Ajker Patrika

পরমাণু অস্ত্রের নকশার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালিয়েছে ইরান, দাবি ইসরায়েলের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১৮: ০৪
ইরানের নাতানজ পরমাণু কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজ। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের নাতানজ পরমাণু কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজ। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানে হামলার আগে দেশটির পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় নকশার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত আর্মি রেডিও অজ্ঞাতনামা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে। এর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে হামলার আগে ইসরায়েল জানতে পারে যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক অস্ত্রের নকশা প্রক্রিয়ায় সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ফলে ইরান মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বোমা তৈরি করতে সক্ষম হতে পারত, যদি তারা তেমনটা চাইত।

গতকাল রোববার হিব্রু গণমাধ্যম আর্মি রেডিও অজ্ঞাতনামা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই ‘মূল্যবান তথ্য’ ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে শুক্রবারের প্রতিরোধমূলক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে এই উদ্বেগও জানানো হয়েছিল যে, ইসরায়েল সবকিছু জানে না এবং তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরির ক্ষেত্রে উপলব্ধ তথ্যের চেয়েও বেশি উন্নত পর্যায়ে থাকতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানি বিজ্ঞানীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত করে গোপনভাবে পারমাণবিক উপাদানকে একটি প্রকৃত বিস্ফোরক যন্ত্রে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়ার উপাদান নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের শেষ বা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার (যা গাজায় চলমান যুদ্ধের সূত্রপাত) অল্প পরেই।

একটি পারমাণবিক অস্ত্র নকশার এই দিক ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সমান্তরালে চলেছিল, যা বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য নয় এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য অপরিহার্য। মে মাসের শেষদিকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) এক প্রতিবেদন জানায়, ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত আরও সমৃদ্ধ করা হলে তা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি যাবে।

আর্মি রেডিও জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গোপন অস্ত্র প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল, যা জেরুজালেমকে নিশ্চিত করে যে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা গত শনিবার বলেন, প্রাথমিক হামলায় নিহত সব বিজ্ঞানী বছরের পর বছর ধরে পারমাণবিক বিস্ফোরণ যন্ত্রের বিকাশে জড়িত ছিলেন।

আইডিএফ ৯ জন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীর নাম প্রকাশ করেছে, যাঁদের তারা প্রাথমিক হামলায় হত্যা করেছে এবং তাঁদের হত্যার প্রচেষ্টার বিস্তারিত জানিয়েছে। তাঁরা হলেন পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ফেরেদুন আব্বাসি, পদার্থবিদ মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি, রাসায়নিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ আকবর মোতালেবি জাদেহ, ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ সাঈদ বার্জি, পদার্থবিদ আমির হাসান ফাকাখি, চুল্লি পদার্থবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ আবদ আল-হামিদ মনুচেহর, পদার্থবিদ মনসুর আসগারি, পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ আহমদ রেজা জুলফাগারি দারিয়ানি ও মেকানিকস বিশেষজ্ঞ আলী বাখোয়েই কাতিরিমি।

আইডিএফ বলেছে, ‘নিহত সব বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ ইরানি পারমাণবিক প্রকল্পে জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিলেন এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশে কয়েক দশকের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ছিল তাঁদের।’ তারা আরও বলেছে, তাঁদের অনেকে মোহসেন ফাখরিজাদেহের উত্তরসূরি ছিলেন, যাঁকে ‘ইরানি পারমাণবিক প্রকল্পের জনক’ বলা হয় এবং যাঁকে ২০২০ সালে ইসরায়েল হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ।

ইসরায়েল বলেছে, তাদের আক্রমণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। দেশটি আরও দাবি করেছে, তারা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছিল যে, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার এমন এক বিন্দুতে পৌঁছে যাচ্ছিল, যেখান থেকে তারা যেকোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলতে পারত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত