Ajker Patrika

গাজাযুদ্ধে প্রাণ গেছে ১৩ হাজার শিশুর, আহত ২৫ হাজারেরও বেশি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা থেকে সন্তানকে সরিয়ে নিচ্ছেন এক মা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা থেকে সন্তানকে সরিয়ে নিচ্ছেন এক মা। ছবি: আনাদোলু

টানা ১৫ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলেছে। অবশেষে এসেছে যুদ্ধবিরতি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই যুদ্ধ গাজাকে পরিণত করেছে ধ্বংসস্তূপে, গাজার শিশুদের জন্য বয়ে এনেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ১৩ হাজারেরও বেশি শিশু। আহতাবস্থায় দিন কাটছে ২৫ হাজার শিশুর। আজ রোববার বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) তাদের এক প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য থেকে জানায়, গাজায় এখন পর্যন্ত শনাক্ত ৪০ হাজার ৭১৭ ফিলিস্তিনির মরদেহ শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১৩ হাজার ৩১৯টিই শিশুর।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানায়, গাজায় আহত শিশুর সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। অপুষ্টি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে আরও ২৫ হাজার শিশু। গাজায় সেবা দেওয়া কর্মীদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে ইউনিসেফ।

জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ বলেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে প্রায় ১৯ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, হাজারো শিশুর অনাথ ও অভিভাবক হারানোর কথা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জাতিসংঘ জানায়, প্রায় ৩২ হাজার ১৫১ শিশু তাদের বাবা হারিয়েছে, ৪ হাজার ৪১৭ শিশু মা হারিয়েছে, আর ১ হাজার ৯১৮ শিশু বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে।

ব্যাপক হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার শিক্ষাব্যবস্থাও। গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজার ৯৫ শতাংশ স্কুলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। একে একে ধ্বংস হয়েছে ১৪০টি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন। জাতিসংঘের গ্লোবাল ফান্ড ‘এডুকেশন ক্যাননট ওয়েট’-এর নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন শরীফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৬ লাখ ৫০ হাজার স্কুলগামী শিশুর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।

এদিকে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলায় হামাসের দ্বারা ইসরায়েলি শিশুদের নির্যাতন, হত্যা, আহত হওয়া এবং অপহরণের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলছেন, কিছু শিশু এখনো অপহৃত অবস্থায় রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘে ব্রিটেনের উপরাষ্ট্রদূত জেমস কারিউকি বলেন, ‘গাজা এখন শিশুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী স্থানে পরিণত হয়েছে। গাজার শিশুরা এই যুদ্ধ বেছে নেয়নি। তবুও তারা সর্বোচ্চ মূল্য চুকিয়েছে।’

বৈঠকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন প্রশ্ন তোলেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলি শিশু— যাদের অত্যাচার করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, তাদের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে কি কখনো কেউ চিন্তা করেছে? এ ছাড়া ৩০ জন অপহৃত শিশুর এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে শরণার্থী হওয়া হাজারো শিশুর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘যে ট্রমার মধ্য দিয়ে তারা গেছে, তা কল্পনাতীত।’

ড্যানন বলেন, যেখানে হামাস শিশুদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গাজাকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে’ পরিণত করেছে, সেখানে এই বৈঠক ‘সাধারণ বোধশক্তির অবমাননা’।

তিনি আরও বলেন, ‘গাজার শিশুরা সম্ভাবনাময় একটি ভবিষ্যৎ পেতে পারত। কিন্তু তারা সহিংসতা ও হতাশার এক চক্রে আটকে পড়েছে। এর সবই হামাসের কারণে, ইসরায়েল এর জন্য দায়ী নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত