Ajker Patrika

মাচাদোর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে এত সমালোচনার কারণ কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ছবি: এএফপি
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিক মারিয়া কোরিনা মাচাদো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জেতার পরই বিতর্কের মুখে পড়েছেন। সমালোচকেরা অভিযোগ করছেন, তিনি গাজায় বোমা হামলায় ইসরায়েলের সমর্থন করেছিলেন। এমনকি নিজ দেশের সরকারকে উৎখাত করতেও তিনি বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

মাচাদো ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, যিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাগরিক সাহসিকতার এক শক্তিশালী প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। গতকাল নোবেল পুরস্কার কমিটি ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্রের প্রচার এবং একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে।

তবে এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হোয়াইট হাউস থেকে এর সমালোচনা করা হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়, এই পুরস্কার ‘শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে’। হোয়াইট হাউসের এমন সমালোচনার কারণ ছিল, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে ‘বিশ্ব শান্তির রক্ষক’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও পুরস্কারটি তিনি পাননি। অবশ্য মাচাদো পরে তাঁর নোবেল ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেন। ট্রাম্পও তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি তাঁর জন্য খুশি।’

মাচাদো কেন নোবেল পেলেন

নোবেল কমিটি মাচাদোকে ‘শান্তির চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে প্রশংসা করেছে, যিনি ভেনেজুয়েলায় ক্রমবর্ধমান অন্ধকারের মধ্যেও গণতন্ত্রের শিখা জ্বালিয়ে রেখেছেন। কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস তাঁকে ভেনেজুয়েলার একসময় বিভক্ত রাজনৈতিক বিরোধী দলের ‘মূল, ঐক্যবদ্ধকারী ব্যক্তিত্ব’ বলে অভিহিত করেন।

নোবেল কমিটি এই শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর প্রশংসা করে বলেছে, ‘তিনি দেখিয়েছেন, গণতন্ত্রের হাতিয়ারই হলো শান্তির হাতিয়ার।’ তারা মাচাদোর মধ্যে এক ভিন্ন ভবিষ্যতের আশাকে মূর্ত দেখতে পেয়েছেন, যেখানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে।

ফ্রাইডনেস তাঁর ঘোষণায় বলেন, ‘গত বছর মাচাদোকে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। তাঁর জীবনের ওপর গুরুতর হুমকি থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশে থেকেছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। যখন স্বৈরাচারীরা ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহসী যোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেওয়া অপরিহার্য।’

মাচাদোকে নিয়ে কেন সমালোচনা

সমালোচকেরা মাচাদোর পুরোনো পোস্টগুলো শেয়ার করছেন, যেখানে তিনি ইসরায়েল এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। অনেকে বলছেন, মাচাদো পরোক্ষভাবে গাজার ‘গণহত্যা’ সমর্থন করেছেন। যদিও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আচমকা হামলার পরে তিনি ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন, তবে ফিলিস্তিনিদের হত্যার পক্ষে তিনি কখনো সরাসরি কথা বলেননি।

তবে বছরের পর বছর ধরে করা তাঁর পোস্টগুলো নিশ্চিত করে, তিনি নেতানিয়াহুর একজন মিত্র। সমালোচকেরা তাঁর যে পোস্টগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেগুলোর মধ্যে একটিতে তিনি বলেছিলেন, ‘ভেনেজুয়েলার সংগ্রাম হলো ইসরায়েলের সংগ্রাম।’ দুই বছর পরে তিনি ইসরায়েলকে ‘স্বাধীনতার খাঁটি মিত্র’ বলেও অভিহিত করেছিলেন। এমনকি ক্ষমতায় এলে তিনি ভেনেজুয়েলার দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

নরওয়ের আইনপ্রণেতা বিয়োর্নার মক্সনেস উল্লেখ করেছেন, মাচাদো ২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে একটি সহযোগিতা নথিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি বলেন, লিকুদ পার্টি গাজার গণহত্যার জন্য দায়ী। তাই এই পুরস্কার নোবেলের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম মানবাধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে ‘অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে। এক অনলাইন বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘নোবেল কমিটির এমন কাউকে পুরস্কৃত করা উচিত ছিল, যিনি প্রকৃতপক্ষে নৈতিক দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। যেমন সাংবাদিক, চিকিৎসক, বা কর্মী, যারা গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াইয়ে জীবন বাজি রেখেছেন।’

মাচাদোর বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ হলো, তিনি নিজ দেশে সরকার পতনের জন্য বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি এক খোলাচিঠিতে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার কাছে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে সমর্থন চান।

সে সময় টুইটারে (এক্স) তিনি লিখেছিলেন, ‘আজ আমি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও মাক্রি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে চিঠি পাঠাচ্ছি, যাতে তাঁরা তাঁদের শক্তি ও প্রভাব ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার মাদক ও সন্ত্রাসে জড়িত অপরাধী সরকারটিকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ, দুই যুবক আটক

ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাসদর

ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় সেনাবাহিনী মোর‍্যালি আপসেট, তবে সবসময় ন্যায়ের পক্ষে: সেনাসদর

বিয়ের আংটি পরলেন ইশরাক

দূতাবাসে আফগানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারীদের বাধা, ‘কোনো ভূমিকা নেই’ বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত