Ajker Patrika

তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার পথে দিল্লির বাধা চীনের উত্থান: ভারতীয় সেনাপ্রধান

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৩: ১১
ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ছবি: পিটিআই
ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ছবি: পিটিআই

ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন, চীন বর্তমানে একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় এটি ভারতের জন্য গ্লোবাল সাউথের (তৃতীয় বিশ্ব) নেতা হওয়ার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে এবং প্রতিযোগিতার মুখে ফেলছে।

গতকাল রোববার দিল্লিতে চতুর্থ বিপিন রাওয়াত স্মারক বক্তৃতায় এমন মন্তব্য করেন উপেন্দ্র দ্বিবেদী।

ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, ভবিষ্যতে আফ্রিকা একটি নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে এবং ভারতকে সেই সম্ভাবনার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে চীনের উত্থান বিশ্বরাজনীতিতে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করেছে, প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে এবং গ্লোবাল সাউথের স্বাভাবিক নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।’

সেনাপ্রধান দ্বিবেদী বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবর্তন ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতার কারণে ভবিষ্যতে আফ্রিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। তবে, ভারত ভূগোল, জনসংখ্যা, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সফট পাওয়ার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকবে।

ভারতের অনেক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যাবহুল দেশ, বৃহত্তম গণতন্ত্র, সপ্তম বৃহত্তম ভৌগোলিক আয়তন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূকৌশলগত অবস্থান থাকা সত্ত্বেও, ভারত এখনো তুলনামূলকভাবে নিম্ন অবস্থানে রয়েছে।’

সেনাপ্রধান বলেন, এমনকি ব্রিকস (বিকল্প অর্থনৈতিক জোট) গোষ্ঠীও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে ব্রিকস–এর প্রচেষ্টা ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে। এই বাস্তবতায়, আমাদের সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)–এর গতিবিধির ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখতে হবে।’

জাতীয় নিরাপত্তা কেবল যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতার বিষয় নয়, বরং যুদ্ধ প্রতিরোধের কৌশল হিসেবেও কাজ করে বলে উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান দ্বিবেদী।

তিনি উল্লেখ করেন, সামরিক ও বেসামরিক খাতের সমন্বয়, আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্পভিত্তি, দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য সম্পদ, সঠিক সময়ে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নেতৃত্ব এবং ‘সিটিজেন ওয়ারিয়রস’ (সাধারণ নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ) একটি কার্যকর প্রতিরক্ষা কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সেনাপ্রধান বলেন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এখন প্রতিরোধ শক্তির নতুন মুদ্রা হয়ে উঠেছে, এবং তথ্য (ডেটা) বর্তমানে বাণিজ্য ও নিরাপত্তার প্রধান মূলধন হয়ে উঠেছে।

ভারতকে তার গ্লোবাল সাউথ অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পরামর্শ দিয়ে দ্বিবেদী বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার করে গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সংঘাত নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, বিশ্বজুড়ে ভারতীয় প্রবাসীদের মানবিক কাজে যুক্ত করতে হবে, এবং বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।

পাশাপাশি ভারতকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াই এবং শান্তিরক্ষী মিশনে নেতৃত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পরমাণু অস্ত্রকে একটি কৌশলগত রাজনৈতিক সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষেও সাফাই দেন সেনাপ্রধান।

পরমাণু অস্ত্রকে সম্ভাব্য সংঘাত যতদিন সম্ভব প্রতিহত করার কৌশলগত রাজনৈতিক সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, ইউক্রেন ও গাজার দুটি বড় সংঘাত থেকে বিশ্ব ধীরে ধীরে থিতু হচ্ছে, তবে এর মধ্যেই উপদ্রুত অঞ্চলগুলোতে ক্ষুদ্র আকারে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং ব্যাপক সাইবার আক্রমণের মতো সাধারণ হুমকিগুলো বিশ্ব শান্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে একটি সূক্ষ্ম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার একটি অন্যতম কারণ।

দ্বিবেদী বলেন, বিশ্ব এখন ইউক্রেন ও গাজার দুটি বড় সংঘাত থেকে ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে। এই দুই সংঘাতে বেশির ভাগ দেশ বাস্তববাদ, আদর্শবাদ বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পক্ষ নিয়েছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন উপদ্রুত অঞ্চলে ক্ষুদ্র আকারে সংঘাত চলছে এবং সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, ব্যাপক সাইবার হামলা এবং গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো হুমকি বিশ্ব শান্তির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা সংকটের কারণে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্ব বর্তমানে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যার ফলে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের শাসনব্যবস্থা পতনের মুখে পড়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেন একপ্রকার পরিবর্তনশীল বালুকাবেলার মতো, যেখানে কখন উচ্চ জোয়ার আর কখন নিম্ন জোয়ার আসবে, তা অনুমান করা কঠিন।’

তাঁর মতে, বর্তমান বিশ্বে দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে ‘আংশিক বন্ধুত্ব’ গড়ে তুলছে, যা একপ্রকার ‘বন্ধুত্বে বাধ্য হওয়া’ বা ‘ফ্রেন্ডস বাই কমপালসন’ নামে পরিচিত।

দ্বিবেদীর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আদর্শবাদীরা এখন বাস্তববাদী হয়ে উঠছে, আবার বাস্তববাদীরাও আদর্শবাদী হয়ে যাচ্ছে। আংশিক বন্ধুত্ব একটি নতুন কূটনৈতিক প্রবণতা হয়ে উঠছে, যেখানে দেশগুলো বাধ্য হয়ে সম্পর্ক বজায় রাখছে। নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ বা নির্বাচিত নেতার পতন একটি দেশের সম্পূর্ণ কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। আমরা এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে দেখতে পাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তায় উদীয়মান প্রযুক্তির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এখন প্রতিরোধের নতুন মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং তথ্য (ডেটা) বর্তমানে বাণিজ্য ও নিরাপত্তার নতুন মূলধন হয়ে উঠেছে।

সেনাপ্রধানের মতে, ভবিষ্যতের যুদ্ধে প্রযুক্তিগত দক্ষতাই দেশগুলোর মূল শক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার যুদ্ধ ও আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিরাপত্তার মূল স্তম্ভ হয়ে উঠবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধীরে ধীরে চলছিল গাড়িটি, ট্রাফিক সিগন্যালে থামতেই বিকট বিস্ফোরণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: পিটিআই
ছবি: পিটিআই

দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লা ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলোর একটি। অন্যান্য দিনের মতো আজকেও অসংখ্য মানুষের ভিড় ছিল লালকেল্লার সামনে।

সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট। লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে আছে অনেক গাড়ি। কিন্তু ছোট একটি গাড়ি ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল। ওই গাড়িতেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

দিল্লি পুলিশ কমিশনার সত্যেশ গোলচা সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি গাড়ি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ভাঙাচুড়া গাড়ি, ছিন্নভিন্ন লাশ এবং রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে আছে কাচের টুকরা।

গোলচা আরও জানান, ফরেনসিক দল, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন এবং তাঁকে প্রতিনিয়ত আপডেট জানানো হচ্ছে।’

দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি চিফ এ কে মালিক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, বিস্ফোরণের পর যে আগুন লেগেছিল, তা সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল।

ফায়ার সার্ভিসের আরও এক কর্মকর্তা পিটিআইকে জানান, আগুনে ছয়টি গাড়ি, দুটি ই-রিকশা ও একটি অটোরিকশা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৮০০ মিটার দূরে অবস্থিত চাঁদনি চক ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় ভরগবের দোকান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে পুরো ভবন কেঁপে উঠেছিল।

আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি গুরুদুয়ারায় ছিলাম, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনি। শব্দটা এতটাই জোরে ছিল, আমি বুঝতেই পারিনি কী ঘটেছে।’

এ ঘটনার পর দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাশ্মীরের চিকিৎসক জঙ্গি সংগঠন জইশের সদস্য, হরিয়ানার তাঁর বাসায় মিলল ৩ টন বিস্ফোরক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪১
জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য কাশ্মীরের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। ছবি: সংগৃহীত
জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য কাশ্মীরের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। ছবি: সংগৃহীত

হরিয়ানার ফরিদাবাদে এক চিকিৎসকের ভাড়া নেওয়া দুই বাড়ি থেকে ২ হাজার ৯০০ কেজির বেশি (প্রায় ৩ টন) বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এই দুই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। তিনি ভারতে প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংযুক্ত করতেন।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উদ্ধার করা পদার্থগুলো সম্ভবত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, যা সাধারণত বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফরিদাবাদ ও জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ সকাল থেকে ওই বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে।

শাকিল ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। দিল্লি থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ধোজ এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনপ্রাপ্ত।

গতকাল রোববার পুলিশ ধোজ এলাকার তাঁর ভাড়া নেওয়া বাড়ি থেকে ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ২০টি টাইমার, অ্যাসল্ট রাইফেল, হ্যান্ডগান ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। শাকিল সেখানে সাড়ে তিন বছর ধরে থাকতেন। জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের প্রমাণ মেলায় ১০ দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে আরও একটি পিস্তল, আটটি গুলি, দুটি খালি কার্তুজ, দুটি অতিরিক্ত ম্যাগাজিন, আটটি বড় স্যুটকেস, চারটি ছোট স্যুটকেস ও একটি বালতি উদ্ধার করা হয়।

হরিয়ানায় মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি। ছবি: সংগৃহীত
হরিয়ানায় মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বাড়িটি ধোজ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ফতেহপুর টাগা গ্রামে। ওই বাড়ির মালিক এক মাওলানা, যাকে ইতিমধ্যে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অভিযানে সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর, আনন্তনাগ, গান্ডারবাল, শোপিয়ানসহ বিভিন্ন জায়গায় এবং ফরিদাবাদে একাধিক স্থানে তল্লাশিতে এক নতুন ধরনের ‘প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক’ উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। যেখানে বহু শিক্ষিত ও পেশাজীবী, বিশেষত চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন। গত ১৫ দিনের এই যৌথ অভিযানে ২ হাজার ৯০০ কেজির বেশি বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগেও উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে কর্মরত কাশ্মীরি চিকিৎসক ড. আদিল আহমদ রাঠেরকে শ্রীনগরে জইশ-ই-মোহাম্মদ সমর্থনকারী পোস্টার লাগানোর অভিযোগে আটক করা হয়।

শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ফরিদাবাদ পুলিশ তাঁর এক নারী সহকর্মীর সুইফট গাড়ি উদ্ধার করে, যেখানে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও একটি পিস্তল পাওয়া যায়। ওই নারী চিকিৎসককেও পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই পেশাজীবী জঙ্গি চক্রটি পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাঁরা শুধু প্রচারমূলক পোস্টার লাগানোই নয়, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায়ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

শাকিল ও রাঠের ছাড়াও আরিফ নিসার দার, ইয়াসির উল আশরাফ, মাকসুদ আহমদ দার (শ্রীনগর), মৌলভি ইরফান আহমদ (শোপিয়ান), জমির আহমদ আহাঙ্গারকেও (গান্ডারবাল) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অস্ত্র ও বিস্ফোরকসামগ্রীর পাশাপাশি পুলিশ ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির নির্দেশনা-সংবলিত বই ও নথিপত্রও উদ্ধার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার, কিসের ইঙ্গিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার, কিসের ইঙ্গিত

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে রেড ফোর্টের পাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের বাইরে গাড়িতে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থল ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ত ও নিরাপত্তা সংবেদনশীল এলাকায় হওয়ায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের একাধিক গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি ভ্যানের দরজা উড়ে গেছে এবং একটি গাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল দেহের খণ্ডাংশ।

প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের ধরন বা উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। দিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।

দিল্লি, মুম্বাই, জয়পুর, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় দুই ডজন অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে এবং এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। ফরেনসিক ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল আলামত সংগ্রহ করছে।

ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধারের পরই দিল্লিতে বিস্ফোরণ

বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানার ফরিদাবাদে দুটি আবাসিক ভবন থেকে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি (৩ টন) বিস্ফোরক উদ্ধার করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। এর মধ্যে ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল, যা সার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রাণঘাতী বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।

এই অভিযান পরিচালিত হয় জম্মু ও কাশ্মীরের এক চিকিৎসক আদিল রশিদ রাঠারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। সিসিটিভিতে জইশ-ই-মোহাম্মদ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থনে পোস্টার লাগাতে দেখে রাঠারকে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পোস্টারগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হুমকি ছিল বলে পুলিশের দাবি।

তদন্তে মুজাম্মিল শাকিল নামের আরও একজন চিকিৎসকের নাম উঠে আসে। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাঁর নামে থাকা দুটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১২টি স্যুটকেসভর্তি বিস্ফোরক, ডেটোনেটর ও টাইমার ডিভাইস উদ্ধার করে।

এ ছাড়া এক নারী চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার গাড়িতে একটি রাইফেল ও গুলি পাওয়া গেছে। আরও একটি রাইফেল উদ্ধার হয় কাশ্মীরের আনন্তনাগের মেডিকেল কলেজের একটি লকার থেকে, যেখানে আদিল রাঠার গত বছর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের ইঙ্গিত

এ ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আল-কায়েদা সম্পৃক্ত আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ জড়িত বলে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের দাবি। অভিযানের মাধ্যমে তারা এই দুটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত একটি আন্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আদিল রাঠার, মুজাম্মিল শাকিল, নারী চিকিৎসকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ফরিদাবাদে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও কয়েক ঘণ্টা পর দিল্লির হৃদয়স্থলে হওয়া এই বিস্ফোরণ—দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানীতে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ছিল, যা আংশিকভাবে সফল হয়েছে।

ঘটনার পর পুরো দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়েছে এবং লালকেল্লা এলাকা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিস্ফোরণ সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত বহন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছিন্নভিন্ন শরীর, হাত পড়ে আছে রাস্তায়—প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় দিল্লি বিস্ফোরণের বীভৎসতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ১৭
বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ছবি: পিটিআই
বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ছবি: পিটিআই

দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর মানুষের দেহের অংশ উড়ে এসে তাঁর সামনে রাস্তায় পড়তে দেখেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি কাঁপা কণ্ঠে বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই প্রবল ছিল যে ‘কান কয়েক মিনিট ধরে বাজতে থাকে’। তিনি বলেন, ‘একজনের শরীর টুকরা হয়ে গিয়েছিল। আমি রাস্তায় একটি হাত পড়ে থাকতে দেখেছি। এটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, বিস্ফোরণটা ছিল ভয়ংকর।’

আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের ভবন, জানালা ও দরজা কেঁপে ওঠে।

আজ সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের বাইরে বিস্ফোরণটি ঘটে। সেখানে সব সময় পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। ঘটনাস্থলটি জামা মসজিদ থেকে মাত্র ১ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরে এবং গুরুদুয়ারা সিসগঞ্জ সাহিব থেকে মাত্র কয়েক শ মিটার দূরে।

ঘটনার পরপর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, গাড়িগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ ও দগ্ধ দেহাবশেষ। ডজনখানেক অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়ার কাজ শুরু করে।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমি আমার বাড়ির ছাদ থেকে এক বিশাল আগুনের গোলা দেখেছি। মুহূর্তেই ভয়ংকর শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে যাই। আমার বাড়ি গুরুদুয়ারার কাছে।’

আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু হঠাৎ করেই ঘটল। আমার মনে হলো, শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে।’

বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত