Ajker Patrika

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ডেরায় তৃণমূলের প্রার্থী গুজরাটের ইউসুফ পাঠান

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ডেরায় তৃণমূলের প্রার্থী গুজরাটের ইউসুফ পাঠান

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় বড় চমক দেখাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল। বহরমপুর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে লড়বেন ভারতের জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। কেকেআরের দলেরও সদস্য তিনি। 

গুজরাটের বাসিন্দা ইউসুফ পাঠানকে পশ্চিমবঙ্গে এনে নির্বাচনে প্রার্থী করা নিয়ে বিরোধী শিবির এরই মধ্যে সমালোচনার তির ছুড়তে শুরু করেছে। ইউসুফকে ‘বহিরাগত’ বলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ইউসুফকে যে আসনে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে সেটি বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর ‘গড়’ বলেন অনেকে। 

অধীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘অনেক ভালো হতো, যদি ইউসুফ পাঠানকে যথাযথ সম্মান দেওয়া যেত। কিছুদিন আগে বাংলায় রাজ্যসভার ভোট হয়েছিল। বহিরাগতদের রাজ্যসভায় আসন (এমপি) করে দেওয়া হয়েছে। যদি ইউসুফ পাঠানকে সম্মানিতই করতে হবে, তাহলে ওনাকে রাজ্যসভার সদস্যপদ দিত তৃণমূল। ইউসুফকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো ভালো চিন্তাভাবনা নেই।’ 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। তাই গুজরাটের বাসিন্দা ইউসুফকে এনে লোকসভায় প্রার্থী করাকে বিজেপির সঙ্গে ‘আঁতাত’ হিসেবেই দেখছেন অধীর রঞ্জন। ইউসুফকে রাজ্যে পাঠানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যাতে বিজেপির সাহায্য পাওয়া যায়, আর কংগ্রেস যাতে হারে।’ 

তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ইউসুফের নাম আসতেই ‘বাঙালি ও বহিরাগত’ ইস্যু তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মোদি ও ইউসুফ দুজনেই তো গুজরাটের, তবে কী করে ইউসুফের বেলায় ইনসাফ হলো—এমন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিজেপি নয়, তৃণমূলই প্রকৃত বাঙালি বিরোধী, ইউসুফের উদাহরণ টেনে এমন তত্ত্বই হাজির করেছেন সুকান্ত মজুমদার। 

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীকে হারাতে শুভেন্দু অধিকারীর ওপর দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু কংগ্রেস থেকে বিধায়ক অপূর্ব সরকারকে ভাগিয়ে এনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করেন। কিন্তু এত কিছু করেও অধীর চৌধুরীকে হারাতে পারেননি। অধীর ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জেতেন। ২০১৪ সালে কংগ্রেসের যখন দুরবস্থা, তখনো বহরমপুরে ৩ লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন কংগ্রেস সাংসদ। 

সম্ভবত এ কারণেই এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘ভালোই হলো তো। আমিও বিখ্যাত হয়ে যাব।’ 

অর্থাৎ অধীর চৌধুরী হারলে বা জিতলে দুটি ক্ষেত্রেই তিনি বিখ্যাত হবেন। কারণ ইউসুফ পাঠান তারকা ক্রিকেটার। ভারতের নাম উজ্জ্বল করা ক্রিকেটার। গোটা বিশ্ব তাঁকে এক ডাকে চেনে। তাই তাঁর কাছে হারলেও বিখ্যাত হওয়া যাবে! 

ইউসুফ পাঠান এখন শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন। গতকাল শনিবার রাতে কলম্বো থেকে মুম্বাইয়ে পৌঁছান। আজ রোববার সকালে পৌঁছান কলকাতায়। ইউসুফের সঙ্গে আজ ব্রিগেডেই প্রথমবার কথা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পশ্চিমবঙ্গের আরেক জনপ্রিয় ক্রিকেটারের স্ত্রীকে প্রার্থী করতে চেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু বাড়িতে রাজনীতি প্রবেশ করুক সেটি তিনি চাননি। তখন ইউসুফ পাঠানের নাম নিয়ে আলোচনা হয়। ওই ক্রিকেটার সম্প্রতি নবান্নে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এরপর তৈরি হয় পরিকল্পনা। ইউসুফের কাছে প্রস্তাব পৌঁছাতেই রাজি হন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মা মীরা নায়ার ও স্ত্রী রামা দুয়াজির সঙ্গে জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
মা মীরা নায়ার ও স্ত্রী রামা দুয়াজির সঙ্গে জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

জোহরান মামদানি—৩৪ বছর বয়সী এই যুবক নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতেই চমক দেখিয়েছেন। ওই সময় কেবল মার্কিন রাজনীতিতেই নয়, দক্ষিণ এশীয় মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। এবার প্রতিদ্বন্দ্বীকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে ইতিহাস গড়লেন।

গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক আদর্শের এই নেতা হেভিওয়েট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তবে ভোটের ময়দানে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার একটি দিক বিশেষভাবে নজর কেড়েছে—আর তা হলো তাঁর ‘বাংলা প্রীতি’।

জোহরান মামদানি তাঁর ক্যাম্পেইনের শুরুতে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার করেছিলেন, যার মধ্যে বাংলা ছিল অন্যতম। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা লিটল বাংলাদেশ কেনসিংটনে তিনি স্থানীয় কাউন্সিল মেম্বার শাহানা আরিফের সঙ্গে একটি বিশেষ প্রচার ভিডিও বানান।

এই ভিডিওটিতে একটি বিশেষ দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মামদানি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির প্লেট সামনে নিয়ে ভাঙা ভাঙা বাংলায় ‘র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতি সাধারণ ভোটারদের কাছে ব্যাখ্যা করছিলেন। ভিডিওর শেষে নিজের বাংলা দক্ষতা নিয়ে তাঁর কৌতূহলী প্রশ্ন, ‘আমার বাংলা ভালোই, না?’ শাহানা আরিফের দ্বিধান্বিত উত্তর ছিল, ‘খারাপ না!’ এই কথোপকথন ভোটারদের মধ্যে এক বন্ধুত্বপূর্ণ উষ্ণতা তৈরি করেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নেতা হিন্দি ও উর্দুর পাশাপাশি যে বাংলাতেও মোটামুটি সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন, তাতে জ্যাকসন হাইটসসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার অনেকে মুগ্ধ হয়েছেন। প্রচারে বেরিয়ে তাঁকে বাঙালি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে বাংলায় ছোটখাটো আলাপ করতেও দেখা গেছে।

প্রাইমারিতে চমক জাগানো জয়ের পর দেওয়া ‘অ্যাকসেপ্টেন্স স্পিচ’-এও মামদানি বাঙালি সমাজের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি। এই সাফল্যের পেছনে ‘বাংলাদেশি আন্টি’দের ভূমিকার কথা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। প্রাইমারিতে জেতার পর তিনি বেশ কয়েকবার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় গেছেন। হিলসাইড অ্যাভিনিউ মুখরিত হয়েছিল ‘আমার মেয়র, তোমার মেয়র, মামদানি, মামদানি, জোহরান মামদানি!’ স্লোগানে।

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, ভোটের প্রয়োজনেই কি মামদানির এই বাংলা-প্রীতি, নাকি এর পেছনে অন্য কারণ আছে?

সংক্ষেপে উত্তর হলো, জোহরানের বাংলা যোগের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তাঁর মা মীরা নায়ারের। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রপরিচালক।

মীরা নায়ারের জন্ম ভারতের ওডিশা রাজ্যের বাঙালি অধ্যুষিত শহর রাউরকেল্লাতে। তিনি বেড়ে উঠেছেন ওই রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরে, যেখানে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বাঙালি। তাঁর শৈশবে অনেক বাঙালি বন্ধু ছিল এবং তাঁর গানের শিক্ষকও ছিলেন একজন বাঙালি। এই প্রত্যক্ষ সংযোগের কারণেই মীরা নায়ার নিজে বাংলা বোঝেন এবং কিছুটা বলতেও পারেন।

মীরা নায়ারের বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি ‘নেমসেক’। এটি বাঙালি পরিবারের আমেরিকান লেখিকা, পুলিৎজার-জয়ী ঝুম্পা লাহিড়ির একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন। সিনেমাটির মূল বিষয়বস্তু ছিল আমেরিকায় পাড়ি দেওয়া প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী বাঙালি দম্পতি অশোক ও অসীমা গাঙ্গুলির জীবনসংগ্রাম।

মজার বিষয় হলো, জোহরান মামদানিই তাঁর মাকে ‘নেমসেক’ ছবিটি বানাতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। ২০০৭ সালে, যখন মীরা নায়ার ‘নেমসেক’ নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন, ঠিক তখনই তিনি বিখ্যাত হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির পঞ্চম পর্ব পরিচালনার একটি লোভনীয় প্রস্তাব পান। দ্বিধান্বিত মা তখন কিশোর ছেলে জোহরানের কাছে পরামর্শ চান।

তখন জোহরানের বয়স মাত্র চৌদ্দ, এবং তিনি নিজেও হ্যারি পটার সিরিজের পাঁড় ভক্ত। তবুও তিনি মাকে বলেছিলেন, ‘আরও অনেক ভালো ভালো পরিচালক আছেন যারা হ্যারি পটার বানাতে পারবেন—কিন্তু নেমসেক একজনই বানাতে পারবে, আর সেটা তুমি!’ ছেলের এই অনুপ্রেরণাতেই মীরা নায়ার শেষ পর্যন্ত বাঙালি অভিবাসী সংস্কৃতি নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেন। বাঙালি দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে এই সিনেমা।

জোহরান মামদানির মতো দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের সন্তানেরা আমেরিকায় দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী হিসেবে বেড়ে ওঠেন। আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগা এই প্রজন্মকে অনেকেই ‘আমেরিকা বর্ন কনফিউজড দিশি’ বা ‘এবিসিডি’ প্রজন্ম বলে বর্ণনা করেন। ‘নেমসেক’-এর মুখ্য চরিত্র গোগল গাঙ্গুলীও এমন এক তরুণ।

নির্বাচনী সমাবেশে জোহরান মামদানিও সেদিকই ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই শহরে যাদের কখনো সন্ত্রাসী বলা হয়েছে, কিংবা কর্মস্থলে নিজের নাম বিকৃত হতে শুনেছেন—তাঁদের হাত তুলতে বলছি। আমরা যারা নিজেদের পরিচয়ের কারণে হেয়বোধ করেছি, এই নির্বাচনের লড়াই আমাদের সবার জন্য।’

তবে জোহরান মামদানি তাঁর সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবনে প্রমাণ করেছেন, পরিচয়ে ‘এবিসিডি’ হলেও তাঁর জীবনদর্শন বা রাজনৈতিক ভাবনায় কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। তাঁর টিম ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু ও বাংলাতে ক্যাম্পেইন ভিডিও তৈরি করেছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটিতে ব্যবহৃত হয়েছে বলিউডের পুরোনো ব্লকবাস্টার ‘দিওয়ার’ ছবির থিম। এই ‘দিওয়ার’-এর বিখ্যাত সংলাপ ‘মেরে পাস মা হ্যায়’-এর আদলে মামদানিও যেন নীরবে বারবার বার্তা দিয়েছেন—তাঁর সঙ্গে তাঁর মা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের লুইসভিলে কার্গো বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কেনটাকির লুইসভিলে একটি কার্গো বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
কেনটাকির লুইসভিলে একটি কার্গো বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলের একটি বিমানবন্দরে পরিবহন সংস্থা ইউনাইটেড পারসেল সার্ভিস–ইউপিএসের কার্গো বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় বিশাল অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয় এবং ‘অনেকজন’ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, ইউপিএ ফ্লাইট–২৯৭৬ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে লুইসভিলের মুহাম্মদ আলী বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় বিধ্বস্ত হয়।

দুর্ঘটনার পর প্রথম বার্তায় ইউপিএস জানায়, বিমানে তিনজন ক্রু ছিলেন। তবে কোনো হতাহতের তথ্য তারা দেয়নি। তবে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, নিহত সাতজনের মধ্যে চারজন বিমানটির বাইরে ছিলেন।

কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ার বলেন, ‘যারা ছবির বা ভিডিও দেখেছেন, তারা জানেন এই দুর্ঘটনা কতটা ভয়ানক।’ আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কিছু গুরুতর। স্থানীয় হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। আশঙ্কা করছি, এই সংখ্যা আরও বাড়বে।’ বেসিয়ার জানান, জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করবে, ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাদের সহায়তা করবে।

দুর্ঘটনা স্থলের এয়ারিয়াল ফুটেজে দেখা গেছে, দীর্ঘ দুর্ঘটনার ধ্বংসাবশেষের পথ এবং অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা আগুনে পানি ঢালছেন। ধোঁয়া অনেক দূর পর্যন্ত উড়ছে। বেসিয়ার জানান, বিমানটি সরাসরি দুটি স্থানীয় ভবনকে ধাক্কা দিয়েছে। যার মধ্যে একটি ভবন একটি জ্বালানি তেল রিসাইক্লিং কোম্পানির এবং একটি অটো পার্টস কোম্পানির।

লুইসভিল মেট্রো পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে তারা সব স্থানে ৮ কিলোমিটার (৫ মাইল) ব্যাসার্ধের মধ্যে ‘শেল্টার-ইন-প্লেস’ বা এই ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা নাগরিকদের নিরাপদে আশ্রয়ে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

শহরের মেয়র ক্রেইগ গ্রিনবার্গ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমরা সব জরুরি সংস্থা ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। অনেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং আগুন এখনো জ্বলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার অনেক রাস্তা বন্ধ। অনুগ্রহ করে সেখানে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।’ তিনি এই দুর্ঘটনাকে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য ‘এক অবিশ্বাস্য ট্র্যাজেডি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

লুইসভিল বিমানবন্দর ইউপিএস ওয়ার্ল্ড পোর্টের অন্যতম মূল কেন্দ্র। এটি কোম্পানিটির বিশ্বব্যাপী কার্গো অপারেশনের প্রধান কেন্দ্র। এই বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্যাকেজ হ্যান্ডেলিং সুবিধা দেয়। এখানে হাজার হাজার কর্মী কাজ করেন এবং দিনে প্রায় ৩০০টি কার্গো ফ্লাইট চলাচল করে।

ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, বিধ্বস্ত বিমানটি একটি ম্যাকডনেল ডগলাস এমডি–১১ মডেলের কার্গো বিমান ছিল। এই ফ্লাইটটি লুইসভিল থেকে হাওয়াইয়ের হনলুলু যাচ্ছিল। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটরাডার ২৪ জানিয়েছে, বিমানটি মঙ্গলবার লুইসভিল থেকে বাল্টিমোরে গিয়েছিল এবং পরে লুইসভিলে ফিরে এসেছে।

লুইসভিল বিমানবন্দর জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দর বন্ধ করা হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনা ইউপিএস কোম্পানির ডেলিভারিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। এতে কোম্পানির বড় গ্রাহকেরা যেমন—অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট এবং মার্কিন ডাকসেবা প্রভাবিত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনে জিতে মামদানির অগ্নিঝরা ভাষণ, তোপ দাগলেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নির্বাচনে জিতেই প্রথম ভাষণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
নির্বাচনে জিতেই প্রথম ভাষণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জয়ের পর বিজয় ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছেন জোহরান মামদানি। ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের সমালোচনার মুখে থাকা এই নেতা তাঁর বিজয় ভাষণে ট্রাম্পকে নাম ধরে সম্বোধন করে বলেন, এ জয় ‘পরিবর্তনের ম্যান্ডেট।’ খবর ইউএস টুডের।

ভাষণে ৩৪ বছর বয়সী মামদানি বলেন, ‘যদি এমন কেউ থাকে, যদি কোনো শহর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজনের দ্বারা প্রতারিত একটি জাতিকে শেখাতে পারে কীভাবে তাঁকে হারাতে হয়, তবে তা হলো সেই শহর—যে শহর ট্রাম্পকে জন্ম দিয়েছে। আর কোনো স্বৈরশাসককে হারানোর একমাত্র উপায় হলো সেই ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলা, যে ব্যবস্থা তাঁকে ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করেছে।’

মামদানি আরও বলেন, ‘এভাবে আমরা শুধু ট্রাম্পকেই থামাব না, থামাব পরের জনকেও। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প, আপনার জন্য দুটি কথা আছে। আমি জানি, আপনি এই ভাষণ দেখছেন। আপনাকে বলছি, ভলিউমটা বাড়ান।’ এ সময় ব্রুকলিন প্যারামাউন্টে উপস্থিত সমর্থকেরা তখন করতালিতে মুখর হয়ে ওঠেন।

মামদানির অনুমান সত্যি প্রমাণিত হয়। ভাষণ চলাকালেই ট্রাম্প নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে লিখেন, ‘...এবং শুরু হলো!’ ট্রাম্প আগেও মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছেন। এমনকি হুমকি দিয়েছেন, মেয়র হিসেবে মামদানি দায়িত্ব নিলে নিউইয়র্ক সিটিকে কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে। তবে এসব হুমকি মামদানিকে থামাতে পারেনি। মেয়র নির্বাচিত হয়েই প্রথম ভাষণেই তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন।

নবনির্বাচিত এই মেয়র বলেন, তাঁর প্রশাসন ভূমি–বাড়ি মালিকদের জবাবদিহির আওতায় আনবে। কারণ ‘আমাদের শহরের ডোনাল্ড ট্রাম্পরা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে ভাড়াটিয়াদের শোষণ করে চলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শ্রমিক ইউনিয়নের পাশে থাকব, শ্রম অধিকার বাড়াব। কারণ আমরা জানি—যেমনটা ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানে—যখন শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার দৃঢ় হয়, তখন মালিকেরা যারা তাদের শোষণ করতে চায়, তারা খুবই ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে।’

সবচেয়ে জোরালো করতালিটি আসে যখন মামদানি ঘোষণা করেন, ‘নিউইয়র্ক থাকবে অভিবাসীদের শহর—অভিবাসীদের হাতে গড়া, অভিবাসীদের শক্তিতে চালিত, আর আজ রাত থেকে অভিবাসীর নেতৃত্বে।’ তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুনে রাখুন—আমাদের কারও কাছে পৌঁছাতে চাইলে, আপনাকে আগে আমাদের সবাইকে ডিঙিয়ে যেতে হবে।’

মামদানি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এক নতুন রাজনীতির ম্যান্ডেট দিয়েছেন। এমন এক শহরের ম্যান্ডেট দিয়েছেন, যেখানে মানুষ বাস করতে পারবে। আর এমন এক সরকারের ম্যান্ডেট দিয়েছেন, যা তা বাস্তবায়ন করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফিলিপাইনে টাইফুন কালমায়েগিতে ৬৬ জনের প্রাণহানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৬
এ টাইফুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ সেবু দ্বীপ। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস
এ টাইফুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ সেবু দ্বীপ। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

বছরের অন্যতম শক্তিশালী টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডবে ফিলিপাইন বিপর্যস্ত। এ পর্যন্ত দেশটিতে ৬৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

আজ বুধবার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কার্যালয়ের উপপ্রশাসক রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো স্থানীয় রেডিও স্টেশন ডিজেডএমএমকে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় তিনি জানান, এই টাইফুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ সেবু দ্বীপ। এই দ্বীপে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ২৬ জন নিখোঁজ রয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাতে বিবিসি জানায়, টাইফুনের সঙ্গে পাহাড়ি ঢল নেমে অনেক গ্রাম ও শহর তলিয়ে গেছে। বেশির ভাগ মৃত্যু হয়েছে ডুবে যাওয়ার কারণে।

সেবু দ্বীপের আবাসিক এলাকাগুলোয় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বহু ছোট ভবন বন্যার জলে ভেসে গেছে এবং পানি নামার পর এলাকাজুড়ে ঘন কাদার স্তর পড়ে রয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা নৌকা ব্যবহার করে আটকে পড়া মানুষদের ঘর থেকে বের করে আনছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকাগুলো। বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। পানিতে ভেসে গিয়েছে সড়কে থাকা গাড়িগুলো।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, আকাশ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সহায়তা পৌঁছে দিতে পারছেন না। এক কর্মকর্তা জানান, সড়কে ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ আর গাড়িগুলো সমস্যা তৈরি করছে। এগুলো সরাতেই অনেক সময় লাগবে।

এই দুর্যোগে চার লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সেবু প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘সেবুর পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই সবচেয়ে বিপজ্জনক হবে, কিন্তু বাস্তবে পানিই এখন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় হুমকি। বন্যার পানিতে বিপর্যস্ত সবকিছু।’

এদিকে ত্রাণ দিতে গিয়ে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ছয় সেনাসদস্যের মৃত্যু হয়েছে। সেবুর দক্ষিণে মিন্দানাও দ্বীপে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তাঁরা। গতকাল মঙ্গলবার হেলিকপ্টারটি আগুসান দেল সুর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। ত্রাণ সহায়তার জন্য পাঠানো চারটি সামরিক হেলিকপ্টারের মধ্যে একটি ছিল এটি।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এরপরই তৎক্ষণাৎ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। পরে একজন মুখপাত্র জানান, ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো পাইলট ও ক্রুদের বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে স্থলভাগে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে টাইফুনটি। তবে এখনো ঘণ্টায় ৮০ মাইল (১৩০ কিমি) বেগে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। টাইফুনটি আজ বুধবারের মধ্যে ভিসায়াস দ্বীপমালা পেরিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে চলে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা আরও জানান, এখন ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে টাইফুন কালমায়েগি।

প্রতিবছর গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন ফিলিপাইনে আঘাত হানে। টাইফুন কালমায়েগির এক মাস আগে পরপর দুটি ঝড়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল দেশটি। তখন ১২ জনের বেশি মারা গিয়েছিল। অবকাঠামো ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত