Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে যেসব শর্ত দিলেন পুতিন

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১৪: ১১
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তি ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের শর্ত হিসেবে একটি দাবি-দাওয়ার তালিকা দিয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাতে এই তথ্য জানা গেছে। মস্কো এই তালিকায় কী কী অন্তর্ভুক্ত করেছে বা শর্তগুলো মেনে নেওয়ার আগেই তারা কিয়েভের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি কি না—তা স্পষ্ট নয়। ওই দুই ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত তিন সপ্তাহে রুশ ও মার্কিন কর্মকর্তারা সরাসরি ও ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব শর্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সূত্র দুটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে, ক্রেমলিনের শর্তগুলো বেশ বিস্তৃত এবং পূর্বে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছে উপস্থাপিত দাবিগুলোর মতোই।

এর আগে, রাশিয়া দাবি করেছিল—ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে না, দেশটিতে কোনো বিদেশি সেনা মোতায়েন করা যাবে না এবং ক্রিমিয়া ও আরও চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে অবশ্যই যুদ্ধের ‘মূল কারণসমূহ’ সমাধান করতে হবে। এর মধ্যে একটি মূল কারণ হলো—ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পুতিনের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছেন যে, তিনি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবেন কি না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি এটিকে শান্তি আলোচনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মেনে নেবেন।

পুতিন এই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত এবং এর বিস্তারিত শর্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা ও বিশ্লেষকের আশঙ্কা, সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা পুতিন এই যুদ্ধবিরতিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এবং আলোচনাকে ব্যাহত করতে পারেন।

কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতিকে একটি বৃহত্তর শান্তি চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

গত দুই দশকে রাশিয়া এ ধরনের অনেক দাবি উত্থাপন করেছে এবং এর কিছু দাবি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনাতেও স্থান পেয়েছে। সর্বশেষ, ২০২১ সালের শেষ ও ২০২২ সালের শুরুতে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মস্কো এসব শর্ত নিয়ে আলোচনা করেছিল। সে সময় কয়েক হাজার রুশ সেনা ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থান করছিল, আক্রমণের নির্দেশের অপেক্ষায়।

রাশিয়া তখন যে দাবি করেছিল, তার মধ্যে ছিল পূর্ব ইউরোপ থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক কার্যক্রম সীমিত করা। বাইডেন প্রশাসন কিছু শর্ত প্রত্যাখ্যান করলেও, যুদ্ধ ঠেকানোর প্রচেষ্টায় কয়েকটি বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে আলোচনা করা একটি খসড়া চুক্তি শান্তি আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেই চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়নি। ওই আলোচনায় রাশিয়া দাবি করেছিল, ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদের আশা ত্যাগ করতে হবে এবং স্থায়ীভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত রাষ্ট্র হতে হবে। এ ছাড়া, ইউক্রেনকে সহায়তার ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোর ওপর রাশিয়া ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।

ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোর সঙ্গে চলমান আলোচনা কীভাবে পরিচালনা করছে, সে সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কিছু জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুটি পৃথক আলোচনায় যুক্ত—একটি মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক পুনর্গঠনের বিষয়ে, অন্যটি ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির বিষয়ে। তবে প্রশাসনের অভ্যন্তরেই এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত মাসে সিএনএনকে তিনি বলেন, ইস্তাম্বুল আলোচনাগুলো ছিল ‘যুক্তিসংগত ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা’ এবং তা ‘শান্তি চুক্তির পথপ্রদর্শক হতে পারে।’

কিন্তু ট্রাম্পের শীর্ষ ইউক্রেন ও রাশিয়া বিষয়ক দূত জেনারেল (অব.) কিথ কেলোগ সম্প্রতি কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তিনি ইস্তাম্বুল চুক্তিকে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে দেখেন না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরি করতে হবে।’

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রাশিয়ার এসব দাবি শুধু ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তি গঠনের উদ্দেশ্যেই নয়, বরং পশ্চিমা সমর্থকদের সঙ্গেও সমঝোতার ভিত্তি তৈরি করতেই করা হচ্ছে। গত দুই দশক ধরে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একই ধরনের দাবি জানিয়ে আসছে—যা পশ্চিমাদের ইউরোপে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি তৈরির সক্ষমতাকে সীমিত করবে এবং সম্ভবত পুতিনের প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ করে দেবে।

মার্কিন থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক অ্যাঞ্জেলা স্টেন্ট বলেন, ‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।’ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থায় রাশিয়া ও ইউরেশিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করা স্টেন্ট বলেন, ‘তাদের দাবিগুলো মোটেও পরিবর্তিত হয়নি। আমি মনে করি, তারা প্রকৃতপক্ষে শান্তি বা অর্থবহ যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী, রাশিয়ার আগ্রাসন আসন্ন বলে মনে করা হয়েছিল। তা প্রতিহত করতে বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ক্রেমলিনের তিনটি দাবির বিষয়ে আলোচনায় বসেছিলেন।

এই দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—ন্যাটোর নতুন সদস্য দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক মহড়া নিষিদ্ধ করা, ইউরোপ বা রাশিয়ার সীমানার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ককেশাস ও মধ্য এশিয়া পর্যন্ত মার্কিন ও ন্যাটো সামরিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক ও পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা কোরি শাকে বলেন, ‘এগুলো সেই পুরোনো রুশ দাবি, যা ১৯৪৫ সাল থেকেই চলে আসছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যক্রম দেখে ইউরোপীয়রা শুধু ভয় পাচ্ছে যে আমরা তাদের পরিত্যাগ করছি, বরং তারা আশঙ্কা করছে যে আমরা শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগ দিচ্ছি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আটকে গেল ৩ চীনা নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের ‘শেনঝু-২০’ মহাকাশযানের তিন নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের ‘শেনঝু-২০’ মহাকাশযানের তিন নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি। ছবি: সংগৃহীত

তিন চীনা নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। কারণ তাঁদের ফিরে আসার মহাকাশযান ‘শেনঝু-২০’ সম্ভবত মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন (সিএনএসএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি ছয় মাসের মিশন শেষে বুধবারই পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফেরার ঠিক আগমুহূর্তে ‘শেনঝু-২০’ এর সম্ভাব্য আঘাতজনিত ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়ায় মিশন স্থগিত রাখা হয়েছে।

চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে মহাকাশযানটির আঘাত বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলছে। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে বা কখন নভোচারীরা ফিরবেন, সেই বিষয়ে কোনো সময়সূচি প্রকাশ করা হয়নি। এই নভোচারীরা গত এপ্রিলে চীনের অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।

এদিকে কয়েক দিন আগেই চীন সফলভাবে ‘শেনঝু-২১’ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে আরও তিন নতুন নভোচারীকে ‘তিয়ানগং’ বা ‘স্বর্গীয় প্রাসাদ’ নামে তাদের মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছে। নতুন এই দলটিতে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী উ ফেই, যিনি চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ নভোচারী হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। নতুন দলটি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পুরোনো দলটির পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল।

মহাকাশ স্টেশনে ‘শেনঝু-২১’ পৌঁছানোর পর নতুন ও পুরোনো দুটি মহাকাশচারী দলের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয় চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। সেখানে পৃথিবীতে ফেরার অপেক্ষায় থাকা চেন দং বলেন, ‘আমরা এখন পৃথিবীতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ কিন্তু তাঁদের মহাকাশযান পরিদর্শনের পরই আটকে যায় পৃথিবীতে ফেরার প্রক্রিয়া।

চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, নভোচারীদের নিরাপত্তা ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেনঝু কর্মসূচি প্রতি ছয় মাস পরপর পরিচালিত হয় এবং চীনের মহাকাশ অগ্রযাত্রার একটি বড় গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন মহাকাশ গবেষণায় দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে।

চীনের এই ধারাবাহিক উন্নতি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যদিও মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছর মার্কিন নভোচারী সুনি উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরও বোয়িং স্টারলাইনারের ত্রুটির কারণে ৯ মাস ধরে মহাকাশে আটকে ছিলেন। তাঁরা অবশেষে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফেরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের মন্দিরে সোনা চুরি নিয়ে তুলকালাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩৮
দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দির। ছবি: বিবিসি
দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দির। ছবি: বিবিসি

দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দিরে সোনা চুরির অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কেরালা হাইকোর্ট জানিয়েছে, মন্দিরের কয়েকটি দেবমূর্তি থেকে সোনার আবরণ খুলে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবছর লক্ষাধিক ভক্তের দর্শনস্থল এই মন্দিরে এমন কেলেঙ্কারি ভক্তদের হতবাক করেছে।

বুধবার (৫ অক্টোবর) বিবিসি জানিয়েছে, সোনা চুরির ঘটনায় কেরালা হাইকোর্ট ইতিমধ্যে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে এবং পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মন্দিরের সাবেক সহকারী পুরোহিত উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিও রয়েছেন। আদালতের দুই বিচারপতি রাজা বিজয়ারাঘবন ভি এবং কে ভি জয়কুমার গত সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটি তদারক করছেন।

কী চুরি হয়েছে?

এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুটি দ্বাররক্ষক মূর্তি। এই দুটি মূর্তি প্রধান দেবতা আয়াপ্পার গর্ভগৃহের বাইরে স্থাপিত। আদালতের নিযুক্ত সবরিমালা স্পেশাল কমিশনারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে—ওই মূর্তি দুটির বহু অংশ থেকে সোনার আবরণ অদৃশ্য।

মন্দিরের নথি অনুযায়ী, ১৯৯৮-৯৯ সালে ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যর দান করা ৩০.২৯ কেজি সোনা ব্যবহার করে মূর্তি ও মন্দিরের দরজা, খিলান, স্তম্ভসহ বিভিন্ন অংশ সোনা দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে ত্রিবাঙ্কুর দেবাসম বোর্ড (টিডিবি) তখনকার সহকারী পুরোহিত উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে নতুন করে সোনা দিয়ে মোড়ানোর জন্য দ্বাররক্ষক মূর্তি দুটিকে মন্দিরের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেয়—যা একটি বিরল ঘটনা।

দুই মাস পর মূর্তি ফেরত এলেও ওজন মাপা হয়নি। পরে তদন্তে দেখা যায়, মূর্তিগুলো অনেক হালকা হয়ে গেছে। এসআইটি জানায়, মূর্তি, পাদমূর্তি ও দরজার ফ্রেম মিলিয়ে প্রায় ৪ কেজি ৫৪০ গ্রাম সোনা নিখোঁজ হয়েছে। আদালত এই ঘটনাকে ‘সোনা ডাকাতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

বিচারকেরা তীব্র ভাষায় টিডিবিকে দোষারোপ করেছেন। কারণ তারা মূর্তিগুলো ‘তামার ফলক’ হিসেবে রেকর্ডে দেখিয়েছিল। এমনকি উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে ৪৭৫ গ্রাম সোনা নিজের কাছে রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তিনি পরে ওই সোনা এক আত্মীয়ার বিয়েতে ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইমেইল করেন। এই বিষয়টিকে ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আদালত।

অভিযুক্ত ও প্রতিক্রিয়া

উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে আদালতে হাজির করার পর বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়। বের হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, সত্য একদিন প্রকাশ পাবে।’

এদিকে পুলিশ আরও দুই বোর্ড কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই কেলেঙ্কারি ঘিরে কেরালায় রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিরোধী কংগ্রেস নেতা ভি ডি সতীসন অভিযোগ করে বলেছেন, ‘প্রায় ৫ কেজি সোনা চুরি গেছে, এর সঙ্গে কর্মকর্তারাও জড়িত।’ তিনি মন্দির বিষয়ক মন্ত্রী ভি এন বাসাবানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

মন্ত্রী বাসাবান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, ‘তদন্ত আদালতের নজরদারিতে চলছে, আমরা কিছুই লুকাব না।’

কেরালার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ছয় সপ্তাহের মধ্যেই এই তদন্ত শেষ করে দোষীদের পরিচয় বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রামা দুয়াজি শুধু মামদানির স্ত্রী নন, একজন প্রতিভাবান শিল্পীও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির পাশে তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: দ্য পিপল
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির পাশে তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: দ্য পিপল

সিরীয়-আমেরিকান ইলাস্ট্রেটর ও ডিজাইনার রামা দুয়াজি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন নিউইয়র্কের নতুন মেয়র জোহরান মামদানির স্ত্রী হিসেবে। তবে নিজস্ব পরিচয়ে তিনি একজন প্রতিভাবান শিল্পী। তিনি তাঁর কাজের ভেতর দিয়ে নারী, আরব পরিচয়, প্রতিরোধ ও সহমর্মিতার বিষয়গুলোকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন।

বুধবার (৫ নভেম্বর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, রামার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে। ৯ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি দুবাইয়ে চলে যান। সেখানেই বড় হন এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কাতারের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের রিচমন্ড ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়ে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন।

রামা দুয়াজির শিল্পকর্ম মূলত কালো-সাদা রেখাচিত্রে নারীর প্রতিকৃতি, যেখানে দেখা যায় নারীসত্তা, অভিব্যক্তি ও বৈচিত্র্যের প্রতি গভীর মমতা। তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ ইয়র্কার, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, অ্যাপল, স্পোটিফাই, ভাইস এবং টেট মডার্ন–এর মতো বিশ্বখ্যাত মাধ্যমগুলোতে। পাশাপাশি ভার্জিনিয়া ও বৈরুতে তাঁর একক প্রদর্শনী হয়েছে।

২০২১ সালে এক ডেটিং অ্যাপে রামা ও জোহরান মামদানির পরিচয় হয়। পরে তাঁদের প্রথম দেখা হয় ব্রুকলিনের একটি ইয়েমেনি কফিশপে। এভাবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা লোয়ার ম্যানহাটনের আদালতে বিয়ে করেন। দুবাইয়ে তাঁদের বাগদান ও নিকাহ অনুষ্ঠানটি ছিল রূপকথার মতো। সূর্যাস্তের পটভূমিতে ফুল ও সবুজে সাজানো এক রোমান্টিক আবহ তৈরি করা হয়েছিল।

রামা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবনের চেয়ে শিল্পকর্ম ও সামাজিক বিষয়ে বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের প্রতি তাঁর অবস্থান বহুবার প্রকাশ পেয়েছে। ২০২১ সালে একটি ইলাস্ট্রেশনে তিনজন মানুষকে তিনি একসঙ্গে কনুই মিলিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখিয়েছিলেন, যার ওপরে আরবিতে লেখা ছিল—‘আমরা ছাড়ব না।’ গাজায় ক্ষুধা ও মানবিক সংকট নিয়েও তিনি সচেতনতা তৈরির কাজ করেছেন।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে রামা হবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের বাসভবন গ্রেসি ম্যানসনে বসবাসকারী প্রথম জেনারেশন–জেড সদস্য। তবে জোহরান মামদানির ভাষায়, ‘রামা শুধু আমার স্ত্রী নন, তিনি একজন অসাধারণ শিল্পী, যিনি নিজের কাজ দিয়ে পরিচিত হওয়ার যোগ্য।’

করোনা মহামারির বেশ কিছু সময় পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে কাটিয়েছিলেন রামা। পরে নিউইয়র্কে স্থায়ী হন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নতুন শহরে এসেছিলাম, কাউকে চিনতাম না। তাই ইনস্টাগ্রামে দেখা সৃজনশীল মানুষদের বার্তা পাঠাতে শুরু করি। অবাক করা বিষয় হলো, নিউইয়র্কে মানুষ নতুন সম্পর্ক গড়ায় বেশ খোলা মন। এভাবেই আমি অনেক দারুণ আরব-আমেরিকান শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি।’

রামা দুয়াজি আজ শুধু নিউইয়র্কের মেয়রের স্ত্রী নন, বরং আধুনিক আরব নারীর এক সাহসী ও সৃজনশীল প্রতীক, যিনি শিল্পের মাধ্যমে নিজের শিকড় ও মানবিক দায়বদ্ধতা একসূত্রে বেঁধেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ডে যৌন শিক্ষার ক্লাস থেকে ব্রিটিশ সন্ন্যাসিনী গ্রেপ্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫০
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের ক্লাস নিচ্ছেন মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের ক্লাস নিচ্ছেন মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ কোহ ফাঙ্গানে ‘সেক্স ইয়োগা’ বা তান্ত্রিক যোগচর্চা শেখানোর অভিযোগে এক ব্রিটিশ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মারিয়া শেচেতিনিনা নামে ৪০ বছর বয়সী ওই নারী নিজেকে ‘তান্ত্রিক আধ্যাত্মিকতা ও পবিত্র যৌনতার’ শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ‘মারিয়া স্কাই লাভ’ নামে সক্রিয় ছিলেন এবং প্রতি সপ্তাহে যোগা ও তান্ত্রিক ম্যাসাজ ক্লাস চালাতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ নভেম্বর স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁর পেছনে ক্লাস নিচ্ছিলেন মারিয়া। এমন সময় পর্যটন পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে।

আটকের সময় মারিয়া পুলিশকে বলেন, ‘আমার আইনজীবী বলেছেন, এটা এখানে বৈধ।’ তবে পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট পরীক্ষা করে দেখতে পায়—তিনি একটি রেসিডেন্সিয়াল প্রোপার্টি কোম্পানির কাস্টমার রিলেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজের অনুমতি পেয়েছেন, যোগা বা ম্যাসাজ শেখানোর অনুমতি নেই তাঁর।

ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ক্লাসে ৪০০ বাথ (প্রায় ১৫০০ টাকা) ফি নিতেন মারিয়া। পুলিশ তাঁর কাছ থেকে যোগা নোট, বিজ্ঞাপন ফ্লায়ার, টিকিট, ব্যানার এবং কিউআর কোড-সংবলিত প্রচারপত্র জব্দ করেছে।

পর্যটন পুলিশ বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল উইনিত বুনচিত জানান, মারিয়ার ‘অশালীন ও ঝুঁকিপূর্ণ’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানানোর পরই তদন্ত শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত জরুরি ডিক্রির আওতায় তান্ত্রিক যোগা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা অনুমোদিত নয়। তাই তাঁকে অবৈধভাবে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’

এর আগে চলতি বছরের মার্চে একই দ্বীপে পোল্যান্ডের ইউটিউবার মিখাল গ্রিগোরুককেও ‘সেক্স যোগা’ ক্লাস চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

কোহ ফাঙ্গান দ্বীপটি দীর্ঘদিন ধরে ‘হিপি স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত—যেখানে আধ্যাত্মিক রিট্রিট, নিরামিষ ক্যাফে ও বিখ্যাত ফুল মুন পার্টির কারণে সারা বিশ্বের পর্যটকেরা ভিড় জমান। তবে পুলিশের আশঙ্কা, অনেক বিদেশি পর্যটক সঠিক ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই সেখানে বিভিন্ন ধরনের মেডিটেশন ও বিকল্প থেরাপির কর্মশালা চালাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত