Ajker Patrika

পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধে ৫০০০ কোটি রুপি ক্ষতির মুখে এয়ার ইন্ডিয়া, ভর্তুকি চায় সব এয়ারলাইনস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০২ মে ২০২৫, ১০: ৫৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ভারতীয় এয়ারলাইনগুলোর সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। এতে সময়, জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ বাড়ছে। এর মধ্যে শুধু এয়ার ইন্ডিয়ারই অতিরিক্ত ৬০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে, যা ভারতীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ৩২ কোটি ৩৩ লাখ রুপিরও বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স কোম্পানির অভ্যন্তরীণ চিঠির সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি আগামী এক বছর পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা বন্ধ রাখে, তাহলে উড়োজাহাজগুলো ঘুরপথে চালানোর কারণে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচসহ অন্যান্য ব্যয় যোগ হয়ে এই বিপুল অঙ্কের ক্ষতি হতে পারে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া সতর্ক করে বলেছে, উড়ানের সময় বেশি লাগলে যাত্রীদের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। ফলস্বরূপ, এয়ার ইন্ডিয়া আশঙ্কা করছে, এই নিষেধাজ্ঞা যত দিন বহাল থাকবে, প্রতিবছর তাদের ৫৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি লোকসান হতে পারে।

জম্মু–কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পাকিস্তান। আগামী ২৩ মে পর্যন্ত এটি বহাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়া ইতিমধ্যে সরকারের কাছে আনুপাতিক ভর্তুকির জন্য আবেদন করেছে। চিঠিতে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘ক্ষতিগ্রস্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর জন্য ভর্তুকি একটি ভালো, যাচাইযোগ্য এবং ন্যায্য বিকল্প...পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই ভর্তুকি প্রত্যাহার করা যেতে পারে...।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আকাশসীমা বন্ধ, অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ এবং ক্রুদের কারণে এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে।’

এখন পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়া বা বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ, ফ্লাইটের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে শুধু এয়ার ইন্ডিয়াই নয়, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে খরচ বৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে অন্যান্য বিমান সংস্থাকেও। বর্তমানে টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া ২০২৩–২৪ অর্থবছরেই ৫২ কোটি ডলারের নিট লোকসান দেখিয়েছে।

বেসরকারি বিমান সংস্থা ইনডিগো জানিয়েছে, তাদের কিছু ফ্লাইটও প্রভাবিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের নয়াদিল্লি–বাকু (আজারবাইজান) ফ্লাইটটি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৮ মিনিট বেশি সময় নিয়ে ৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছেছে।

তবে, এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর এর প্রভাব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়বে, কারণ তাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা বেশি এবং সাধারণত এই ফ্লাইটগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমার ওপর দিয়েই গন্তব্যে পৌঁছায়। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লি–মধ্যপ্রাচ্য রুটের ফ্লাইটগুলোকে এখন অন্তত এক ঘণ্টা বেশি উড়তে হচ্ছে, যার ফলে জ্বালানি খরচ বাড়ছে।

এয়ার ইন্ডিয়া এবং তাদের সাশ্রয়ী মূল্যের শাখা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও ইনডিগো মিলিয়ে গত এপ্রিলে নয়াদিল্লি থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন গন্তব্যে আনুমানিক ১ হাজার ২০০টি ফ্লাইট ছেড়ে গেছে।

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচল ট্র্যাকার সংস্থা ফ্লাইটর‍্যাডার ২৪-এর ব্লগে জানানো হয়, নয়াদিল্লি–শিকাগো রুটে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের ১২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে ১৪ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট লাগত। এখন পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার কারণে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার যেতে হচ্ছে এবং এতে সময় লাগছে ১৯ ঘণ্টার বেশি।

কিছু এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট উত্তর আমেরিকা থেকে ভারতে আসার সময় ভিয়েনা বা কোপেনহেগেনে থামছে। সান ফ্রান্সিসকো থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট আগে ১৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে সরাসরি পৌঁছে যেত। এখন ভিয়েনায় থামার কারণে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।

ব্লগটিতে আরও বলা হয়েছে, আঞ্চলিক ফ্লাইটগুলোও প্রভাবিত হচ্ছে। ইনডিগো ফ্লাইট আগে দিল্লি থেকে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে যেতে ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিট লাগত, এখন সেটির ইরান ও তুর্কমেনিস্তানের ওপর দিয়ে যেতে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট লাগছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার পেহেলগাম হামলার চরম প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে এবং হামলাকারী সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের উপযুক্ত শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করেছে) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সবুজ সংকেত দিয়েছেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর এসেছে। এদের পাকিস্তান ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া গোষ্ঠী বলে দাবি করছে ভারত।

তবে, সরকার কাশ্মীর এবং দেশের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এই হামলা ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করছে। রয়টার্স জানিয়েছে, সরকার বিমান সংস্থাগুলোর ওপর এই প্রভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দীর্ঘ ফ্লাইটে অতিরিক্ত পাইলট নিয়োগের অনুমতি, কর ছাড় এবং অস্বাভাবিক পদক্ষেপ হিসেবে চীনের (পাকিস্তানের মিত্র) সঙ্গে আকাশসীমা ব্যবহারের ছাড়পত্র নিয়ে কাজ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকেরা পাচ্ছেন গেজেটেড মর্যাদা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত