Ajker Patrika

মৃত ভোটারদের নিয়ে কেন ‘চা-পার্টির’ আয়োজন করলেন রাহুল গান্ধী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সম্প্রতি দিল্লিতে নিজ বাসভবনে বিশেষ ‘চা-পার্টির’ আয়োজন করেন রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি দিল্লিতে নিজ বাসভবনে বিশেষ ‘চা-পার্টির’ আয়োজন করেন রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত

বিহার রাজ্যের নির্বাচন ঘিরে নতুন বিতর্কে উত্তাল ভারত। দেশটির কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি ভোটার তালিকা থেকে লক্ষাধিক নাম বাদ দিয়ে নির্বাচনে কারচুপির পথ তৈরি করছে।

সম্প্রতি দিল্লিতে নিজের বাসভবনে রাহুল এক অভিনব বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন ‘মৃত ভোটার’। মূলত জীবিত থাকার পরও নির্বাচনী তালিকা থেকে এই সব ভোটারের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। এই চা-পার্টির প্রসঙ্গ টেনেই সোমবার (২৫ আগস্ট) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাহুলের মৃত ভোটারদের নিয়ে চা-পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন বিহারের ৬৬ বছর বয়সী রামিকবাল রায়। তিনি বলেন, ‘তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে, অথচ তিনি জীবিত এবং গত নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন।’

এদিকে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) জানিয়েছে, বিশেষ যাচাই অভিযানে প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। দাবি করা হয়—এসব ভোটার হয় মৃত, না হয় অনুপস্থিত কিংবা স্থানান্তরিত হয়েছেন। তবে বিরোধীদের অভিযোগ—এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশেষ করে বিহার রাজ্যে, যেখানে বিজেপির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী তেজস্বী যাদবের আসন রাঘোপুরে বহু নাম বাদ পড়েছে।

রাহুল গান্ধী বিদ্রূপ করে বলেন, ‘মৃতদের সঙ্গে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা এর আগে হয়নি। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ।’ তিনি অভিযোগ করেন, মোদি ও বিজেপি রাজ্যে রাজ্যে জনমত চুরি করছে। তাঁর ভাষ্য মতে, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি বিজেপি জনরায়ের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে কারচুপির মাধ্যমেই।

অন্যদিকে, ভারতের নির্বাচন কমিশন ও শাসক দল বিজেপি এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেছেন—শুদ্ধ ভোটার তালিকা গণতন্ত্রের ভিত্তি এবং এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ কংগ্রেসের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘যখন জয় পায় তখন কমিশন ভালো, আর হেরে গেলে কমিশন খারাপ—এ কেমন যুক্তি?’

এদিকে দলীয় অনুসন্ধানে কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু কেন্দ্র থেকে এক লাখেরও বেশি ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করার দাবি করেছে কংগ্রেস। দলটির অভিযোগ—একই ভোটারকে একাধিক আসনে নিবন্ধন করা ছাড়াও ভুয়া ঠিকানা, ভুয়া নাম এমনকি মৃত ব্যক্তিদের নামও ব্যবহার করা হয়েছে। এই সব ভুয়া ভোটারের সুবিধা নিচ্ছে বিজেপি।

রাহুল বর্তমানে বিহারে ‘ভোট অধিকার যাত্রা’ পরিচালনা করছেন। সেখানকার জনসভায় তিনি বলেছেন, ‘মোদি, অমিত শাহ ও নির্বাচন কমিশন এক হয়ে জনগণের ভোট কেড়ে নিচ্ছে।’

তবে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, বিহারে ২০০৩ সালের পর ভোটার তালিকায় প্রথম বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছে এবং এর লক্ষ্য মৃত ও ভুয়া ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া। তবে ভোটের আগে এই পদক্ষেপকে ‘সন্দেহজনক’ বলছে বিরোধীরা।

চলতি বছরের শেষ দিকে বিহারে নির্বাচন হওয়ার কথা। বিরোধীদের অভিযোগ ও বিজেপির পাল্টা জবাবে এই রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভোটের আগে ভোটার তালিকা নিয়েই যে বড় রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয়ে গেছে, তা স্পষ্ট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত