Ajker Patrika

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ, ছলচাতুরিতে সেরা ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, ১১: ০১
গাজায় ইসরায়েলি সেনা ও ট্যাংক। ছবি: আইডিএফ
গাজায় ইসরায়েলি সেনা ও ট্যাংক। ছবি: আইডিএফ

ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ইরানের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলল দেশটি। ইরান থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে একঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ইসরায়েলের রাডারে তা শনাক্ত হয়েছে দাবি করে কাৎজ কড়া হুঁশিয়ারি দেন—এবার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সদস্য বেজালেল স্মতরিচও এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘তেহরান কেঁপে উঠবে।’

এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি ইসরায়েল। তবে, এবারই প্রথম নয়, বরাবরই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। ইসরায়েলের অতীত রেকর্ড বলে, যেকোনো পক্ষের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ওই পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে বারবার যুদ্ধ শুরু করাই তেল আবিবের স্বভাব।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তথ্য বলছে, ইসরায়েল যতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, তা অনায়াসে পেছনে ফেলবে অন্য যে কোনো বিবদমান পক্ষকে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায় ইসরায়েল। যুদ্ধ শুরুর পর কাতার, যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর উদ্যোগে ওই বছরের ২৪ নভেম্বরে প্রথম দফায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় দুই পক্ষের মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী, কয়েক ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেয় ইসরায়েলি প্রশাসন। এবং প্রধান শর্ত ছিল—যুদ্ধবিরতি চলাকালীন কোনো হামলা চালাবে না ইসারয়েল। কিন্তু চার দিনের ওই যুদ্ধবিরতির মধ্যেও নানা অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। প্রতিদিনই ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই চার দিনে ইসরায়েল ঠিক কতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, তার নিশ্চিত সংখ্যা জানা যায়নি।

তবে, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর কতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল, তার কিছুটা হিসাব নথিবদ্ধ করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি গাজায় দ্বিতীয়বারের মতো কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি। বার্তা সংস্থা আনাদোলুর তথ্যমতে, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত মাত্র এক মাসে সাড়ে তিন শ বার যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী মার্চে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরুর কথা থাকলেও তা না মেনে আবারও পুরোদস্তুর হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পুরোপুরি অবরুদ্ধ ফেলে গাজা উপত্যকা। পরিণতিতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ে গাজাবাসী।

শুধু গাজা নয়, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায় লেবাননে হিজবুল্লাহর ক্ষেত্রেও। গত বছরের ২৭ নভেম্বর হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। মার্কিন সংগঠন আর্মড কনফ্লিক্ট অ্যান্ড ইভেন্ট ড্যাটার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৩০০ বার লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসারয়েল। এখনো বিভিন্ন অজুহাতে নিয়মিতই লেবাননের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে আইডিএফ।

আর সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। ইতিহাস বলছে, ইসরায়েল প্রায়শই বিভিন্ন ছলচাতুরি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধবিরতির শর্ত অমান্য করে প্রথম আঘাত হানে এবং পরে প্রতিক্রিয়ার দায় চাপায় প্রতিপক্ষের ওপর। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—ইসরায়েলের উদ্দেশ্য কি প্রকৃতই শান্তি প্রতিষ্ঠা, নাকি প্রতিপক্ষকে দমন করার নামে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত রাখা?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত