Ajker Patrika

নিজেদের চাহিদা পূরণে কতোটা সক্ষম শীর্ষ টিকা উৎপাদক দেশ ভারত

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২১, ১৪: ৫৬
নিজেদের চাহিদা পূরণে কতোটা সক্ষম শীর্ষ টিকা উৎপাদক দেশ ভারত

ঢাকা: করোনাভাইরাসের নিয়ন্ত্রণহীন সংক্রমণে বিপর্যস্ত ভারত। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপে এমন প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন।

ভারতে এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবে কাঁচামাল সংকটের কারণে দেশটি চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছে ।

মার্কিন প্রশাসন থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়,  ভারতে অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড তৈরির কাঁচামাল চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই ভারতকে এই কাঁচামাল দেওয়া হবে।

ভারতের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনটি উৎপাদন করছে। কোম্পানিটি এর আগে অভিযোগ জানিয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভ্যাকসিন তৈরির বিশেষ কাঁচামাল তারা পাচ্ছে না। এ নিয়ে সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনেওয়ালা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ভ্যাকসিনের কাঁচামাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।

সম্প্রতি পুনেওয়ালা ভারতীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে জানিয়েছেন যে ভ্যাকসিন তৈরির কাঁচামাল তারা জোগার করতে পেরেছেন। তবে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন এখনও কাঁচামাল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

এ নিয়ে লিভারপুল জন মরিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন সরবারাহ বিশেষজ্ঞ ড. সারাহ শিফ্লিং বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল সাপ্লাই চেইন খুব জটিল এবং বিশেষায়িত একটি প্রক্রিয়া।  বিশ্বে চাহিদা ব্যাপক থাকলে অন্যান্য পণ্যের মতো দ্রুত ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে ভারতের কোম্পানি বায়োলজিকাল ই-এর সম্প্রসারণের জন্য তারা অর্থায়ন করবে। এই কোম্পানিটি জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ কোম্পানিটি যাতে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদেরকে সহায়তা করা হবে। 

ভারতের প্রধান দুটি ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কোম্পানি হলো: সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং ভারত বায়োটেক। ভারত সরকার এরই মধ্যে সেরামকে ৪০ কোটি রুপি অনুদান এবং ভারত বায়োটেককে ২১ কোটি রুপি অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মার্চে কোভিশিল্ড অর্থাৎ সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ভ্যাকসিনের রপ্তানি স্থগিত করা হয়। যদিও এই সময়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কিছু দেশকে এই ভ্যাকসিনের কিছু ডোজ উপহার হিসেবে পাঠানো হয় যাতে অন্যান্য তাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স কার্যক্রমেও সেরামের তৈরি ভ্যাকসিন অনুদান হিসেবে দিয়েছে ভারত। 

ভ্যাকসিন সংকট দূর করতে এরই মধ্যে ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। যদিও জরুরি ব্যবহারের জন্য ভারতে এই ভ্যাকসিনগুলোর একটিও অনুমোদন পায়নি।

ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্প্রতি রাশিয়ার ভ্যাকসিন স্পুটনিক ৫-কে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড-এর (আরডিআইএফ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতের পাঁচটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বছরে স্পুটনিক ৫ ভ্যাকসিনের ৮৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে।

এই ভ্যাকসিনগুলো ভারত এবং বিশ্ব বাজারের জন্য তৈরি করা হবে।তবে এই ভ্যাকসিনগুলোর উৎপাদন এখনো শুরু হয়নি।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া বিশ্ব এবং ভারতের করোনা ভ্যাকসিনের চাহিদা পূরণের জন্য হিমশিম খাচ্ছে।

গত জানুয়ারিতে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিনের ছয় কোটি থেকে সাত কোটি ভ্যাকসিন তারা এক মাসে উৎপাদন করতে পারবে। 

কোম্পানিটির পক্ষ থেকে তখন আরও বলা হয়, মার্চের মধ্যে প্রতিমাসে ১০ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে চায় তারা। তবে কোম্পানিটি এখন বলছে, এই পরিকল্পনা তারা জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে চায়।

গত বছর সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স কার্যক্রমে ২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে রাজি হয়। এর মধ্যে ১০ কোটি হলো অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন এবং আরও ১০ কোটি নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন। 

গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী মে পর্যন্ত কোভ্যাক্স কার্যক্রমে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল সেরামের। কিন্তু ভারত সরকারের তথ্য বলছে, কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ কোটি ডোজ দিয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সেরাম ইনস্টিটিউট বাণিজ্যিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ৯০ কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন এবং প্রায় ১৫ কোটি ডোজ নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। 

কোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের সহযোগী গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সে বলছে , সেরাম ইনস্টিটিউট কোভ্যাক্সের প্রকল্পের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে আইনতভাবে বাধ্য।

এদিকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সরবরাহে বিলম্বের অভিযোগ এনে সম্প্রতি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে ভ্যাকসিন সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটির যে সব এলাকায় করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে সেখানেও মিলছে না পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন।

অপরদিকে ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারার অভিযোগে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত