Ajker Patrika

ওয়াশিংটনে লবিং ফার্ম নিয়োগ করেছে ভারত, খরচ কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৫৭
ওয়াশিংটনে লবিং ফার্ম নিয়োগ করেছে ভারত, খরচ কত

ওয়াশিংটন ডিসিতে লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই এ মাসের শুরুর দিকে তিন মাসের জন্য লবিং কার্যক্রম চালাতে মারকিউরি পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে চুক্তি করেছে ওয়াশিংটনের ভারতীয় দূতাবাস।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের খবরে বলা হয়েছে, মারকিউরি পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে ২০২২ সাল থেকে গত বছর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত কো–চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সুজি ওয়াইলস। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মারকিউরি পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে দাখিল করা এজেন্ট নথি বলা হয়েছে, ‘পরামর্শক (মারকিউরি) ক্লায়েন্টকে (ভারতীয় দূতাবাস) কৌশলগত সরকারি সম্পর্ক ও যোগাযোগ সেবা দেবে। যার মধ্যে থাকবে—ফেডারেল সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, কৌশলগত গণমাধ্যম কার্যক্রম, ডিজিটাল অডিট, ডিজিটাল কৌশলগত পরামর্শ এবং প্রদত্ত বিজ্ঞাপন।’

মারকিউরির হয়ে সাবেক রিপাবলিকান সিনেটর ডেভিড ভিটার এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর আগে গত এপ্রিলে পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার কয়েক দিন পর ভারতের দূতাবাস আরেকটি লবিং সংস্থা এসএইচডব্লিউ পার্টনার্স এলএলসি-কে চুক্তিবদ্ধ করেছিল।

মারকিউরির সঙ্গে চুক্তিটি কার্যকর হয়েছে ১৫ আগস্ট থেকে এবং চলবে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে ভারতের দূতাবাস প্রতি মাসে প্রায় ৭৫ হাজার ডলার দেবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ভারতের দূতাবাস মাসে প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার ডলার ব্যয় করছে লবিং কার্যক্রমে। সে হিসাবে ভারতীয় রুপিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৪০ লাখ রুপির বেশি।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত–যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। বিশেষ করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়েও সমালোচনা করেছেন। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এটি কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট থেকে।

এই অতিরিক্ত শুল্ক ২৫ শতাংশের বিদ্যমান মূল শুল্কের ওপর বসানো হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে, যা আমেরিকার কোনো বাণিজ্য অংশীদারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চের মধ্যে একটি।

ভারত ক্ষুব্ধ হয়েছে ট্রাম্পের বারবার করা এক দাবি নিয়ে যে, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে গত মে মাসে হওয়া ৮৭ ঘণ্টার সংঘাতের অবসানে মধ্যস্থতা করেছেন। ভারত বলেছে, সংঘাতের বিরতি হয়েছিল দুই সেনাবাহিনীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা সেখানে ছিল না।

এ ছাড়া বাণিজ্য আলোচনায় ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কৃষি ও দুগ্ধ খাত মার্কিন কোম্পানির জন্য খুলে দেওয়া যাবে না। যদিও মূল শুল্ক বসানোর আগে একটি ক্ষুদ্র বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আশা করা হয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এসব দাবি মানতে না পারায় আলোচনা ভেস্তে যায়। বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার নতুন তারিখ ২৫ আগস্ট থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, আলোচনা বাতিল হয়নি।

সম্প্রতি ট্রাম্প ও তাঁর শীর্ষ কর্মকর্তারা ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে। শুধু গত বছরই ভারত রাশিয়া থেকে প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত তেল কিনেছে, যা ভারতের মোট আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ।

ট্রাম্পের উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেছেন, ভারত সস্তা রাশিয়ান তেল কিনে তার উপাদান রপ্তানি করে বিপুল মুনাফা করছে। ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ভারতীয় আমদানি অনেক বেড়ে যায়। জি–৭ দেশগুলোর চাপানো মূল্যসীমার কারণে (৬০ ডলারের নিচে প্রতি ব্যারেল) রাশিয়ান তেল ভারত ও চীনের মতো দেশের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গার্সেটি একসময় বলেছিলেন, এই মূল্যসীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ভারতের কথা মাথায় রেখে।

গত শুক্রবার ট্রাম্প ভারতবর্ষে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে সার্জিও গোরের নাম ঘোষণা করেছেন। সিনেটের অনুমোদনের পর তিনি দায়িত্ব নেবেন। একইসঙ্গে তিনি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্বও পালন করবেন। মাত্র ৩৮ বছর বয়সী গোরকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন মনে করা হয়। বর্তমানে তিনি হোয়াইট হাউসে মানবসম্পদ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ভারতের কূটনৈতিক লবিং কার্যক্রম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষা করা। যদিও রাজনৈতিক সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দুই দেশের মধ্যে অব্যাহত রয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত