলের অধিকাংশ সিনেটরের সমর্থন নেই।

এই অচলাবস্থার কারণে শুধু আকাশপথেই নয়, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিসহ সারা দেশে নজিরবিহীন ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। কবে এই অচলাবস্থা শেষ হবে, তার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই অচলাবস্থার মধ্যে সেনাবাহিনীর বেতন দেওয়ার জন্য এক বন্ধু তাঁকে বিপুল অর্থ অনুদান দিয়েছেন। কিন্তু সেই বন্ধুর পরিচয় তিনি প্রকাশ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য ভিসাপ্রার্থীদের মধ্যে যাঁদের ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তাঁদের আবেদন বাতিল হতে পারে—এমন একটি নির্দেশনা জারি করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) নতুন এ নির্দেশিকা জারি করে, যেখানে বলা হয়েছে, এ ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত আবেদনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘পাবলিক চার্জ’ বা অর্থনৈতিকভাবে বোঝা হয়ে উঠতে পারেন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষয় করতে পারেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে এসব বিষয় যাচাই করতে হবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কেএফএফ হেলথ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে নোটিশ আকারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে মার্কিন ভিসাপ্রক্রিয়ায় সংক্রামক রোগ, টিকাদানের ইতিহাস, মানসিক অবস্থা ও শারীরিক সুস্থতার মতো বিষয়গুলোই বিবেচনায় নেওয়া হতো। তবে নতুন এই নীতিমালায় আরও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাকে যুক্ত করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আবেদনকারীর স্বাস্থ্য বিবেচনা করতে হবে। কিছু রোগের (যেমন হৃদ্‌রোগ, শ্বাসযন্ত্র, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, মেটাবলিক, স্নায়বিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা) চিকিৎসার জন্য কয়েক লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভিসা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আবেদনকারী চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে সক্ষম কি না, তা মূল্যায়ন করতে হবে।

অলাভজনক আইনি সহায়তা সংস্থা ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের সিনিয়র অ্যাটর্নি চার্লস হুইলার বলেছেন, যদিও এ নির্দেশনা সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে এটি মূলত স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সি) আবেদনকারীদের ওপরই প্রয়োগ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হুইলার আরও বলেন, চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো মূল্যায়নের ক্ষমতা ভিসা কর্মকর্তাদের ওপর ন্যস্ত করাটা উদ্বেগজনক। তাঁরা চিকিৎসক নন, এ ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই আর তাঁদের নিজস্ব ধারণা বা পক্ষপাতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আবেদনকারীর কি আজীবন চিকিৎসার খরচ বহনের মতো পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য আছে, যাতে তিনি সরকারি সহায়তা বা দীর্ঘমেয়াদি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সেবার প্রয়োজন ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারেন? বিষয়টি অবশ্যই যাচাই করতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীর পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের দিকও বিবেচনা করতে হবে। যেমন সন্তান বা প্রবীণ অভিভাবকের কোনো শারীরিক অক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা বিশেষ যত্নের প্রয়োজন আছে কি না। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনো নির্ভরশীল সদস্যের (ডিপেনডেন্ট) এমন কোনো শারীরিক বা মানসিক অবস্থা আছে কি না, যার কারণে আবেদনকারীর কাজে কোনো প্রভাব পড়তে পারে?

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন আইনজীবী সোফিয়া জেনোভেস বলেন, এ নির্দেশিকায় আবেদনকারীদের চিকিৎসা ইতিহাসের ভিত্তিতে তাঁদের চিকিৎসা ব্যয়ের সম্ভাবনা ও যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সক্ষমতা যাচাই করতে ভিসা কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে; যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রে আসার আবেদনকারী এ ধরনের কোনো জটিলতায় না পড়েন।

সার্বিকভাবে, স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত আবেদনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে যেন ‘পাবলিক চার্জ’ বা অর্থনৈতিকভাবে বোঝা হয়ে না ওঠেন, তা এড়াতে এই নতুন নিয়ম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত