Ajker Patrika

নেপালে জেন-জি বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত বেড়ে ১৯, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৪৬
নেপালে জেন-জি বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত বেড়ে ১৯, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ভাঙচুর

নেপালে জেন-জিদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাঠমান্ডু, সুনসারিসহ বিভিন্ন শহরে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন।

দুর্নীতি ও সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তরুণেরা রাস্তায় নামেন কাঠমান্ডু, পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ভরতপুর, ইটাহারি, দামাকসহ বিভিন্ন শহরে। রাজধানীর নতুন বানেশ্বর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। আজ বেলা ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কারফিউ জারি করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুধু কাঠমান্ডুতেই অন্তত ১৭ জন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে আটজন, এভারেস্ট হাসপাতালে তিনজন, সিভিল হাসপাতালে তিনজন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে দুজন ও ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সুনসারির ইটাহারিতে বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ দুজনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এতে সারা দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।

দেশজুড়ে অন্তত ৩৪৭ জন আহত বিক্ষোভকারীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সিভিল হাসপাতালে ১০০, ট্রমা সেন্টারে ৫৯, এভারেস্টে ১০২, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ৩৭, বীর হাসপাতালে ছয়, পাটান হাসপাতালে চার, ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১৮, নরভিক হাসপাতালে তিন, বিপি কৈরালা স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দুই, গান্ধাকি মেডিকেল কলেজে এক, বিরাট মেডিকেল কলেজে চার ও দামাক হাসপাতালে সাতজন ভর্তি রয়েছেন।

বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুরুতর আহত ব্যক্তিদের অনেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। এভারেস্ট হাসপাতালের অনিল অধিকারী জানান, সেখানে চারজন গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। আর ট্রমা সেন্টারের ড. দিপেন্দ্র পাণ্ডে বলেন, অন্তত ১০ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন, যাঁদের মাথা ও বুকে গুলির ক্ষত রয়েছে।

প্রদর্শনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ পানির কামান, টিয়ার গ্যাস ও সরাসরি গুলি চালায়। রাজধানীর বানেশ্বর এলাকায় ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। একই ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পোখারা, বিরাটনগর, জনকপুর, হেটৌঁডা, নেপালগঞ্জসহ আরও কয়েকটি বড় শহরে।

সুনসারির ইটাহারি উপমহানগর কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আরও একজন গুরুতর আহত অবস্থায় বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউটে ভর্তি ছিলেন, পরে সেখানেই মারা যান।

ঝাপায় প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির দামাকের বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক দফা আকাশে গুলি ছোড়ে। বিক্ষোভকারীরা পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ তৈরি করেন।

এর আগে নেপালের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়। সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন শান্তিপূর্ণ বিরোধিতা করার অধিকার নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে কমিশন জানায়, সহিংসতা ও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ‘দুঃখজনক’।

মূলত দুর্নীতি ও দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে জেনারেশন জেড তরুণদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আজ সোমবার সকাল থেকে কাঠমান্ডু ও অন্যান্য নগরকেন্দ্রে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামেন, যেখানে শিক্ষার্থী ও তরুণ সংগঠনগুলো অগ্রভাগে ছিল।

প্রশাসন কয়েকটি জেলায় কারফিউ জারি করেছে এবং সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায় সমাবেশ ও চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এদিকে নিরাপত্তা বাহিনী কাঠমান্ডুসহ অন্যান্য শহরের প্রধান প্রধান মোড়ে টহল জোরদার করেছে। আহত ব্যক্তিদের ভিড়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ইতিমধ্যে অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত