Ajker Patrika

পড়ে আছে শুধু হাড়গোড়, ম্লান হয়ে আসছে আশা

পড়ে আছে শুধু হাড়গোড়, ম্লান হয়ে আসছে আশা

গত সপ্তাহে তুরস্কে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর এরদেম আভসারোগ্লুর বোন, তাঁর স্বামী এবং তাঁদের দুই সন্তান আটকা পড়েন আন্তাকায় ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্টে। তবুও তাঁরা জীবিত ছিলেন এবং উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন।

এর দেড় দিন পরের রাতে ধ্বংসস্তূপের গভীরে একটি জেনারেটর থেকে আগুন লাগে। ফায়ার ফাইটার আভসারোগ্লুর চোখের সামনেই সেই আগুন জ্বলে ঘণ্টা খানিক ধরে। এরপর ধ্বংসাবশেষ থেকে আর কারও বাঁচার আকুতি আসেনি। প্রায় পাঁচ দিন পরও গতকাল রোববার ভবনের অবশিষ্টাংশ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। 

এখন উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপটি সরিয়ে ফেলার কাজ করছেন। তবে আভসারোগ্লু আটকে পড়া পরিবারের কাউকেই জীবিত পাওয়ার আশা করছেন না। তিনি বলেন, ‘এখন সপ্তম দিন, সবাই ক্লান্ত, আমরা শুধু এক টুকরো লাশ খুঁজে পেতে চাই। কিন্তু আমরা কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। তাঁরা হয়তো আগুনে পুড়ে গেছে।’ 

আভসারোগ্লু আরও বলেন, ‘এই ব্লকে প্রায় ৮০ জন লোক বাস করতেন। অগ্নিকাণ্ডের আগে ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল এবং ১২ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। বাকি ৪৭ জন এখনো নিখোঁজ। উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর অবস্থা বেদনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু পরিবার শুধুমাত্র আগুনের কারণে হাড়গোড় সংগ্রহ করেছে।’ 

নির্মাণের ১০ বছরের মাথায় বিল্ডিংটি ভেঙে পড়া নিয়ে স্থানীয় উদ্ধারকর্মী এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, আশপাশের অনেক পুরোনো ভবনগুলো যখন দাঁড়িয়ে ছিল তখন নতুন ভবনটি ভেঙে পড়ে কীভাবে? তবে উদ্ধারকারীরা ভবনটির নিচতলার সুপারমার্কেট থেকে গুরুত্বপূর্ণ কলাম সরিয়ে দেওয়ার প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। 

এদিকে ভূমিকম্পের পর রাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্ধারকাজে ধীর গতি ছিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গত বুধবার দেশটির ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চল পরিদর্শনের পর এ কথা স্বীকার করেন। 

আরেক উদ্ধারকারী সেরহাত দেদে। তিনি ধ্বংসাবশেষ থেকে বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করলেও নিজের বাবার লাশও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শেষে দাঁত দেখে বাবার লাশ শনাক্ত করেন। 

সেরহাত দেদে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। যদি আমাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করত তাহলে আমরা ৪০-৫০ জনকে বাঁচাতে পারতাম।’

আজ সোমবার পর্যন্ত ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তুরস্কে ৩০ হাজারের কাছাকাছি এবং সিরিয়ায় সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি। ঐতিহাসিকভাবে অ্যান্টিওক নামে পরিচিত প্রাচীন শহর আন্তাক্যাতে, সর্বত্র ধসে পড়া ভবনগুলির মধ্যে ধ্বংসের মাত্রা বোঝা কঠিন। দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় প্রতিটি ভবনেই ফাটল, ভয়ংকরভাবে বিকৃত অথবা ঝুঁকিপূর্ণভাবে হেলে পড়েছে। 

ভেঙে পড়া ভবনগুলো এক দুঃখময় স্মৃতিকাতর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কোথাও পড়ে আছে হাস্যোজ্জ্বল পরিবারের ফটোগ্রাফ, কোনো বাথরুমের দেয়ালে ঝুলে আছে জ্যাকেট ও কোনো আলমারিতে শিশুর খেলনা। ফলে বেশির ভাগ মানুষ শহর ছেড়ে গেছেন। তবে এখনো কেউ কেউ গাড়িতে বা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের রয়েছেন। 

অগ্নিকাণ্ডের পরের দিনগুলোতে আভসারোগ্লু এবং অন্যরা লুটেরাদের হাত থেকে তাঁর বোনের বিল্ডিংকে রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু গতকাল রোববার থেকে সেনাবাহিনী রাস্তায় টহল দিচ্ছে। আপাতত নিরাপত্তা ফিরে এসেছে। 

তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের আশপাশে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঘুরছে। জীবিত উদ্ধার আশা এখনো সবাই ছেড়ে দেননি। কিন্তু এই ধরনের উদ্ধার ক্রমশ বিরল হয়ে উঠেছে। আন্তাক্যায় ভবনের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধানকারী একটি ভারতীয় দলের একজন উদ্ধারকারী বলেছেন যে তাঁরা চার দিন আগে তুরস্ক এসেছেন। আসার পর থেকে তাঁরা কেবল মরদেহই উদ্ধার করেছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় ওই উদ্ধারকর্মী আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত, আমরা জীবিত কাউকে খুঁজে পাইনি। আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’ 

যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন অন্য স্থানে লাশ পাওয়া গেছে বলে সহকর্মীদের কাছ থেকে একটি কল আসে। এ সময় রাস্তায় শোকে কাতর এক মহিলা মাথা নিচু করে লাশের ব্যাগের পাশে বসেছিলেন। 

‘আমাদের মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে’
আন্তাক্যায় উপকূল থেকে একটু ওপরে ইস্কেন্দারুনে ছোট্ট টেক্সটাইলের দোকান ছিল সেরিজান আগবাসের। তিনি এ দোকান ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চালিয়ে আসছিলেন। এখন তা পাঁচ তলার মতো উঁচু ধ্বংসস্তূপের নিচে। এই এলাকার ১০০ জন নিখোঁজ বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সেরিজানের অ্যাপার্টমেন্ট এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও তাতে ফাটল ধরেছে এবং অনিরাপদ। বিল্ডিং থেকে আগবাস এবং তাঁর কিছু প্রতিবেশী জানিয়েছেন, তাঁদের তাঁবু এবং অন্যান্য সহায়তা প্রয়োজন। 

সেরিজান বলেন ‘আমাদের পুরো সম্প্রদায়ের জন্য মানসিক সাহাজ্য দরকার। সরকারের কাছ থেকে আমরা কেউ কিছু আশা করছি না। আমাদের নিজেদেরই সবকিছু ঠিক করতে হবে। 

এদিকে সরকার জোর দিয়ে বলেছে, দুর্যোগের মাত্রা বিবেচনা করে তাঁরা সবকিছুই করছে। এই ভূমিকম্প বিশাল এলাকা জুড়ে হয়েছে যা ব্রিটেনের আকৃতির। এতে আনুমানিক ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আগামী এক বছরের মধ্যে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকা পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জইশ-ই-মোহাম্মদ করতেন কাশ্মীরের চিকিৎসক, হরিয়ানায় ভাড়া বাসায় মিলল ৩ টন বিস্ফোরক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য কাশ্মীরের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। ছবি: সংগৃহীত
জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য কাশ্মীরের চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। ছবি: সংগৃহীত

হরিয়ানার ফরিদাবাদে এক চিকিৎসকের ভাড়া নেওয়া দুই বাড়ি থেকে ২ হাজার ৯০০ কেজির বেশি (প্রায় ৩ টন) বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এই দুই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল। তিনি ভারতে প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংযুক্ত করতেন।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উদ্ধার করা পদার্থগুলো সম্ভবত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, যা সাধারণত বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফরিদাবাদ ও জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ সকাল থেকে ওই বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে।

শাকিল ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। দিল্লি থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ধোজ এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনপ্রাপ্ত।

গতকাল রোববার পুলিশ ধোজ এলাকার তাঁর ভাড়া নেওয়া বাড়ি থেকে ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ২০টি টাইমার, অ্যাসল্ট রাইফেল, হ্যান্ডগান ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। শাকিল সেখানে সাড়ে তিন বছর ধরে থাকতেন। জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের প্রমাণ মেলায় ১০ দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে আরও একটি পিস্তল, আটটি গুলি, দুটি খালি কার্তুজ, দুটি অতিরিক্ত ম্যাগাজিন, আটটি বড় স্যুটকেস, চারটি ছোট স্যুটকেস ও একটি বালতি উদ্ধার করা হয়।

হরিয়ানায় মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি। ছবি: সংগৃহীত
হরিয়ানায় মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বাড়িটি ধোজ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ফতেহপুর টাগা গ্রামে। ওই বাড়ির মালিক এক মাওলানা, যাকে ইতিমধ্যে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অভিযানে সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর, আনন্তনাগ, গান্ডারবাল, শোপিয়ানসহ বিভিন্ন জায়গায় এবং ফরিদাবাদে একাধিক স্থানে তল্লাশিতে এক নতুন ধরনের ‘প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক’ উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। যেখানে বহু শিক্ষিত ও পেশাজীবী, বিশেষত চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন। গত ১৫ দিনের এই যৌথ অভিযানে ২ হাজার ৯০০ কেজির বেশি বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগেও উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে কর্মরত কাশ্মীরি চিকিৎসক ড. আদিল আহমদ রাঠেরকে শ্রীনগরে জইশ-ই-মোহাম্মদ সমর্থনকারী পোস্টার লাগানোর অভিযোগে আটক করা হয়।

শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ফরিদাবাদ পুলিশ তাঁর এক নারী সহকর্মীর সুইফট গাড়ি উদ্ধার করে, যেখানে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও একটি পিস্তল পাওয়া যায়। ওই নারী চিকিৎসককেও পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই পেশাজীবী জঙ্গি চক্রটি পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাঁরা শুধু প্রচারমূলক পোস্টার লাগানোই নয়, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায়ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

শাকিল ও রাঠের ছাড়াও আরিফ নিসার দার, ইয়াসির উল আশরাফ, মাকসুদ আহমদ দার (শ্রীনগর), মৌলভি ইরফান আহমদ (শোপিয়ান), জমির আহমদ আহাঙ্গারকেও (গান্ডারবাল) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অস্ত্র ও বিস্ফোরকসামগ্রীর পাশাপাশি পুলিশ ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির নির্দেশনা-সংবলিত বই ও নথিপত্রও উদ্ধার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার, কিসের ইঙ্গিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ১৮
দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে হরিয়ানায় ৩ টন বিস্ফোরক উদ্ধার, কিসের ইঙ্গিত

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে রেড ফোর্টের পাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেট বাইরে গাড়িতে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থল ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ত ও নিরাপত্তাসংবেদনশীল এলাকায় হওয়ায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের একাধিক গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি ভ্যানের দরজা উড়ে গেছে এবং একটি গাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল দেহের খণ্ডাংশ।

প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের ধরন বা উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। দিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।

দিল্লি, মুম্বাই, জয়পুর, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় দুই ডজন অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে এবং এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। ফরেনসিক ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল আলামত সংগ্রহ করছে।

ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধারের পরই দিল্লিতে বিস্ফোরণ

বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেই হরিয়ানার ফরিদাবাদে দুটি আবাসিক ভবন থেকে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি (৩ টন) বিস্ফোরক উদ্ধার করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। এর মধ্যে ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল, যা সার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রাণঘাতী বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।

এই অভিযান পরিচালিত হয় জম্মু ও কাশ্মীরের এক চিকিৎসক আদিল রশিদ রাঠারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। সিসিটিভিতে জয়েশ-ই-মোহাম্মদ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থনে পোস্টার লাগাতে দেখে রাঠারকে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পোস্টারগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হুমকি ছিল বলে পুলিশের দাবি।

তদন্তে মুজাম্মিল শাকিল আরও একজন চিকিৎসকের নাম উঠে আসে। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাঁর নামে থাকা দুটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১২টি স্যুটকেসভর্তি বিস্ফোরক, ডেটোনেটর ও টাইমার ডিভাইস উদ্ধার করে।

এছাড়া এক নারী চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার গাড়িতে একটি রাইফেল ও গুলি পাওয়া গেছে। আরও একটি রাইফেল উদ্ধার হয় কাশ্মীরের আনন্তনাগের মেডিকেল কলেজের একটি লকার থেকে, যেখানে আদিল রাঠার গত বছর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের ইঙ্গিত

এই ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জয়েশ-ই-মোহাম্মদ ও আল-কায়েদা-সম্পৃক্ত আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ জড়িত বলে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের দাবি। অভিযানের মাধ্যমে তারা এই দুটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত একটি আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আদিল রাঠার, মুজাম্মিল শাকিল ও নারী চিকিৎসকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ফরিদাবাদে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক এবং কয়েক ঘণ্টা পর দিল্লির হৃদয়স্থলে হওয়া এই বিস্ফোরণ—দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানীতে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ছিল, যা আংশিকভাবে সফল হয়েছে।

ঘটনার পর পুরো দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়েছে এবং লাল কেল্লা এলাকা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিস্ফোরণ সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত বহন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছিন্নভিন্ন শরীর, হাত পড়ে আছে রাস্তায়—প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় দিল্লি বিস্ফোরণের বীভৎসতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ১৭
বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ছবি: পিটিআই
বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ছবি: পিটিআই

দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর মানুষের দেহের অংশ উড়ে এসে তাঁর সামনে রাস্তায় পড়তে দেখেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি কাঁপা কণ্ঠে বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই প্রবল ছিল যে ‘কান কয়েক মিনিট ধরে বাজতে থাকে’। তিনি বলেন, ‘একজনের শরীর টুকরা হয়ে গিয়েছিল। আমি রাস্তায় একটি হাত পড়ে থাকতে দেখেছি। এটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, বিস্ফোরণটা ছিল ভয়ংকর।’

আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের ভবন, জানালা ও দরজা কেঁপে ওঠে।

আজ সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের বাইরে বিস্ফোরণটি ঘটে। সেখানে সব সময় পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। ঘটনাস্থলটি জামা মসজিদ থেকে মাত্র ১ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরে এবং গুরুদুয়ারা সিসগঞ্জ সাহিব থেকে মাত্র কয়েক শ মিটার দূরে।

ঘটনার পরপর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, গাড়িগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ ও দগ্ধ দেহাবশেষ। ডজনখানেক অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়ার কাজ শুরু করে।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমি আমার বাড়ির ছাদ থেকে এক বিশাল আগুনের গোলা দেখেছি। মুহূর্তেই ভয়ংকর শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে যাই। আমার বাড়ি গুরুদুয়ারার কাছে।’

আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু হঠাৎ করেই ঘটল। আমার মনে হলো, শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে।’

বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে তাদের কাছে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরুর এক সপ্তাহ আগে প্রচারিত একটি ডকুমেন্টারিতে তাঁর বক্তব্য ‘ভুলভাবে উপস্থাপন’ করা হয়েছে।

বিবিসি স্বীকার করেছে, সংশ্লিষ্ট ভিডিওটি ট্রাম্পের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা তৈরি করেছিল এবং এটি প্রচারে বিবিসিকে আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল।

গত বছর প্রচারিত ওই ডকুমেন্টারিতে ট্রাম্পের দুটি আলাদা বক্তব্য একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, যাতে মনে হয়, তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে হামলাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।

বিবিসির চেয়ারম্যান সমীর শাহ বিবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের পাঠানো চিঠির জবাবে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প একজন মামলাবাজ মানুষ। আমরা এখনো নিশ্চিত নই, তিনি সত্যিই মামলা করবেন কি না, তবে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।’

এর আগে এই বিতর্কের জেরে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন।

টিম ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ আরও এক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

এ ঘটনার পর ব্রিটিশ রাজনীতিকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, ডেভি ও টারনেসের পদত্যাগ বিবিসিতে পরিবর্তনের পথ খুলে দেবে। ট্রাম্প পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে মহাপরিচালক ও বার্তা বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের ঘটনা নজিরবিহীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত