Ajker Patrika

রাশিয়া–বেলারুশ যৌথ মহড়ায় ভারত, ‘সীমা অতিক্রম’ বলছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাপাদ মহড়ায় কাঁধ থেকে নিক্ষেপণযোগ্য একটি রকেট পরীক্ষা করছেন সেনারা। ছবি: রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
জাপাদ মহড়ায় কাঁধ থেকে নিক্ষেপণযোগ্য একটি রকেট পরীক্ষা করছেন সেনারা। ছবি: রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

ভারত বেলারুশে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন এক সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে সেনা পাঠিয়েছে। এই মহড়ায় প্রতিবেশী ন্যাটো দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধের অনুশীলন চলছে। এটি এমন সময় ঘটল, যখন ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতির মুখে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও বেলারুশের প্রায় ৩০ হাজার সেনা ‘জাপাদ’ নামক এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। এতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও আকাশপথে হামলার মহড়া রয়েছে। মস্কোর পূর্বাঞ্চল, আর্কটিক, বাল্টিক সাগর থেকে শুরু করে বেলারুশের পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত এলাকাজুড়ে এই মহড়া চালানো হয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ৬৫ জন সেনা পাঠিয়েছে। এর মধ্যে আছে কুমায়ুন রেজিমেন্টের সদস্যরাও, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইউনিট। তাদের রাখা হয়েছে মুলিনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে, যা নিঝনি নভগোরদ শহর থেকে ৪০ মাইল পশ্চিমে। অর্থাৎ ন্যাটো সীমান্ত থেকে বেশ দূরে।

নয়াদিল্লি বলেছে, মহড়ায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হলো ভারত-রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও মজবুত করা এবং উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়ানো। এতে ‘যৌথ প্রশিক্ষণ, কৌশলগত মহড়া ও বিশেষ অস্ত্রচালনার অনুশীলন’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ভারত কোনো বৃহৎ শক্তির সঙ্গে সরাসরি না জড়ানোর নীতি অনুসরণ করে আসছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সামরিক সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে। অতীতেও ভারত জাপাদ মহড়ায় অংশ নিয়েছে, এমনকি ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণের আগেও। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও তারা কিছু রুশ মহড়ায় যোগ দিয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ও ন্যাটোর টানাপোড়েন চরমে থাকা অবস্থায় ভারতের অংশগ্রহণ একটি উদ্বেগজনক সংকেত। ন্যাটো সম্প্রতি পূর্ব সীমান্তে অর্থাৎ রাশিয়া সংলগ্ন এলাকায় আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদার করেছে। কারণ, গত সপ্তাহে ২১টি রুশ ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে এবং গত সপ্তাহান্তে একটি ড্রোন ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে রোমানিয়ার ভেতরে ঢুকে যায়।

গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্ররা ভারতকে রাশিয়ার সামরিক প্রভাব থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বেশ কয়েকটি বড় অস্ত্রচুক্তিও করেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেছেন—ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়ে এবং গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাত সমাধান করার দাবি তুলে।

গত মাসের শেষ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ‘বিশেষ ও অগ্রাধিকারমূলক’ অংশীদারত্বের প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি চীনের নেতৃত্বাধীন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংকে উষ্ণ আলিঙ্গন জানান।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ও ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডেভিড মেরকেল বলেন, ভারত জাপাদ মহড়ায় অংশ নিয়ে দেখিয়ে দিল যে, তারা এখনো মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ককেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ, বিশেষ করে পোল্যান্ডে ড্রোন হামলার পর এবং ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কের শীতলতার মধ্যে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করছে।’

জার্মান পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষক উলরিশ স্পেক বলেছেন, ভারত এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে ‘সীমা অতিক্রম করেছে।’ ফিনল্যান্ডের কৌশলগত বিশেষজ্ঞ সারি আরহো হাভরেন এটিকে অপ্রয়োজনীয় এবং ‘ভয়াবহ বার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আজ মঙ্গলবার শেষ হওয়ার কথা থাকা জাপাদ মহড়া এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উত্তেজনা তৈরি করেনি। যদিও ন্যাটো শঙ্কা প্রকাশ করেছিল, মহড়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়া সীমান্তে উসকানি দিতে পারে।

বেলারুশও বিষয়টিকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে। তারা বলছে, এই মহড়া পশ্চিমাদের জন্য কোনো হুমকি নয় এবং মূলত ন্যাটো সীমান্ত থেকে দূরেই হচ্ছে। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ন্যাটো সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও হাঙ্গেরি মহড়ায় পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। তবে প্রতিবেশী পোল্যান্ড, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া আমন্ত্রণ পেলেও প্রতিনিধি পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও বেলারুশ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো—ইইউ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সীমান্ত স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকানো এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা। গত সপ্তাহে বেলারুশ জানায়, তারা কয়েকটি ‘ভুলবশত ঢুকে পড়া’ ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে, যেগুলো পোল্যান্ডের দিকে যাচ্ছিল। পোল্যান্ডের সেনাপ্রধানের দাবি অনুযায়ী, বেলারুশ আগে থেকেই সতর্ক করেছিল।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন দূত জন কোলের সফরকালে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ৫২ জন রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেন। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশের জাতীয় এয়ারলাইন বেলাভিয়ার ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। কোল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র খুব শিগগির মিনস্কে দূতাবাস পুনরায় চালু করবে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর ২০২২ সালে এই দূতাবাস বন্ধ হয়েছিল।

মুক্তি পাওয়া বন্দীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিকোলা স্টাটকেভিচ। তিনি ২০২০ সাল থেকে কারাগারে ছিলেন। তবে তিনি লিথুয়ানিয়ায় যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং কয়েক ঘণ্টা সীমান্তে কাটানোর পর আবার বেলারুশে ফেরত পাঠানো হয়। পরে তাঁকে ফের কারাগারে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ব্রিটিশ কূটনীতিকের স্ত্রী ও দ্বৈত নাগরিক জুলিয়া ফেইনারকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি গত বছর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং সাত বছরের সাজা পেয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি ও উগ্রপন্থাকে সহায়তা করেছেন। রাশিয়ার মতো বেলারুশও ‘চরমপন্থা’কে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে।

গত মাসে লুকাশেঙ্কো বিরোধী নেতা সভেৎলানা সিখানোউস্কায়ার স্বামী সিয়ারহেই সিখানোউস্কিকেও মুক্তি দেন। তখন ইউক্রেনবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত কিথ কেলগ মিনস্ক সফরে ছিলেন। তবে এখনো বেলারুশে এক হাজারের বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে।

তবে এতকিছুর পরও লুকাশেঙ্কো এখনো রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ। সোমবার রুশ গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমাদের অমিত্রতাপূর্ণ নীতি এখন প্রকাশ্য আগ্রাসনে রূপ নিচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, বেলারুশ ইউক্রেনের রুশ নিয়ন্ত্রিত খেরসন অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে সহায়তা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কথিত গোয়েন্দা এনায়েতকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা, প্রাডো গাড়িও দেন তাঁকে

৯ পুলিশ পরিদর্শক বাধ্যতামূলক অবসরে

গণবিক্ষোভ আতঙ্কে মোদি সরকার, ১৯৭৪-পরবর্তী সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

‎ডিভোর্সের পরও জোর করে রাতযাপন, বর্তমান স্বামীকে নিয়ে প্রাক্তন স্বামীকে হত্যা ‎

হতাশায় শেষ হচ্ছে ইলিশের মৌসুম, আসছে নিষেধাজ্ঞা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত