Ajker Patrika

বাঁধের পানিতে বন্যা কবলিত পশ্চিমবঙ্গ, নিহত ১৬

প্রতিনিধি, কলকাতা
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২১, ০২: ১৯
বাঁধের পানিতে বন্যা কবলিত পশ্চিমবঙ্গ, নিহত ১৬

প্রবল বর্ষণ আর দামোদর ভ্যালি করপোরেশনের (ডিভিসি) ছাড়া পানিতে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় অন্তত ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এরই মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। 

গত মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলি ও মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গতকাল বুধবার হেলিকপ্টারে পরিস্থিতি দেখতে যাওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য সড়ক পথেই তিনি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। প্রশাসনকে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মমতার সঙ্গে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে ছিলেন পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। 

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কলকাতাসহ এর আশপাশের এলাকায় আকাশের মুখ ভার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। আগামীকাল শুক্রবার রাজ্যে বজ্রবিদ্যুৎসহ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। 

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপের জেরে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আরও বাড়াতে পারে বীরভূমের শ্রীনিকেতন, ডায়মন্ড হারবারের ওপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত মৌসুমি বায়ুর কারণে। এর জেরে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে কলকাতা, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়াতেও ভারী বৃষ্টি হওয়ার কথা বলেছে আবহাওয়া দপ্তর। এরই মধ্যে হুগলির খানাকুল, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ভারী বৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি তো হবেই, সঙ্গে বাড়বে ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ। 

এদিকে ভারতের বন্যাকবলিত দুই রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল বুধবারই ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এ সময় সব রকম সহায়তার আশ্বাস দেন। 

গতকাল বুধবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সঙ্গে ছিলেন পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমবুধবার সকালেই মমতাকে ফোন করে বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে মোদি নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে সে কথা জানান। মমতার অভিযোগ, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ডিভিসির ইচ্ছামতো জল ছাড়ার কারণেই ২০১৫,২০১৭, ২০১৯ সালের পর আবার এই বছর রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলো।’ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেও এ কথা তিনি জানান। 

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এদিন জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গে বন্যায় মৃতদের জন্য ২ লাখ ও আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি আর্থিক সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। 

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতা মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার দুর্গতকে ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছ। হুগলির খানাকুলে ৮০টি অস্থায়ী ত্রাণশিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাইথন, পাঞ্চেত ও তেনুঘাট জলাধার থেকে প্রায় ২ লাখ কিউসেক পানি ছেড়েছে ডিভিসি। এ কারণেই রাজ্যের হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো এই চিঠিতে তিনি বন্যায় ১৬ জনের মৃত্যু ছাড়াও লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। 

বন্যায় আদতেই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন হুগলি, হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দারা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেই মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। চিন্তার কারণ বাড়িয়েছে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা। তখন কী হবে, সেই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষকে। জেলাটির শিলাবতী, ঝুমি, কংসাবতীসহ একাধিক নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। খাবার পানির সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। হুগলির অবস্থাও ভালো নয়। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে বৃষ্টি হয়েছে হুগলির বিভিন্ন এলাকায়। একাধিক জায়গায় নেমেছে ধস। বহু এলাকা এখনো জলমগ্ন। আর হাওড়ার কথা তো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত