Ajker Patrika

বদলে গেল যৌনকর্মী সোফিদের দিন, মিলবে মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ সব সুবিধা

বেলজিয়ামের যৌনকর্মীরা আনুষ্ঠানিক নিয়োগ চুক্তি, স্বাস্থ্যবিমা, অবসরভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন করতে পারবেন। ছবি: বিবিসি
বেলজিয়ামের যৌনকর্মীরা আনুষ্ঠানিক নিয়োগ চুক্তি, স্বাস্থ্যবিমা, অবসরভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন করতে পারবেন। ছবি: বিবিসি

‘আমি যখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখনো কাজ করেছি। এমনকি প্রসবের এক সপ্তাহ আগেও আমাকে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে হয়েছে,’ বেলজিয়ামের যৌনকর্মী সোফি বিবিসির কাছে এভাবেই তুলে ধরেন জীবনসংগ্রামের গল্প।

পাঁচ সন্তানের জননী এই নারী জানান, একজন মায়ের দায়িত্বের সঙ্গে যৌনকর্মীর হিসেবে কাজ করা ‘অত্যন্ত কঠিন’। সিজারের মাধ্যমে পঞ্চম সন্তানের জন্ম হলে চিকিৎসক সোফিকে ছয় সপ্তাহ বিশ্রামের পরামর্শ দেন। কিন্তু বাস্তবতা তাকে বিশ্রাম নিতে দেয়নি।

সোফি বলেন, ‘আমি কাজ বন্ধ করতে পারিনি, কারণ আমার টাকার প্রয়োজন ছিল। তখন মাতৃত্বকালীন ছুটি ও নিয়োগকর্তার সহায়তা পেলে তাঁর জীবন অনেক সহজ হতো।’

সোফির মতো মায়েদের জীবন আরেকটু সহজ করতে বেলজিয়াম ঐতিহাসিক এক আইন পাস করেছে। ওই আইনে যৌনকর্মীরাও মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ চাকরিজীবীদের মতো সব সুবিধা ও ভাতা পাবেন। যৌনকর্মীদের এমন আইন বিশ্বে এই প্রথম।

এই আইনে বেলজিয়ামের যৌনকর্মীরা আনুষ্ঠানিক নিয়োগ চুক্তি, স্বাস্থ্যবিমা, অবসরভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ, এখন থেকে একজন যৌনকর্মীর কাজকেও অন্য যেকোনো চাকরির মতো গণ্য করা হবে।

সোফি বলেন, ‘এই আইন আমাদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’

সারা বিশ্বে কয়েক লাখ যৌনকর্মী আছেন। জার্মানি, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশে যৌনবৃত্তি বৈধ। কিন্তু আইন পাস করে, পেশাজীবী হিসেবে যৌনকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাঁদের চুক্তির আওতায় আনার এমন ঘটনা বেলজিয়ামেই প্রথম। ২০২২ সালে বেলজিয়ামে যৌনবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়া হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক এরিন কিলব্রাইড বলেন, ‘এটি একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ এবং পরো বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। প্রতিটি দেশেই এ ধরনের আইন হওয়া হওয়া প্রয়োজন।’

তবে সমালোচকেরা বলছেন, নতুন আইনটি যৌনকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও যৌন ব্যবসায় শোষণ ও নির্যাতন বন্ধে বাঁধা হতে পারে।

ইসালা নামে একটি এনজিও বেলজিয়ামের রাস্তায় যৌনকর্মীদের সহায়তায় কাজ করে। এই এনজিওর একজন স্বেচ্ছাসেবক জুলিয়া ক্রুমিয়েরে বলছেন, ‘এটি একটি বিপজ্জনক আইন। কারণ এই আইন ভয়ংকর সহিংসতায় ভরা, যৌনবৃত্তির মতো একটি পেশাকে স্বাভাবিক করে তুলবে।’

তবে অনেক যৌনকর্মীর জন্য, এটি শুধু একটি পেশা নয়, বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। মেল নামে এক যৌনকর্মী বলছিলেন, তিনি একবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, যেখানে তাকে কনডম ছাড়া ক্লায়েন্টের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। তিনি জানতেন যে তখন এক ধরনের যৌনবাহিত সংক্রমণ (এসটিআই) পতিতালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তিনি বিকল্প কিছু করতে পারেননি।

মেল বলেন, ‘আমার সামনে দুটি পথ ছিল–হয় রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি নিতে হবে, নয়তো কোনো আয় হবে না।’

তবে এখন এই আইনের পর মেল তাঁর ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারবেন। কোনো ক্লায়েন্ট বা শারীরিক কাজ যদি তাঁর কাছে অস্বস্তি লাগে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন।

বেলজিয়ামে এই পরিবর্তন আসে ২০২২ সালে প্রায় মাসব্যাপী প্রতিবাদের পর। তখন কোভিড-১৯ মহামারি চলছিল। রাষ্ট্রীয় সহায়তার অভাবে দেশটির যৌনকর্মীরা কঠিন সময় পার করছিলেন।

বেলজিয়াম ইউনিয়ন অফ সেক্স ওয়ার্কার্সের প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়া। তিনি ১২ বছর ধরে একজন যৌনকর্মীর কাজ করেছেন। ভিক্টোরিয়া ২০২২ সালের ওই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমার নিজের সংগ্রাম ছিল। যৌনকর্ম শুধুই শারীরিক সম্পর্ক নয়, এটি একটি সামাজিক সেবা।’

ভিক্টোরিয়া ২০২২ সালের আগে বেলজিয়ামে যৌনবৃত্তি অবৈধ থাকায় তাঁকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। গ্রাহকদের সামনে তাঁর কথা বলার সুযোগ ছিল না। নিয়োগকর্তা তাঁর আয়ের বেশির ভাগটা নিয়ে নিতেন।

ভিক্টোরিয়া জানান, একবার একজন ক্লায়েন্ট তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে তিনি অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে যান। সেখানে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করেছিলেন বলে জানান ভিক্টোরিয়া।

ভিক্টোরিয়া বলেন, ‘ওই নারী পুলিশ আমাকে বলেছিলেন, যৌনকর্মী ধর্ষণের শিকার হতে পারেন না। তাঁর আচরণে আমার মনে হয়েছিল, আমিই দোষী। কারণ, আমি এই কাজ করি।’

বেলজিয়ামের নতুন আইন তাঁদের জীবন আরও উন্নত করবে বলে বিশ্বাস ভিক্টোরিয়ার। ভিক্টোরিয়া বলেন, ‘যদি কোনো আইন না থাকে এবং আপনার কাজ অবৈধ বলে গণ্য হয়, তবে আপনাকে সাহায্য করার কোনো উপায় থাকে না। এই আইন মানুষের হাতে আমাদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে।’

নতুন আইনে বেলজিয়ামে যৌনকর্মী ও গ্রাহকদের মধ্যস্থতাকারীর কাজকেও বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। কেউ যদি গুরুতর কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাঁকে আর যৌনকর্মীদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।

নতুন এই আইন যৌনকর্মীদের ও যৌনবৃত্তির জন্য অনেক নতুন সুযোগ-সুবিধা ও সুরক্ষা এনেছে, তবে এটি নিয়ে সমালোচনাও আছে।

অনেকেই এই পদক্ষেপকে যুগান্তকারী হিসেবে দেখছেন, যা যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষা করবে এবং তাদের কাজের পরিবেশকে নিরাপদ করে তুলবে। আবার অনেকে মনে করছেন, যৌনকর্ম স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে এর শোষণমূলক দিক উপেক্ষা করা হচ্ছে।

তবে মেল, সোফি এবং ভিক্টোরিয়ার মতো যৌনকর্মীরা এই পরিবর্তনকে তাদের জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।

মেল বলেন, ‘আমি গর্বিত যে বেলজিয়াম এতটা এগিয়ে। এই আইনের কারণে আমি এখন ভবিষ্যতের আশা করতে পারছি।’

বিতর্ক এবং চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এই আইন যৌনকর্মীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে এসেছে। এটি এমন একটি ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও যৌনকর্মীদের সুরক্ষার জন্য আইন করতে পারে। তবে বেলজিয়ামের এই পদক্ষেপ যৌনকর্মের বৈধতা, অধিকার এবং নিরাপত্তা নিয়ে বৈশ্বিক আলোচনায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে তাদের কাছে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরুর এক সপ্তাহ আগে প্রচারিত একটি ডকুমেন্টারিতে তাঁর বক্তব্য ‘ভুলভাবে উপস্থাপন’ করা হয়েছে।

বিবিসি স্বীকার করেছে, সংশ্লিষ্ট ভিডিওটি ট্রাম্পের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা তৈরি করেছিল এবং এটি প্রচারে বিবিসিকে আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল।

গত বছর প্রচারিত ওই ডকুমেন্টারিতে ট্রাম্পের দুটি আলাদা বক্তব্য একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, যাতে মনে হয়, তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে হামলাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।

বিবিসির চেয়ারম্যান সমীর শাহ বিবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের পাঠানো চিঠির জবাবে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প একজন মামলাবাজ মানুষ। আমরা এখনো নিশ্চিত নই, তিনি সত্যিই মামলা করবেন কি না, তবে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।’

এর আগে এই বিতর্কের জেরে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন।

টিম ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ আরও এক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

এ ঘটনার পর ব্রিটিশ রাজনীতিকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, ডেভি ও টারনেসের পদত্যাগ বিবিসিতে পরিবর্তনের পথ খুলে দেবে। ট্রাম্প পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে মহাপরিচালক ও বার্তা বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের ঘটনা নজিরবিহীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লিতে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণে নিহত ৮, বহু আহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ১৯
দিল্লিতে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণে নিহত ৮, বহু আহত

ভারতের রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণটি এতটাই তীব্র ছিল যে, আশপাশের তিন থেকে চারটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায় এবং সেগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি দিল্লি পুলিশের বরাতে জানিয়েছে, খুবই শক্তিশালী বিস্ফোরণ ছিল এটি। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় লোক নায়েক জয়প্রকাশ (এলএনজেপি) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক আটজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিস্ফোরণের পর মুম্বাই, জয়পুর, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডে উচ্চ সতর্কতা (হাই অ্যালার্ট) জারি করা হয়েছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি বাড়ির ছাদে ছিলাম, হঠাৎ বিশাল আগুনের গোলা দেখলাম। শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠেছিল।’ আরও একজন বলেন, ‘আমি তখন গুরুদুয়ারায় ছিলাম, আচমকা প্রচণ্ড শব্দ শুনি। প্রথমে বুঝতেই পারিনি কী ঘটেছে।’

দিল্লি ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে একটি গাড়িতে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় ২০টি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এলাকাটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ।

দিল্লির পুরান দিল্লি এলাকায় অবস্থিত লালকেল্লা শহরের অন্যতম ব্যস্ত পর্যটন এলাকা। সেখানে এই বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করছেন।

এদিকে, এ ঘটনার দিনই হরিয়ানার ফারিদাবাদে একটি ভাড়া বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন ড. মুজাম্মিল শাকিল নামের জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার এক বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে ওই ব্যক্তির সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংবিধান সংশোধন নিয়ে পাকিস্তানে উত্তেজনা, ফুলকোর্ট সভা চান সাবেক বিচারপতি ও শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। নতুন ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর কাঠামো ও বিচারব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির আরও ক্ষমতাধর হবেন। অন্যদিকে কমবে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা।

তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির সাবেক বিচারপতি ও শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা। তাঁরা পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) ইয়াহিয়া আফ্রিদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি যেন প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে আলোচনার জন্য ফুলকোর্ট বৈঠক আহ্বান করেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর) ওই চিঠি লেখেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফয়সাল সিদ্দিকি। এতে স্বাক্ষর করেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক সিনিয়র সহকারী বিচারক মুশির আলম, সিন্ধু হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি নাদিম আখতারসহ আরও নয়জন খ্যাতনামা আইনজীবী।

চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা এই চিঠি স্বাভাবিক সময়ে নয়, বরং এমন সময়ে লিখছি, যা ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছে।’

সাবেক বিচারপতি ও শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা ২৭তম সংশোধনী আইনকে বর্ণনা করেছেন পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় ও আমূল পরিবর্তন’ হিসেবে। চিঠিতে তাঁরা বলেন, ১৯৩৫ সালের ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’ প্রণয়নের পর থেকে ফেডারেল আপিল আদালতের কাঠামোয় এমন মৌলিক পরিবর্তন আর কখনো হয়নি।

তাঁরা আরও বলেন, পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো বেসামরিক বা সামরিক সরকার কখনোই সাহস করেনি অথবা সফলও হয়নি—সুপ্রিম কোর্টকে অধস্তন আদালতে নামিয়ে আনার এবং তাঁর সাংবিধানিক এখতিয়ার কেড়ে নেওয়ার, যেমনটি এখন প্রস্তাবিত ২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে করা হচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যদি আপনার (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) মাননীয় আদালত আমাদের সঙ্গে একমত হন যে, প্রস্তাবিত এই সংশোধনী সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বড় ও আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, তাহলে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুরোধ করব—আপনি যেন ফুলকোর্ট বৈঠক আহ্বান করেন এবং ফেডারেল সরকারের কাছে এই সংশোধনী নিয়ে আদালতের মতামত ও পরামর্শ উপস্থাপন করেন।’

সাবেক বিচারপতি ও আইনজীবীরা আরও লিখেছেন, সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ অধিকার রয়েছে সরকারের কাছে যেকোনো প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিষয়ে মতামত দেওয়ার। কারণ, আইনটি আদালতের মূল কাঠামো, দায়িত্ব ও ন্যায়বিচার প্রদানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।

তাঁরা তাৎক্ষণিক ফুলকোর্ট বৈঠক আহ্বানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে চিঠিতে উল্লেখ করেন, ২৭তম সংশোধনীটি ১১ নভেম্বর অথবা পরবর্তী যেকোনো দিনে পাস হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ফুলকোর্ট বৈঠক আয়োজন করে যেন সাবেক বিচারপতি ও আইনজীবীদের মতামত নেওয়া হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যদি প্রধান বিচারপতি নিরপেক্ষতার অজুহাতে এই বৈঠকের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে অন্তত আমরা চাই, আপনি লিখিতভাবে স্বীকার করুন যে, আপনি পাকিস্তানের শেষ প্রধান বিচারপতি হতে রাজি হয়েছেন এবং এখন সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে বিলুপ্তিকে মেনে নিচ্ছেন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এই স্বীকারোক্তির পর আমরা আর আপনার কাছ থেকে সুপ্রিম কোর্টের রক্ষক হওয়ার কোনো প্রত্যাশা রাখব না।’

চিঠির শেষে অনুরোধ করা হয়, যেহেতু এটি ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়’, তাই এর একটি কপি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হোক।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মুনির এ মালিক ও আনোয়ার মনসুর খান, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবিদ শাহিদ জুবেরি, আলী আহমদ কুর্দ, মুহাম্মদ আকরাম শেখ ও কানরানি বি আমানুল্লাহ এবং আইনজীবী খাজা আহমদ হোসেন, সালাহউদ্দিন আহমদ ও শাবনাম নওয়াজ আওয়ান।

এর মধ্যে জুবেরি, মুহাম্মদ আকরাম শেখ ও সালাহউদ্দিন ২৬তম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে করা মামলার আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন। সেই সংশোধনী পাসের সময়ও আইনজীবীরা ব্যাপক বিরোধিতা করেছিলেন। আলী আহমদ কুর্দসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী ওই সংশোধনী প্রত্যাখ্যান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলে কী আছে

ফেডারেল মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেওয়ার পর ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি গত শনিবার সিনেটে উপস্থাপন করা হয়। বিরোধীদের প্রতিবাদের মধ্যেই বিলটি আনা হয়। টানা তৃতীয় দিনের মতো আজও সিনেট অধিবেশন চলছে এবং আইনটি দ্রুত পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর এটি জাতীয় পরিষদে তোলা হবে।

এই সংশোধনীর প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর বেশির ভাগ বিচারব্যবস্থা-সম্পর্কিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো ‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’ (এফসিসি) গঠন। এই আদালত সাংবিধানিক বিষয়ে রায় দেবে এবং এর সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান কার্যত বিলুপ্ত হবে।

প্রস্তাবিত সংশোধনীর মূলেই রয়েছে নতুন এই সর্বোচ্চ আদালত গঠন; যা ২৬তম সংশোধনীর অধীনে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে। তবে ২৬তম সংশোধনী এখনো সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

আইনটি এখনো পাস না হলেও সরকার ইতিমধ্যে বিচার বিভাগের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সাতজন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে এফসিসিতে নিয়োগের জন্য শর্টলিস্ট করা হয়েছে।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি আমিনউদ্দিন খানকে এফসিসির প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ হাসান আজহার রিজভি, মুসারাত হিলালি, আমির ফারুক ও আলী বাকর নাজাফি, সিন্ধু হাইকোর্টের বিচারপতি কে. কে. আঘা এবং বেলুচিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রোজি খান বাররেচের নামও আলোচনায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দ্য ডনকে জানায়, এফসিসির প্রাথমিক সদস্যসংখ্যা রাষ্ট্রপতির আদেশে নির্ধারিত হবে, এবং পরবর্তী সময়ে সদস্যসংখ্যা বাড়াতে সংসদের অনুমোদন লাগবে।

সংবিধানে ‘চ্যাপ্টার ১-এ’ যুক্ত হতে যাওয়া এই আদালতের নিজস্ব প্রধান বিচারপতি থাকবেন, যার মেয়াদ হবে তিন বছর। এফসিসির বিচারপতিদের নিয়োগ দেওয়া যাবে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারক (কমপক্ষে সাত বছরের অভিজ্ঞতা) বা ২০ বছরের বেশি অভিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্য থেকে।

এফসিসির বিচারপতিদের অবসর বয়স ৬৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বর্তমান অবসর বয়স ৬৫ বছর (সংবিধানের ১৭৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী)।

সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানের বিচার বিভাগীয় কমিশনের (জেসিপি) সুপারিশে এক হাইকোর্টের বিচারককে অন্য হাইকোর্টে বদলি করতে পারবেন। যদি কোনো বিচারক এই বদলি মেনে না নেন, তবে তাঁকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে গণ্য করা হবে।

নতুন ১৮৯ অনুচ্ছেদের অধীনে এফসিসি সুপ্রিম কোর্টের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করবে। সুপ্রিম কোর্ট তখন শুধু দেওয়ানি ও ফৌজদারি আপিলের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে থাকবে, কিন্তু এফসিসির রায় সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।

এফসিসি ফেডারেশন ও প্রদেশগুলোর মধ্যে বিরোধ, কিংবা প্রদেশগুলোর মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির একচ্ছত্র এখতিয়ার পাবে এবং সংবিধানের ব্যাখ্যার ‘গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রশ্ন’ উত্থাপিত হলে নিজ উদ্যোগেও মামলা গ্রহণ করতে পারবে।

তা ছাড়া মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন, হাইকোর্ট থেকে সাংবিধানিক বিষয়ে করা আপিল, অনুচ্ছেদ ১৯৯ অনুযায়ী করা রিট আবেদন (পারিবারিক বা ভাড়াসংক্রান্ত মামলা ছাড়া) এবং প্রেসিডেন্টের পরামর্শমূলক মতামত নেওয়ার ক্ষমতাও এফসিসি হাতে পাবে, যা আগে সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ারে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির দুই শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ অভ্যন্তরীণ ‘ক্যু’র ফসল, দাবি সাবেক সান সম্পাদকের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ১৭
বিবিসির দুই শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ অভ্যন্তরীণ ‘ক্যু’র ফসল, দাবি সাবেক সান সম্পাদকের

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেসের পদত্যাগের ঘটনাকে পরিকল্পিত ‘ক্যু’ বা অভ্যুত্থান বলে দাবি করেছেন ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান-এর সাবেক সম্পাদক ডেভিড ইয়েল্যান্ড। তিনি বলেছেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সুপরিকল্পিত নকশার ফল।

আজ সোমবার বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে অনুষ্ঠানে ইয়েল্যান্ড বলেন, ‘এটা ছিল এক ধরনের অভ্যুত্থান। এর চেয়েও খারাপ বিষয় হলো, এটা ছিল ভেতর থেকে তৈরি ষড়যন্ত্র। বিবিসির ভেতরে, বোর্ডের খুব কাছের— এমনকি বোর্ডের মধ্যেই— কিছু লোক টিম ডেভি ও তাঁর সিনিয়র টিমকে দীর্ঘ সময় ধরে পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে দিচ্ছিল। গতকাল যা ঘটেছে, তা এক দিনের ঘটনা নয়, এটি বহুদিন ধরে চলছিল।’

বিবিসির পডকাস্ট When It Hits the Fan-এর সহ-উপস্থাপক ইয়েল্যান্ড আরও বলেন, ‘এখানে মূল সমস্যা হলো— শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা। আমি চেয়ারম্যান সামির শাহকে ব্যক্তিগতভাবে দোষ দিচ্ছি না, তবে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হলো তাঁর প্রধান নির্বাহীকে (সিইও) দায়িত্বে রাখা বা সরানো। কিন্তু এখানে টিম ডেভিকে বরখাস্ত করা হয়নি— তিনি নিজেই চলে গেছেন। সেটিই প্রকৃতপক্ষে— এটাই সুশাসনের ব্যর্থতা।’

গতকাল রোববারের ওই পদত্যাগের পেছনে যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী মহল ও হোয়াইট হাউসের একের পর এক সমালোচনা ভূমিকা রেখেছে। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রকাশিত একটি ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়।

সেখানে বলা হয়, প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ভাষণের সম্পাদনা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন গত গ্রীষ্মে দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়া বিবিসির সম্পাদকীয় নীতিমালা বিষয়ক স্বতন্ত্র পরামর্শক মাইকেল প্রেসকট। তাঁর দাবি, ওই সম্পাদনা এমনভাবে করা হয়েছিল, যাতে মনে হয় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনের (ক্যাপিটল হিলে) হামলাকে উসকে দিয়েছিলেন। অথচ ওই ভাষণের দুটি অংশ আসলে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দেওয়া হয়েছিল এবং ট্রাম্প একই বক্তৃতায় তাঁর সমর্থকদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ’ করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন, যা সম্পাদনায় বাদ পড়েছিল।

তবে স্কাই নিউজের সাবেক রাজনীতি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডাম বোল্টন বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্যে বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার ইঙ্গিত ছিল— এই সার্বিক ধারণাটি ভুল নয়। দীর্ঘ বক্তৃতা থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ কেটে একত্রে উপস্থাপন করাও সংবাদমাধ্যমের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়।

তবে ইয়েল্যান্ডের মন্তব্য বিবিসি নিউজের ভেতরে হতাশাজনক পরিবেশকে প্রতিফলিত করে। বিবিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা সত্যিই এক ধরনের অভ্যুত্থান মনে হচ্ছে। এটা বিবিসির রাজনৈতিক শত্রুদের এক পরিকল্পিত প্রচারণার ফল।’

টিম ডেভি জানান, তাঁর পদত্যাগ তাৎক্ষণিক নয়; তিনি সুশৃঙ্খলভাবে ‘দায়িত্ব হস্তান্তরের সময়সূচি’ নিয়ে আগে থেকেই কাজ করছিলেন। অপরদিকে ডেবোরা টারনেস বলেন, প্যানোরামার তথ্যচিত্র সম্পাদনা নিয়ে বিতর্ক এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা বিবিসির মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছিল। এই ক্ষতি এড়াতেই আমার পদত্যাগ, কারণ এই প্রতিষ্ঠানকে আমি গভীরভাবে ভালোবাসি।’

সোমবার বিবিসির সাংবাদিক নিক রবিনসন জানান, প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে এক ধরনের ‘অচলাবস্থা’ তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা সম্পাদনাগত ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করতে চাইলেও রাজনৈতিকভাবে নিয়োজিত পরিচালকেরা এর চেয়েও বেশি কিছু বলতে চেয়েছিলেন— এ নিয়েই টানাপোড়েন তৈরি হয়।

বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহর আজ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়া কমিটিতে উপস্থিত হয়ে প্যানোরামা বিতর্ক বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করার কথা রয়েছে। তিনি কমিটির কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বিবিসির শীর্ষ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগের পর সরকারের ভেটেরান বিষয়কমন্ত্রী লুইস স্যান্ডার-জোনস বলেন, বিবিসি প্রতিষ্ঠানগতভাবে পক্ষপাতদুষ্ট— এমন অভিযোগ সঠিক নয়। স্কাই নিউজকে তিনি বলেন, ‘বিবিসি যে বিপুল পরিসরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে কাজ করে, তাতে এর সংবাদ এখনো অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য। নানা মতের মানুষ এখনো তাদের তথ্যের প্রধান উৎস হিসেবে বিবিসিকে ব্যবহার করে এবং সেটিই বলে দেয় বিবিসির ওপর আস্থার মাত্রা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত