Ajker Patrika

প্রতিবেশী নেপালে অস্থিরতা, সীমান্ত নিরাপত্তায় সব টানাপোড়েন ভুলে দিল্লি-পশ্চিমবঙ্গ ঐক্য

কলকাতা প্রতিনিধি  
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতেই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলোর পরিস্থিতি বদলে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার আর দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে ছিল। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে এই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে পরোক্ষ বাগ্‌যুদ্ধ চলতে থাকে। তবে প্রতিবেশী দেশ নেপালে তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভ এবং সরকারের পতনে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার পর ভারতীয় সীমান্তে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লি আর কলকাতা এখন এক হয়ে গেছে। রাজনীতির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এখন সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যু।

সীমান্তে অস্থিরতার মধ্যে নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি দায়িত্ব নেওয়ায় দিল্লি কিছুটা স্বস্তি পেলেও সতর্কতা শিথিল করেনি। সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে সেনা মোতায়েন। বিএসএফের পাশাপাশি সেনা ও এসএসবিকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ির চিকেন নেক এলাকা, যা দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হয়, সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ফোর্ট উইলিয়ামে পূর্বাঞ্চলীয় সেনা সদর দপ্তরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনকেও এই বৈঠকের সঙ্গে যুক্ত রাখা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থে কোনো ছাড় নেই। রাজনৈতিক বিরোধ যাই থাকুক না কেন, সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে সবাই এক কাতারে।

জানা গেছে, রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক রাজীব কুমার নিয়মিতভাবে গোয়েন্দা তথ্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠাচ্ছেন। রাজ্যের মুখ্য সচিবও সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন।

গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে, কাঠমান্ডুর বাজারে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে চীনা মুদ্রা, যা নতুন করে দিল্লির উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বৈঠকের পর ভারত-চীন সম্পর্কে কিছুটা উষ্ণতা লক্ষ করা গেছে। কিন্তু গোয়েন্দারা মনে করছেন, নেপালে চীনা প্রভাব বাড়তে পারে আর তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সীমান্ত সফরও পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরেছে। সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে সেনা টহল ও নজরদারি। স্থানীয় পুলিশও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা অবৈধ কার্যক্রম না হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দিল্লি আর কলকাতার সম্পর্ক টানাপোড়েনপূর্ণ হলেও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে উভয় পক্ষকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হচ্ছে, যা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে একধরনের নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাতীয় স্বার্থে কোনো বিভেদ নেই বার্তা আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক সফরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ায় বোঝা যায় সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ বার্তা দেওয়াই এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কথিত গোয়েন্দা এনায়েতকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা, প্রাডো গাড়িও দেন তাঁকে

জনপ্রশাসনের ১৭ কর্মকর্তাকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে বদলি

৯ পুলিশ পরিদর্শক বাধ্যতামূলক অবসরে

এনসিপির সেই নেত্রীকে দল থেকে অব্যাহতি

গণবিক্ষোভ আতঙ্কে মোদি সরকার, ১৯৭৪-পরবর্তী সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত