Ajker Patrika

ডানপন্থীদের হাতে গেল ইভো মোরালেসের বলিভিয়া, খুশি ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২৬
বলিভিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো পাজ পেরেইরা। ছবি: এএফপি
বলিভিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো পাজ পেরেইরা। ছবি: এএফপি

বলিভিয়ায় বামপন্থী দল মুভিমিয়েন্তো আল সোসিয়ালিজমোর (মাস) প্রায় ২০ বছরের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে মধ্য ডানপন্থী রদ্রিগো পাজ পেরেইরা (৫৮) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় (রান অফ) ৯৭ শতাংশের বেশি ব্যালট গণনা শেষে পেরেইরা পেয়েছেন ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট হোর্হে ‘তুতো’ কুইরোগা পেয়েছেন ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। যদিও নির্বাচন আদালত ফলাফলকে ‘প্রাথমিক’ বলে উল্লেখ করেছে, তবে জয়ের ব্যবধান স্পষ্ট।

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশে পাজ পেরেইরা বলেন, ‘চলুন আমরা একটি নতুন ভবিষ্যৎ গড়ি, ২০ বছর পর একটি নতুন পথ তৈরি করি। আগের ব্যবস্থা আমাদের অর্থনীতি ও ভূরাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আমাদের অবশ্যই কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।’

মতাদর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে বাস্তবতার ওপর জোর দিয়ে পাজ পেরেইরা বলেন, ‘মতাদর্শ টেবিলে খাবার দেয় না। যা দেয়, তা হলো কাজ করার অধিকার, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, আইনি নিরাপত্তা, বেসরকারি সম্পত্তির প্রতি শ্রদ্ধা এবং নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া—আর এর জন্য আমরা কাজ করতে চাই।’

নতুন প্রেসিডেন্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের আশাও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এর লক্ষ্য হবে বলিভিয়ার জন্য জল ও জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা।

২০০৫ সালের পর প্রথম বামপন্থী মাস পার্টির কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। ইভো মোরালেস ও তাঁর সাবেক রাজনৈতিক শিষ্য প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সের মধ্যে তিক্ত কোন্দল এবং গত চার দশকের মধ্যে ভয়াবহতম অর্থনৈতিক সংকট (চরম মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও জ্বালানির সংকটে জর্জরিত) একসময়ের এই প্রভাবশালী দলটির পতনের মূল কারণ। একসময় কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশ আসন ধরে রাখা মাস পার্টির পক্ষ থেকে এবারের আইনসভায় মাত্র দুজন কংগ্রেসম্যান থাকছেন। একজনও সিনেটর পায়নি।

পাজ পেরেইরা তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় ‘জনপ্রিয় পুঁজিবাদ’-এর প্ল্যাটফর্মে ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ ও আমদানি শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

অনেকের মতে, পাজ পেরেইরার বিজয়ের একটি ফল নির্ধারণী ফ্যাক্টর ছিলেন তাঁর রানিং মেট, সাবেক পুলিশ ক্যাপ্টেন এদমান লারা মন্তানো (৩৯)। ‘ক্যাপ্টেন লারা’ নামে পরিচিত এ নেতা টিকটকে পুলিশের দুর্নীতির অভিযোগ ফাঁস করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও দ্বিধা করবেন না।

প্রেসিডেন্ট পাজ পেরেইরার সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে: ডিজেল ও পেট্রলের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা; কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তাঁর দল পাত্রিদো দেমোক্রাতা ক্রিশ্চিয়ানোর (পিডিসি) আইন ও সংস্কার পাস করানো কঠিন হবে; সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে আইন প্রয়োগ করা।

পাজ পেরেইরা নিশ্চিত করেছেন, আইন ‘অন্য যেকোনো নাগরিকের মতোই’ মোরালেসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

এদিকে বলিভিয়ায় আসন্ন মধ্য ডানপন্থী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’আর এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো পাজ পেরেইরাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘একটি নতুন অধ্যায়’ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, নভেম্বর ২০২৩ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে বলিভিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এ ছাড়া লাতিন আমেরিকার বেশির ভাগ দেশের সঙ্গেই ইসরায়েলের সম্পর্ক ভালো না। বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বামপন্থী শাসিত সরকারগুলো ইসরায়েলের কঠোর সমালোচক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্নোগ্রাফিতে জড়িত সেই বাংলাদেশি যুগল গ্রেপ্তার

দেবরের ছেলের সঙ্গে প্রেমের ইতি, থানায় বসে কবজি কাটলেন দুই সন্তানের মা

ভারত বলছে, ফোনালাপ হয়নি, জবাবে ট্রাম্প বললেন—তাহলে ওরা শুল্ক দিতে থাক

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

অগ্নিকাণ্ড দেখলে মুমিনের করণীয় আমল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরাসি রানির টায়রাসহ ল্যুভর থেকে মহামূল্যবান যেসব গয়না চুরি গেল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৪১
ফ্রান্সের শেষ রানি মেরি-অমেলির নীলকান্তমণির টায়রা। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সের শেষ রানি মেরি-অমেলির নীলকান্তমণির টায়রা। ছবি: এএফপি

প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে ফরাসি রাজপরিবারের অমূল্য গয়না চুরির ঘটনায় গোটা ফ্রান্স জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার (১৯ অক্টোবর) প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত এই দুঃসাহসিক চুরিতে চোরেরা আটটি মহামূল্যবান গয়না নিয়ে পালিয়ে গেছে। শুধু মূল্যই নয়, এসব গয়নার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য অপরিসীম।

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চুরিটি সংঘটিত হয় জাদুঘরের গ্যালারি দ্য অ্যাপোলনে, যা ১৬৬১ সালে রাজা চতুর্দশ লুই নির্মাণ করেছিলেন। সোনালি কারুকাজ আর অসাধারণ চিত্রকর্মে সজ্জিত এই হলটি পরবর্তীতে ভার্সাই প্রাসাদের বিখ্যাত ‘হল অব মিররস’-এর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল।

জানা গেছে, চোরেরা একটি চেরি পিকার (ট্রাকের ওপর স্থাপন করা মই) ব্যবহার করে এবং কাটার যন্ত্রের সাহায্যে কক্ষটিতে প্রবেশ করে। দুঃসাহসিক এই চুরি এতটাই পরিকল্পিত ছিল যে, সকালে জাদুঘর খুলে দেওয়ার সময়টিতেই তারা প্রবেশ করে এবং মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই তারা গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়।

দ্বিতীয় স্ত্রী মারি-লুইজকে এই পান্না হার উপহার দিয়েছিলেন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ছবি: ল্যুভর
দ্বিতীয় স্ত্রী মারি-লুইজকে এই পান্না হার উপহার দিয়েছিলেন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ছবি: ল্যুভর

চুরি হওয়া গয়নাগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের (প্রথম নেপোলিয়ন) উপহার দেওয়া একটি দুর্লভ পান্না হার। ১৮১০ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী মারি-লুইজকে বিবাহ উপলক্ষে এটি তিনি উপহার দিয়েছিলেন। এই হারে রয়েছে ৩২টি পান্না ও ১ হাজার ১৩৮টি হিরা। একই সেটের একটি কানের দুলের জোড়াও চুরি গেছে।

এ ছাড়া ফ্রান্সের শেষ রানি মেরি-অমেলির মালিকানাধীন একটি নীলকান্তমণির টায়রাও নিয়ে গেছে চোর। এই টায়রায় ছিল ২৪টি সিলন নীলকান্তমণি ও ১ হাজার ৮৩টি হিরা। টায়রাটির সেট হিসেবে থাকা একটি হার ও এক জোড়া দুল থেকে একটি দুলও এখন নিখোঁজ।

সম্রাজ্ঞী ইউজেনির এই টায়রাটিও চুরি গেছে। ছবি: ল্যুভর
সম্রাজ্ঞী ইউজেনির এই টায়রাটিও চুরি গেছে। ছবি: ল্যুভর

আরেকটি চুরি হওয়া গয়না হলো সম্রাজ্ঞী ইউজেনির (তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী) একটি টায়রা। এতে ২১২টি মুক্তা ও প্রায় ৩ হাজার হিরা বসানো ছিল। এ ছাড়া ২ হাজার ৪০০ হিরা দিয়ে অলংকৃত একটি বেল্ট এবং ১৮৫৫ সালের একটি সাদা হিরার ব্রোচও চুরি গেছে।

চোরেরা সম্রাজ্ঞী ইউজেনির এই রাজমুকুটটি জাদুঘরের বাইরে ফেলে রেখে গেছে। ছবি: ল্যুভর
চোরেরা সম্রাজ্ঞী ইউজেনির এই রাজমুকুটটি জাদুঘরের বাইরে ফেলে রেখে গেছে। ছবি: ল্যুভর

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গয়নাগুলোর ক্ষতি শুধু আর্থিক নয়—এটি ফরাসি রাজকীয় ঐতিহ্যের এক অমূল্য অধ্যায়ের লোপ। ফরাসি বিপ্লবের সময় বহু রাজকীয় গয়না হারিয়ে গিয়েছিল; নেপোলিয়ন বোনাপার্টের আমলে সেগুলোর কিছু পুনর্গঠিত হয়। তাই এই চুরি ফরাসি ঐতিহ্যের এক গভীর ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তবে একটি আশার খবরও এসেছে। সম্রাজ্ঞী ইউজেনির একটি রাজমুকুট ল্যুভর মিউজিয়ামের বাইরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পালিয়ে যাওয়ার সময় চোরেরা এটি ফেলে রেখে যায়। ৫৬টি পান্না ও ১ হাজার ৩৫৪টি হিরায় অলংকৃত এই রাজমুকুট এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্নোগ্রাফিতে জড়িত সেই বাংলাদেশি যুগল গ্রেপ্তার

দেবরের ছেলের সঙ্গে প্রেমের ইতি, থানায় বসে কবজি কাটলেন দুই সন্তানের মা

ভারত বলছে, ফোনালাপ হয়নি, জবাবে ট্রাম্প বললেন—তাহলে ওরা শুল্ক দিতে থাক

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

অগ্নিকাণ্ড দেখলে মুমিনের করণীয় আমল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধ্বংসস্তূপে ফেরা গাজাবাসীর নয়া আতঙ্ক ইসরায়েলি রোবট বোমা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ত্রাণের আশায় একটি গাড়ির দিকে ছুটছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: আনাদোলু
ত্রাণের আশায় একটি গাড়ির দিকে ছুটছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: আনাদোলু

যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসস্তূপে ফিরতে শুরু করেছেন গাজার বাসিন্দারা। ধ্বংসস্তূপ থেকে যেসব জিনিসপত্র উদ্ধার করা যাচ্ছে সেসব সংগ্রহ করছেন আর পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করছেন অনেকে। তবে এই নতুন শুরুর চেষ্টার মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে ইসরায়েলিদের বিস্ফোরকবাহী রোবট।

২০২৪ সালের মে মাসে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে প্রথমবারের মতো এগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনারা।

জাবালিয়া, শেখ রাদওয়ান, আবু ইস্কান্দার এবং অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারা ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপ পরিস্কার করছিলেন এটা নিশ্চিত জেনেই যে এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে অবিস্ফোরিত রোবট বোমা। তবে কোথায় কোথায় আছে জানেন না তাঁরা। আর সামনে পেলেও কীভাবে নিস্ক্রিয় করবেন বা এ থেকে নিজেদের কীভাবে রক্ষা করবেন সেটিও জানেন না। এ কারণে অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায় ছেয়ে গেছে তাদের মন।

গত ১ সেপ্টেম্বর ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুদ্ধবিরতির আগে এই রোবটের ব্যবহার কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। এগুলো দিয়ে প্রতিদিন গাজা ও জাবালিয়ায় প্রায় ৩০০টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস করা হয়েছিল।

এই রোবটগুলো এক ধরনের সাঁজোয়া যান। ইসরায়েলি সেনারা এগুলোতে বিস্ফোরক ভরে দিয়ে তারপর সাঁজোয়া বুলডোজার ব্যবহার করে সেগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হতো।

গাজা সিটি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আল জাজিরাকে বলেন, এই রোবটে কতটুকু বিস্ফোরক ছিল তা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এটি কতটা সময় টিকে থাকে তাও জানা নেই।

তবে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা স্পষ্ট, বলেন বাসাল। তিনি রোবটের ‘কিল রেডিয়াস’ উল্লেখ করে বলেন, এটি প্রায় ৫০০ মিটার পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে পারে।

গত নভেম্বরের স্মৃতিচারণ করেন জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের ২২ বছর বয়সী শরীফ সাদি। তিনি বলতে থাকেন, শৈশব থেকে বিমান হামলা, কামান ও রকেটের শব্দ অনেক শুনেছি। কিন্তু নতুন ওই আওয়াজ শুনে মনে হলো, যুদ্ধের সব শব্দের সঙ্গে এখনো পরিচিত হননি।

উত্তর গাজায় ইসরায়েলের বর্বর স্থল হামলার সময় ওই ভয়ংকর শব্দ শুনেছিলেন। ওই শব্দ ছিল রোবটগুলোর শব্দ। আর শব্দগুলো শোনার পরপরই রোবটগুলো বিস্ফোরিত হয় আর পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

সাদি বলতে থাকেন, ‘এই রোবটগুলো একটা এলাকায় প্রবেশ করে আর মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।’

সেই নভেম্বরের এক সকালের স্মৃতিচারণ করেন সাদি। বলতে থাকেন, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম আমি। ৯ সদস্যের পরিবার আমার। তাদের জন্য কিছু খাবার সংগ্রহের চেষ্টায় ছিলাম। তখন বুলডোজার দিয়ে একটি রোবট আমার এলাকার দিকে নিয়ে যেতে দেখি।’

সাদি বলেন, ‘রোবটটি ব্লকে ঢুকল আর আমি দৌড়ে পালাতে শুরু করলাম।’

সাদি বলতে থাকেন, ‘আমি প্রায় ১০০ মিটার দৌড়েছিলাম। হঠাৎ নিজেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আবিষ্কার করলাম। বিস্ফোরণটি এত শক্তিশালী ছিল। যারা কাছাকাছি ছিল, তাদের শরীরের কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।’

এর কিছুদিন পরই এক বন্ধুকে হারান তিনি। সাদি বলেন, ‘আমার বন্ধুর শরীর খারাপ ছিল। তাঁকে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। আমি তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলাম। পথে আমরা একটি রোবটকে আসতে দেখলাম। দেখেই আমার বন্ধু আর আমি উল্টো দিকে ছুটলাম।’

তিনি বলতে থাকেন, এত ভয়াবহ বিস্ফোরণ ছিল যে আমার পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠেছিল। যেখানে শেষবারের মতো আমার বন্ধুকে দেখেছিলাম সেখানে ফিরে গিয়ে তাঁর চিহ্নও পাইনি। শরীর পুরো নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।’

ইউরো-মেডের প্রতিবেদন অনুসারে, এই ডিভাইসগুলোর নির্বিচারে, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষমতা এটিকে ‘নিষিদ্ধ অস্ত্রের’ শ্রেণীতে ফেলে এবং জনবহুল এলাকায় এগুলোর ব্যবহার ‘যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হয়।

যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বা সরকার কেউই প্রকাশ্যে এই অস্ত্রের ব্যবহারের কথা স্বীকার করেনি, তবে কিছু ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে এদের ব্যবহারের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আল জাজিরা কোনো উত্তর পায়নি।

গাজার ফিলিস্তিনি মেডিকেল রিলিফ সোসাইটির পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু আফাশ এই বিস্ফোরকের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই বোমার বিস্ফোরণের পরেই এর প্রভাব শেষ হয় না। তিনি বলেন, বিস্ফোরক রোবটগুলো থেকে বের হওয়া বিষাক্ত বাষ্প এবং গ্যাস তীব্র দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে।

ড. মোহাম্মদ আবু আফাশ আরও বলেন, এগুলোর কারণে শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর ঘটনা বারবার ঘটেছে। অনেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছেনও। ধারণা করা হয়, এই বিষাক্ত গ্যাসে সীসা ও বিপজ্জনক রাসায়নিক রয়েছে।

৫০ বছর বয়সী তিন সন্তানের মা উম্মে আহমেদ আল-ড্রেইমলি গাজার সাবরার বাসিন্দা। তিনি বিস্ফোরণের পরে বাতাসে ভেসে থাকা গন্ধটিকে ‘বারুদ এবং পোড়া ধাতুর মিশ্রণ’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের অনেক পরেও আমাদের ফুসফুসে আটকে থাকে এবং শ্বাস নেওয়া কঠিন করে তোলে।’

তিনি বলতে থাকেন, কোনো সতর্কতা বা পালানোর সময় না দিয়েই বিস্ফোরণ ঘটাতো ইসরায়েল। বিস্ফোরণের শব্দটি ছিল ভিন্ন।

তিনি স্মরণ করে বলেন, এর শব্দে ভারী ধাতব গর্জন ছিল, যা হাওয়ায় উড়ন্ত জেট বা ড্রোনের শব্দের মতো নয় বা কাছে চলে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের তীক্ষ্ণ শব্দের মতোও ছিল না। মনে হচ্ছিল যেন আমাদের পায়ের তলার মাটি টেনে নেওয়া হচ্ছে।

সিভিল ডিফেন্স ও অ্যাম্বুলেন্স মিডিয়া বিভাগের মোহাম্মদ আবু তামুস একাধিকবার রোবট বোমা দেখার কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘যখন নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়, সেনাবাহিনী এই রোবটগুলো ব্যবহার করে ভবনগুলোকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়, যাতে আক্রমণকারী যানবাহনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, জাবালিয়া ক্যাম্প, বেইত হানুন, তাল আজ-জাতার, বেইত লাহিয়া, তুফফাহ পাড়া, শুজাইয়েয়া, জাইতুন, সাবরা, শেখ রাদওয়ান, আবু ইস্কান্দার ও জাবালিয়া ডাউনটাউন সহ পুরো উত্তর গাজায় এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

এগুলো ব্যবহারের আগে কোনো রকেটের হুইসেল বা বিমান হামলার সাইরেন বাজে না, শুধু বিস্ফোরণ হয় আর বিশাল সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে থাকে।

আবু তামুস বলেন, ‘একটি অ্যাপার্টমেন্ট বা ভবনে বোমা হামলা করলে দুই বা তিনটি পার্শ্ববর্তী বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কিন্তু একটা রোবট বোমা পুরো ১০টি বাড়ি ধ্বংস করে দেয়।’

ইসরায়েলি সেনারা অবরুদ্ধ করে রাখা জনবহুল এলাকায় এই রোবট বোমাগুলো ব্যবহার করেছিল। ওইসব এলাকায় উদ্ধারকাজ চালাতে উদ্ধারকর্মী বা অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের অনুমতি দিলেও সেখানে ক্ষয়ক্ষতি এতটা ব্যাপক থাকে যে কোন এলাকায় বা কোন সড়কে তাঁরা প্রবেশ করছে, বুঝার উপায় থাকে না।

এর আগে গত জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতির সময়, তাল এল-জাতারে একটি অবিস্ফোরিত রোবট বোমা খুঁজে পেয়েছিলেন আবু তামুসেরা। পরীক্ষা করে দেখেন, একটা কনটেইনারে হলুদ পেস্টের মতো পদার্থ সেটা কি তারা শনাক্ত করতে পারেননি। সব বিস্ফোরকের থেকে এটি আলাদা ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এখন গাজাবাসীরা ফিরছেন। এ নিয়ে আবু তামুস উদ্বিগ্ন, কারণ তিনি অবিস্ফোরিত রোবট দেখেছেন এবং এ ধরনের রোবট নিস্ক্রিয় করতে তিনি ও তাঁর দল কিছুই করতে পারছেন না।

আবু তামুস বলেন, ‘আমরা কেবল ওই এলাকাকে টেপ দিয়ে নিষিদ্ধ এলাকা হিসেবে ঘিরে দিতে পারি। এর বাইরে আমাদের হাতে আর কিছুই করার নেই। আমরা বিশেষ বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে জানাই, কিন্তু এটি নিস্ক্রিয় করতে যেসব সরঞ্জাম দরকার তাদের কাছে সেসব নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্নোগ্রাফিতে জড়িত সেই বাংলাদেশি যুগল গ্রেপ্তার

দেবরের ছেলের সঙ্গে প্রেমের ইতি, থানায় বসে কবজি কাটলেন দুই সন্তানের মা

ভারত বলছে, ফোনালাপ হয়নি, জবাবে ট্রাম্প বললেন—তাহলে ওরা শুল্ক দিতে থাক

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

অগ্নিকাণ্ড দেখলে মুমিনের করণীয় আমল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় বিমানবাহী রণতরি বিক্রান্ত পাকিস্তানিদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে: মোদি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৩৩
নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতীয় বিমানবাহী রণতরী বিক্রান্ত পাকিস্তানীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতীয় বিমানবাহী রণতরী বিক্রান্ত পাকিস্তানীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বরাবরের মতো এবারও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দীপাবলি উৎসব উদ্‌যাপনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ সোমবার তিনি গোয়া ও কর্ণাটকের করওয়ার উপকূলে ভারতের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্তে নৌসেনাদের সঙ্গে ‘আলোক উৎসব’ উদ্‌যাপন করেন। সেখানে তিনি বলেন, এই বিমানবাহী রণতরি ‘পাকিস্তানিদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে’।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, নৌবাহিনীর শত শত ‘বীর সেনার’ উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে এই পবিত্র উৎসব উদ্‌যাপন করতে পারা আমার সৌভাগ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজকের দিনটি সত্যিই এক অনন্য দিন। এই দৃশ্য অবিস্মরণীয়। আজ একদিকে আমার সামনে বিশাল সমুদ্র, অন্যদিকে আছে ভারতের বীর সেনানীদের শক্তি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে অসীম আকাশ ও দিগন্ত, অন্যদিকে দাঁড়িয়ে আছে এই বিশাল আইএনএস বিক্রান্ত—যা অসীম শক্তির প্রতীক। সমুদ্রের জলে সূর্যের আলোয় যে ঝলকানি, তা যেন এই বীর সৈন্যদের প্রজ্বলিত দীপাবলির প্রদীপের মতো।’

মোদি জানান, আইএনএস বিক্রান্ত, যা ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম বিমানবাহী রণতরি—দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রতীক। তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমরা দেখেছি, বিক্রান্ত গোটা পাকিস্তানের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল।’ কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ৭ মে শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রসঙ্গ টেনে মোদি এই কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীর ‘ভয় ধরানো শক্তি’, বিমানবাহিনীর ‘অসাধারণ দক্ষতা’ ও স্থলবাহিনীর ‘বীরত্ব’ আর এই তিন বাহিনীর ‘অসামান্য সমন্বয়’—সব মিলিয়ে পাকিস্তানকে কয়েক দিনের মধ্যে ‘হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য’ করেছে। মোদি বলেন, আইএনএস বিক্রান্ত কেবল একটি যুদ্ধজাহাজ নয়, এটি একুশ শতকের ভারতের পরিশ্রম, প্রতিভা, প্রভাব ও অঙ্গীকারের এক জীবন্ত সাক্ষ্য।

মোদি জানান, ব্রহ্মস ও আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বহু দেশ এখন এই ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’

দীপাবলি উদ্‌যাপনের কিছু ছবি মোদি পরে এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, ‘মানুষ যেমন পরিবারের সঙ্গে দীপাবলি পালন করতে ভালোবাসে, আমিও তেমনই ভালোবাসি। তাই প্রতিবছর আমি সেই সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দীপাবলি উদ্‌যাপন করি, যারা আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখে। এ বছর গোয়া ও করওয়ার উপকূলে নৌবাহিনীর বীর সদস্যদের সঙ্গে, আইএনএস বিক্রান্তকে প্রধান জাহাজ হিসেবে নিয়ে, দীপাবলি পালন করতে পেরে আমি আনন্দিত।’

গত বছর প্রধানমন্ত্রী মোদি দীপাবলি উদ্‌যাপন করেছিলেন গুজরাটের কচ্ছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে বিএসএফ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্নোগ্রাফিতে জড়িত সেই বাংলাদেশি যুগল গ্রেপ্তার

দেবরের ছেলের সঙ্গে প্রেমের ইতি, থানায় বসে কবজি কাটলেন দুই সন্তানের মা

ভারত বলছে, ফোনালাপ হয়নি, জবাবে ট্রাম্প বললেন—তাহলে ওরা শুল্ক দিতে থাক

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

অগ্নিকাণ্ড দেখলে মুমিনের করণীয় আমল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিলে থাকতে চাইলে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের জীবনমান উন্নত করতে হবে: ট্রাম্পের জামাতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ২৭
ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বলেছেন, ইসরায়েল যদি মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চায় তাহলে ফিলিস্তিনিদের জীবনমান উন্নত করে দিতে হবে দেশটিকে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বলেছেন, ইসরায়েল যদি মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চায় তাহলে ফিলিস্তিনিদের জীবনমান উন্নত করে দিতে হবে দেশটিকে। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে ‘মিলেমিশে’ থাকতে চাইলে, এখনই ফিলিস্তিনিদের সহায়তা শুরু করতে হবে এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

গতকাল রোববার রাতে সম্প্রচারিত মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে কুশনার বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলি নেতৃত্বের কাছে সবচেয়ে বড় যে বার্তাটি পৌঁছে দিতে চেয়েছি, তা হলো—যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এখন যদি ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তর অঞ্চলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চায়, তাহলে তাদের এমন উপায় খুঁজে বের করতে হবে যাতে ফিলিস্তিনিরা উন্নতি করতে পারে এবং ভালোভাবে বাঁচতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, তিনি ও উইটকফ ইসরায়েলকে এই বার্তা দেওয়া মাত্রই শুরু করেছেন। ফিলিস্তিনি জনগণকে ‘উন্নতি’ করতে দেওয়া বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে কুশনার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে যেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা যৌথ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগের মধ্যে থেকে পাশাপাশি টেকসইভাবে বসবাস করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে একে যা-ই বলা হোক না কেন, সেটি ফিলিস্তিনিরাই নিজেরা ঠিক করবে।’ এই মন্তব্যটি তিনি করেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে। সিবিএসের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারটি ছিল যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শুরু হওয়ার পর কুশনার ও উইটকফের দেওয়া প্রথম দীর্ঘ আলাপ। এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়েই গাজায় যুদ্ধ কার্যত থেমে যায় এবং জীবিত সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। হামাস মূলত এই দুজনের কাছেই যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা দিয়েছিল।

তবে সোমবার পর্যন্ত হামাস এখনো ফেরত দেয়নি গাজায় থাকা ২৮ জন মৃত জিম্মির মধ্যে ১৬ জনের মরদেহ। হামাসের দাবি, গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে তারা এখনই বাকি মরদেহগুলো খুঁজে বের করতে পারছে না। তবে ইসরায়েল বলছে, এটি হামাসের ‘মিথ্যা অজুহাত।’ তাদের হাতে অধিকাংশ মরদেহই রয়েছে, চাইলে তারা যেকোনো সময় তা হস্তান্তর করতে পারে।

হামাস কি সত্যিই ভালোভাবে মৃতদেহগুলো খুঁজছে—এমন প্রশ্নে কুশনার বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত যেটা জেনেছি, তাতে মনে হচ্ছে তারা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছে। তবে এটি যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু আপাতত আমরা তাদের চুক্তি রক্ষার চেষ্টা করতে দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্নোগ্রাফিতে জড়িত সেই বাংলাদেশি যুগল গ্রেপ্তার

দেবরের ছেলের সঙ্গে প্রেমের ইতি, থানায় বসে কবজি কাটলেন দুই সন্তানের মা

ভারত বলছে, ফোনালাপ হয়নি, জবাবে ট্রাম্প বললেন—তাহলে ওরা শুল্ক দিতে থাক

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

অগ্নিকাণ্ড দেখলে মুমিনের করণীয় আমল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত