Ajker Patrika

কোন শর্তে যুদ্ধবিরতিতে হিজবুল্লাহ–ইসরায়েল, গাজায় সংঘাতের অবসান কবে

আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ০৪
গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা সংঘাতে সাময়িক বিরতি দিল হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল। ছবি: এএফপি
গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা সংঘাতে সাময়িক বিরতি দিল হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল এবং লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সব পক্ষ ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এই চুক্তির মাধ্যমে পরস্পরের সীমানার ভেতরে আক্রমণ বন্ধ এবং ইসরায়েলি সেনাদের লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ হবে। গত বছরের অক্টোবর থেকে এই যুদ্ধ চলছে।

হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সর্বশেষ এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর। হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েল আক্রমণের এক দিন পর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে আক্রমণ শুরু করে।

এই সংঘর্ষ গত সেপ্টেম্বরে ব্যাপক আকার ধারণ করে। লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলা শুরু হয়। শিগগিরই দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

এই যুদ্ধবিরতির মানে কী?

হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় বুধবার ভোর ৪টা থেকে কার্যকর হয়েছে।

এটি কার্যকর হওয়ার পর ৬০ দিনের একটি অন্তর্বর্তী সময় থাকবে, এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা এবং হিজবুল্লাহ সেনারা উভয়ই যথাক্রমে ইসরায়েলি সীমান্তের উত্তর এবং লিতানি নদীর দক্ষিণের এলাকা ত্যাগ করবে।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছিলেন, চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তে বসবাসকারী উভয় দেশের লাখ লাখ শরণার্থী তাঁদের বাড়িতে ফিরতে পারবে। এটি ছিল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

এদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ইসরায়েলি আক্রমণে লেবাননে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির ঠিক আগেই ইসরায়েল সামরিক অভিযান বাড়িয়েছে।

হিজবুল্লাহ হাজার হাজার রকেট ইসরায়েলি সেনা ঘাঁটি ও শহরে ছুড়েছে। এর মধ্যে গত রোববার প্রায় ২৫০টি রকেট ছুড়েছিল হিজবুল্লাহ।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে এবং ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কমপক্ষে ৭৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এর মধ্যে প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি সেনা সদস্য লেবাননে স্থল আক্রমণে নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি কী?

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির এই পদক্ষেপ ‘স্থায়ী শত্রুতার অবসান’ আনার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে।

চুক্তির পূর্ণ শর্তাবলি এখনো জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়নি, তবে প্রধান শর্তগুলো হলো:

-উভয় পক্ষের রকেট হামলা, বিমান হামলা এবং অন্যান্য সামরিক কার্যক্রম বন্ধ হবে।

-ইসরায়েলি সেনারা লিতানি নদীর দক্ষিণ এবং ইসরায়েলি সীমান্তের উত্তরের এলাকা থেকে প্রত্যাহার হবে।

-হিজবুল্লাহও একই এলাকা থেকে প্রত্যাহার হবে এবং তাদের অবকাঠামো পুনর্গঠন না করার প্রতিশ্রুতি দেবে।

-হিজবুল্লাহ এখনো তার চুক্তি শেষ করার জন্য কোনো জনসমক্ষে বিবৃতি দেয়নি, তবে বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির কী প্রভাব পড়বে?

যদিও এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল–লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ বন্ধ করবে, তবে গাজার যুদ্ধের শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।

হামাস এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে লড়াই গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে অব্যাহত রয়েছে। অক্টোবরের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জন জিম্মি হন।

এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মতে, প্রায় ৪৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এই সংঘাত গাজার মানবিক সংকট তৈরি করেছে। দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ‘জাতিগত নিধনের লক্ষণ’ বহন করছে।

কাতার চলতি মাসের শুরুতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে প্রত্যাহার করার পর গাজা ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তবে জো বাইডেন বলেছেন, তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জন করা এবং বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘আরেকটি পদক্ষেপ নেবে’ গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য। এ লক্ষ্যে ওয়াশিংটন তুরস্ক, মিশর, কাতার, ইসরায়েল এবং অন্যদের সঙ্গে কাজ করবে।

পুরোনো শত্রু, নতুন সংঘর্ষ

ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ সংঘাত নতুন নয়। ২০০৬ সালে, দুই পক্ষ দুই মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সেই সংঘাত শেষ হয়।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের অধীনে, ইসরায়েল লেবানন থেকে তার সেনারা প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়, যখন হিজবুল্লাহ তার বাহিনী লিতানি নদীর কাছ থেকে সরে যায়। এই নদী ইসরায়েল সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার উত্তরে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স এই প্রস্তাবকে বর্তমান সংঘর্ষের অবসানের জন্য একটি কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।

গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল চুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং ‘যেকোনো লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে’।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয়ের মাধ্যমে, আমাদের পূর্ণ সামরিক স্বাধীনতা রয়েছে। যদি হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করে বা অস্ত্রসম্ভার পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করে, আমরা তা কঠোরভাবে আক্রমণ করব।’

একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে একটি ব্যবস্থার অধীনে কাজ করবে, যা লেবাননের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন রোধ করবে।

সূত্র: এবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আটকে গেল ৩ চীনা নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের ‘শেনঝু-২০’ মহাকাশযানের তিন নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের ‘শেনঝু-২০’ মহাকাশযানের তিন নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি। ছবি: সংগৃহীত

তিন চীনা নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। কারণ তাঁদের ফিরে আসার মহাকাশযান ‘শেনঝু-২০’ সম্ভবত মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন (সিএনএসএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি ছয় মাসের মিশন শেষে বুধবারই পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফেরার ঠিক আগমুহূর্তে ‘শেনঝু-২০’ এর সম্ভাব্য আঘাতজনিত ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়ায় মিশন স্থগিত রাখা হয়েছে।

চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে মহাকাশযানটির আঘাত বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলছে। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে বা কখন নভোচারীরা ফিরবেন, সেই বিষয়ে কোনো সময়সূচি প্রকাশ করা হয়নি। এই নভোচারীরা গত এপ্রিলে চীনের অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।

এদিকে কয়েক দিন আগেই চীন সফলভাবে ‘শেনঝু-২১’ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে আরও তিন নতুন নভোচারীকে ‘তিয়ানগং’ বা ‘স্বর্গীয় প্রাসাদ’ নামে তাদের মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছে। নতুন এই দলটিতে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী উ ফেই, যিনি চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ নভোচারী হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। নতুন দলটি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পুরোনো দলটির পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল।

মহাকাশ স্টেশনে ‘শেনঝু-২১’ পৌঁছানোর পর নতুন ও পুরোনো দুটি মহাকাশচারী দলের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয় চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। সেখানে পৃথিবীতে ফেরার অপেক্ষায় থাকা চেন দং বলেন, ‘আমরা এখন পৃথিবীতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ কিন্তু তাঁদের মহাকাশযান পরিদর্শনের পরই আটকে যায় পৃথিবীতে ফেরার প্রক্রিয়া।

চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, নভোচারীদের নিরাপত্তা ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেনঝু কর্মসূচি প্রতি ছয় মাস পরপর পরিচালিত হয় এবং চীনের মহাকাশ অগ্রযাত্রার একটি বড় গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন মহাকাশ গবেষণায় দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে।

চীনের এই ধারাবাহিক উন্নতি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যদিও মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছর মার্কিন নভোচারী সুনি উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরও বোয়িং স্টারলাইনারের ত্রুটির কারণে ৯ মাস ধরে মহাকাশে আটকে ছিলেন। তাঁরা অবশেষে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফেরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের মন্দিরে সোনা চুরি নিয়ে তুলকালাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দির। ছবি: বিবিসি
দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দির। ছবি: বিবিসি

দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দিরে সোনা চুরির অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কেরালা হাইকোর্ট জানিয়েছে, মন্দিরের কয়েকটি দেবমূর্তি থেকে সোনার আবরণ খুলে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবছর লক্ষাধিক ভক্তের দর্শনস্থল এই মন্দিরে এমন কেলেঙ্কারি ভক্তদের হতবাক করেছে।

বুধবার (৫ অক্টোবর) বিবিসি জানিয়েছে, সোনা চুরির ঘটনায় কেরালা হাইকোর্ট ইতিমধ্যে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে এবং পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মন্দিরের সাবেক সহকারী পুরোহিত উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিও রয়েছেন। আদালতের দুই বিচারপতি রাজা বিজয়ারাঘবন ভি এবং কে ভি জয়কুমার গত সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটি তদারক করছেন।

কী চুরি হয়েছে?

এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুটি দ্বাররক্ষক মূর্তি। এই দুটি মূর্তি প্রধান দেবতা আয়াপ্পার গর্ভগৃহের বাইরে স্থাপিত। আদালতের নিযুক্ত সবরিমালা স্পেশাল কমিশনারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে—ওই মূর্তি দুটির বহু অংশ থেকে সোনার আবরণ অদৃশ্য।

মন্দিরের নথি অনুযায়ী, ১৯৯৮-৯৯ সালে ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যর দান করা ৩০.২৯ কেজি সোনা ব্যবহার করে মূর্তি ও মন্দিরের দরজা, খিলান, স্তম্ভসহ বিভিন্ন অংশ সোনা দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে ত্রিবাঙ্কুর দেবাসম বোর্ড (টিডিবি) তখনকার সহকারী পুরোহিত উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে নতুন করে সোনা দিয়ে মোড়ানোর জন্য দ্বাররক্ষক মূর্তি দুটিকে মন্দিরের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেয়—যা একটি বিরল ঘটনা।

দুই মাস পর মূর্তি ফেরত এলেও ওজন মাপা হয়নি। পরে তদন্তে দেখা যায়, মূর্তিগুলো অনেক হালকা হয়ে গেছে। এসআইটি জানায়, মূর্তি, পাদমূর্তি ও দরজার ফ্রেম মিলিয়ে প্রায় ৪ কেজি ৫৪০ গ্রাম সোনা নিখোঁজ হয়েছে। আদালত এই ঘটনাকে ‘সোনা ডাকাতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

বিচারকেরা তীব্র ভাষায় টিডিবিকে দোষারোপ করেছেন। কারণ তারা মূর্তিগুলো ‘তামার ফলক’ হিসেবে রেকর্ডে দেখিয়েছিল। এমনকি উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে ৪৭৫ গ্রাম সোনা নিজের কাছে রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তিনি পরে ওই সোনা এক আত্মীয়ার বিয়েতে ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইমেইল করেন। এই বিষয়টিকে ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আদালত।

অভিযুক্ত ও প্রতিক্রিয়া

উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে আদালতে হাজির করার পর বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়। বের হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, সত্য একদিন প্রকাশ পাবে।’

এদিকে পুলিশ আরও দুই বোর্ড কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই কেলেঙ্কারি ঘিরে কেরালায় রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিরোধী কংগ্রেস নেতা ভি ডি সতীসন অভিযোগ করে বলেছেন, ‘প্রায় ৫ কেজি সোনা চুরি গেছে, এর সঙ্গে কর্মকর্তারাও জড়িত।’ তিনি মন্দির বিষয়ক মন্ত্রী ভি এন বাসাবানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

মন্ত্রী বাসাবান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, ‘তদন্ত আদালতের নজরদারিতে চলছে, আমরা কিছুই লুকাব না।’

কেরালার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ছয় সপ্তাহের মধ্যেই এই তদন্ত শেষ করে দোষীদের পরিচয় বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রামা দুয়াজি শুধু মামদানির স্ত্রী নন, একজন প্রতিভাবান শিল্পীও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির পাশে তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: দ্য পিপল
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির পাশে তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: দ্য পিপল

সিরীয়-আমেরিকান ইলাস্ট্রেটর ও ডিজাইনার রামা দুয়াজি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন নিউইয়র্কের নতুন মেয়র জোহরান মামদানির স্ত্রী হিসেবে। তবে নিজস্ব পরিচয়ে তিনি একজন প্রতিভাবান শিল্পী। তিনি তাঁর কাজের ভেতর দিয়ে নারী, আরব পরিচয়, প্রতিরোধ ও সহমর্মিতার বিষয়গুলোকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন।

বুধবার (৫ নভেম্বর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, রামার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে। ৯ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি দুবাইয়ে চলে যান। সেখানেই বড় হন এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কাতারের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের রিচমন্ড ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়ে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন।

রামা দুয়াজির শিল্পকর্ম মূলত কালো-সাদা রেখাচিত্রে নারীর প্রতিকৃতি, যেখানে দেখা যায় নারীসত্তা, অভিব্যক্তি ও বৈচিত্র্যের প্রতি গভীর মমতা। তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ ইয়র্কার, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, অ্যাপল, স্পোটিফাই, ভাইস এবং টেট মডার্ন–এর মতো বিশ্বখ্যাত মাধ্যমগুলোতে। পাশাপাশি ভার্জিনিয়া ও বৈরুতে তাঁর একক প্রদর্শনী হয়েছে।

২০২১ সালে এক ডেটিং অ্যাপে রামা ও জোহরান মামদানির পরিচয় হয়। পরে তাঁদের প্রথম দেখা হয় ব্রুকলিনের একটি ইয়েমেনি কফিশপে। এভাবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা লোয়ার ম্যানহাটনের আদালতে বিয়ে করেন। দুবাইয়ে তাঁদের বাগদান ও নিকাহ অনুষ্ঠানটি ছিল রূপকথার মতো। সূর্যাস্তের পটভূমিতে ফুল ও সবুজে সাজানো এক রোমান্টিক আবহ তৈরি করা হয়েছিল।

রামা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবনের চেয়ে শিল্পকর্ম ও সামাজিক বিষয়ে বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের প্রতি তাঁর অবস্থান বহুবার প্রকাশ পেয়েছে। ২০২১ সালে একটি ইলাস্ট্রেশনে তিনজন মানুষকে তিনি একসঙ্গে কনুই মিলিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখিয়েছিলেন, যার ওপরে আরবিতে লেখা ছিল—‘আমরা ছাড়ব না।’ গাজায় ক্ষুধা ও মানবিক সংকট নিয়েও তিনি সচেতনতা তৈরির কাজ করেছেন।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে রামা হবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের বাসভবন গ্রেসি ম্যানসনে বসবাসকারী প্রথম জেনারেশন–জেড সদস্য। তবে জোহরান মামদানির ভাষায়, ‘রামা শুধু আমার স্ত্রী নন, তিনি একজন অসাধারণ শিল্পী, যিনি নিজের কাজ দিয়ে পরিচিত হওয়ার যোগ্য।’

করোনা মহামারির বেশ কিছু সময় পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে কাটিয়েছিলেন রামা। পরে নিউইয়র্কে স্থায়ী হন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নতুন শহরে এসেছিলাম, কাউকে চিনতাম না। তাই ইনস্টাগ্রামে দেখা সৃজনশীল মানুষদের বার্তা পাঠাতে শুরু করি। অবাক করা বিষয় হলো, নিউইয়র্কে মানুষ নতুন সম্পর্ক গড়ায় বেশ খোলা মন। এভাবেই আমি অনেক দারুণ আরব-আমেরিকান শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি।’

রামা দুয়াজি আজ শুধু নিউইয়র্কের মেয়রের স্ত্রী নন, বরং আধুনিক আরব নারীর এক সাহসী ও সৃজনশীল প্রতীক, যিনি শিল্পের মাধ্যমে নিজের শিকড় ও মানবিক দায়বদ্ধতা একসূত্রে বেঁধেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ডে যৌন শিক্ষার ক্লাস থেকে ব্রিটিশ সন্ন্যাসিনী গ্রেপ্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫০
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের ক্লাস নিচ্ছেন মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের ক্লাস নিচ্ছেন মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ কোহ ফাঙ্গানে ‘সেক্স ইয়োগা’ বা তান্ত্রিক যোগচর্চা শেখানোর অভিযোগে এক ব্রিটিশ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মারিয়া শেচেতিনিনা নামে ৪০ বছর বয়সী ওই নারী নিজেকে ‘তান্ত্রিক আধ্যাত্মিকতা ও পবিত্র যৌনতার’ শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ‘মারিয়া স্কাই লাভ’ নামে সক্রিয় ছিলেন এবং প্রতি সপ্তাহে যোগা ও তান্ত্রিক ম্যাসাজ ক্লাস চালাতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ নভেম্বর স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁর পেছনে ক্লাস নিচ্ছিলেন মারিয়া। এমন সময় পর্যটন পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে।

আটকের সময় মারিয়া পুলিশকে বলেন, ‘আমার আইনজীবী বলেছেন, এটা এখানে বৈধ।’ তবে পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট পরীক্ষা করে দেখতে পায়—তিনি একটি রেসিডেন্সিয়াল প্রোপার্টি কোম্পানির কাস্টমার রিলেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজের অনুমতি পেয়েছেন, যোগা বা ম্যাসাজ শেখানোর অনুমতি নেই তাঁর।

ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ক্লাসে ৪০০ বাথ (প্রায় ১৫০০ টাকা) ফি নিতেন মারিয়া। পুলিশ তাঁর কাছ থেকে যোগা নোট, বিজ্ঞাপন ফ্লায়ার, টিকিট, ব্যানার এবং কিউআর কোড-সংবলিত প্রচারপত্র জব্দ করেছে।

পর্যটন পুলিশ বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল উইনিত বুনচিত জানান, মারিয়ার ‘অশালীন ও ঝুঁকিপূর্ণ’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানানোর পরই তদন্ত শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত জরুরি ডিক্রির আওতায় তান্ত্রিক যোগা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা অনুমোদিত নয়। তাই তাঁকে অবৈধভাবে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’

এর আগে চলতি বছরের মার্চে একই দ্বীপে পোল্যান্ডের ইউটিউবার মিখাল গ্রিগোরুককেও ‘সেক্স যোগা’ ক্লাস চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

কোহ ফাঙ্গান দ্বীপটি দীর্ঘদিন ধরে ‘হিপি স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত—যেখানে আধ্যাত্মিক রিট্রিট, নিরামিষ ক্যাফে ও বিখ্যাত ফুল মুন পার্টির কারণে সারা বিশ্বের পর্যটকেরা ভিড় জমান। তবে পুলিশের আশঙ্কা, অনেক বিদেশি পর্যটক সঠিক ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই সেখানে বিভিন্ন ধরনের মেডিটেশন ও বিকল্প থেরাপির কর্মশালা চালাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত