Ajker Patrika

মাস্টারপিস নাকি প্রতারণা—১৬৩০ কোটি টাকার চিত্রকর্ম নিয়ে বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তিনটি চিত্রকর্মের মধ্যে এটি অন্যতম। ছবি: বিবিসি
তিনটি চিত্রকর্মের মধ্যে এটি অন্যতম। ছবি: বিবিসি

বিংশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পী কাজিমির মালেভিচের নামে নতুন তিনটি অজানা তৈলচিত্র সম্প্রতি রোমানিয়ার ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব কনটেমপোরারি আর্ট’-এ প্রদর্শিত হচ্ছে।

রোববার (২৪ আগস্ট) এই বিষয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এগুলো যদি সত্যিই মালেভিচের আসল কাজ প্রমাণিত হয়, তবে এর মূল্য দাঁড়াবে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অঙ্কটি ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকারও বেশি।

ইসরায়েলি নাগরিক ইয়ানিভ কোহেন দাবি করেছেন—এই তিন চিত্রকর্ম তিনি তাঁর স্ত্রীর দাদির কাছ থেকে পেয়েছেন। দাদি ইভা লেভান্দো সোভিয়েত আমলে ওডেসার হিসাবরক্ষক বাবার কাছ থেকে এগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি চিত্রকর্ম তাঁর বাবা কিনেছিলেন এবং বাকি দুটি কাজের বিনিময়ে পেয়েছিলেন। ১৯৯০ সালে ইসরায়েলে অভিবাসনের সময় ইভা লেভান্দো ছবিগুলো সঙ্গে নিয়ে যান।

প্রদর্শিত ছবিগুলোর নাম—সুপ্রিমেটিস্ট কম্পোজিশন উইথ গ্রিন অ্যান্ড ব্ল্যাক র‍্যাক্টেঙ্গল (১৯১৮), কাবোফিউচারিস্ট কম্পোজিশন (১৯১২-১৩) এবং সুপ্রিমেটিস্ট কম্পোজিশন উইথ রেড স্কয়ার অ্যান্ড গ্রিন ট্রায়াঙ্গল (১৯১৫-১৬)। প্রদর্শনীর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন কোহেন নিজেই। তিনি পেশায় দাঁতের ডাক্তার।

তবে শীর্ষ শিল্প বিশেষজ্ঞরা এই চিত্রকর্মগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ইউক্রেনীয়-আমেরিকান শিল্প গবেষক কনস্ট্যানটিন আকিনশা বলেন, এই কাজগুলো শিল্পীর জীবদ্দশায় কোথাও প্রদর্শিত বা নথিভুক্ত হয়নি। তাঁর মতে, মালেভিচ ১৯১৭ সালের পর ব্যক্তিগতভাবে কোনো ছবি বিক্রি করেননি। ফলে লেভান্দোর পারিবারিক কাহিনির পক্ষে প্রমাণ নেই।

যদিও কিয়েভ-ভিত্তিক শিল্প ইতিহাসবিদ দিমিত্রো হোরবাচভ ছবিগুলোকে ‘প্রথম শ্রেণির মালেভিচ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি আগে বিতর্কিত কয়েকটি ছবিকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এমনকি সথেবি’স ও ক্রিস্টিজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক থাকার দাবিও উভয় প্রতিষ্ঠান অস্বীকার করেছে।

ফরাসি ও জার্মান ল্যাবরেটরির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় রং ও উপাদান মালেভিচের সময়কালের বলে প্রমাণ মিলেছে বটে, তবে এগুলো শিল্পীর আঁকা—এমন নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। ল্যাবগুলো স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা কোনোভাবেই আসল-এর সার্টিফিকেট দেয় না।

এদিকে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষও ছবিগুলোর সত্যতা নিয়ে দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা একে ‘কিউরেটরিয়াল এক্সপেরিমেন্ট’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে এই প্রদর্শনীকে মালেভিচের কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে ধরা যাবে না।

শিল্পবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, রুশ ও ইউক্রেনীয় আধুনিক শিল্পে ভুয়া কাজের ছড়াছড়ি রয়েছে। কনস্ট্যানটিন আকিনশা জানিয়েছেন, মালেভিচের একটি আসল ছবি ২০১৮ সালে ৮৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল। তাই নতুন পাওয়া এই চিত্রকর্ম সত্য হলে এদের মূল্য দাঁড়াবে ১৬০ থেকে ১৯০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে।

তবে আসল নাকি ভুয়া—এই রহস্যের জট এখনো খোলেনি। ফলে বুখারেস্টের প্রদর্শনী শিল্পপ্রেমীদের কাছে একদিকে বিস্ময়, অন্যদিকে সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে পাকিস্তানের দাবি নাকচ করল সরকার

১৫ বছর যাদের জন্য লড়াই করলাম, তারা এখন আমাকে ধাক্কা দেয়: রুমিন ফারহানা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত