Ajker Patrika

ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে প্রধান বাধা রাশিয়ার সংযোগ: ইইউ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস। ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস। ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাদের বহুল প্রত্যাশিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) চূড়ান্ত করার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও ব্রাসেলস নতুন কৌশলগত এজেন্ডা প্রকাশ করেছে—যেখানে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা খাতে নয়াদিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারের পরিকল্পনা রয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘আমাদের নতুন ইইউ-ভারত কৌশল যৌথ স্বার্থ ও অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’ নথিতে সাইবার ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সাপ্লাই চেইন স্থিতিশীলতা, ডিজিটাল উদ্ভাবন, ব্যবসায় ফোরাম, শিক্ষার্থী ও শ্রমিক বিনিময়সহ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ত্রিপক্ষীয় অংশীদারত্বের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

মূল লক্ষ্য হলো—এই বছরের মধ্যেই একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। ভন ডার লিয়েন এই চুক্তিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধরনের উদ্যোগ’ বলে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে ইইউ-ই ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ইইউ-এর বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ মনে করেন, এই চুক্তি শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করে বিপুল সম্ভাবনা উন্মুক্ত করবে।

তবে ইউরোপীয় পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা এবং রুশ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বড় বাধা। সম্প্রতি ন্যাটো সীমান্তের কাছে অনুষ্ঠিত ‘জাপাদ ২০২৫’ মহড়ায় ভারতীয় সেনারাও যোগ দেয়। ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সুযোগে ভারত রাশিয়া থেকে ব্যাপক হারে ডিসকাউন্টে তেলও কিনছে।

ক্যালাস বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে এসব কর্মকাণ্ড বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে প্রশ্ন হলো, আমরা কি এই শূন্যস্থান অন্য কারও হাতে ছেড়ে দেব, নাকি নিজেরাই পূরণ করব।’ তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হওয়ার প্রত্যাশা করা অবাস্তব। তবে আলোচনায় এসব মতপার্থক্যের সমাধান অপরিহার্য।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন কাঠামোকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি যৌথ অঙ্গীকার, অভিন্ন লক্ষ্য ও দায়িত্বের প্রতিফলন।’ এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টকে জন্মদিনের শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। মোদির দপ্তর জানিয়েছে, উভয় পক্ষ পারস্পরিক সমৃদ্ধি ও নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা জোরদারে একসঙ্গে কাজ করবে। তিনি আগামী বছর ভারতে ইইউ-ভারত সম্মেলন আয়োজনের আমন্ত্রণও জানান।

কৌশলগত এজেন্ডায় জলবায়ু পরিবর্তন, সবুজ জ্বালানি, ডিকার্বনাইজেশন, ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর এবং ইইউ-এর গ্লোবাল গেটওয়ে অবকাঠামো উদ্যোগে সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি তথ্য নিরাপত্তা চুক্তি, গোপন নথি বিনিময় ও স্টার্টআপ অংশীদারত্বের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

সবশেষে, এজেন্ডাটি কার্যকর করতে ইইউ-এর ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন, যা ২০২৬ সালের শুরুর সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত