Ajker Patrika

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি: ১৮০৪ জনকে সুদসহ ফেরত দিতে হবে বেতন-ভাতা

কলকাতা প্রতিনিধি  
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) গতকাল শনিবার রাতে ১ হাজার ৮০৪ জন অযোগ্য শিক্ষক প্রার্থীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। রাত ৮টার পর প্রকাশিত এই তালিকা রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন তৈরি করেছে। এই তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে রাজ্যের বহুল আলোচিত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।

রাজনীতি পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এটি কেবল কিছু চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নয়, বরং ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, তার একটি সরকারি স্বীকৃত দলিল।

সুপ্রিম কোর্ট গত বৃহস্পতিবার জানায়, বহু অযোগ্য প্রার্থী নতুন চাকরির পরীক্ষায় বসতে চাচ্ছেন, যা আদালতের নির্দেশের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কমিশনকে সাত দিনের মধ্যে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়। রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্র এক দিনের মধ্যেই তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সেই অনুযায়ী শনিবার রাতে তা প্রকাশিত হয়। এসএসসি শুধু অযোগ্যদের নামই প্রকাশ করেনি, বরং যারা নতুন চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন তাঁদের অ্যাডমিট কার্ডও বাতিল করেছে। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ১ হাজার ২০ জনের এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে ১ হাজার ১৪০ জনের অ্যাডমিট বাতিল হয়েছে। দুই স্তর মিলিয়ে মোট ২ হাজার ১৬০ জনের অ্যাডমিট বাতিল হলেও, ১ হাজার ৪০০ জন প্রার্থী পরীক্ষা দিতে পারবেন না, কারণ অনেকে দুটি পরীক্ষার জন্যই আবেদন করেছিলেন।

আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে অযোগ্য প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসার আগেই আটকাতে হবে। শুধু তাই নয়, এসব অযোগ্য প্রার্থী ভবিষ্যতে কোনো সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে আজীবন বঞ্চিত থাকবেন এবং অতীতে যে বেতন নিয়েছেন তা সুদসহ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন।

শিক্ষা দুর্নীতির এই গভীর শিকড় ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মেধা তালিকা পরিবর্তন, টাকার বিনিময়ে ভুয়া সুপারিশপত্র তৈরি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া—সবকিছুই একে একে প্রকাশ্যে এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরে চাকরিপ্রার্থীরা কলকাতার ধর্মতলায় অবস্থান ধর্মঘট করে আসছেন এবং হাইকোর্টে মামলাও চালিয়েছেন। ফলে শিক্ষক নিয়োগ রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এরপর সিবিআই তদন্ত শুরু হয় এবং একাধিক শাসকদলীয় নেতা ও মন্ত্রী গ্রেপ্তার হন। এই প্রেক্ষাপটে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

বিরোধীরা, যেমন বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট, এক সুরে বলছে যে যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে এবং এভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলুষিত করা হয়েছে। শিক্ষক সংগঠনগুলোও প্রশ্ন তুলেছে, যখন অযোগ্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তখন বাকি যোগ্যদের কেন আবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে? এই সমস্ত বিতর্কের মধ্যেই আগামী ৭ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত