Ajker Patrika

রুমে এসো, বিদেশে ঘুরতে নিয়ে যাব—ছাত্রীদের বলতেন স্বামী চৈতন্যানন্দ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভণ্ড সাধু স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী। ছবি: সংগৃহীত
ভণ্ড সাধু স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির অভিজাত এলাকা বসন্ত কুঞ্জের একটি বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী। জনপ্রিয় ধর্মগুরু হিসেবে ভারতে তাঁর বেশ খ্যাতি। কিন্তু সম্প্রতি এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে তাঁর ছাত্রীদের যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর মোবাইল ফোন থেকে ৫০ জন নারীর হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা উদ্ধার করা হয়েছে, যা থেকে জানা যায়, তিনি ১৬ বছর ধরে অন্তত ডজনখানেক নারীকে যৌন হেনস্তা করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া বার্তাগুলোর মধ্যে একটিতে স্বামী চৈতন্যানন্দ একজন নারীকে বিদেশ ভ্রমণের প্রলোভন দেখিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘আমার রুমে এসো...আমি তোমাকে বিদেশে ভ্রমণে নিয়ে যাব, তোমার কোনো খরচ লাগবে না।’ আরেকটি বার্তায় তিনি অন্য একজন ছাত্রীকে কম নম্বর দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যদি তুমি আমার কথা না শোনো, আমি তোমাকে ফেল করিয়ে দেব।’

পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, ওড়িশার বাসিন্দা পার্থসারথি নামে জন্ম নেওয়া এই ব্যক্তি গত ১৬ বছর ধরে নারীদের ওপর নানাভাবে যৌন নির্যাতন চালাচ্ছেন। ২০০৯ এবং ২০১৬ সালেও তাঁর বিরুদ্ধে দুটি যৌন হেনস্তার মামলা হয়েছিল, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, ২০১৬ সালের মামলাটি বসন্ত কুঞ্জের একই আশ্রমের একজন তরুণী দায়ের করেছিলেন, কিন্তু পুলিশ বা আশ্রম কর্তৃপক্ষ কেউই তখন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

পুলিশ একটি সূত্র জানায়, এই ভণ্ড সাধু হোয়াটসঅ্যাপ কল বা মেসেজের মাধ্যমে তাঁর শিকারের কাছে পৌঁছাতেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রথম দিকের বার্তাগুলোতে কোনো হুমকি থাকত না। তবে যদি তাঁর বার্তাগুলো আশানুরূপ সাড়া না পেত, তাহলে তিনি শিক্ষার্থীদের নম্বর কমিয়ে দেওয়ার বা ফেল করানোর হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করতেন।

পুলিশের মতে, তিনি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন, কারণ তিনি জানতেন যে এই নারীরা বা তাদের পরিবার সম্ভবত মুখ খুলবে না। তাঁর এই অপকর্মে তিনজন নারী ওয়ার্ডেন তাঁকে সহযোগিতা করতেন। এই ওয়ার্ডেনরাও হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা ও কলের মাধ্যমে নির্যাতিত নারীদের মানসিকভাবে চাপ দিত। পুলিশ এই তিন নারী ওয়ার্ডেনের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে।

তবে যখন এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে, তখন স্বামী চৈতন্যানন্দ লন্ডনে ছিলেন। গত আগস্টের প্রথম দিকে ১৭ জন নারী দিল্লির ডিফেন্স কলোনি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর শেষ অবস্থান আগ্রায় দেখা গেছে।

২০০৯ ও ২০১৬ সালের দুটি মামলা ছাড়াও এই ভণ্ড সাধুর বিরুদ্ধে আরও দুটি অভিযোগ রয়েছে। একটিতে জাতিসংঘের নকল কূটনৈতিক নম্বর প্লেট ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ আশ্রম থেকে একটি জাফরান রঙের ভলভো গাড়ি উদ্ধার করেছে। এটি গাড়িটি ওই ভণ্ড সাধু ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে। এই গাড়ির একাধিক নকল প্লেটও পাওয়া গেছে।

এই ভণ্ড সাধুর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যৌন হেনস্তার অভিযোগ সামনে আসার পর আশ্রম কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করার কথা জানায় এবং পরে তারাই এই ভণ্ড সাধুর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করে।

স্বামী চৈতন্যানন্দ যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন, সেটি দক্ষিণ ভারতের স্বনামধন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শ্রীনগরীর দক্ষিণাম্নায়া শ্রী শারদা পীঠের একটি শাখা। এই প্রতিষ্ঠানটি স্বামী চৈতন্যানন্দের কর্মকাণ্ডকে ‘অনুচিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। বর্তমানে পুলিশ তাঁকে ধরতে বিভিন্ন রাজ্যে তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে তিনি ক্রমাগত তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করছেন এবং পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করেও মুখে দুর্গন্ধের কারণ, পরিত্রাণের উপায়

বঙ্গবন্ধু জেন–জিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, হাসিনা সবচেয়ে অজনপ্রিয়: জরিপ

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত