Ajker Patrika

বুকারজয়ী বানু মুশতাককে ঘিরে কর্ণাটকে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৩৮
বুকার পুরস্কার হাতে বানু মুশতাক। ছবি: বিবিসি
বুকার পুরস্কার হাতে বানু মুশতাক। ছবি: বিবিসি

গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জয় করেছেন ভারতের কর্ণাটকের লেখক বানু মুশতাক। এবার কর্ণাটকের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসবকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন তিনি। সম্প্রতি রাজ্যের কংগ্রেস সরকার ঘোষণা করেছে, বানু মুশতাকই উদ্বোধন করবেন এবারের ঐতিহ্যবাহী ‘মাইসুরু দশরা’ উৎসব।

মাইসুরু দশরা ‘নাডা হাব্বা’ বা ‘ভূমির উৎসব’ নামেও পরিচিত। টানা ১০ দিন ধরে চলা এই উৎসবে প্রতিবছর হাজারো মানুষ অংশ নেন। সুসজ্জিত হাতির শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ও আতশবাজির ভিড়ে উৎসবটি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় রূপ পেয়েছে।

তবে উৎসবের উদ্বোধন নিয়ে কংগ্রেস সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিরোধী বিজেপি। তাদের অভিযোগ, বানু মুশতাকের মতো একজন মুসলিম লেখককে হিন্দু উৎসব উদ্বোধনের দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হয়নি। যদিও মাইসুরু দশরা সরকারিভাবে আয়োজিত হয় এবং এতে সব ধর্মের মানুষই অংশ নেন।

উদ্বোধনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বানু মুশতাক অবশ্য জানিয়েছেন, এই আমন্ত্রণ তাঁর জন্য সম্মানের এবং শৈশব থেকেই তিনি উৎসবটির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তবু বিতর্ক থামেনি।

বিজেপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, বানু মুশতাক অতীতে দেবী ভুবনেশ্বরী সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যা আঘাতজনক। ভুবনেশ্বরী কর্ণাটক ভাষা ও পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

মূলত গত জানুয়ারিতে দেওয়া বানু মুশতাকের একটি বক্তব্য নিয়ে এমন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ওই বক্তব্যে তিনি কন্নড় পরিচয়কে হিন্দু দেবীর সঙ্গে বেঁধে দেখার প্রথা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তবে শুধু বানু মুশতাক নন, বহু প্রগতিশীল লেখকও ইতিপূর্বে এ ধরনের ‘হিন্দুত্বকরণ’ নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রথমবারের মতো কোনো কন্নড় ভাষার লেখক হিসেবে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জয় করে রেকর্ড গড়েছিলেন বানু মুশতাক। দীপা ভাসতি অনূদিত তাঁর বই ‘হার্ট ল্যাম্প’-এ নারীদের সংগ্রাম, বিশেষত মুসলিম নারীদের ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজে টিকে থাকার গল্প উঠে এসেছে।

এর আগে ২০১৭ সালে মুসলিম কবি কে এস নিসার আহমদকেও একই উৎসব উদ্বোধনের সম্মান দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার মুশতাককে ঘিরে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। বানু মুশতাকের বুকার জয় কন্নড় সাহিত্যকে গৌরবান্বিত করেছে বলে স্বীকার করেছেন বিজেপি সাংসদ যাদুবীর ওয়াডিয়ার। কিন্তু তাঁর দাবি, মাইসুরু দশরা উৎসবটি শুধু সাংস্কৃতিক নয়, এটি সনাতন ধর্মীয় আচার। তাই লেখককে দেবী ভক্তির বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য রাখতে হবে।

অন্যদিকে বিজেপি নেতা প্রতাপ সিমহা প্রশ্ন তুলেছেন, মুশতাক হিন্দু ধর্মের আচার আদৌ মানেন কি না। তবে বানু মুশতাকের সমর্থকেরা বলছেন, এ বিতর্ক আসলে উৎসবকে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার প্রশ্ন বনাম একে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ধর্মীয় আয়োজনে সীমাবদ্ধ করার দ্বন্দ্ব। কবি মমতা সাগর বলেছেন, মাইসুরু দশরা সেক্যুলার উৎসব। বানুকে আমন্ত্রণ জানানো কর্ণাটকের জন্য গর্বের।

রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারও সরকারের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেছেন এবং উৎসবের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে মুশতাক জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি চাপে নতি স্বীকার করবেন না। তাঁর ভাষায়, রাজনীতিকদের বোঝা উচিত, কোন বিষয় রাজনীতিকরণ করা যায় আর কোনটি নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলাতে হামলায় কংগ্রেসের অনুমতি লাগবে না ট্রাম্পের, বাড়ল যুদ্ধের শঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন সিনেট ট্রাম্পের কোনো দেশে হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা খর্ব করার বিল খারিজ করে দেওয়ায় ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণের শঙ্কা আরও বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন সিনেট ট্রাম্পের কোনো দেশে হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা খর্ব করার বিল খারিজ করে দেওয়ায় ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণের শঙ্কা আরও বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা একটি বিল খারিজ করে দিয়েছেন। বিলটি অনুমোদিত হলে লাতিনের দেশ ভেনেজুয়েলায় কোনো সামরিক হামলা চালানোর আগে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হতো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার দুই রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আইনটির পক্ষে ভোট দেন। তবে তারপরও তাদের সমর্থন যথেষ্ট ছিল না। বিলটির পক্ষে পড়ে ৫১ ভোট এবং এর বিপরীতে ৪৯ ভোট। এই বিলটি খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন বলেন, ‘আমাদের কংগ্রেসের ভোটের অনুমোদ ছাড়া যুদ্ধে যাওয়া উচিত নয়।’

এদিকে, এই ভোট যখন চলছিল তার আগে থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে মার্কিন সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া, এর আগে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার আন্তর্জাতিক জলসীমায় মার্কিন সামরিক হামলায় কমপক্ষে ৬৫ জন নিহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা যে নৌকাগুলোতে হামলা চালিয়েছে সেগুলো মাদক বহন করছিল। তবে লাতিন আমেরিকার নেতারা, কিছু কংগ্রেস সদস্য, আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ও নিহতদের পরিবারগুলো এটিকে বিচারবহির্ভূত হত্যা বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের দাবি, নিহতদের বেশির ভাগই মৎস্যজীবী ছিলেন।

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে ক্যারিবীয় সাগরে কয়েক হাজার সেনা, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড বিমানবাহী রণতরীসহ বিপুলসংখ্যক ডেস্ট্রয়ার ও বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। এই বিল বাতিল হয়ে যাওয়ার পর এই ভয় আরও বাড়ল যে, ট্রাম্প যেকোনো সময় ভেনেজুয়েলায় হামলা চালাতে পারেন। এর লক্ষ্য হতে পারে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা।

ওয়াশিংটন মাদুরোকে মাদক পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। ট্রাম্পও ভেনেজুয়েলার মাটিতে হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যাডাম শিফ বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে, এ নিয়ে মূলত সম্ভাব্য শাসন পরিবর্তনই ইস্যু।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি প্রশাসন এ পথে যেতে এবং যদি আমরা যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়ি, তবে এই বিষয়ে কংগ্রেসের মতামত নেওয়া উচিত।’

ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্য দেখিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার, দুটি মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমান ভেনেজুয়েলার উপকূল বরাবর ক্যারিবিয়ান সাগরে উড়ে গেছে। ফ্লাইডরাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিমান দুটি ভেনেজুয়েলার উপকূলে সমান্তরাল উড়ে পূর্বদিকে কারাকাসের কাছে চক্কর কাটে এবং তারপর সমুদ্রের দিকে চলে যায়। ভেনেজুয়েলার সীমার কাছে মার্কিন বিমান উপস্থিতি এ পর্যন্ত অন্তত চতুর্থবার। অক্টোবরের মধ্য থেকে একবার বি-৫২ এবং দুইবার বি-১বি বোমারু বিমান ভেনেজুয়েলার সীমানার কাছে উড়েছে।

এদিকে, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন জনগণের মাত্র ১৮ শতাংশই মাদুরোর সরকার পতনের জন্য সামরিক ব্যবহারের পক্ষে। জরিপ প্রতিষ্ঠান ইউগভের জরিপে দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ মানুষ মনে করে, প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া বিদেশে হামলা চালাতে পারবে না। এটি মার্কিন সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

তবে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা সাম্প্রতিক হামলাগুলোকে সমর্থন করছেন। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের মতোই মাদকবাহিনী বন্ধের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। আইনগত বৈধতা, মার্কিন বা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, রিপাবলিকানদের জন্য বড় সমস্যা নয়। সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান জিম রিশ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহস্রাধিক মার্কিনকে প্রাণঘাতী মাদক থেকে রক্ষা করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন।’

বৃহস্পতিবার শুধু দুই রিপাবলিকান—সিনেটর র‍্যান্ড পল ও লিসা মরকোস্কি—ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। কিছু কনজারভেটিভ এখন ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য যুদ্ধে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময় বিদেশি সামরিক সংঘাতে অংশ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিন্টে গ্রাহক কমলেও ডিজিটালে বিপুল মুনাফা করেছে নিউইয়র্ক টাইমস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২৮
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস কোম্পানির অধীনে পরিচালিত হয় বিখ্যাত সংবাদপত্র দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। এই কোম্পানি তাদের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদনে ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনে অভূতপূর্ব উল্লম্ফনের খবর জানিয়েছে। গত বুধবার প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির সমন্বিত পরিচালন মুনাফা গত বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে তারা ৪ লাখ ৬০ হাজার ডিজিটাল-অনলি গ্রাহক (যাঁরা শুধু ডিজিটাল কনটেন্ট সাবস্ক্রাইব করেন) যোগ করেছে। বিগত বছরগুলোর মধ্যে তিন মাসে এটি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এই সাফল্যের মূল কারণ হলো, গ্রাহকদের জন্য একাধিক পণ্যের বান্ডেল সাবস্ক্রিপশন কৌশল। বর্তমানে মোট গ্রাহকের অর্ধেকের বেশি বান্ডেল বা একাধিক পণ্যের সাবস্ক্রিপশন নিয়েছেন।

সব মিলিয়ে নিউজ রিপোর্ট, কুকিং, গেমস, অয়্যারকাটার (Wirecutter) এবং দ্য অ্যাথলেটিকসহ (The Athletic) কোম্পানির মোট গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার।

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মেরিডিথ কপিত লেভিয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে টাইমসের ব্যবহারকারী এবং গভীরভাবে যুক্ত গ্রাহকের সংখ্যা আরও প্রসারিত করার সক্ষমতা আমাদের আছে।’ নিউইয়র্ক টাইমস কোম্পানি ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ ১ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহকে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

অর্থ ও রাজস্বের চিত্র

মোট রাজস্ব: মোট রাজস্ব ৯.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ৮ লাখ ডলার

পরিচালন মুনাফা: সমন্বিত পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ডলার

বিজ্ঞাপন রাজস্ব: বিজ্ঞাপন খাত থেকে আয় এক বছর আগের তুলনায় ২০.৩ শতাংশ বেড়ে ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার

অ্যাফিলিয়েট ও লাইসেন্সিং আয়: অয়্যারকাটার-এর মতো অ্যাফিলিয়েট রেফারেল এবং লাইসেন্সিং থেকে আয় ৭.৯ শতাংশ বেড়ে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।

ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন থেকে গ্রাহক প্রতি গড় রাজস্ব (এআরপিইউ) ৩.৬ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৭৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো, কিছু গ্রাহকের জন্য মূল্য বৃদ্ধি এবং অন্যদের প্রচারমূলক মূল্যের পরিবর্তে উচ্চ ফিতে স্থানান্তরিত হওয়া।

প্রিন্টের পতন ও দ্য অ্যাথলেটিক-এর উত্থান

অন্যদিকে, গ্রাহকেরা অনলাইনে চলে যাওয়ায় প্রিন্ট সাবস্ক্রিপশন ক্রমাগত কমছে। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রিন্ট গ্রাহকসংখ্যা ৫০ হাজার কমে ৫ লাখ ৭০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। প্রিন্ট থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ৩ শতাংশ কমে ১২ কোটি ৭২ লাখ ডলার হয়েছে।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক টাইমস ২০২২ সালে ৫৫০ মিলিয়ন ডলারে দ্য অ্যাথলেটিক কেনে। বছরের পর বছর এটি লোকসানে ছিল। সেটি ২০২৪ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে লাভজনক হতে শুরু করেছে। অবশ্য এই ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে অ্যাথলেটিকের ফলাফল আলাদাভাবে দেখানো হয়নি।

এদিকে কোম্পানির পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে। ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৫৯ কোটি ৬০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সবশেষে সেপ্টেম্বরের শেষে কোম্পানির হাতে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ এবং সহজে কেনাবেচার যোগ্য সিকিউরিটিজ (শেয়ার) ছিল বলে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভালুক ঠেকাতে জাপানে এবার সেনা মোতায়েন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২৪
জাপানে ভালুক আক্রমণের ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। প্রাণহানিও ঘটছে। পরিস্থিতি প্রশমনে সরকার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবি: এএফপি
জাপানে ভালুক আক্রমণের ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। প্রাণহানিও ঘটছে। পরিস্থিতি প্রশমনে সরকার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবি: এএফপি

জাপানে হঠাৎ বেড়েছে ভালুকের আক্রমণ। দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে সরকার এবার সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে শিকারি নিয়োগের পরিকল্পনা করছিল দেশটি, যাতে বিপজ্জনক ভালুকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, জাপানের উত্তরাঞ্চলের পার্বত্য প্রদেশ আকিতায় বেড়ে চলা ভালুক হামলার আতঙ্কে সেনা মোতায়েন করেছে দেশটির সরকার। গত সাত মাসে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

অক্টোবরের শেষ দিকে জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে জানানো হয়, তার আগের সাত মাসে অন্তত ১২ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে ভালুকের হামলায়। এর জেরে গত বুধবার অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়েন করা হয়। কারণ, সম্প্রতি বাদামি ভালুক ও এশীয় কালো ভালুকের আক্রমণ প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। শীতনিদ্রায় যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত খাবারের সন্ধানে থাকা ভালুকগুলো এখন আরও বেপরোয়া। স্কুল, রেলস্টেশন, সুপারমার্কেট এমনকি উষ্ণ প্রস্রবণের পর্যটনকেন্দ্রের কাছেও ভালুকগুলোকে দেখা যাচ্ছে।

ভালুকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আর মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেখানে অভিজ্ঞ শিকারি খুবই কম। সরকার জানায়, বর্তমানে জাপানে ভালুকের সংখ্যা ৫৪ হাজারের বেশি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে, সেনারা ভালুকের দিকে গুলি চালাবে না।

বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও আকিতা প্রশাসনের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সেনারা খাবারসহ বাক্স ফাঁদ বসাবে, স্থানীয় শিকারিদের পরিবহনে সহায়তা করবে এবং মৃত ভালুক সরানোর কাজেও অংশ নেবে। ডেপুটি চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ফুমিতোশি সাতো সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিনই ভালুক আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করছে। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

অভিযান শুরু হয়েছে কাজুনো শহরের বনাঞ্চলে। সম্প্রতি সেখানে একাধিক ভালুক দেখা গেছে ও আহতের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, সাদা হেলমেট, নেট লঞ্চার ও ভালুক প্রতিরোধক স্প্রে হাতে সৈন্যরা একটি বাগানের পাশে ফাঁদ বসিয়েছে। বাগানের মালিক তাকাহিরো ইকেদা জানান, তার প্রায় ২০০টি পাকা আপেল খেয়ে ফেলেছে ভালুক। বলেন, ‘মনটাই ভেঙে গেছে।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বলেন, সেনা মোতায়েনের লক্ষ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবন রক্ষা করা। তবে সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব জাতীয় প্রতিরক্ষা, তাই তারা সীমাহীন সহায়তা দিতে পারবে না।

আকিতা প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার। এখানেই মে মাসের পর থেকে ৫০ জনের বেশি মানুষ ভালুকের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, অন্তত ৪ জন মারা গেছেন। বেশির ভাগ হামলাই ঘটেছে আবাসিক এলাকায়। গত সপ্তাহান্তে ইউজাওয়া শহরের এক বয়স্ক নারী মাশরুম তুলতে গিয়ে ভালুকের আক্রমণে নিহত হন। অক্টোবরের শেষ দিকে আকিতা শহরে এক কিষানি খেতে কাজ করার সময় ভালুকের হামলায় প্রাণ হারান। মঙ্গলবার একই শহরে এক সংবাদপত্র সরবরাহকারীকে আক্রমণ করে আহত করেছে ভালুক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের গ্রামীণ অঞ্চলে জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ায় ভালুক সমস্যা আরও বেড়েছে। তারা বলেন, ভালুক বিলুপ্তপ্রায় নয়, বরং সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে শিকার কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন।

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, লাইসেন্সধারী শিকারি ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিয়োগে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করা হবে। তারা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়া বা মানুষের ওপর আক্রমণ করা ভালুক নিয়ন্ত্রণ করবে। একই দিন জাপান সরকার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ভালুকের আক্রমণের ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব দেয়।

সরকার বলছে, ভালুক এখন জননিরাপত্তার জন্য ‘গুরুতর হুমকি’। তাই পুলিশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ভালুক মারার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমান আইনে সৈন্যরা ভালুককে গুলি করতে পারবে না। তারা শিকারিদের সঙ্গে ফাঁদ পেতে বা মৃত ভালুক সরানোর কাজে সাহায্য করবে। আকিতার গভর্নর কেন্তা সুজুকি বলেন, মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন, তাঁরা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

দেশজুড়ে শিকারির সংখ্যা দ্রুত কমছে। অনেকেই বৃদ্ধ, আর ভালুক শিকার এখন আর জনপ্রিয় নয়। ফলে ভালুকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, আর তারা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ে বিচগাছের ফল কমে গেছে। এতে ক্ষুধার্ত ভালুকগুলো গ্রামে ও শহরে ঢুকে খাবার খুঁজছে। অন্যদিকে গ্রামীণ জনসংখ্যা কমে যাওয়াও এর একটি কারণ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার বন্দুক ব্যবহারের নিয়ম শিথিল করেছে, যাতে মানুষ সহজে আবাসিক এলাকায় ভালুককে গুলি করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্যায় ডুবতে পারে দেশ, থাইল্যান্ডজুড়ে সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্যাংককের সামান্য উত্তরে, পাঠুম থানি প্রদেশের সাম কোক জেলার চাও ফ্রায়া নদী সংলগ্ন ওয়াট সালা ডেং নিউয়া জনপদটি এখন পানিতে থইথই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা নৌকোতেই যাতায়াত করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
ব্যাংককের সামান্য উত্তরে, পাঠুম থানি প্রদেশের সাম কোক জেলার চাও ফ্রায়া নদী সংলগ্ন ওয়াট সালা ডেং নিউয়া জনপদটি এখন পানিতে থইথই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা নৌকোতেই যাতায়াত করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় কালমেগির প্রভাবে থাইল্যান্ডজুড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে থাইল্যান্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবারই সারা দেশের বিভিন্ন অংশে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আসন্ন ঝড় কালমেগির প্রভাবে আজ শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ব্যাংককসহ থাইল্যান্ডের ৬৫টি প্রদেশে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে সতর্কবার্তা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। সতর্কবার্তায় রাজধানী ব্যাংকক ছাড়াও দ্রুত বয়ে চলা চাও ফ্রায়া নদীর তীরবর্তী মধ্যাঞ্চলের ১০টি প্রদেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন বিভাগ (ডিডিপিএম) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, চাই নাট প্রদেশের চাও ফ্রায়া ব্যারেজের উজানে নদী দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার ৫০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এ পরিস্থিতি সামলাতে রয়্যাল ইরিগেশন ডিপার্টমেন্ট ব্যারেজের পানি নিঃসরণের হার ২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৭০০ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ডে করেছে। তুলনামূলকভাবে, ২০১১ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় চাও ফ্রায়া নদীতে প্রবাহের হার ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার ৭০৩ ঘনমিটার।

ফলে ব্যারেজের ভাটিতে অবস্থিত নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর পানি ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বাঁধ নেই—সেসব স্থানে প্লাবনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে ডিডিপিএম।

ব্যাংককের পাশাপাশি যেসব প্রদেশে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে, সেগুলো হলো—উথাই থানি, চাই নাট, সিং বুড়ি, আং থং, সুফান বুড়ি, আয়ুত্থয়া, লপ বুড়ি, পাঠুম থানি, সামুত প্রাকান ও ননথাবুরি। সতর্কতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিচু এলাকাগুলো, যেগুলো বাঁধবিহীন।

তবে শুধু রাজধানী ও মধ্যাঞ্চল নয়—পুরো দেশের ৬৫টি প্রদেশেই শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, দুর্বল হয়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় কালমেগি আজ শুক্রবার উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডে প্রবেশ করবে। এই সতর্কতা দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, মধ্যাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিম (আন্দামান উপকূল) অঞ্চলের কয়েকটি প্রদেশকে অন্তর্ভুক্ত করছে।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছে, কালমেগি উপকূলে আছড়ে পড়ার আগে দেশটির মধ্যাঞ্চলে ছয়টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ বিমানবন্দরগুলো হলো—বুয়ন মা থুয়ত, প্লেইকু, তুই হোয়া, চি লাই ফু ক্যাট এবং লিয়েন খুয়ং। এসব বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় শত শত ফ্লাইট বাতিল বা স্থগিত হবে বলে জানায় সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত