Ajker Patrika

অবশেষে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি শুরু

আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৫৭
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি অবশেষে কার্যকর হয়েছে। ছবি: জেরুসালেম পোস্টের সৌজন্যে
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি অবশেষে কার্যকর হয়েছে। ছবি: জেরুসালেম পোস্টের সৌজন্যে

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান সংঘর্ষ অবশেষে থেমেছে। লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি চলবে ৬০ দিন। তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও তারা হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পৃথক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার বৈশ্বিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে হিজবুল্লাহর সঙ্গে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা সর্বাত্মক যুদ্ধের পর লেবাননে যুদ্ধবিরতি শুরু করেছে। তবে গাজায় লড়াই অব্যাহত থাকবে এবং ইসরায়েল প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে সমূলে ধ্বংস করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন দেয়। বিষয়টি সুখবর আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, এই যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় আজ বুধবার ভোর ৪টা থেকে কার্যকর হবে এবং এটি লেবাননের জন্য এক ‘নতুন সূচনা।’

লেবাননে ১৯৯০ সালের গৃহযুদ্ধের পর অস্ত্র জমা দিতে অস্বীকৃতি জানানো সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সরাসরি এই আলোচনায় উপস্থিত ছিল না। লেবাননের পার্লামেন্টের স্পিকার নাবি বেরি হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন। লেবাননের এক কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিরতির সময় উভয় পক্ষই হামলা চালানো বন্ধ রাখবে।

তবে যুদ্ধবিরতির সময় হিজবুল্লাহ কোনো ধরনের লঙ্ঘন করলে ইসরায়েল শক্তিশালী প্রতিশোধ নেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি আরও বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলকে গাজায় এবং ইরানের হুমকি মোকাবিলার দিকে মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে পুনরায় অস্ত্র-গোলাবারুদ ও রসদ সংগ্রহ করার সুযোগ দেবে।’ নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ থেকে সরে এলে, হামাস একা পড়ে যাবে। আমরা তাদের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করব।’

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করব, আমাদের সব বন্দিকে ঘরে ফিরিয়ে আনব। নিশ্চিত করব যে, গাজা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি হবে না এবং আমরা উত্তরের বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরিয়ে আনব।’

এই চুক্তির অংশ হিসেবে লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীকে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে মোতায়েন করা এবং ৬০ দিনের মধ্যে ইসরায়েল ধাপে ধাপে লেবাননের ভূখণ্ড থেকে সরে যাবে। এই চুক্তি হিজবুল্লাহকে দক্ষিণ সীমান্ত থেকে পিছু হটে লিতানি নদীর এপারে সরিয়ে আসতেও বাধ্য করবে।

এই যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি গাজার সংঘাত স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা চুক্তিটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের সহায়তা দেবে।’ এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লেবাননের যুদ্ধবিরতি গাজায় সংঘাত বন্ধ করতে এবং বন্দীদের মুক্ত করতে একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুমুল হট্টগোলে পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধন, সেনাপ্রধান আসিম মুনির আরো ক্ষমতাধর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

তুমুল হট্টগোল, স্লোগান, কাগজ ছোড়া ও ওয়াকআউটের মধ্যে পাকিস্তান সিনেটে সোমবার পাস হয়েছে বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল। মোট ৯৬ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চকক্ষে ৬৪ জন সিনেটর বিলটির পক্ষে ভোট দেন, ফলে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিলটি সহজেই গৃহীত হয়।

এই ভোটে সরকারের জোটসঙ্গীদের পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের দুই সদস্য ভিন্নমত দিয়ে সরকারের পক্ষে ভোট দেন, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে। ভোটাভুটির আগে বিরোধী বেঞ্চে প্রবল বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়; তারা বিলের কপি ছিঁড়ে আইনমন্ত্রীর টেবিলের দিকে ছুড়ে দেন এবং ‘গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদে’ স্লোগান তুলতে থাকেন।

বিক্ষোভ শেষে বেশিরভাগ বিরোধী সদস্য সিনেট চেম্বার থেকে ওয়াকআউট করেন, ফলে বিলটি পাসে আর কোনো বাধা থাকেনি।

বিলটি সিনেটে উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার, আর অধিবেশন পরিচালনা করেন সিনেট চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ রজা গিলানি। ধারা-ধারাভিত্তিক ভোটের পর প্রোটোকল অনুযায়ী সিনেটের প্রবেশদ্বার বন্ধ রেখে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংশোধনীর মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে—

‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি হবে, কার্যকর ২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে।

সেনাপ্রধান একই সঙ্গে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ারফোর্স, অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট উপাধি আজীবন বহাল থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের’ সুপারিশে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডার নিয়োগ দেবেন।

‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’ নামে নতুন আদালত গঠন হবে।

আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বাড়বে।

সুপ্রিম কোর্টের কিছু এখতিয়ার নতুন আদালতে স্থানান্তর হবে।

রাষ্ট্রপতি আজীবনের জন্য ফৌজদারি দায়মুক্তি পাবেন।

বিতর্কিত ধারাগুলো ও কমিটির প্রস্তাব

আইন ও বিচারবিষয়ক যৌথ সংসদীয় কমিটির (যা বিরোধী দল বয়কট করে) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিলটিতে কয়েকটি ছোট সংশোধন আনা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর ফারুক এইচ. নাইক জানান, প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী একটি ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকেও একজন সদস্য যুক্ত হবেন।

কমিটি অন্যতম সিদ্ধান্ত ছিল, হাইকোর্টে পাঁচ বছর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরাই এ আদালতে মনোনীত হতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে কেউ নিয়োগ পেলে তাঁর জ্যেষ্ঠতা অপরিবর্তিত থাকবে।

বিলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো— সংবিধানে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিল্ড মার্শাল পদ অন্তর্ভুক্ত করা। এর ফলে তিন বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) জন্যই আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচ তারকা জেনারেলের পদ সৃষ্টির সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরি হলে। সংশোধনীর ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির সর্বেসর্বা ক্ষমতার অধিকারী হলেন।

পিটিআই থেকে সাইফুল্লাহ আবরোর নাটকীয় পদত্যাগ

বিল পাসের পরপরই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সিনেটর সাইফুল্লাহ আবরো নিজের আসন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমি শুধু সৈয়দ জেনারেল আসিম মুনিরের জন্যই ভোট দিয়েছি। তিনি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ জিতে জাতিকে গর্বিত করেছেন।’

তিনি দাবি করেন, ২৬তম সংশোধনের সময় তাঁর পরিবারের ১০ সদস্য অপহৃত হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর দল কোনো সহায়তা দেয়নি। পদত্যাগের পর সিনেট চেয়ারম্যান গিলানি বলেন, ‘আমরা আপনাকে আবার সিনেটর করব।’

‘ঐতিহাসিক বিল’ বলে দাবি সরকারের

বিল পাস হওয়ার পর উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার একে ‘ঐতিহাসিক বিল’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘এটি ২০০৬ সালের চার্টার অব ডেমোক্রেসির অসমাপ্ত এজেন্ডা। বিচার বিভাগের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে সাংবিধানিক আদালত গঠন অত্যন্ত জরুরি ছিল।’

দার আরও বলেন, ‘ফিল্ড মার্শালের পদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সামরিক নেতৃত্বের কাঠামো এখন আরও স্পষ্ট হলো। এতে বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সিনিয়রিটি বা প্রধান বিচারপতির অবস্থানে কোনো প্রভাব পড়বে না।’

বিরোধীদের ক্ষোভ

পিটিআই সিনেটর আলি জাফর গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা এই সংশোধনের বিরোধিতা করব, কারণ কেউই—যে-ই হোক—আইন থেকে দায়মুক্তি পেতে পারে না। যদি কেউ অপরাধ করে, সে প্রেসিডেন্ট হোক বা গভর্নর, তার বিচার হওয়া উচিত।’

তবে তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই রাষ্ট্রপ্রধানরা নির্দিষ্ট পরিমাণ দায়মুক্তি ভোগ করেন। এটি কোনো ব্যতিক্রম নয়।’ তিনি আরও দাবি করেন, এই সংশোধনটি সুশাসন, প্রাদেশিক ভারসাম্য এবং প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে।

সাংবিধানিক আদালতের ক্ষমতা

বিল অনুযায়ী, নবগঠিত সাংবিধানিক আদালতও সুপ্রিম কোর্টের মতো সুয়োমোটো (নিজ উদ্যোগে মামলা নেওয়ার) ক্ষমতা রাখবে, তবে তা প্রয়োগের আগে আদালত যাচাই করবে যে আবেদনটি ন্যায্য ও প্রয়োজনীয় কিনা।

বিচারক বদলির নতুন নিয়ম

এখন থেকে একজন বিচারককে এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে বদলি করা যাবে শুধুমাত্র জুডিশিয়াল কমিশন অব পাকিস্তানের (জেসিপে) মাধ্যমে, যেখানে নির্বাহী, বিচার বিভাগ, সংসদ ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি থাকবেন।

সাংবিধানিক সংশোধনের প্রেক্ষাপট

একটি সাংবিধানিক সংশোধন পাসের জন্য সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন হবে। ৯৬ সদস্যের সিনেটে অন্তত ৬৪ ভোট লাগত, যা সরকার পেয়েছে। বিলটি এখন জাতীয় পরিষদে যাবে, যেখানে সরকারী জোটের মোট ২৩৩ আসন থাকায় এটি পাস হওয়া প্রায় নিশ্চিত।

বিলটি শনিবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সিনেটে উত্থাপন করা হয়। এতে প্রধান দুটি লক্ষ্য ছিল — ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠন এবং ফিল্ড মার্শালের পদকে সংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সিদ্ধান্ত

বিলে প্রধানমন্ত্রীকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিজে তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে আইনের আদালত ও জনগণের আদালত উভয়ের কাছেই জবাবদিহি থাকতে হবে।’

তিনি জোটসঙ্গীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে দেশের স্বার্থে, প্রাদেশিক সম্প্রীতি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধীরে ধীরে চলছিল গাড়িটি, ট্রাফিক সিগন্যালে থামতেই বিকট বিস্ফোরণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: পিটিআই
ছবি: পিটিআই

দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লা ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলোর একটি। অন্যান্য দিনের মতো আজকেও অসংখ্য মানুষের ভিড় ছিল লালকেল্লার সামনে।

সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট। লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে আছে অনেক গাড়ি। কিন্তু ছোট একটি গাড়ি ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল। ওই গাড়িতেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

দিল্লি পুলিশ কমিশনার সত্যেশ গোলচা সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি গাড়ি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ভাঙাচুড়া গাড়ি, ছিন্নভিন্ন লাশ এবং রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে আছে কাচের টুকরা।

গোলচা আরও জানান, ফরেনসিক দল, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন এবং তাঁকে প্রতিনিয়ত আপডেট জানানো হচ্ছে।’

দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি চিফ এ কে মালিক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, বিস্ফোরণের পর যে আগুন লেগেছিল, তা সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল।

ফায়ার সার্ভিসের আরও এক কর্মকর্তা পিটিআইকে জানান, আগুনে ছয়টি গাড়ি, দুটি ই-রিকশা ও একটি অটোরিকশা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৮০০ মিটার দূরে অবস্থিত চাঁদনি চক ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় ভরগবের দোকান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে পুরো ভবন কেঁপে উঠেছিল।

আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি গুরুদুয়ারায় ছিলাম, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনি। শব্দটা এতটাই জোরে ছিল, আমি বুঝতেই পারিনি কী ঘটেছে।’

এ ঘটনার পর দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাশ্মীরের চিকিৎসক জঙ্গি সংগঠন জইশের সদস্য, হরিয়ানায় তাঁর বাসায় মিলল ৩ টন বিস্ফোরক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ০৪
জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য কাশ্মীরের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। ছবি: সংগৃহীত
জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য কাশ্মীরের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। ছবি: সংগৃহীত

হরিয়ানার ফরিদাবাদে এক চিকিৎসকের ভাড়া নেওয়া দুই বাড়ি থেকে ২ হাজার ৯০০ কেজির বেশি (প্রায় ৩ টন) বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এই দুই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। তিনি ভারতে প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংযুক্ত করতেন।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উদ্ধার করা পদার্থগুলো সম্ভবত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, যা সাধারণত বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফরিদাবাদ ও জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ সকাল থেকে ওই বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে।

শাকিল ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। দিল্লি থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ধোজ এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনপ্রাপ্ত।

গতকাল রোববার পুলিশ ধোজ এলাকার তাঁর ভাড়া নেওয়া বাড়ি থেকে ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ২০টি টাইমার, অ্যাসল্ট রাইফেল, হ্যান্ডগান ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। শাকিল সেখানে সাড়ে তিন বছর ধরে থাকতেন। জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের প্রমাণ মেলায় ১০ দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে আরও একটি পিস্তল, আটটি গুলি, দুটি খালি কার্তুজ, দুটি অতিরিক্ত ম্যাগাজিন, আটটি বড় স্যুটকেস, চারটি ছোট স্যুটকেস ও একটি বালতি উদ্ধার করা হয়।

হরিয়ানায় মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি। ছবি: সংগৃহীত
হরিয়ানায় মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বাড়িটি ধোজ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ফতেহপুর টাগা গ্রামে। ওই বাড়ির মালিক এক মাওলানা, যাকে ইতিমধ্যে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অভিযানে সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর, আনন্তনাগ, গান্ডারবাল, শোপিয়ানসহ বিভিন্ন জায়গায় এবং ফরিদাবাদে একাধিক স্থানে তল্লাশিতে এক নতুন ধরনের ‘প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক’ উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। যেখানে বহু শিক্ষিত ও পেশাজীবী, বিশেষত চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন। গত ১৫ দিনের এই যৌথ অভিযানে ২ হাজার ৯০০ কেজির বেশি বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগেও উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে কর্মরত কাশ্মীরি চিকিৎসক ড. আদিল আহমদ রাঠেরকে শ্রীনগরে জইশ-ই-মোহাম্মদ সমর্থনকারী পোস্টার লাগানোর অভিযোগে আটক করা হয়।

শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ফরিদাবাদ পুলিশ তাঁর এক নারী সহকর্মীর সুইফট গাড়ি উদ্ধার করে, যেখানে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও একটি পিস্তল পাওয়া যায়। ওই নারী চিকিৎসককেও পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই পেশাজীবী জঙ্গি চক্রটি পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাঁরা শুধু প্রচারমূলক পোস্টার লাগানোই নয়, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায়ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

শাকিল ও রাঠের ছাড়াও আরিফ নিসার দার, ইয়াসির উল আশরাফ, মাকসুদ আহমদ দার (শ্রীনগর), মৌলভি ইরফান আহমদ (শোপিয়ান), জমির আহমদ আহাঙ্গারকেও (গান্ডারবাল) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অস্ত্র ও বিস্ফোরকসামগ্রীর পাশাপাশি পুলিশ ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির নির্দেশনা-সংবলিত বই ও নথিপত্রও উদ্ধার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার, কিসের ইঙ্গিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার, কিসের ইঙ্গিত

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে রেড ফোর্টের পাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের বাইরে গাড়িতে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থল ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ত ও নিরাপত্তা সংবেদনশীল এলাকায় হওয়ায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের একাধিক গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি ভ্যানের দরজা উড়ে গেছে এবং একটি গাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল দেহের খণ্ডাংশ।

প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের ধরন বা উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। দিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।

দিল্লি, মুম্বাই, জয়পুর, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় দুই ডজন অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে এবং এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। ফরেনসিক ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল আলামত সংগ্রহ করছে।

ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধারের পরই দিল্লিতে বিস্ফোরণ

বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানার ফরিদাবাদে দুটি আবাসিক ভবন থেকে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি (৩ টন) বিস্ফোরক উদ্ধার করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। এর মধ্যে ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল, যা সার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রাণঘাতী বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।

এই অভিযান পরিচালিত হয় জম্মু ও কাশ্মীরের এক চিকিৎসক আদিল রশিদ রাঠারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। সিসিটিভিতে জইশ-ই-মোহাম্মদ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থনে পোস্টার লাগাতে দেখে রাঠারকে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পোস্টারগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হুমকি ছিল বলে পুলিশের দাবি।

তদন্তে মুজাম্মিল শাকিল নামের আরও একজন চিকিৎসকের নাম উঠে আসে। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাঁর নামে থাকা দুটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১২টি স্যুটকেসভর্তি বিস্ফোরক, ডেটোনেটর ও টাইমার ডিভাইস উদ্ধার করে।

এ ছাড়া এক নারী চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার গাড়িতে একটি রাইফেল ও গুলি পাওয়া গেছে। আরও একটি রাইফেল উদ্ধার হয় কাশ্মীরের আনন্তনাগের মেডিকেল কলেজের একটি লকার থেকে, যেখানে আদিল রাঠার গত বছর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের ইঙ্গিত

এ ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আল-কায়েদা সম্পৃক্ত আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ জড়িত বলে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের দাবি। অভিযানের মাধ্যমে তারা এই দুটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত একটি আন্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আদিল রাঠার, মুজাম্মিল শাকিল, নারী চিকিৎসকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ফরিদাবাদে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও কয়েক ঘণ্টা পর দিল্লির হৃদয়স্থলে হওয়া এই বিস্ফোরণ—দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানীতে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ছিল, যা আংশিকভাবে সফল হয়েছে।

ঘটনার পর পুরো দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়েছে এবং লালকেল্লা এলাকা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিস্ফোরণ সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত বহন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত