Ajker Patrika

ইউক্রেনে এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফ্রান্স-ব্রিটেনের

লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। ছবি: এএফপি
লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের ‘আকাশে ও সমুদ্রে’ এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন। গতকাল রোববার লন্ডনে সংকট বৈঠকের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এ কথা জানান। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ফ্রান্সের দৈনিক লে ফিগারোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে বৃদ্ধি করা উচিত, কারণ ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকার পরিবর্তিত হচ্ছে।

মাখোঁ আরও বলেন, ‘তিন বছর ধরে রাশিয়া তাদের জিডিপির ১০ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করছে। তাই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ লন্ডনে ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্যারিসে ফেরার পথে মাখো এই সাক্ষাৎকার দেন। সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভের প্রতি তাদের সমর্থন সুসংহত করেন, নিরাপত্তার জন্য আরও ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন এবং ইউক্রেনে যেকোনো যুদ্ধবিরতি রক্ষায় একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নেন।

ইউরোপের ১৮টি মিত্র দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা এমন এক সময়ে হলো, যার কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ বন্ধের একটি পরিকল্পনা তৈরি করবে, যা তারা পরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পেশ করবে। লন্ডনের এই বৈঠক এমন এক সংবেদনশীল মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হলো, যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ট্রাম্পের অনিশ্চিত সমর্থনের মুখে পড়েছে এবং রাশিয়ার তিন বছরব্যাপী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে লড়াই করছে।

জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ প্রকাশ্যে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন ও ন্যাটোর প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। স্টারমার বলেন, ‘ইউরোপ ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এটি আর আলোচনার সময় নয়—এখন কাজের সময়। নেতৃত্ব দেওয়ার, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং একটি ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তির নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় এসেছে।’

স্টারমার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার কোনো নিশ্চয়তা নেই, তাই ‘ভার ইউরোপকেই নিতে হবে’। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি, কোন কোন দেশ যুদ্ধবিরতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। সম্মেলনে জেলেনস্কিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। স্টারমার, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুটে তাঁকে সমর্থন জানান।

স্টারমার জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবিশ্বস্ত মিত্র নয়।’ তিনি বলেন, যেকোনো চুক্তির ‘শক্তিশালী মার্কিন সমর্থন’ থাকতে হবে। এদিকে, ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়ন সম্মেলনের পর সতর্ক করে বলেন, ইউরোপকে জরুরি ভিত্তিতে পুনরায় সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে এবং ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে।’

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দোনাল্দ তুস্ক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের উচিত পুতিনকে দেখানো যে, ‘পশ্চিমা বিশ্ব তাঁর ব্ল্যাকমেল ও আগ্রাসনের কাছে মাথা নত করবে না।’ স্টারমার ও মাখোঁ বলেছেন, যুদ্ধবিরতি রক্ষায় ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনাদের ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য তারা প্রস্তুত।

তবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইতালি সেনা পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এটিকে এমন একটি সমাধান হিসেবে দেখি যা অত্যন্ত জটিল হতে পারে এবং সম্ভবত অন্য কিছু উপায়ের তুলনায় কম কার্যকর হবে।’

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, আরও ইউরোপীয় দেশ প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শুক্রবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া বিরোধের ঘটনা জেলেনস্কির জন্য এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিল, কারণ আগের মার্কিন প্রশাসন তাঁকে ‘উইনস্টন চার্চিলের মতো’ নেতা হিসেবে প্রশংসা করেছিল। তবে বৈঠকে ট্রাম্প ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রাগান্বিত হয়ে জেলেনস্কির বিরুদ্ধে কৃতজ্ঞতার অভাবের অভিযোগ তোলেন এবং তাদের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে নিতে অস্বীকার করার জন্য তাকে দোষারোপ করেন।

এদিকে, রোববার ওয়াশিংটনের শীর্ষ রিপাবলিকানরা নেতারা তাদের ইউক্রেনবিরোধী অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন এবং ইঙ্গিত দেন যে, জেলেনস্কিকে হয় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মেনে নিতে হবে, অথবা পদত্যাগ করতে হতে পারে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ সিএনএনকে বলেন, ‘আমাদের এমন একজন নেতা দরকার, যে আমাদের সঙ্গে, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা করতে পারবে এবং এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবে।’

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান মাইক জনসন বলেন, ‘হয় তাঁকে (জেলেনস্কিকে) বাস্তবতা মেনে নিতে হবে এবং কৃতজ্ঞচিত্তে আলোচনায় ফিরতে হবে, নয়তো অন্য কাউকে নেতৃত্ব নিতে হবে।’

ট্রাম্প নিজেকে পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরছেন, ইউক্রেন ও ইউরোপকে পাশে সরিয়ে রেখে তিনি পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তবে হোয়াইট হাউসে বিতর্কিত ঘটনার পরও জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেননি যে, তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে তিনি প্রস্তুত—যা ট্রাম্পের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।

অপরদিকে, রোববার ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অপর একটি পোস্টে বলেন, খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তিটিই ইউক্রেনের চাওয়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং ‘শেষ পর্যন্ত, জেলেনস্কির অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না।’ তবে মস্কো দাবি করেছে, জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফর ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ এবং ট্রাম্পের পরিবর্তিত অবস্থান ‘রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আটকে গেল ৩ চীনা নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের ‘শেনঝু-২০’ মহাকাশযানের তিন নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের ‘শেনঝু-২০’ মহাকাশযানের তিন নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি। ছবি: সংগৃহীত

তিন চীনা নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। কারণ তাঁদের ফিরে আসার মহাকাশযান ‘শেনঝু-২০’ সম্ভবত মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন (সিএনএসএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি ছয় মাসের মিশন শেষে বুধবারই পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফেরার ঠিক আগমুহূর্তে ‘শেনঝু-২০’ এর সম্ভাব্য আঘাতজনিত ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়ায় মিশন স্থগিত রাখা হয়েছে।

চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে মহাকাশযানটির আঘাত বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলছে। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে বা কখন নভোচারীরা ফিরবেন, সেই বিষয়ে কোনো সময়সূচি প্রকাশ করা হয়নি। এই নভোচারীরা গত এপ্রিলে চীনের অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।

এদিকে কয়েক দিন আগেই চীন সফলভাবে ‘শেনঝু-২১’ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে আরও তিন নতুন নভোচারীকে ‘তিয়ানগং’ বা ‘স্বর্গীয় প্রাসাদ’ নামে তাদের মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছে। নতুন এই দলটিতে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী উ ফেই, যিনি চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ নভোচারী হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। নতুন দলটি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পুরোনো দলটির পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল।

মহাকাশ স্টেশনে ‘শেনঝু-২১’ পৌঁছানোর পর নতুন ও পুরোনো দুটি মহাকাশচারী দলের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয় চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। সেখানে পৃথিবীতে ফেরার অপেক্ষায় থাকা চেন দং বলেন, ‘আমরা এখন পৃথিবীতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ কিন্তু তাঁদের মহাকাশযান পরিদর্শনের পরই আটকে যায় পৃথিবীতে ফেরার প্রক্রিয়া।

চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, নভোচারীদের নিরাপত্তা ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেনঝু কর্মসূচি প্রতি ছয় মাস পরপর পরিচালিত হয় এবং চীনের মহাকাশ অগ্রযাত্রার একটি বড় গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন মহাকাশ গবেষণায় দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে।

চীনের এই ধারাবাহিক উন্নতি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যদিও মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছর মার্কিন নভোচারী সুনি উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরও বোয়িং স্টারলাইনারের ত্রুটির কারণে ৯ মাস ধরে মহাকাশে আটকে ছিলেন। তাঁরা অবশেষে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফেরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের মন্দিরে সোনা চুরি নিয়ে তুলকালাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩৮
দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দির। ছবি: বিবিসি
দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দির। ছবি: বিবিসি

দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দিরে সোনা চুরির অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কেরালা হাইকোর্ট জানিয়েছে, মন্দিরের কয়েকটি দেবমূর্তি থেকে সোনার আবরণ খুলে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবছর লক্ষাধিক ভক্তের দর্শনস্থল এই মন্দিরে এমন কেলেঙ্কারি ভক্তদের হতবাক করেছে।

বুধবার (৫ অক্টোবর) বিবিসি জানিয়েছে, সোনা চুরির ঘটনায় কেরালা হাইকোর্ট ইতিমধ্যে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে এবং পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মন্দিরের সাবেক সহকারী পুরোহিত উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিও রয়েছেন। আদালতের দুই বিচারপতি রাজা বিজয়ারাঘবন ভি এবং কে ভি জয়কুমার গত সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটি তদারক করছেন।

কী চুরি হয়েছে?

এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুটি দ্বাররক্ষক মূর্তি। এই দুটি মূর্তি প্রধান দেবতা আয়াপ্পার গর্ভগৃহের বাইরে স্থাপিত। আদালতের নিযুক্ত সবরিমালা স্পেশাল কমিশনারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে—ওই মূর্তি দুটির বহু অংশ থেকে সোনার আবরণ অদৃশ্য।

মন্দিরের নথি অনুযায়ী, ১৯৯৮-৯৯ সালে ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যর দান করা ৩০.২৯ কেজি সোনা ব্যবহার করে মূর্তি ও মন্দিরের দরজা, খিলান, স্তম্ভসহ বিভিন্ন অংশ সোনা দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে ত্রিবাঙ্কুর দেবাসম বোর্ড (টিডিবি) তখনকার সহকারী পুরোহিত উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে নতুন করে সোনা দিয়ে মোড়ানোর জন্য দ্বাররক্ষক মূর্তি দুটিকে মন্দিরের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেয়—যা একটি বিরল ঘটনা।

দুই মাস পর মূর্তি ফেরত এলেও ওজন মাপা হয়নি। পরে তদন্তে দেখা যায়, মূর্তিগুলো অনেক হালকা হয়ে গেছে। এসআইটি জানায়, মূর্তি, পাদমূর্তি ও দরজার ফ্রেম মিলিয়ে প্রায় ৪ কেজি ৫৪০ গ্রাম সোনা নিখোঁজ হয়েছে। আদালত এই ঘটনাকে ‘সোনা ডাকাতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

বিচারকেরা তীব্র ভাষায় টিডিবিকে দোষারোপ করেছেন। কারণ তারা মূর্তিগুলো ‘তামার ফলক’ হিসেবে রেকর্ডে দেখিয়েছিল। এমনকি উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে ৪৭৫ গ্রাম সোনা নিজের কাছে রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তিনি পরে ওই সোনা এক আত্মীয়ার বিয়েতে ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইমেইল করেন। এই বিষয়টিকে ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আদালত।

অভিযুক্ত ও প্রতিক্রিয়া

উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে আদালতে হাজির করার পর বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়। বের হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, সত্য একদিন প্রকাশ পাবে।’

এদিকে পুলিশ আরও দুই বোর্ড কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই কেলেঙ্কারি ঘিরে কেরালায় রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিরোধী কংগ্রেস নেতা ভি ডি সতীসন অভিযোগ করে বলেছেন, ‘প্রায় ৫ কেজি সোনা চুরি গেছে, এর সঙ্গে কর্মকর্তারাও জড়িত।’ তিনি মন্দির বিষয়ক মন্ত্রী ভি এন বাসাবানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

মন্ত্রী বাসাবান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, ‘তদন্ত আদালতের নজরদারিতে চলছে, আমরা কিছুই লুকাব না।’

কেরালার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ছয় সপ্তাহের মধ্যেই এই তদন্ত শেষ করে দোষীদের পরিচয় বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রামা দুয়াজি শুধু মামদানির স্ত্রী নন, একজন প্রতিভাবান শিল্পীও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির পাশে তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: দ্য পিপল
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির পাশে তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: দ্য পিপল

সিরীয়-আমেরিকান ইলাস্ট্রেটর ও ডিজাইনার রামা দুয়াজি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন নিউইয়র্কের নতুন মেয়র জোহরান মামদানির স্ত্রী হিসেবে। তবে নিজস্ব পরিচয়ে তিনি একজন প্রতিভাবান শিল্পী। তিনি তাঁর কাজের ভেতর দিয়ে নারী, আরব পরিচয়, প্রতিরোধ ও সহমর্মিতার বিষয়গুলোকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন।

বুধবার (৫ নভেম্বর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, রামার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে। ৯ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি দুবাইয়ে চলে যান। সেখানেই বড় হন এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কাতারের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের রিচমন্ড ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়ে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন।

রামা দুয়াজির শিল্পকর্ম মূলত কালো-সাদা রেখাচিত্রে নারীর প্রতিকৃতি, যেখানে দেখা যায় নারীসত্তা, অভিব্যক্তি ও বৈচিত্র্যের প্রতি গভীর মমতা। তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ ইয়র্কার, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, অ্যাপল, স্পোটিফাই, ভাইস এবং টেট মডার্ন–এর মতো বিশ্বখ্যাত মাধ্যমগুলোতে। পাশাপাশি ভার্জিনিয়া ও বৈরুতে তাঁর একক প্রদর্শনী হয়েছে।

২০২১ সালে এক ডেটিং অ্যাপে রামা ও জোহরান মামদানির পরিচয় হয়। পরে তাঁদের প্রথম দেখা হয় ব্রুকলিনের একটি ইয়েমেনি কফিশপে। এভাবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা লোয়ার ম্যানহাটনের আদালতে বিয়ে করেন। দুবাইয়ে তাঁদের বাগদান ও নিকাহ অনুষ্ঠানটি ছিল রূপকথার মতো। সূর্যাস্তের পটভূমিতে ফুল ও সবুজে সাজানো এক রোমান্টিক আবহ তৈরি করা হয়েছিল।

রামা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবনের চেয়ে শিল্পকর্ম ও সামাজিক বিষয়ে বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের প্রতি তাঁর অবস্থান বহুবার প্রকাশ পেয়েছে। ২০২১ সালে একটি ইলাস্ট্রেশনে তিনজন মানুষকে তিনি একসঙ্গে কনুই মিলিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখিয়েছিলেন, যার ওপরে আরবিতে লেখা ছিল—‘আমরা ছাড়ব না।’ গাজায় ক্ষুধা ও মানবিক সংকট নিয়েও তিনি সচেতনতা তৈরির কাজ করেছেন।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে রামা হবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের বাসভবন গ্রেসি ম্যানসনে বসবাসকারী প্রথম জেনারেশন–জেড সদস্য। তবে জোহরান মামদানির ভাষায়, ‘রামা শুধু আমার স্ত্রী নন, তিনি একজন অসাধারণ শিল্পী, যিনি নিজের কাজ দিয়ে পরিচিত হওয়ার যোগ্য।’

করোনা মহামারির বেশ কিছু সময় পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে কাটিয়েছিলেন রামা। পরে নিউইয়র্কে স্থায়ী হন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নতুন শহরে এসেছিলাম, কাউকে চিনতাম না। তাই ইনস্টাগ্রামে দেখা সৃজনশীল মানুষদের বার্তা পাঠাতে শুরু করি। অবাক করা বিষয় হলো, নিউইয়র্কে মানুষ নতুন সম্পর্ক গড়ায় বেশ খোলা মন। এভাবেই আমি অনেক দারুণ আরব-আমেরিকান শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি।’

রামা দুয়াজি আজ শুধু নিউইয়র্কের মেয়রের স্ত্রী নন, বরং আধুনিক আরব নারীর এক সাহসী ও সৃজনশীল প্রতীক, যিনি শিল্পের মাধ্যমে নিজের শিকড় ও মানবিক দায়বদ্ধতা একসূত্রে বেঁধেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ডে যৌন শিক্ষার ক্লাস থেকে ব্রিটিশ সন্ন্যাসিনী গ্রেপ্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫০
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের ক্লাস নিচ্ছেন মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের ক্লাস নিচ্ছেন মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ কোহ ফাঙ্গানে ‘সেক্স ইয়োগা’ বা তান্ত্রিক যোগচর্চা শেখানোর অভিযোগে এক ব্রিটিশ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মারিয়া শেচেতিনিনা নামে ৪০ বছর বয়সী ওই নারী নিজেকে ‘তান্ত্রিক আধ্যাত্মিকতা ও পবিত্র যৌনতার’ শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ‘মারিয়া স্কাই লাভ’ নামে সক্রিয় ছিলেন এবং প্রতি সপ্তাহে যোগা ও তান্ত্রিক ম্যাসাজ ক্লাস চালাতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ নভেম্বর স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁর পেছনে ক্লাস নিচ্ছিলেন মারিয়া। এমন সময় পর্যটন পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে।

আটকের সময় মারিয়া পুলিশকে বলেন, ‘আমার আইনজীবী বলেছেন, এটা এখানে বৈধ।’ তবে পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট পরীক্ষা করে দেখতে পায়—তিনি একটি রেসিডেন্সিয়াল প্রোপার্টি কোম্পানির কাস্টমার রিলেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজের অনুমতি পেয়েছেন, যোগা বা ম্যাসাজ শেখানোর অনুমতি নেই তাঁর।

ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ক্লাসে ৪০০ বাথ (প্রায় ১৫০০ টাকা) ফি নিতেন মারিয়া। পুলিশ তাঁর কাছ থেকে যোগা নোট, বিজ্ঞাপন ফ্লায়ার, টিকিট, ব্যানার এবং কিউআর কোড-সংবলিত প্রচারপত্র জব্দ করেছে।

পর্যটন পুলিশ বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল উইনিত বুনচিত জানান, মারিয়ার ‘অশালীন ও ঝুঁকিপূর্ণ’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানানোর পরই তদন্ত শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত জরুরি ডিক্রির আওতায় তান্ত্রিক যোগা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা অনুমোদিত নয়। তাই তাঁকে অবৈধভাবে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’

এর আগে চলতি বছরের মার্চে একই দ্বীপে পোল্যান্ডের ইউটিউবার মিখাল গ্রিগোরুককেও ‘সেক্স যোগা’ ক্লাস চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

কোহ ফাঙ্গান দ্বীপটি দীর্ঘদিন ধরে ‘হিপি স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত—যেখানে আধ্যাত্মিক রিট্রিট, নিরামিষ ক্যাফে ও বিখ্যাত ফুল মুন পার্টির কারণে সারা বিশ্বের পর্যটকেরা ভিড় জমান। তবে পুলিশের আশঙ্কা, অনেক বিদেশি পর্যটক সঠিক ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই সেখানে বিভিন্ন ধরনের মেডিটেশন ও বিকল্প থেরাপির কর্মশালা চালাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত