Ajker Patrika

এবার সংগীত অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি-বিরোধী স্লোগান সম্প্রচার করে বিপাকে বিবিসি

অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান প্রচারে তুমুল সমালোচনার মুখে বিবিসি। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান প্রচারে তুমুল সমালোচনার মুখে বিবিসি। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সংগীত ও পারফর্মিং আর্টস উৎসবগুলোর অন্যমত গ্লাস্টনবারি ফেস্টিভ্যাল। প্রতিবছরের মতো এবার ইংল্যান্ডের পিল্টনে বসেছিল আসর। তবে, ২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পাঁচ দিনব্যাপী এ আয়োজনের এবারের আসর জন্ম দিয়েছে তুমুল বিতর্কের। ফেস্টিভ্যালে ব্রিটিশ র‍্যাপার ববি ভাইলানের পারফরম্যান্স সরাসরি সম্প্রচার করে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ববি ভাইলান তাঁর পারফরম্যান্সে একাধিকবার ‘ডেথ, ডেথ, ডেথ টু দ্য আইডিএফ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। যার বাংলা অর্থ অনেকটা এমন দাঁড়ায়—আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) নিপাত যাক। এরপর ববি চিৎকার করে ওঠেন ‘ফ্রি ফ্রি’। দর্শকেরা জবাবে সমস্বরে বলেন—‘প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন’। বারবার এ ধরনের স্লোগান দেওয়ার পরও বিবিসি কেন সেটি সম্প্রচার বন্ধ করেনি তা নিয়েই চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

সমালোচকেরা বলছেন, বিতর্কিত এই বক্তব্য প্রচারের সময় বিবিসি কোনো ধরনের সেন্সর প্রয়োগ করেনি। তাদের ভাষ্য—এ ঘটনা বিবিসির সম্প্রচার নীতিমালার স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও বলছেন, ববি ভাইলানের ওই স্লোগান ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য। কোনো ধরনের এডিট ছাড়া কীভাবে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় সম্প্রচার করা হলো তার উত্তর বিবিসিকে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এরই মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ব্রিটিশ ইহুদি আইনজীবীদের সংগঠন ইউকে লয়ার ফর ইসরায়েল। তাদের ভাষ্য—বিবিসি এমন একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে, যা ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী ‘জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার মতো শব্দ ব্যবহার’ এর মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া, ‘ক্যাম্পেইন আগেইনস্ট অ্যান্টিসিমেটিজম’ নামের একটি সংগঠনও বিষয়টি আইনগতভাবে খতিয়ে দেখছে।

ব্রিটিশ রাজনীতিক ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ববি ভাইলানের অতীত রেকর্ড থেকে ধারণা মেলে তিনি কী ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। এরপরও বিবিসি অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারে কঠোর সম্পাদনার প্রয়োজন মনে করেনি। এটি বিবিসির গাফিলতি ছাড়া আর কিছু নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সম্প্রচার নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সংস্থাটি জানিয়েছে, একটি অভ্যন্তরীণ অভিযোগ গ্রহণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সাধারণত অভিযোগ বিবেচনায় নেওয়া হয়।

ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান প্রচারে তুমুল সমালোচনার মুখে বিবিসি। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান প্রচারে তুমুল সমালোচনার মুখে বিবিসি। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে, বিবিসির নিজস্ব সম্পাদনা নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে—বিদ্বেষমূলক ভাষা, বিশেষ করে যা জাতিগত বা ধর্মীয় বিদ্বেষ উসকে দিতে পারে, তা শুধু নির্দিষ্ট প্রাসঙ্গিকতা থাকলেই সম্প্রচারে রাখা যায়। অন্যথায় এমন কনটেন্ট প্রচার আইনগত অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। ঘটনার পর এক বিবৃতিতে বিবিসি জানায়, ‘লাইভ সম্প্রচারের সময় স্ক্রিনে একটি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল যে পরিবেশনায় “শক্তিশালী ও বৈষম্যমূলক ভাষা” থাকতে পারে। আমরা পারফরম্যান্সটি অন ডিমান্ডে প্রকাশ করার কোনো পরিকল্পনা করছি না।’ তবে এই বিবৃতি সমালোচকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

উল্লেখ্য, অন ডিমান্ড হলো বিবিসির লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের একটি ফিচার। যার মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হওয়া কোনো অনুষ্ঠান পরবর্তী ৩০ দিন পর্যন্ত পুনরায় দেখা যায়।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় কোনো ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি প্রমাণিত হয় যে এই বক্তব্য ‘জাতিগত ঘৃণা উসকানোর উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে অথবা তা দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল’ তাহলে সেটি যুক্তরাজ্যের বিদ্যমান বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বিরোধী আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান প্রচারে তুমুল সমালোচনার মুখে বিবিসি। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান প্রচারে তুমুল সমালোচনার মুখে বিবিসি। ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনায় ববি ভাইলানকেও আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে। চাপে পড়েছেন গ্লাস্টনবারি ফেস্টিভ্যালের আয়োজকেরাও।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বিবিসি অত্যন্ত পক্ষপাতমূলক আচরণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া গাজা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র সরিয়ে নেওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি। এর মধ্যে গ্লাস্টনবারি ফেস্টিভ্যাল সম্প্রচার নিয়ে তোপের মুখে পড়ল বিবিসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত