Ajker Patrika

যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা শুরুর অনুমতি 

আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ৪৩
যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা শুরুর অনুমতি 

ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করার অনুমতি দিয়েছেন জোটের সদস্য দেশগুলোর নেতা। জোটের সদস্য দেশ হাঙ্গেরির আপত্তির পরও রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই ইইউভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচন চলবে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ইইউ নেতারা এই অনুমতি দেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

আলোচনা শুরু হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে ইউক্রেনের আরও কয়েক বছর লাগবে। কিন্তু গতকালের সিদ্ধান্তের ফলে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান হলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা বিশ্বের আরও কাছাকাছি এল, যা ইউক্রেনকে মস্কোর নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হতে কৌশলগতভাবে সহায়তা করবে।

এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এল, যখন ইউক্রেনের বহুল আলোচিত পাল্টা আক্রমণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আক্ষরিক অর্থেই কোনো অগ্রগতি লাভে ব্যর্থ হয়েছে এবং দেশটির সবচেয়ে বড় সহায়তাদাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তহবিলসংকটে ভুগছে।

এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিনে বৈঠকে নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি প্রস্তাব আকারে উত্থাপিত হলে মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। পরে তিনি বৈঠক ছেড়ে চলে গেলে জোটের বাকি ২৬ সদস্য দেশ প্রস্তাবটিতে সম্মতি দেয়। 

অরবানকে আলোচনার টেবিল ছেড়ে চলে যেতে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর শুলজ বলেন, সিদ্ধান্তটি ইউক্রেনের প্রতি ইইউয়ের সমর্থনের একটি শক্তিশালী লক্ষণ। বৈঠকে ইইউ নেতৃত্ব আরও একটি প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র মলদোভাকেও জোটের সঙ্গে যুক্ত করতে আলোচনা ও অন্য দেশ জর্জিয়াকে সদস্যপদ প্রার্থীর মর্যাদা দিতে সম্মত হন। নেতারা বসনিয়ায় রাজনৈতিক সংস্কারের পর দেশটির সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা শুরু করার কথাও জানান। 

এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এটি ইউক্রেনের জন্য একটি বড় জয়। সমগ্র ইউরোপের জয়। এই জয় আমাদের উৎসাহিত করবে, অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের শক্তিশালী করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই আনন্দের দিনে আমি প্রতিটি ইউক্রেনীয়কে অভিনন্দন জানাই। যাঁরা আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে ক্লান্ত হয়েও লড়াই বন্ধ করেননি, তাঁদের জন্য আজ এই ইতিহাস রচিত হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারের শাটডাউন অবসানের বিল সিনেটে পাস, নিম্নকক্ষে অনুমোদনের অপেক্ষা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেশটির সরকারের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাটডাউন বা অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে গতকাল সোমবার এক সমঝোতা চুক্তি অনুমোদন করেছে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই অচলাবস্থায় লাখো মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী বেতন পাননি, আর বিমান চলাচল ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

৬০–৪০ ভোটে পাস হওয়া এই প্রস্তাবে প্রায় সব রিপাবলিকান সিনেটর ও আট ডেমোক্র্যাট সিনেটর সমর্থন দেন। যদিও ডেমোক্র্যাটরা সরকারে অর্থায়নের সঙ্গে বছরের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্য ভর্তুকি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন, সেটি গৃহীত হয়নি। সমঝোতা অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে এই ভর্তুকি নিয়ে ভোট হবে, তবে তা বহাল থাকবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নতুন চুক্তির মাধ্যমে ১ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ ফেডারেল সংস্থাগুলোর অর্থায়ন পুনরায় চালু হবে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডারেল কর্মীসংখ্যা কমানোর পরিকল্পনাও অন্তত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। বিলটি এখন রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে যাবে। স্পিকার মাইক জনসন জানিয়েছেন, তিনি বুধবারের মধ্যেই এটি পাস করিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠাতে চান। ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘খুব ভালো’ বলে প্রশংসা করেছেন।

এই সমঝোতায় সরকারের অর্থায়ন ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ফলে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার বছরে প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ যোগ করে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পথে এগিয়ে যাবে।

চুক্তিটি এমন এক সময় হলো, যখন ডেমোক্র্যাটরা নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়া এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে জয় পেয়েছে। তবে এই সমঝোতায় ডেমোক্র্যাটদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এতে স্বাস্থ্য ভর্তুকি চালু রাখার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা ডিক ডারবিন বলেন, ‘আমরা আরও কিছু করতে চেয়েছিলাম। সরকার বন্ধ হওয়াকে আমরা ভালো নীতির পথে নেওয়ার সুযোগ ভেবেছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি।’

রয়টার্স–ইপসসের অক্টোবরের শেষ দিকের এক জরিপে দেখা যায়, ৫০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক শাটডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করেন, আর ৪৩ শতাংশ দায় দেন ডেমোক্র্যাটদের।

এর আগে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফাভাবে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় বাতিল করেছেন এবং লক্ষাধিক ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই করেছেন, যা কংগ্রেসের আর্থিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। এতে পূর্বে কংগ্রেস অনুমোদিত ব্যয় আইনও ভঙ্গ হয়েছে। তাই অনেক ডেমোক্র্যাট এখন প্রশ্ন তুলছেন, ভবিষ্যতে এমন কোনো ব্যয় চুক্তিতে তারা কেন ভোট দেবেন।

চুক্তিতে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ ঠেকানোর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে এতে স্ন্যাপ (SNAP) খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অর্থায়ন আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে সরকার আবার বন্ধ হলেও এই সহায়তা ব্যাহত না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিনে একটি কেন্দ্রের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিনে একটি কেন্দ্রের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

বিহারে বিধানসভার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ আজ মঙ্গলবার সকালে শুরু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ১২২টি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। এ দফায় মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিরোধী দলগুলোর জোট মহাগাঠবন্ধন বা মহাজোটে ভাঙনের খবর ছড়ালেও বিকাশশীল ইনসান পার্টির প্রধান ও উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মুকেশ সাহানি সে খবর পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। এই পর্বকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ–এর ছোট অংশীদারদের জন্য শক্তি পরীক্ষার লড়াই হিসেবে দেখা হচ্ছে। জিতন রাম মাঞ্জির নেতৃত্বাধীন হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা ও রাজ্যসভার সদস্য উপেন্দ্র কুশওয়াহার নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা—দুটি দলই ছয়টি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার নয় মন্ত্রী এই পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন—বিজেন্দ্র প্রসাদ যাদব (সুপৌল), সুমিত কুমার সিং (চাকাই), মোহাম্মদ জামা খান (চেইনপুর), লেশি সিং (ধামদহা), কৃষ্ণ নন্দন পাসওয়ান (হরসিধি), রেণু দেবী (বেতিয়া), নীরজ কুমার বাবলু (ছাটাপুর), নিতীশ মিশ্র (ঝনঝারপুর), প্রেম কুমার (গয়া), শীলা মণ্ডল (ফুলপরাস), বিজয় মণ্ডল (সিকতি) এবং জয়ন্ত রাজ কুশওয়াহা (আমরপুর)।

আজ যেসব জেলায় ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম চম্পারণ, পূর্ব চম্পারণ, সীতামারহি, মধুবনী, সুপৌল, আরারিয়া ও কিষাণগঞ্জ। এসব জেলার সীমানা নেপালের সঙ্গে যুক্ত। এই ভোটপর্বে সীমাঞ্চল অঞ্চলের বহু জেলা অন্তর্ভুক্ত। এখানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি বেশি, ফলে এ পর্বটি সরকার ও বিরোধী—দুই জোটের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সবচেয়ে নজরকাড়া আসনের মধ্যে একটি হলো ভাগলপুর জেলার কাহালগাঁও। এখানে চারদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। মহাগঠবন্ধনের শরিক আরজেডি ও কংগ্রেসের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ দেখা যাবে। লড়াইয়ে রয়েছে শাসক দল জনতা দল ইউনাইটেডও। অন্যদিকে, বিজেপির বর্তমান বিধায়ক পবন কুমার যাদব দল থেকে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ কুমার, যিনি সংরক্ষিত কুটুম্বা আসন দ্বিতীয়বারের মতো ধরে রাখতে চান। এ ছাড়া প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিধানসভার স্পিকার উদয় নারায়ণ চৌধুরী (আরজেডি), কংগ্রেস বিধায়ক দলনেতা শাকিল আহমেদ খান এবং সিপিআই-এমএল বিধায়ক দলনেতা মেহবুব আলম।

দ্বিতীয় দফার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রায় ৪ লাখ নিরাপত্তা সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে ৬৫ শতাংশের বেশি ভোটার অংশ নিয়েছিলেন, যা রেকর্ড পরিমাণ ভোটার উপস্থিতি। ভোট গণনা হবে আগামী ১৪ নভেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গণমাধ্যমেই কেবল গাজার ‘গণহত্যা বন্ধ হয়েছে’, বাস্তবে এখনো চলছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩০
গাজায় পানি সংগ্রহ করতে যাওয়া এক শিশু। যার কাঁধে এখনই জীবনের বোঝা উঠে গেছে। ছবি: এএফপি
গাজায় পানি সংগ্রহ করতে যাওয়া এক শিশু। যার কাঁধে এখনই জীবনের বোঝা উঠে গেছে। ছবি: এএফপি

গাজায় যুদ্ধবিরতির এক মাস পেরিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনিদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকার বাসিন্দা মানার জেন্দিয়া এখনো বাস্তুচ্যুত। পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন দেইর আল-বালাহ এলাকায়।

জেন্দিয়া বলেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে ১১ অক্টোবর, কিন্তু তাঁর এলাকার বেশির ভাগ অংশ এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তিনি বলেন, ‘চুক্তির দুই সপ্তাহ পরই আমাদের আশ্রয় নেওয়া জায়গায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণ হয়। আমার বোন তখন সেখানেই মারা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওর স্বামী যুদ্ধের শুরুতেই মারা গিয়েছিল। সন্তানদের একাই লালনপালন করছিল। গাজা শহরে যখন হামলা বেড়ে গেল, তখন সন্তানদের নিয়ে মাঝ গাজায় একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেই ও মারা গেল। এখন ওর সন্তানদের মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই।’

জেন্দিয়ার মতো অনেক ফিলিস্তিনি মনে করে, যুদ্ধবিরতির পরও গণহত্যা থামেনি। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা শুধু গণমাধ্যমে থেমেছে। তারা (গণমাধ্যম) কথা বলা বন্ধ করেছে, কিন্তু আমাদের জন্য এটা এখনো চলছে।’

গাজায় এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা চলছে। প্রায় প্রতিদিন গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর ধ্বংস হচ্ছে। গোলাগুলি ও গুলিবর্ষণে সাধারণ মানুষ নিহত হচ্ছে। আকাশে ড্রোন ঘুরছে, বাজছে আতঙ্ক ছড়ানো শব্দ। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধের সংকটও আগের মতোই রয়েছে। দিনে গড়ে মাত্র ১৫০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হয়, যেখানে চুক্তিতে ছিল ৬০০টি। তার বেশির ভাগেই অপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ, জরুরি জিনিসপত্র এখনো মজুত ঘাটতিতে।

যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ২৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে বহু শিশু রয়েছে। এ ছাড়া রাফাহ সীমান্ত এখনো বন্ধ। ফলে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মিসরে নেওয়া যাচ্ছে না।

জেন্দিয়া জানান, তিনি তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন প্রথম বছরের ‘আটা হত্যাকাণ্ডে’। সেদিন ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালিয়েছিল। এখন তিনি তিন সন্তান ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নিয়ে গাজা শহরের এক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেইর আল-বালাহের পূর্ব দিকে ছিলাম। যুদ্ধবিরতি শুরু হলে ভাবলাম, গাজা শহর বা এখানে—যেখানেই থাকি, তাঁবুতেই থাকতে হবে। তাই থাকা ঠিক করেছিলাম। কিন্তু প্রতিদিন সকালে বোমা পড়ত। নিরাপত্তা পাইনি। তাই শহরের কেন্দ্রে চলে এসেছি।’

তবু শান্তি ফেরেনি বলে জানান এই ফিলিস্তিনি নারী। তিনি আরও জানেন, ‘আমি খাবার মজুত করে রাখি। ভয় হয়, আবার অবরোধ কড়াকড়ি হবে, ক্ষুধা ফিরে আসবে। প্রতিদিন সকালে পূর্ব দিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসে। প্রতিদিন নতুন হামলা, নতুন লাশ।

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় এখন নতুন আতঙ্ক—ইসরায়েলি ড্রোন। ৩০ বছর বয়সী আনাস মুঈন বলেন, ‘তিন দিন আগে ড্রোনটা আমার বাড়ির ওপর ঘুরছিল। ওরা যে রেকর্ডিং বাজায়, তাতে ইচ্ছে করেই বিকৃতি আনা হয়। শব্দগুলো স্পষ্ট না, বিকট। মনে হয় ভয় ধরানোর জন্যই এমন করছে।’

আনাস মুঈন বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির সময় এসব ড্রোন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সেনারা কাছেই আছে, নজর রাখছে। ওরা বলছে, বন্দীদের দেহ হস্তান্তর করো, ‘যুদ্ধবিরতি মানো। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ, এসব আমাদের দায়িত্ব নয়।’

বাসিন্দারা জানান, এখন দেখা ড্রোনগুলো আগের ছোট কোয়াডকপ্টার নয়। এগুলোর আকার বড়, দেখতে ইসরায়েলের আরএ-০১ মডেলের মতো, কিছুটা পরিবর্তিত নকশায়। মুঈন বলেন, ‘এগুলো অনেক উঁচুতে ওড়ে, আকারে ত্রিভুজাকার। আগে এমন ড্রোন আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহার হতে দেখেছি। এবার এটা ভয় ছড়ানো বার্তা দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।’

ইসরায়েলি ড্রোন এখনো লিফলেট ফেলছে গাজার বিভিন্ন স্থানে। গত রোববারের লিফলেটে হামাসের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়। মুঈন বলেন, ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের পাশাপাশি স্থল হামলাও বেড়েছে।’

১৯ অক্টোবর ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে রাফাহতে বিমান হামলা চালায়। ওই দিন দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর তারা পাল্টা হামলায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, আহত হয় আরও ১৫০ জন। মুঈন বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনারা এখনো গাজার অনেক ভেতরে অবস্থান করছে। সামরিক যান আমার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যেই, অথচ আমি শহরের কেন্দ্রেই থাকি।’

মুঈন যোগ করেন, ‘এগুলো কেবল মাঝেমধ্যে হামলা নয়, প্রতিদিনের রুটিন। বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ আর এত গুলিবর্ষণ হয় যে একে প্রায় উন্মত্ত বলা যায়। কখনো দেখা যায়, এক সৈন্য টানা ১৫ মিনিট গুলি চালিয়ে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তির’ খুব ‘কাছাকাছি’ আমরা, ভারতকে আশা দিলেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতকে আশা দিয়েছেন। তিনি দেশটির সঙ্গে একটি ন্যায্য চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি জানিয়েছেন, শিগগির এই চুক্তি হতে পারে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে একটি নতুন চুক্তি হতে চলেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও বিস্তৃত হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি রপ্তানি বাড়বে এবং গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ভারতে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একটি ন্যায্য চুক্তির দিকে এগোচ্ছি, এটি একটি ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করছি, যা আগেরগুলোর চেয়ে অনেক ভিন্ন।’ ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’

এর আগে গত আগস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘শাস্তি’ হিসেবে ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর ফলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশে দাঁড়ায়। যা চীনের চেয়ে ২০ শতাংশ এবং পাকিস্তানের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি।

সে সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, ভারত সরকার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রুশ ফেডারেশন থেকে তেল আমদানি করছে... আমার বিচার অনুযায়ী, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ‘‘অ্যাড ভ্যালোরেম ডিউটি’’ আরোপ করা প্রয়োজন।’ প্রসঙ্গত, অ্যাড ভ্যালোরেম ডিউটি বা শুল্ক বলতে এমন এক ধরনের আমদানি শুল্ক বা কর বোঝায়, যা আমদানি করা পণ্যের মোট মূল্যের ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। এটি সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত