Ajker Patrika

‘আমি ২৪ বছর বয়সেই মরতে চাই না’- রাফাহ ক্রসিংয়ে আটকা তরুণীর আকুতি

আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ২০: ১৫
‘আমি ২৪ বছর বয়সেই মরতে চাই না’- রাফাহ ক্রসিংয়ে আটকা তরুণীর আকুতি

দ্বৈত নাগরিক ও গুরুতর আহতদের সরিয়ে নিতে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিসর। গত বুধবার ৭৬ জন আহত ফিলিস্তিনি ও ৩৩৫ জন বিদেশি পাসপোর্টধারী মিসরে প্রবেশ করেন। ৩১ জন অস্ট্রীয়, চারজন ইতালীয় ও পাঁচজন ফরাসি ছাড়াও তাঁদের মধ্যে বেশকিছু জার্মান নাগরিক রয়েছেন বলে মিসর সরকার জানিয়েছে। 

গাজার যুদ্ধাবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাফাহ ক্রসিংয়ে অপেক্ষায় আছে আরও হাজার হাজার মানুষ। তৃতীয়বারের মতো এই ক্রসিং পার হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তালা আবু নাহলেহ। তাঁর মা একজন জর্ডানের নাগরিক। জর্ডানের দূতাবাস থেকে তালার পরিবারকে রাফাহ ক্রসিংয়ে যেতে বলা হয়। 

তালার ভাই ১৫ বছর বয়সী ইয়াজিদ চলাচলে অক্ষম ও প্রায়ই খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে তার হুইলচেয়ারের প্রয়োজন হয়। গাজার হাসপাতালগুলোতে তার প্রয়োজনীয় সব ওষুধ ফুরিয়ে এসেছে। এদিকে বোমা হামলার কারণে তার অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে।     

বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তালা বলেন, গাজায় উত্তেজনা বাড়ার পর থেকে ইয়াজিদ বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তার খিঁচুনিরও অবনতি হতে থাকে। 

ছয় সদস্যের পরিবারে তালাই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তিনি স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও লেবাননের বৈরুতে লেখাপড়া করেছেন। গাজা সীমান্তের ওপারেও আত্মবিশ্বাসী ও স্পষ্টবাদী চরিত্রের তালাই হবেন পরিবারের একমাত্র সহায়। 

তালা বলেন, ‘আমরা টিকে থাকার চেষ্টা করছি, তা পারব কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত নই। তবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা সব প্রচেষ্টাই করছি। কারণ আমি ২৪ বছর বয়সেই মরতে চাই না।’ 

সীমান্ত এমন জায়গা যেখানে ‘ভাগ্যের’ সংজ্ঞা ভিন্ন। এখানে ভাগ্য মানে হলো- বোমা হামলা, ক্ষুধা ও পানিস্বল্পতাকে মোকাবিলা করা। 

সেখানে ভাগ্য মানে হলো  নিজের প্রিয়জনকে ছেড়ে আসা, যাঁদের কাছে বিদেশি পাসপোর্ট নেই বা যাঁরা সরিয়ে নেওয়ার মতো আহত নন বা যাঁরা আগুনে আটকে আছে এবং যাঁরা সীমান্তে পৌঁছাতে পারবেন না।  গাজার ২২ লাখ মানুষের কেবল ক্ষুদ্র একটি অংশই এ রাফাহ ক্রসিং দিয়ে পার হতে পারবে।   

বিয়ে সূত্রে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক মোনা। সীমান্তে তিনি একাই এসেছেন। গাজায় আটকে থাকা পরিবারের চিন্তায় আতঙ্কিত হয়ে আছেন তিনি।  

মোনা বিবিসিকে বলেন, ‘আমি একেবারেই আনন্দিত নই। কারণ আমি আমার অন্য আরেক অংশ ছেড়ে আসছি। আমার ভাই-বোন ও পুরো পরিবার এখনো গাজায় আছে। আমি প্রার্থনা করি, তাঁরা যেন নিরাপদে থাকে। সেখানের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিপজ্জনক।’ 

গাজা সীমান্তে জানালায় ঝুলিয়ে রাখা কাগজের সামনে অনেক মানুষের ভিড়। সে কাগজে রয়েছে গাজা ছেড়ে যাওয়ার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম। এ তালিকায় নিজের ও পরিবারের নাম দেখতে ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য উৎসুক চোখ। পাশের ছোট এক কক্ষে মুক্তির অপেক্ষায় তাঁদের পরিবার।    

রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়ার পর গত বুধবার প্রথমবারের মতো ৪০০ বিদেশি নাগরিক ও আহত মানুষ গাজা ছেড়ে মিসরে প্রবেশ করতে পেরেছেন। 

দিন শেষে তালা আবু নাহলেহ বুঝে গেছেন, যে তাঁর পরিবার এতটা ভাগ্যবান নয়। আশার আলো নিভে যাওয়ার পর তাঁরা তাঁদের অন্ধকার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসেন। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণে তাঁদের চারপাশই অন্ধকারে নিমজ্জিত।  

বিবিসিকে পাঠানো এক ভিডিওবার্তায় তালা বলেন, তিনি আর জানেন না তাঁর কেমন বোধ করা উচিত। তাঁর কণ্ঠে আর চেহারায় ছিল দুশ্চিন্তার ছাপ। 

তালা বলেন, ‘আমরা ফিরে আসার পর এখানে বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পানি নেই এমনকি পরিচ্ছন্নতার পানিও নেই। কয়দিন পরই আমার ভাইয়ের ওষুধ ফুরিয়ে যাবে আর আমরা এখনো এখানে আটকে আছি। রাতও হয়ে গিয়েছে। আমি জানি না, আমরা কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকব কি না, তবে আমরা বেঁচে থাকার আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত